কালো ডায়েরিটার ওপরে এখন হাত বুলাচ্ছে ইন্সপেক্টর। “ভেতরের লেখাগুলো কিন্তু ধাঁধার মতন। তীর চিহ্ন দিয়ে যোগ করা হয়েছে অনেক কিছু। বিভ্রান্তিকর।”
মাথা নেড়ে সায় দিলাম। “অসুস্থ মনের প্রতিচ্ছবি বলতে পারেন।”
ডায়েরির পাতাগুলো উল্টে একদম শেষদিকে চলে গেল ইন্সপেক্টর। এরপর ওখান থেকে জোরে জোরে পড়া শুরু করলেন
“…সেজন্যেই কয়েক মিনিট আগে ফিরে এসেছিল। তবে এবারে আর কিছু বলেনি। সোজা এগিয়ে এসে আমার কব্জিতে একটা সুঁই বিধিয়ে দেয়।”
হঠাই আতঙ্ক ভর করলো আমার চিত্তে। আমি যখন ডায়েরিটা পড়ি তখন এই কথাগুলো ছিল না। এরকম প্রমাণের ভয়েই ছিলাম। কিন্তু এখন ডায়েরিটা ভুল একজনের হাতে চলে গেছে। ইচ্ছে করছে তার হাত থেকে ডায়েরিটা ছিনিয়ে নিয়ে পাতাগুলো ছিঁড়ে ফেলি। কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। ফাঁদে পড়ে গেছি। তোতলাতে শুরু করলাম
“আ-আমার মনে হয় যদি-”
আমি যে ঘাবড়ে গেছি এটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছে ইন্সপেক্টর। “জি?”
“না, কিছু না।”
তাকে থামানোর আর চেষ্টা করলাম না। এখন আমি যা-ই করি না কেন তাতে আমাকে আরো বেশি অপরাধী মনে হবে। এই প্যাঁচ থেকে বেরুবার আর কোন উপায় নেই। আর সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার, আগের তুলনায় অনেক বেশি স্বস্তিবোধ হচ্ছে এখন।
“আমার মনে হয় না আপনি অন্য কোন কাজে এই এলাকায় এসেছিলেন, ইন্সপেক্টর,” তার হাতে চা তুলে দিয়ে বললাম।
“ঠিক ধরেছেন। কিন্তু দরজায় দাঁড়িয়েই এখানে আসার উদ্দেশ্যটা বলে ফেলতে মন সায় দেয়নি। সত্যিটা হচ্ছে, এই ডায়েরির লেখাগুলো কিন্তু পুরো বিষয়টার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।”
“ওখানে কি লেখা সেটা আমিও জানতে চাই,” নিজেকে বলতে শুনলাম। “দয়া করে একটু জোরে পড়বেন?”
“বেশ, এত করে যখন বলছেন…”
মনের মধ্যে অদ্ভুত একটা প্রশান্তি নিয়ে জানালার পাশের চেয়ারটায় গিয়ে বসলাম।
একবার গলা খাকারি দিয়ে পড়তে শুরু করলো ইন্সপেক্টর অ্যালেন।
“মাত্র চলে গেল থিও। এখন একা আমি। যত দ্রুত সম্ভব সবকিছু লিখে ফেলতে হবে আমাকে। খুব বেশি সময় নেই হাতে…”।
কথাগুলো শুনতে শুনতে আকাশে সাদা মেঘের আনাগোণা দেখতে লাগলাম। অবশেষে তাদের মন গলেছে। ভেতরে বন্দি থাকা তুষারগুলোর আজ ছুটি। জানালা খুলে হাত সামনে বাড়ালাম। একটা তুষারকণা ভাসতে ভাসতে আমার হাতে এসে পড়লো। কিছুক্ষণ পর আবার মিলিয়েও গেল। অজান্তেই মুখে একটা হাসি ফুটলো আমার।
আরেকটা তুষারকণা ধরার জন্যে হাত সামনে বাড়িয়ে দিলাম।