“মানে?” অবাক দৃষ্টিতে তাকালাম ইউরির দিকে। “জিন-ফিলিক্স মার্টিনের কথা বলছো?”
“হ্যাঁ। গত কয়েক ঘন্টা ধরে তো এখানেই আছে সে। সকালে অ্যালিসিয়ার সাথে দেখা করতে এসেছিল। তখন থেকে অপেক্ষা করছে।”
“কি? আগে কেন বলোনি? পুরো সময় গ্রোভেই ছিল সে?”
“দুঃখিত, আসলে আজকে এত ধকল গেছে…যাইহোক, ওয়েটিং রুমে আছে সে।”
“ঠিক আছে। আমি তাহলে তার সাথে গিয়ে কথা বলি।”
ইউরির বলা কথাটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে রিসিপশনের দিকে ছুটলাম। জিন-ফিলিক্স এখানে কি করছে? কী চায় সে? কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে এসেছে?
ওয়েটিং রুমে ঢুকে আশপাশে তাকালাম।
খাঁখা করছে জায়গাটা।
.
৪.২০
গ্রোভ থেকে বেরিয়ে একটা সিগারেট ধরালাম। কিছুক্ষণ পর একটা কণ্ঠস্বর কানে এলো। কেউ আমার নাম ধরে ডাকছে। ভেবেছিলাম জিন-ফিলিক্স। কিন্তু মুখ তুলে দেখি অন্য কেউ।
ম্যাক্স বেরেনসন। গাড়ি থেকে বেরিয়ে আমার দিকে ছুটে আসছে সে।
“এসব কি হচ্ছে?” চিল্লিয়ে উঠলো গ্যাব্রিয়েলের ভাই। চেহারা রাগে বিকৃত। দেখে মনে হচ্ছে পুরো শরীরের রক্ত এসে জমা হয়েছে মুখমন্ডলে। “আমাকে কিছুক্ষণ আগে ফোন দিয়ে বলল অ্যালিসিয়ার কথা। কি হয়েছে ওর?”
এক পা পিছিয়ে এলাম। “শান্ত হোন, মি. বেরেনসন।”
“শান্ত হবো মানে? আপনাদের খামখেয়ালিপনার জন্যে গ্যাব্রিয়েলের স্ত্রী এখন কোমায়
মুষ্টিবদ্ধ হাতটা উঁচু করলো সে। ভাবলাম যে ঘুষি বসিয়েই দিবে। কিন্তু দৌড়ে এসে তাকে থামালো তানিয়া। তার চেহারাতেও খেলা করছে রাগ। তবে সেই রাগটা ম্যাক্সের উদ্দেশ্যে।
“থামো! কি করছো! পরিস্থিতি এমনিতেও যথেষ্ট খারাপ। থিওর কোন দোষ নেই!”
তাকে পাত্তাই দিল না ম্যাক্স। আমার দিকে ঘুরলো আবারো। চোখে বুনো ক্রোধ। “অ্যালিসিয়া আপনার তত্ত্বাবধায়নে ছিল,” গলার স্বর এখনও চড়িয়েই রেখেছে। “এ রকমটা কিভাবে হতে দিলেন? কিভাবে?”
রাগের চোটে তার চোখে পানি এসে গেছে। নিজের আবেগ লুকোনোর কোন চেষ্টাই এখন আর করছে না। ওখানে দাঁড়িয়েই কাঁদতে শুরু করলো। তানিয়ার দিকে তাকালাম; অ্যালিসিয়াকে যে ম্যাক্স পছন্দ করে, এটা অবশ্যই জানে সে। বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে তাকে এখন। কোন কথা না বলে উল্টোদিকে ঘুরে গাড়িতে ফিরে গেল তানিয়া।
ম্যাক্সের ধারে কাছেও থাকতে চাই না এখন। হাঁটতে শুরু করলাম।
পেছন থেকে এখনও চেঁচাচ্ছে সে। ভেবেছিলাম পিছু নিবে, কিন্তু ওরকম কিছু করলো না। আগের জায়গা থেকেই আমার উদ্দেশ্যে নানারকম কথা বলছে। কণ্ঠস্বর শুনেই বোঝা যাচ্ছে যে একজন পরাজিত মানুষের বেদনার বহিঃপ্রকাশ এসব :
“এসবের জন্যে আপনি দায়ি! আমার অ্যালিসিয়া…অ্যালিসিয়া। আপনাকে এর মূল্য চুকাতে হবে! শুনতে পাচ্ছেন?”
ম্যাক্সের চিৎকার থামার কোন লক্ষণ নেই, কিন্তু আমি আর তার একটা কথাও শুনছি না। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার কণ্ঠস্বর পুরোপুরি মিলিয়ে গেল।
হাঁটা থামালাম না।
.
৪.২১
হাঁটতে হাঁটতে ক্যাথির প্রেমিকের বাড়ির কাছাকাছি চলে এলাম। প্রায় এক ঘন্টা ঠায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করার পর দেখা পেলাম ‘ভদ্রলোকের’। ব্যাগ হাতে বেরিয়ে এসেছে সে। কোথায় যাচ্ছে? ক্যাথির সাথে দেখা করতে? কি করবো সেটা নিয়ে দোটানায় ভুগলাম কিছুক্ষণ। শেষ পর্যন্ত তাকে অনুসরণ না করারই সিদ্ধান্ত নিলাম। বরং বাড়িটার দিকেই আজকে নজর রাখবো।
জানালা দিয়ে তার স্ত্রীকে দেখা যাচ্ছে এখন। ভেতরে ভেতরে একটা তাগিদ অনুভব করছি। সাহায্যের তাগিদ। এই মহিলার তো কোন দোষ নেই, আমার মতনই পরিস্থিতির শিকার সে। তাকে কোন না কোনভাবে সাহায্য করতেই হবে। আমরা যাদের ভালোবেসেছি, তারাই আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
নাকি ভুল ভাবছি? মহিলা লোকটার পরকীয়ার ব্যাপারে সব জানে? এরকম খোলামেলা সম্পর্কেও অনেকে মজা পায়। হয়তো সে-ও বহুগামী? কিন্তু মন সায় দিচ্ছে না। তাকে দেখে মনে হচ্ছে একসময়কার আমার মতনই নির্ভার, সঙ্গিকে পুরোপুরি বিশ্বাস করে। যে লোকটার সাথে প্রতি রাতে একই বিছানায় ঘুমোতে যায় সে, তার ব্যাপারে কড়া কিছু সত্য বলতে চাই আমি। এছাড়া আর কোন উপায় নেই।
পরবর্তী দিনগুলোতেও বারবার ফিরে গেলাম সেখানে। এর মাঝে একদিন সে বাসা থেকে হাঁটতে বের হয়েছিল। নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে অনুসরণ করি আমি। একটা পর্যায়ে সে হয়তো আমাকে দেখেও ফেলে। কিন্তু দেখলেও সমস্যা নেই। আমি তার কাছে নেহায়েতই অপরিচিত একজন। আপাতত।
কয়েকটা জিনিস কিনে আবারো ফিরে এলাম আগের জায়গায়। রাস্তার অন্য পাশ থেকে বাড়িটার ওপরে নজর রাখছি। কিছুক্ষণ পর জানালার কাছে এসে দাঁড়ালো সে।
কী করবো সে বিষয়ে আমার আসলে ওরকম নির্দিষ্ট কোন পরিকল্পনা নেই। শুধু অস্পষ্ট একটা ধারণা আছে বলা যায়। অনভিজ্ঞ চিত্রশিল্পীদের মতন ব্যাপারটা। ছবিটা কি রকম হবে সেটা জানি, কিন্তু কিভাবে সেটা আঁকতে হবে সে ব্যাপারে ধারণা খুব অল্প। আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর বাড়িটার দিকে এগিয়ে গেলাম। মূল ফটকে ধাক্কা দিতেই খুলে গেল। বাগানে এখন আমি। শরীরে অ্যাড্রেনালিনের প্রভাব টের পাচ্ছি। বিনা অনুমতিতে অন্য কারো বাড়িতে ঢোকার মধ্যে আলাদা এক ধরণের রোমাঞ্চ আছে।
ঠিক এসময় পেছনের দরজাটা খুলে গেল। লুকোনোর আশায় চারপাশে তাকালাম। বাগানের ভেতরেই একটা ছোট ঘর ছাড়া গা ঢাকা দেয়ার মত আর কিছু চোখে পড়লো না। অগত্যা সেখানেই আশ্রয় নিলাম। বুক হাঁপরের মত উঠছে নামছে। আমাকে কি দেখে ফেলেছে সে? তার পদশব্দ কানে এলো কিছুক্ষণ পর। এখানেই আসছে। আর পিছু হটার কোন সুযোগ নেই। পেছনের পকেট থেকে একটু আগে কেনা স্কি মাস্কটা বের করে মাথায় গলিয়ে নিলাম। বাইরে থেকে শুধু আমার চোখ দেখা যাচ্ছে এখন। হাতে গ্লোভস পরলাম।