- বইয়ের নামঃ হ্যালুইন পার্টি
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর,গোয়েন্দা কাহিনী
হ্যালুইন পার্টি
১. মিসেস আরিয়াদে অলিভার
হ্যালুইন পার্টি (এরকুল পোয়ারো সিরিজ) – আগাথা ক্রিস্টি
০১.
মিসেস আরিয়াদে অলিভার তার এক বান্ধবীর কাছেই থাকে। আজ সে এক সন্ধ্যা অনুষ্ঠানে শিশুদের পার্টিতে গেছে বান্ধবীর সাথে সাজানো-গোছানোতে সাহায্য করার জন্য। এই পার্টির নাম হলো হ্যালুইন পার্টি। এখানে নিমন্ত্রিতরা হলো দশ থেকে সতের বছরের ছেলেমেয়েরা।
এসে দেখলো চারিদিকে বিশৃঙ্খল অবস্থা। সাজাবার বড় আকৃতির রংবেরং-এর কুমড়ো এক জায়গায় এনে রাখা হচ্ছে। মিসেস অলিভার কপালের ওপর থেকে পাকা চুলের গুচ্ছ সরিয়ে দিয়ে বললো, গত বছর আমেরিকায় এই রকম কুমড়ো এক সঙ্গে অনেকগুলো দেখেছিলাম। সারা বাড়িতে সাজানো হয়েছিলো। ভেতরে হয় মোমবাতি নয়তো অনুজ্জ্বল আলো জ্বেলে দেওয়া হয়েছিলো। তবে হ্যালুইন পার্টির জন্য সাজানো হয়নি, সাজানো হয়েছিল ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের দিনে। এখন আমি প্রত্যেক বছর হ্যালুইন পার্টিতে যোগ দিই। বান্ধবী মিসেস বাটলার মিসেস অলিভারের কথাগুলি শুনতে লাগলো।
মাঝে মাঝে ব্যস্ত মহিলারা মিসেস অলিভারের কাছে এসে পড়লেও কিন্তু তার কথায় কর্ণপাত করছে না। সবাই নিজের নিজের কাজ নিয়েই ব্যস্ত। এইসব মহিলাদের মধ্যে মায়েদের সংখ্যাই বেশি। দু-একজন বয়স্কা অবিবাহিতা স্ত্রীলোক আছে আর আছে কয়েকটি অল্পবয়স্কা মেয়ে, তাদের বয়স হবে তেরো থেকে উনিশ বছর। এছাড়া এগারো থেকে পনেরো বছরের কিছু ছেলেমেয়ে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে গল্প করছে হাসাহাসি করছে।
এই পার্টির উদ্যোক্তা সুন্দরী মিসেস ড্রেক ঘোষণা করলো, আমি এই পার্টিকে হ্যালুইন পার্টি বলতে চাই না, আমি বলবো ইলেভেন প্লাস পার্টি। এই বয়সী ছেলেমেয়েদের নিয়ে আজকের এই উৎসব। বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রী এই দি এলমস ছেড়ে অন্য স্কুলে চলে যাচ্ছে।
কিন্তু রোয়েনা তুমি ঠিক বলতে পারলে না ঝুলি পড়া চশমা নাকের উপর দিকে ঠেলে দিয়ে অনুমোদনের ভঙ্গিতে মিস ইউটেকার বললো, কারণ ইলেভেন প্লাস ক্লাস আমরা আগেই তুলে দিয়েছি।
মিসেস উইটেকার এই স্কুলের শিক্ষয়িত্রী। কাউকে ভুল করতে দেখলে বা ভুলতে দেখলে চটে যাওয়া তার স্বভাব।
মিসেস অলিভার হঠাৎ সোফার ওপরে বসে মানুষের ভিড়ে ঠাসা ঘরটা খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো। লেখিকার মন নিয়ে সে ভাবলো এখন যদি আমি এইসব মানুষদের নিয়ে কোনো বই লিখি তাহলে কি ভাবে লিখবো? এরা প্রত্যেকেই চমৎকার মানুষ। কিন্তু সত্যিই কি তাই? তার মনে হলো এই মানুষগুলো সম্পর্কে বেশি না জানাই ঠিক হবে। এরা প্রত্যেকেই উডলিফ কমন্স এ বাসা করে। জুডিথের কাছে যা শোনা গেছে তাতে বোঝা যায় এদের প্রত্যেকের মধ্যে বেশ বোঝাঁপড়া আছে।
এই মানুষগুলো মিসেস অলিভারের কাছে কেবল মাত্র নাম ছাড়া আর কিছু নয়। তাদের মধ্যে আছে একজন নান, বেট্রিসা, ক্যাথি, জম্বলা আর জয়েসা। জয়েসা মেয়েটা দেখতে সুন্দরী, একটু ছটফটে আর প্রশ্ন করে প্রচুর। এ্যানা নামে মেয়েটি দীর্ঘাঙ্গী এবং বয়স জয়েসার চেয়ে একটু বেশি। সবেমাত্র যৌবনে পদার্পণ করেছে, এমন দুটি ছেলে আছে বিভিন্ন কায়দায় চুল আঁচড়ানো, কিন্তু যে জন্য এতো কায়দা করে চুল আঁচড়ায় তার কোনো সুফল ফলে না।
একটা ছোট ছেলে লাজুক ভঙ্গিতে ঘরে ঢুকে বললো, মা এই আয়নাগুলো পাঠিয়ে দিলেন এতে কাজ চলবে কি না দেখুন, মিসেস ড্রেক তার হাত থেকে আয়নাগুলো নিয়ে বললো, অনেক ধন্যবাদ, এডি।
এতো দেখছি সাধারণ হাত আয়না,
–এ্যানা বললো, এগুলোর ভেতরে কি সত্যিই আমাদের ভাবী স্বামীদের মুখ দেখতে পাব? জুডিথ বাটলার উত্তর দিলো– কেউ পাবে, কেউ পাবে না।
বয়সে অপেক্ষাকৃত বড় বেট্রিসা বললো, প্রত্যক্ষ করবার শক্তি থাকলেই দেখতে পাওয়া যায়।
লী একটি গামলা নিয়ে ঘরে ঢুকলো। সঙ্গে সঙ্গে আলোচনার মোড় অন্যদিকে ঘুরে গেলো, আপেলের বোকা বানানোর খেলার জন্য গামলা উপযুক্ত হবে, না বালতি উপযুক্ত হবে এই আলোচনায় সবাই মেতে উঠলো, বেশিরভাগ কর্মী লাইব্রেরীতে গেল জায়গাটা ভালো করে দেখার উদ্দেশ্যে। কয়েকজন অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়ে আপেলের বোকা বানানোর খেলা হাতেকলমে করে দেখলো ঠিক হচ্ছে কি না। কারো মাথার চুল ভিজে গেলো আর গামলা থেকে জল উপছে পড়ল কার্পেটের ওপর। টাওয়েল দেওয়া হলো তাদের জল মোছার জন্য। শেষ পর্যন্ত ঠিক হলো প্লাস্টিক বালতির চেয়ে গ্যালভানাইজড গামলাই ব্যবহার করা হবে।
ভেতরে বয়ে আনা গামলা ভরা আপেল একপাশে রাখলো মিসেস অলিভার। তারপর একটু একা থাকার উদ্দেশ্যে একটা নির্জন ঘরের খোঁজে বেরিয়ে পড়লো। সিঁড়ি দিয়ে ওপর দিকে উঠতে লাগলো। ল্যাণ্ডিংয়ের সামনে তাকে দাঁড়িয়ে পড়তে হলো। এখানে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে জড়াজড়ি করে একটা বদ্ধ ঘরের দরজায় হেলান দিয়ে বসে আছে। মিসেস অলিভার এই ঘরেই ঢুকতে চান। তাকে দেখে যুগলমূর্তি একটুও বিচলিত হলো না, বরং আরো ঘনিষ্ঠ ভাবে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরলো। ছেলেটির বয়স হবে পনেরো আর মেয়েটির বয়স হবে বারো।
অ্যাপেল ট্রি বাড়িটা বেশ বড়ো। এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে কারো নজর পৌঁছায় না। মিসেস অলিভার ভাবলো, মানুষ কত স্বার্থপর আজকালকার ছেলেমেয়েরা অন্যের তোয়াক্কা করে না।