- বইয়ের নামঃ গোরস্তানে আতঙ্ক
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী, রোমাঞ্চকর গল্প
গোরস্তানে আতঙ্ক
০১.
রাস্তার পাশে গাড়ি নামিয়ে আনল মুসা। অসমতল পথে ঝাঁকুনি খেতে খেতে গোরস্থানটার সামনে এসে থামল ওর ছোট ১৯৭৭ মডেল কমলা রঙের ভেগা গাড়িটা। বেরিয়ে এসে ট্রাংক খুলে একটা হাত চেপে ধরল। লম্বা, রোমশ, ভারি হাতটা। আঙুল নেই, আছে থাবা। কাঁধে নিয়ে ওটা রওনা হলো সে।
খানিক দূর এগিয়ে থামল। ঘড়ি দেখল। নটা বাজে। দেরি হয়ে গেছে! আরও এক ঘণ্টা আগে কিশোরের সঙ্গে দেখা করার কথা।
চট করে একটা ফোন করে আসবে নাকি? কাছাকাছি আছে টেলিফোন? আছে। শখানেক গজ দূরে রাস্তার মাথায় একটা পুরানো নির্জন গ্যাস স্টেশনে।
হাতটা বয়ে নিয়ে দ্রুত স্টেশনটার দিকে এগোল সে। ফোনের স্লটে মুদ্রা ফেলে দিয়ে ডায়াল করল। দুবার রিঙ হতেই ওপাশ থেকে রিসিভার তুলে বলল, তিন গোয়েন্দা, কিশোর পাশা বলছি।
কিশোর, মুসা। সকাল থেকেই তোমাকে ধরার চেষ্টা করছি।
আমি জানি।
কি করে জানলে? অ্যানুসারিং মেশিনটা চালাতে ভুলে গিয়েছিলে। সারা সকাল আমি কোন জবাব পাইনি।
ভুলিনি। মেশিনটা জবাব দিতে পারেনি, তার কারণ ওঅর্কশপের সমস্ত ফিউজ উড়িয়ে দিয়েছি আমি। পুরানো সিসটেমে আর কত? সার্কিট ব্রেকার লাগানর সময় হয়েছে। তোমার দেরি দেখে অবশ্য বুঝতে পারছি কিছু একটা হয়েছে।
কিশোরের এখনকার চিত্রটা কল্পনা করতে পারছে মুসা। ট্রেলার হোমের ভেতরে তিন গোয়েন্দার অফিসে পুরানো একটা ধাতব টেবিলের সামনে পুরানো সুইভেল চেয়ারে বসে আছে, টেবিলে পা তুলে দিয়ে। বলল, ঠিকই আন্দাজ করেছ। কল্পনা করতে পার কোথায় আছি? গোরস্থানে। হান্টিংটন বীচের ড্যালটন সিমেট্রিতে। সাথে রয়েছে স্পেশাল ইফেক্টস হাতটা, দা সাফোকেশন টু ছবিটায় যেটা নিয়ে কাজ করছে বাবা।
হুমম।
নিয়ে যাচ্ছি পরিচালক জ্যাক রিডারের কাছে। বাবা বলেছে, মিস্টার রিডার আমাকে একটা কাজ দেবেন। কেমন লাগছে শুনতে?
ভাল। তবে সাবধান।
কেন?
প্রথম সাফোকেশন ছবিটা করার সময় অনেক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল।
যেমন?
কথা বলার সময় শেষ হয়ে গেল। সঙ্কেত দিতে লাগল যন্ত্র। পকেট হাতড়ে আর কোন মুদ্রা পেল না মুসা।
পরে কথা বলব, বুঝতে পেরে বলল কিশোর। তোমার কাছে পয়সা নেই বুঝেছি। রিসিভার নামিয়ে রাখল সে।
পকেট বোঝাই করে মুদ্রা রাখবে এরপর থেকে, রেগে গিয়ে প্রতিজ্ঞা করল মুসা। রওনা হলো গোরস্থানের দিকে। কিশোরকে ফোন করে মানসিক যন্ত্রণা বাড়িয়েছে। কি ঘটনা ঘটে ছিল সাফোকেশন ছবিটা করার সময়?
রাস্তা পেরিয়ে এসে গোরস্থানে ঢুকল মুসা। ঘাসে ঢাকা ঢাল বেয়ে নামতে লাগল। গোরস্থান তার কাছে আতঙ্কের জায়গা, দেখলেই গা শিরশির করে ভূতের ভয়ে, তবে এখন অতটা লাগছে না। লোকে গিজগিজ করছে।
প্রথম ঢালের নিচে এক চিলতে সমতল জায়গায় অনেকগুলো কবর, পাথরের ফলক লাগানো রয়েছে। তারপর আবার নেমেছে ঢাল। আরেকটা সমতল জায়গায়। আরও কতগুলো কবর। তার পরে আবার ঢাল, আবার কবর, আবার ঢাল … এভাবেই নামতে নামতে নেমে গেছে উপত্যকায়। সিনেমার লোকজন রয়েছে ওখানে। খানিকটা ওপরে ঢালে দাঁড়িয়ে রয়েছে কিছু উৎসাহী দর্শক, শুটিং দেখতে এসেছে।
দর্শকদের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় দুটো মেয়েকে দেখতে পেল মুসা, ওরই বয়েসী। একজন বিনোকিউলার দিয়ে নিচের দৃশ্য দেখছে।
এখন কি করছে? জিজ্ঞেস করল অন্য মেয়েটা।
কবর খুঁড়ছে আর কথা বলছে, আগের মতই।
ওকে দেখা যায়? বেন ডিলনকে? আমি আসলে ওকে দেখতেই এসেছি। যা নীল চোখ না, তাকালেই কেন জানি ধক করে ওঠে বুক!
তাহলে তোর কপাল খারাপ, ওকে না দেখেই ফেরত যেতে হবে।
আপনমনেই হাসল মুসা। ছবির শুটিং কখনও দেখেনি নাকি মেয়েগুলো? কথাবার্তায় সে রকমই লাগছে। হলিউডের নতুন মুভি সুপারস্টার বেন ডিলনও দেখেনি বোঝা যাচ্ছে। এই মুভি স্টারদের নিয়ে সমস্যা, জানে মুসা। ওর বাবা বলেন, কিছুতেই ওদেরকে সময়মত সেটে হাজির করানো যায় না।
শুটিং স্পটের কাছে নেমে এল মুসা। সাফোকেশন-২ হরর ছবি। মরে গেছে। ভেবে ভুল করে একটা লোককে কবর দিয়ে ফেলা হয় এই গল্পে, তারপর লোকটা বেরিয়ে এসে জোম্বি হয়ে যায়। ভীষণ রোমাঞ্চকর।
শুটিং স্পটেই ৩৮ বছর বয়স্ক ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি লম্বা পরিচালক জ্যাক রিডারের দেখা পেল মুসা। মস্ত একটা পাথরের ফলকের ওপর পা তুলে দিয়ে ক্যানভাসের চেয়ারে বসে পোর্টেবল টেলিফোনে কথা বলছেন। কালো কুচকুচে চুলের সঙ্গে মানিয়ে গেছে পরনের কালো টার্টলনেক সোয়েটার আর কালো প্যান্ট।
বেন কোথায়? টেলিফোনে গর্জে উঠলেন রিডার। বার বার কথা দিল আসবে, অথচ…এগুলোর কোনটাকে বিশ্বাস নেই! ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ওপাশের কথা শুনলেন। তারপর বললেন, তুমি তার এজেন্ট, সে জন্যেই তোমাকে বলছি। দুঘণ্টা ধরে বসে আছি, দেখা নেই। এমন করলে কেমন লাগে! জলদি পাঠাও! লাইন কেটে দিয়ে টেলিফোনটা ছুঁড়ে দিলেন কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা একটা মেয়ের দিকে। লাল চুল পনি টেল অর্থাৎ ঘোড়ার লেজের মত করে বেঁধেছে মেয়েটা।
রিডার সম্পর্কে বাবা যা বলেছেন, সব ঠিক– এসেই প্রমাণ পেয়ে গেল মুসা। বদমেজাজী, নিজে যা ভাল বোঝেন তাই করেন, কাজ আদায় করে নিতে চান। তবে দর্শকদের মতে ছবি ততটা ভাল হয় না, জনপ্রিয়তা পায়নি কোনটাই, একটা বাদে। ছবিটার নাম মণ্ডো এসো। বক্স অফিস হিট করেছে।