- বইয়ের নামঃ অদৃশ্য ঘাতক
- লেখকের নামঃ কাজী মায়মুর হোসেন
- সিরিজঃ ওয়েস্টার্ন সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী বই
- বিভাগসমূহঃ ওয়েস্টার্ন, রোমাঞ্চকর গল্প
অদৃশ্য ঘাতক
০১.
গত এক সপ্তাহ ধরে স্যাণ্ড ক্ৰীকের কাছে ফেরিস পোস্ট অফিসের সামনে অসময়ে রাউণ্ডআপ করছে বিলি বেঞ্চলি। তার বড় ছেলে অ্যাডামের ইচ্ছে সবকটা লঙহর্ন বেচে হেফার কিনবে। প্রতিবেশী র্যাঞ্চারদের আপাতত গরু বেচার কোনও ইচ্ছে নেই, প্রত্যেকটা র্যাঞ্চ তাদের বেশির ভাগ কাউহ্যাণ্ড পাঠিয়ে দিয়েছে ওদের সাহায্য করার জন্য।
সব লঙহর্ন ঝেঁটিয়ে ওনায় পাঠাচ্ছি এবার, বিউয়েল স্টোরের সামনে ঘোড়া থামিয়ে স্টোরের দরজায় দাঁড়ানো অলিভা বিউয়েলের উদ্দেশে বলল অ্যাডাম। বড়জোর আঠারো হবে অলিভার বয়স। হালকা পাতলা। বাসায় বানানো একটা ছিটের, ম্যাক্সি পরেছে। পুরো দুই, হাজার ক্যাটল, হাসল অ্যাডাম। সিগারেট ধরাল সময় নিয়ে, তারপর জিজ্ঞেস করল, রলিন্স থেকে আমাদের বুক করা ট্রেনের খবর এসেছে?
হ্যাঁ, আজকের স্টেজে তুমিও গরুর সাথে ওমাহা পর্যন্ত যাবে, না?
চোখে ঈর্ষা নিয়ে অ্যাডামের দিকে তাকাল অলিভা। মনে মনে ভাবছে, ইস, শুধু ছেলেরাই কেন ইচ্ছেমত ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পায়!
মাথা ঝাঁকাল অ্যাডাম বেঞ্চলি। বাবা ছাড়া আমাদের র্যাঞ্চের সবাই, যাবে। সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেলে দিল সে, ঘোড়ার মুখ ফিরিয়ে ছুটতে শুরু করার আগে বলল, তোমার বাবাকে তৈরি থাকতে বোলো। রাউণ্ডআপ শেষ, বাবা সবাইকে তোমাদের এখানে ড্রিঙ্ক করার প্রস্তাব দিয়েছে, আসছে ওরা, আর আধ ঘণ্টার মধ্যেই এখানে পৌঁছে যাবে।
অলিভা বিউয়েলদের দরজার ওপরে একটা মস্ত হলদে রঙা সাইনবোর্ড। বড় বড় লাল অক্ষরে তাতে লেখা: ফেরিস পোস্ট অফিস ওয়াইয়োমিঙ। ফেরিস কোনও শহর নয়, স্যাণ্ড ক্ৰীকের তীরের কয়েকজন র্যাঞ্চার বাঁচিয়ে রেখেছে ফেরিসকে। ক্রীকের ওপর দিকে দুমাইল দূরে ক্যান্টলিন র্যাঞ্চ, দুমাইল ভাটিতে গ্র্যাণ্ড র্যাঞ্চ। ওদুটো র্যাঞ্চেরও নির্দিষ্ট স্টোর আর গলা ভেজানোর জায়গা রয়েছে। তবু যেহেতু পোস্ট অফিস ফেরিসেধারে কাছের সবাই এখানে আসতে বাধ্য হয়।
ঘরে ঢুকে ওর ব্যস্ত বুড়ো বাপের সামনে দাঁড়াল অলিভা। ভদ্রলোক সর্বকাজের কাজী। স্যাও ক্রীকে অবশ্য সবাই প্রায় তাই। শহর থেকে অনেক দূরে বলে প্রত্যেককেই স্বাবলম্বী হতে হয়। হেনরিখ বিউয়েল। একই সাথে মার্চেন্ট, পোস্ট মাস্টার, স্টেজ এজেন্ট, হোটেলম্যান, র্যাঞ্চার আর ব্ল্যাকস্মিথ।
লম্বা একটা ঘরের মাঝখানে স্টোর। ডানদিকে পার্টিশন দিয়ে। আলাদা করা একটা ঘরে সে বার খুলেছে। বামদিকের পার্টিশনের ওধারে পাবলিক ডাইনিঙ রূম, মাঝ বরাবর একটা কাঠের মই বেয়ে। উঠে গেলে পৌঁছে যাওয়া যায় হোটেলে। হোটেল মানে ডাইনিঙ রূমের ওপরের ঘরটা। কয়েকটা চৌকি বিছানো আছে, ভাড়া দেয়া হয়। স্টোরের পেছনে দেয়ালে কাঠ দিয়ে কবুতরের খুপরির মত বানানো। আছে। সুইটওয়াটার থেকে শুরু করে ল্যারামি প্লেইনস পর্যন্ত ছড়ানো ছিটানো র্যাঞ্চলের সব চিঠিপত্র ওই গর্তগুলোর মধ্যে রাখা হয়। মিস্টার বেঞ্চলি তার নোকজনদের নিয়ে আসছে, বাবাকে মুখ তুলে তাকাতে দেখে বলল অলিভা। মাথা ঝাঁকাল হেনরিখ বিউয়েল, বার রূমে গিয়ে ঢুকল। ওই ঘরে অলিভার ঢোকার অনুমতি নেই, নিজের ঘরে গিয়ে আধঘণ্টা ধরে সাজল সে। আজ অনেক লোক আসবে ওদের এখানে।
*
বিলি বেঞ্চলির পেছনে, পনেরো, জন রাইডার, ঘোড়া থেকে নামল। স্টোরের সামনে হিচর্যাকে ঘোড়া বেঁধে শক্ত গড়নের র্যাঞ্চারের পিছু নিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকল সবাই। বিলি বেঞ্চলির চেহারা চৌকো; বড় ছেলে অ্যাডামের চেয়ে ছোট ছেলে জোডির সাথেই বেশি মিল। তীরের একটা পুরানো ক্ষত আছে র্যাঞ্চারের পায়ে, একটু খুঁড়িয়ে হাঁটে।
ক্রুরা সবাই স্টোরের ভেতর দিয়ে বাররূমে চলে এল। দুএকজন, ছাড়া সবার কোমরেই সিক্সগান ঝুলছে। শক্ত লোক সবাই, তবে রসবোধের অভাব নেই। হাসিমুখে দাঁড়িয়ে থাকা অলিভাকে লক্ষ্য করে চোখ টিপল অনেকে বারে ঢোকার আগে। কি আউটফিটের জ্যাক অলিভার থুতনি নেড়ে দিয়ে বলল, যত দেখি তত সুন্দর মনে হয় তোমাকে। শুধু যদি বার্ট আর্থারের কোমরে সিক্সগান না ঝুলত এখনই চুমোয় চুমোয় তোমাকে ভরিয়ে দিতাম আমি।
কথাটা শুনতে পেয়ে স্টোর আর বারের ভেতর সবাই হেসে উঠল। ওরা জানে আধুনিক রোমিও বার্ট আর্থার কখনোই সিক্সগান ঝোলায় না। আর্থার ওদের হাসিতে যোগ দেয়নি। ওকে নিয়ে আরও হাসি ঠাট্টা হতে পারে বুঝতে পেরে ওর কোনও চিঠিপত্র এসেছে কিনা জানতে চাইল সে অলিভার কাছে। ওর লাল চেহারা বলে দিচ্ছে মেয়েটার প্রতি ওর দুর্বলতা নিয়ে ঠাট্টা করা পছন্দ করে না সে।
এগিয়ে গিয়ে নির্দিষ্ট খুপরিটা হাতড়াল অলিভার একটা সীড ক্যাটালগ ছাড়া আর কিছু নেই, আর্থার। H মার্ক করা খুপরিটার ওপর চোখ পড়ল ওর। এখনও আছে চিঠিটা। সাত সপ্তাহ হলো কেউ ওটা নিতে আসেনি। আর্থারকে চিঠিটা দেখাল অলিভা। হিউ হুবার্টের নামে, মাইলস সিটি, মনটানা থেকে পাঠানো হয়েছে খামের ওপর লেখা আছে। আর্থার, এই লোককে চেনো তুমি?