- বইয়ের নামঃ ভুতুড়ে বর্ম
- লেখকের নামঃ শামসুদ্দীন নওয়াব
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী, রোমাঞ্চকর গল্প
ভুতুড়ে বর্ম
১
ঠিক জমল না, বলল কিশোর। পিছিয়ে গেল।
মানুষটার দেহ গিলোটিনের সামনে হাঁটু মুড়ে আছে। ওদিকে স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে আছে কিশোর। মানুষটার দুহাত পিছমোড়া করে বাধা। কয়েক ফুট দূরে মেঝেতে গড়াগড়ি করছে কাটা মাথাটা।
কাটা গলা থেকে আরও রক্ত পড়া উচিত না?
অন্তঃসার শূন্য দুচোখ সরাসরি কিশোরের দিকে চেয়ে আছে। স্থির। হাঁ হয়ে আছে মুখ। তীব্র আতঙ্কে আর্তনাদ করে ওঠার মুহূর্তে মারা গেছে লোকটা।
পুরো জমল না, বলল কিশোর। রোমাঞ্চিত হইনি আমি।
ঠিক বলেছ, কিশোর, মোমের ডামির উপর আরও রক্ত ঢালতে ঢালতে বলল হ্যাগার্ড।
গিলোটিনের তীক্ষ্ণধার স্টিলের ব্লেড বেয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় চটচটে লাল তরল ঝরতে লাগল।
এবার হয়েছে! বলল কিশোর। সত্যিই কিন্তু একটু ভয় ভয় লাগছে! দারুণ!
ও-য়া-ক! গলা টানল জিনা।
স্কুল ছুটি, রকি বিচ পাবলিক লাইব্রেরিতে পার্ট টাইম চাকরি করে বলে গোবেল বিচে আসতে পারেনি রবিন। খামারবাড়ির কাজে ব্যস্ত মুসা। জিনার বাড়িতে আসবার কথা ছিল, শেষে একাই চলে এসেছে। কিশোর। কদিন বেড়িয়ে যাবে।
চুপচাপ ছিল বলে জিনার কথা ভুলেই গিয়েছিল কিশোর। পুরানো মমির বাক্সটার উপর বসে আছে ও। ভুতুড়ে বর্ম
একবছর বয়সী বাদামি রঙের মাংগ্রল, লম্বা-লেজ রাফিয়ান জিনার পায়ের কাছে বসেছে। ভউ, হউ-হউ, হুফ বলে হঠাৎ জিনার হাত চেটে দিল। যেন বলতে চাইল: আমিও তোমার সঙ্গে একমত।
উঠে দাঁড়াল জিনা। কিশোরের উদ্দেশে বলল, তোমাদের নিয়ে আর পারা গেল না! এ কোন খেলা বলো তো! এমন বিচ্ছিরি কাণ্ডের মধ্যে দারুণের কী দেখলে? ঝাঁঝের সাথে বলল, ইস, নকল রক্ত ঢেলে ডামিটার কী বাজে অবস্থা করেছে! ওটাকে… ওটাকে…
এইমাত্র ঘরে ঢুকেছেন হ্যারিসন জোনাথন পারকার, জিনার বাবা। বললেন, একেবারে বাস্তব লাগছে কিন্তু!
মমিগুলো ঝাড়পোছ করছিলেন তিনি। দ্যমাকড়সার জাল, ঝুল লেগে আছে জামা-কাপড়ে। মাথা চুল ধুলো-ময়লায় একাকার
গিলোটিনের কাছে এসে দাঁড়ালেন তিনি। তীক্ষ্ণ চোখে কয়েক মুহূর্ত দেখলেন মুণ্ডুহীন ধড়টাকে। একটু একটু করে প্রশংসার হাসি ফুটছে তার ঠোঁটে। দারুণ হয়েছে! প্রশংসা করতেই হয়।
হ্যাগার্ড জাদুঘরের দারোয়ান কাম কেয়ারটেকারের চাকরিটা মনপ্রাণ দিয়ে করছে, মুখে গর্বের হাসি ফুটল তার।
মিস্টার পারকার বুড়ো আঙুল উঁচিয়ে বিলেতি কায়দায় আরেকবার নীরব প্রশংসা করলেন কিশোর ও হ্যাগার্ডের। বললেন, তবে আরেকটু রক্ত ঢাললে দেখতে আরও দারুণ হবে।
প্লাস্টিকের বোতলটা তুলে নিলেন। ছিপি খুলে ডামির ছিন্ন মুণ্ডুতে আরও খানিকটা রক্ত ঢাললেন। কাজ শেষ করে সন্তুষ্ট ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন, হ্যাঁ, এইবার হয়েছে। হঠাৎ দেখলে যে-কারও পিলে চমকে যাবে।
ঠিক বলেছেন, আঙ্কেল, কিশোর হাসল।
ওদিকে জিনা নিচু স্বরে বিড়বিড় করে কী যেন বলল।
মিস্টার পারকার ভ্রু কুঁচকে তাকালেন মেয়ের দিকে। ভুলে যাচ্ছ। কেন, এ-ধরনের জাদুঘরের এসবই মূল আকর্ষণ। এগুলো দেখে মানুষ যদি ভয়ই না পেল, আমাদের এত খাটুনি মাঠে মারা যাবে না? নকল রক্ত লেগে আছে মিস্টার পারকারের হাতে। গাল চুলকালেন।
রক্তমাখা ডামি দেখে যতটা ভয় লাগছে, তার চেয়ে জ্যান্ত মানুষের রক্তমাখা মুখ অনেক বেশি ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে।
ভৌতিক জাদুঘরে নানান ভৌতিক দৃশ্যের ব্যবস্থা করতে হয়, বললেন। তবেই খুশি হবে সবাই। আমাদের এই গোবেল বিচে দূর দূরান্ত থেকে আসবে মানুষ।
মিস্টার পারকার বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণার ফাঁকে জাদুঘর চালাবেন ঠিক করেছেন। মাস দেড়েক আগে আমেরিকার চেম্বারস অভ হররস-এর আদলে গোবেল বিচে একটা জাদুঘর খোলার শখ। চাপল তার মাথায়। একজন কেয়ারটেকারের জন্য কাগজে বিজ্ঞাপন দিলেন। লস অ্যাঞ্জেলেসের বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক লোক ইন্টারভিউ দিতে এল। শেষমেশ পাইন বিচ-এর লোক হেনরি রব। হ্যাগার্ডকে পছন্দ হলো, চাকরি হয়ে গেল তার।
বাড়ির নীচতলায় জাদুঘর বানিয়ে ফেলেছেন মিস্টার পারকার।
চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন উনি, এখন এই জাদুঘরে এমন একটা প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে দর্শক রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠে। শিউরে উঠতে হবে। ভয়ে দম বন্ধ হয়ে আসবে। তবেই দলে দলে লোক আসবে। ভয় পেতে মানুষ ভালবাসে, সেটা জানো?
বাড়ির পেছনদিকে এলিয়েন ট্র্যাকিং স্টেশন বসিয়েছ, বাবার দিকে তাকিয়ে বলল জিনা। লোকজন কৃত্রিম ভিনগ্রহবাসীর চলাফেরা, কাজকারবার দেখতে পাবে ওখান থেকে। পেছনদিকে আছে দুই মাথাওয়ালা লামা, আরও আছে শিংওয়ালা বিদঘুঁটে সেই জন্তুটা, ঘোড়ার মত।…কী যেন নাম ওটার?
ইউনিকর্ন, কিশোর বলল।
হ্যাঁ, ইউনিকর্ন। তারপর আছে গিলোটিন, মমি, মোমের মূর্তি আর কত ভয়ঙ্কর জিনিস চাই তোমাদের!
মেয়ের দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচালেন মিস্টার পারকার। ভাল কথা মনে করেছ, ওই ইউনিকর্নটার কথা তো খেয়ালই ছিল না। আমার। কিশোরের দিকে ফিরলেন তিনি। ওটা দেখে একেবারে জ্যান্ত মনে হয়, তাই না?
শুধু জ্যান্তই না, আঙ্কেল, বলল গোয়েন্দা-প্রধান। ওটার ঘোড়ার মত দেহ আর বিদঘুঁটে শিং দেখলে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠবে মেয়েদের।