- বইয়ের নামঃ দ্য বডি ইন দ্য লাইব্রেরি
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর, রহস্য, গোয়েন্দা কাহিনী
দ্য বডি ইন দ্য লাইব্রেরি
১. দরজায় সশব্দে ঠক ঠক
দ্য বডি ইন দ্য লাইব্রেরি – আগাথা ক্রিস্টি / অনুবাদ : নচিকেতা ঘোষ
০১.
দরজায় সশব্দে ঠক ঠক আওয়াজ হতেই ঘুম ভেঙ্গে গেল মিসেস ব্যান্ট্রির। ভাবলেন মেরি প্রভাতী চা নিয়ে এসেছে প্রতিদিনের মত। বিছানায় থেকেই বলে উঠলেন–ভেতরে এসো।
সঙ্গে সঙ্গে পর্দা কুঁড়ে শোনা গেল মেরির আর্ত কণ্ঠস্বর-মাদাম-শিগগির উঠুন। মাদাম-লাইব্রেরী ঘরে একটা লাশ পড়ে আছে।
কান্না চাপার চেষ্টা করে মেরি সঙ্গে সঙ্গে ছুটে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল।
একটা লাশ কথাটা যেন এক ধাক্কায় বিছানা থেকে তুলে দিল মিসেস ব্যাস্ট্রিকে। লাইব্রেরিতে একটা লাশ-এ কি করে সম্ভব?
স্থির হয়ে বসে এক মিনিট ভেবে নিলেন। তারপর তার পাশে নিদ্রিত স্বামীকে ধাক্কা দিয়ে তুললেন।
–আর্থার, আর্থার ওঠো শিগগির।
কর্নেল ব্যান্ট্রি ঘুম ভেঙ্গে পাশ ফিরে তাকালেন।
–কি বলছ–অত হৈ চৈ কিসের?
–মেরি বলে গেল লাইব্রেরিতে একটা লাশ দেখে এসেছে।
–অ্যাঁ–কি বলছ?
লাইব্রেরিতে একটা লাশ।
গজগজ করতে করতে বিছানা ছেড়ে নামলেন কর্নেল ব্যান্ট্রি। দ্রুত হাতে ড্রেসিংগাউনটা গায়ে চাপিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলেন।
সিঁড়ির শেষ ধাপের সামনে বাড়ির চাকরবাকর কজন জটলা করছিল। বাড়ির কর্তাকে দেখে সবাই শশব্যস্ত হয়ে উঠল। কয়েকজন যুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।
–কি ব্যাপার? কোথায় কি হয়েছে?
বাটলার এগিয়ে এসে বলল, একবার পুলিসে খবর দেওয়া দরকার স্যার। রোজকার মত ঢুকেছিল মেরি আর অমনি প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল একটা লাশের ওপরে।
-আমার লাইব্রেরি ঘরে লাশ রয়েছে? চল দেখা যাক।
.
জেলার প্রধান ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে টেলিফোন পেল থানার পুলিস কনস্টেবল পক।
আজ সকাল সওয়া সাতটা নাগাদ গামিংটন হলে এক তরুণীর লাশ পাওয়া গেছে কর্নেল ব্যান্ট্রির লাইব্রেরি ঘরে। তাকে কেউ গলা টিপে মেরেছে। বাড়ির কেউ মেয়েটিকে চেনে না।
টেলিফোনে খবরটা পেয়েই পক সঙ্গে সঙ্গে তার উধ্বতন অফিসার ইনসপেক্টর স্ল্যাককে টেলিফোন করে জানিয়ে দিল।
.
মিস মারপল রাতের পোশাক পাল্টাছিলেন এমন সময় তার বান্ধবী মিসেস ব্যান্ট্রির টেলিফোন পেলেন।
–ভীষণ ব্যাপার ঘটে গেছে জেন। আমাদের লাইব্রেরিতে একটা লাশ পাওয়া গেছে। সোনালী চুল অপূর্ব সুন্দরী একটি মেয়ে। মাদুরের ওপর সটান মরে পড়ে আছে। মনে হয় কেউ মেয়েটাকে গলা টিপে খুন করেছে।
তুমি শিগগির এসো-খুনীকে খুঁজে বের করে রহস্যটা উদ্ধার করো–আমি তোমার জন্য গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
.
ব্যান্ট্রিদের গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই সিঁড়ির মুখে কর্নেল ব্যান্ট্রির সঙ্গে দেখা হয়ে গেল মিস মারপলের।
–ওহ মিস মারপল। খুশি হলাম।
–আপনার স্ত্রী টেলিফোন করেছিলেন। ঠিক তখনই মিসেস ব্যান্ট্রি সেখানে হাজির হলেন। স্বামীকে প্রাতরাশ খেতে যাবার জন্য তাড়া দিয়ে মিস মারপলের হাত ধরে বললেন, চল জেন দেখাবে।
লম্বা বারান্দা দিয়ে বাড়ির মধ্যে ঢুকলেন তিনি। তার পেছনে মিস মারপল।
লাইব্রেরির দরজায় পাহারা দিচ্ছিল কনস্টেবল পক। তার ওপরে হুকুম রয়েছে, কেউ যেন ঘরে ঢুকে কোন কিছু স্পর্শ না করে।
কিন্তু মিস মারপলকে সে বিলক্ষণ জানে। কাজেই সে মহিলা দুজনকে দরজা ছেড়ে দিল।
–কোন কিছু স্পর্শ করছি না।
মিস মারপল লাইব্রেরি ঘরে ঢুকলেন মিসেস ব্যান্ট্রিকে সঙ্গে নিয়ে।
বিশাল ঘর। অগোছালো ভাবে সাজানো, ছড়ানো ছিটানো একরাশ বইপত্র, দলিল দস্তাবেজের সঙ্গে পাইপ ইত্যাদি নানা জিনিস।
দেয়াল জুড়ে ঝুলছে পূর্বপুরুষদের কয়েকটা তৈলচিত্র, কিছু বিবর্ণ জলরঙের ছবি। সারাঘর অন্ধকারাচ্ছন্ন।
–ওই দেখ।
পুরনো চুল্লীর কাছে দাঁড়িয়ে আঙুল তুলে একদিকে নির্দেশ করলেন মিসেস ব্যান্ট্রি।
.
মেঝের ওপরে পড়েছিল অগ্নিশিখার মত একটি মেয়ের মৃতদেহ। থোকা থোকা কোকড়া চুল কপালের দুপাশে ছড়িয়ে আছে। কৃশ দেহে শুভ্র সার্টিনের সান্ধ্যপোশাক। স্ফীত মৃত্যু নীল মুখে উগ্র প্রসাধনের চিহ্ন।
চোখের কাজল লেপ্টেছে দুপাশের গালে, লাল লিপস্টিকে রঞ্জিত মুখ। হাত আর ওপরের নখেই রক্তিম রঙ মাখানো। পায়ে সস্তা রুপোলী চপ্পল।
স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে মেয়েটিকে দেখে শান্ত স্বরে মিস মারপল বললেন, খুবই অল্প বয়স।
এই সময় বাইরে গাড়ির শব্দ পাওয়া গেল। কনস্টেবল পক গলা বাড়িয়ে বলল, বোধ হয় ইনসপেক্টর এলেন।
মিসেস ব্যান্ট্রি সঙ্গে সঙ্গে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। তাকে অনুসরণ করলেন মিস মারপল।
.
গাড়ি থেকে নেমে এলেন এলাকার চিফ কনস্টেবল কর্নেল মেলচেট আর ইনসপেক্টর স্ল্যাক। মেলচেট কর্নেল ব্যান্ট্রির বন্ধু।
ব্রেকফাস্ট শেষ করে বাইরে আসতে এদের সঙ্গে দেখা হল কর্নেলের। তিনি হাঁক ছেড়ে বন্ধুকে সুপ্রভাত জানালেন।
–একটা অস্বাভাবিক কাণ্ডের কথা শুনে নিজেই চলে এলাম। বললেন কর্নেল মেলচেট।
–একেবারেই অস্বাভাবিক।
–মেয়েটিকে পরিচিত মনে হয়?
–একদম না। জীবনে কোন দিন দেখিনি।
–বাটলার কি বলছে, কিছু জানে? স্ল্যাক বললেন।
–লরিমার আমার মতই হতবাক হয়ে গেছে।