এখন শুধু ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে আমাকে।
***
হাঁটতে হাঁটতেই অ্যালিসিয়ার ফুপাতো ভাই পল রোজের নম্বরে ফোন দিয়ে দিলাম। তাদের বাসাতেই যাচ্ছি আমি। গতবার হঠাৎ উপস্থিত হয়ে যেরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলাম, তার পুণরাবৃত্তি হোক সেটা চাই না। মাথার পেছনে এখনও হাত দিলে ব্যথা করে।
কাঁধ দিয়ে ফোন চেপে ধরে একটা সিগারেট মুখে দিলাম। সবে একবার টান দিয়েছি এমন সময় ফোন ধরলো কেউ। মনে মনে আশা করছিলাম যাতে লিডিয়ার কণ্ঠস্বর শুনতে না হয়। প্রার্থনাটা কাজে দিল।
“হ্যালো?”
“পল, আমি থিও ফেবার বলছি।”
“ওহ, কি খবর? মা ঘুমোচ্ছে তো, তাই এভাবে ফিসফিসিয়ে কথা বলছি। আপনার মাথার ব্যথাটা কমেছে?”
“হ্যাঁ, আগের চেয়ে অনেক কম এখন।”
“বেশ, বেশ। হঠাৎ ফোন দিলেন যে?”
“আসলে, অ্যালিসিয়ার ব্যাপারে নতুন কিছু তথ্য শুনেছি। সেগুলো নিয়েই আপনার সাথে কথা বলতে চাচ্ছিলাম।”
“কী রকম তথ্য?”
অ্যালিসিয়ার ডায়েরির ব্যাপারে তাকে জানালাম।
“ও ডায়েরি লিখতো? এটা তো জানতাম না। কি লেখা সেখানে?”
“সামনাসামনি কথা বললেই ভালো হবে। আজকে কি সময় দিতে পারবেন?”
“আজকে বাড়িতে আপনি না এলেই ভালো,” কিছুক্ষণ পর দ্বিধামাখা কণ্ঠে বলল পল। “মা’র মেজাজ আসলে…ভালো না। তাছাড়া আপনাকে গতবার দেখে রেগে গিয়েছিল ভীষণ।”
“হ্যাঁ, আমিও সেটাই ভাবছিলাম।”
“আমাদের বাড়ির রাস্তার শেষ মাথার একটা পাব আছে। দ্য হোয়াইট বিয়ার
“মনে আছে আমার। সেখানেই দেখা করি নাহয়। কখন আসবো?”
“পাঁচটা নাগাদ? তখন কিছুক্ষণের জন্যে বের হতে পারবো মনে হয়।”
এ সময় লিডিয়ার কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম। ঘুম ভেঙে গেছে মহিলার।
“রাখছি এখন। বিকেলে দেখা হবে।” ফোন কেটে দিল পল।
***
কয়েক ঘন্টা পর রওনা দিলাম ক্যামব্রিজের উদ্দেশ্যে। কিছুদূর আসার পর পকেট থেকে ফোনটা বের করি, ম্যাক্স বেরেনসনকে ফোন দেয়াটা ঠিক হবে কি না ভাবছি। ইতোমধ্যে একবার ডায়োমেডেসের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে সে। সুতরাং আমার কণ্ঠস্বর শুনে খুশি হবে না, এটা বলাই বাহুল্য। কিন্তু আর কোন উপায় নেই।
তানিয়া ধরলো ফোনটা। কণ্ঠস্বর শুনে মনে হচ্ছে ঠাণ্ডা কিছুটা কমেছে। কিন্তু আমাকে চেনামাত্র কথা বলার সুর পাল্টে গেল তার। “আমার মনে হয় না…মানে, ম্যাক্স একটু ব্যস্ত। বেশ কয়েকটা মিটিং আছে আজকে।”
“তাহলে পরে ফোন দেব।”
“আসলে সেটা উচিৎ হবে কি না। আমি-”।
ম্যাক্সের কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম এসময়। তানিয়ার উদ্দেশ্যে কিছু একটা বলছে সে। “আমি ফোনে এসব বলতে পারবো না”-কথাটা ম্যাক্সকে বলল তানিয়া।
একরকম বাধ্য হয়েই তাই ফোন হাতে নিল ম্যাক্স। “জাহান্নামে যান, তানিয়াকে এটাই বলতে বলেছি।”
“আপনার সাহস তো কম না। আমি প্রফেসরকে ফোন করে একবার জানিয়েছি, তাও আপনি…”
“হ্যাঁ, সে বিষয়ে অবগত আমি। কিন্তু নতুন কিছু তথ্য হাতে এসেছে আমার, সেগুলোর সাথে আপনিও জড়িত। তাই ফোন না দিয়ে পারলাম না।”
“মানে? কি জেনেছেন? কোথা থেকে জেনেছেন?”
“অ্যালিসিয়ার ডায়েরি পড়েছি আমি। গ্যাব্রিয়েলের হত্যাকাণ্ডের আগের দিনগুলোর বিস্তারিত বিবরণ আছে সেখানে।”
এবারে আর কিছু বলল না ম্যাক্স।
“সেখানে আপনাকে নিয়ে কিন্তু বেশ বিস্তারিতই লিখেছে অ্যালিসিয়া। এটাও বলেছে যে তাকে ভালোবাসার কথা স্বীকার করেছিলেন আপনি। ভাবছিলাম-”।
কেটে গেলো লাইন। এখন পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই চলছে। টোপটা গিলেছে ম্যাক্স। এবারে শুধু দেখতে হবে যে তার প্রতিক্রিয়া কি হয়।
মিথ্যে বলবো না, ম্যাক্সকে আসলে একটু ভয়ই পাই আমি। ঠিক যেমন তানিয়া তাকে ভয় পায়। তবে তানিয়া সেদিন আমাকে পলকে যে ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে বলেছিল, সেটা করা হয়নি এখন পর্যন্ত। অ্যালিসিয়ার মায়ের দুর্ঘটনার পরের দিন কিছু একটা ঘটেছিল, এ বিষয়ে আমাকে আরো কিছু বলবে সে এমন সময় ম্যাক্স উপস্থিত হয় সেখানে। তখন হাসিমুখে তার দিকে এগিয়ে যায় তানিয়া। নাহ, ম্যাক্স বেরেনসনকে খাটো করে দেখাটা উচিৎ হবে না।
খুব বড় একটা ভুল হবে সেটা।
.
৪.৭
ট্রেন লন্ডন ছেড়ে আসার কিছুক্ষণ পর থেকেই দৃশ্যপট পাল্টে যেতে লাগলো। এখন আর বড় বড় দালানকোঠা তেমন একটা চোখে পড়ছে না। সেই তাপমাত্রাও কমে গেছে অনেকখানি। স্টেশন থেকে বের হওয়ার সময় কোটের কলার তুলে দিলাম। শীতল বাতাস ছুরির ফলার মত এসে বিঁধছে গালে। এর মধ্যেই পলের সাথে দেখা করার জন্যে পাবটার দিকে পা বাড়ালাম।
দ্য হোয়াইট বিয়ার বেশ পুরনো, কয়েকবার সংস্করণ করা হয়েছে নিশ্চয়ই। তবুও প্রাচীন ভাবটা যায়নি। দুই তরুণ এই ঠাণ্ডার মধ্যেই পাবের বাইরের টেবিলে বসে আছে বিয়ারের গ্লাস নিয়ে, রক্ত গরম থাকলে যা হয় আর কি। হাতে সিগারেটও আছে। পাবের ভেতরটা বাইরের তুলনায় বেশ গরম। একপাশে গনগন করে আগুন জ্বলছে আদ্দিকালের ফায়ারপ্লেসে, আরামদায়ক এই উষ্ণতার উৎস।
একটা ড্রিঙ্ক নিয়ে আশপাশে তাকালাম পলের খোঁজে। বেশ কয়েকটা ছোট ছোট কেবিন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চারদিকে, একদম কোণার দিকে মুল বার কাউন্টার। আলো কম হওয়ায় অন্যদের চেহারা আসলে ঠিকঠাক দেখা যাচ্ছে না। গোপনে কারো সাথে দেখা করার জন্যে একদম আদর্শ জায়গা।