- বইয়ের নামঃ থ্রি অ্যাক্ট ট্রাজেডী
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- প্রকাশনাঃ হার্পার কলিন্স
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর,গোয়েন্দা কাহিনী, ভূতের গল্প,
থ্রি অ্যাক্ট ট্রাজেডী
১. প্রথম অঙ্ক–সন্দেহ
থ্রি অ্যাক্ট ট্রাজেডী (এরকুল পোয়ারো সিরিজ) – আগাথা ক্রিস্টি
প্রথম অঙ্ক–-সন্দেহ
০১.
কুলায়
সমুদ্র তীর থেকে চোখে পড়া পাহাড়ের ওপর পাখির নীড়ের মতো ছোট্ট বাড়ি কুলায়। একটি পায়ে চলা পথ সমুদ্র তীর থেকে উঠে গেছে, কুলারের দিকে। ধূসর রঙের ফ্লানেল ট্রাউজার্স আর সোয়েটার পরিহিত এক সম্ভ্রান্ত সুদর্শন চেহারার ভদ্রলোক ঐ পথ ধরে উঠে আসছেন। তার চেহারার বাঁধুনির জন্য বয়স ধরা মুশকিল। প্রথম দর্শনে তাকে নৌ বাহিনীর অফিসার বলে মনে হয়। আসলে তিনি হচ্ছেন বিখ্যাত অভিনেতা স্যার চার্লস কাটরাইট।
চার্লসের দুজন অতিথি কুলারের বারান্দায় বসে ছিলেন। শিল্প রসিক ও নাট্যমোদী শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট এবং নামজাদা ডাক্তার স্যার বার্থালমিউ স্ট্রেঞ্জ চড়াই বেয়ে উঠে আসা চার্লসকে তারা দেখলেন। তারা নিজেদের মধ্যে স্যার চার্লসের অভিনয় জগৎ থেকে ফিরে এসে এই নির্জন সমুদ্রতীরে বসবাস করার কথা আলোচনা করছিলেন। প্রথমে তাদের ধারণা ছিল, চার্লস তার মঞ্চের নেশা, জনতার প্রশংসা এই সব কিছু থেকে দূরে বেশি দিন থাকতে পারবেন না। অথচ দুবছর এখানে কাটিয়ে দিয়ে প্রমাণ করে দিলো তাদের ধারণা ভুল।
চার্লস কার্টরাইট এসে হাজির হলেন–আপনারা কেবল বসে বসে গল্প করুন। আমি আমার ছোট্ট নৌকোটা নিয়ে নিরুদ্দেশ যাত্রায় বেরিয়ে ছিলাম।
নিরুদ্দেশ যাত্রায় একাই গিয়েছিলেন, না কি সঙ্গে কেউ ছিলেন? ডাক্তার জানতে চাইলেন।
-না, সঙ্গে ঐ মেয়েটি, মানে শ্রীমতী লিটন গোর ছিলেন। জানো টলি, স্যার বার্থালমিউয়ের ডাকনাম হলো টলি, এই নির্জন জায়গাটা আমার ভীষণ ভালো লাগে। সারাদিন নৌকো করে ঢেউয়ের ওপরে ঘুরে বেড়ানো। তারপর সূর্যাস্তে কুলায়-এ ফিরে আসা। কেমন সরল অনাড়ম্বর জীবনযাত্রা।
শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট ভাবছিলেন, শুধু কি আকাশ, বাতাস, আর সমুদ্র তাকে আকর্ষণ করে? না কি ঐ কিশোরী মেয়েটির জন্য জায়গাটা তার এত পছন্দ?
শ্ৰীমতী মিলারি ঘরে এসে ঢুকলেন। চার্লসের হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিলেন। কাগজটা দেখে নিয়ে সম্মতি জানিয়ে সেটা ফেরত দিলেন। খুশী মনে শ্রীমতী মিলারি চলে গেলেন।
বছর ছয়েক আগে শ্রীমতী মিলারি চার্লসের সেক্রেটারি হিসাবে কাজে নিযুক্ত হয়েছিলেন। বর্তমানে ঘর গৃহস্থালির যাবতীয় ভার তার ওপর। তবে উনি কয়েকদিনের মধ্যে চলে যাবেন, কারণ তার মা নাকি অসুস্থ। অবশ্য গত ছ বছরের মধ্যে চার্লস তার মুখে মায়ের কথা একবারও শোনেননি।
–ওঁর চলে যাওয়ার পেছনে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। স্যার বার্থালমিউ-এর ঠোঁটে হাসি। দুয়ে দুয়ে যে চার হয় সেটা তুমি জানো ঠিকই।
–তুমি ভুল বলছো! ওর মুখের দিকে একবার তাকালে তৎক্ষণাৎ কামভাব মন থেকে উধাও হবে। প্রশংসনীয় তাঁর কর্মদক্ষতা, কিন্তু তাই বলে প্রেম চলে না।
শ্ৰীমতী মিলারি আবার এসে ঢুকলেন।
একটা কথা বলতে এলাম। আপনাদের সঙ্গে আমিও ডিনারে বসবো। কারণ অতিথির সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে তেরো। তেরো সংখ্যাটা অপয়া। তাই।
– বেশ, আপনি বসবেন।
শ্ৰীমতী মিলারি চলে গেলেন।
–আপনার অতিথি যারা আসছেন তারা কারা? শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট জানতে চাইলেন।
লণ্ডনের ব্রুক স্ট্রীটের বিখ্যাত পোশাকের দোকান অ্যামব্রোসাইন লিমিটেড-এর মালিক ক্যাপটেন ডেকার্স ও তার স্ত্রী। নাটক লেখিকা শ্রীমতী উইলস। শ্রীমতী এঞ্জেলার খাতিরে তাকে নিমন্ত্রণ করতে হয়েছে। স্থানীয় লোকদের মধ্যে আছেন যাজক শ্রীযুক্ত ব্যারিংটন ও তার স্ত্রী। লেডি মেরি গোর ও তার কন্যাও আসছেন, এই মেয়েটির সঙ্গে আমি নৌকো করে বেড়াতে গিয়েছিলাম। ম্যানডার্স নামে এক তরুণ সাংবাদিকও আসছে।
–সাংবাদিক?
–নিজেকে তাই বলে। লেডি মেরির বাড়িতে থাকে এবং তার কন্যার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বেড়ায়। লেডি মেরি তাকে খুব স্নেহ করেন তবে তাঁর মেয়ে তাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয় না।
শ্ৰীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট বুঝতে পারলেন চার্লসের বিরূপতার কারণ। ঐ সাংবাদিক ছোকরাটি হলো চার্লসের প্রণয় প্রতিদ্বন্দ্বী! চার্লসের মত ছেলেটির কোনো কিছুই নেই। কিন্তু ছেলেটির আছে যৌবন, যেটি আর ফিরে পাবে না চার্লস। সেই জন্য চার্লসের মনের কোণে ব্যথা প্রকাশ পাচ্ছে।
–স্যার চার্লস, গুনতে আপনাদের মধ্যে যে কারো ভুল হয়েছে, শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট বললেন, অতিথির সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে বারো।
একটু ভেবে চার্লস বললেন–ভুলেই গিয়েছিলাম একজনের কথা বলতে। তিনি হচ্ছেন এরকুল পোয়ারো, বিখ্যাত গোয়েন্দা। জাতে বেলজীয়।
–বাড়িতে আবার সখ করে ডিটেকটিভকে ডাকা কেন বাপু। স্যার বাথালমিউ যে খুশী হতে পারেন নি বোঝা গেল। এক একটা মানুষ থাকে যাদের কপালে অঘটন ঘটেই আছে। এরকুল পোয়ারো মানুষটি ঠিক এইরকম। উনি যেখানে যাবেন সেখানেই একটা কাণ্ড ঘটবে। কি জানি বাপু, এখানেও কিছু ঘটবে বলে মনে হয়।
যত সব আজগুবি ধারণা। চার্লস বললেন।
তিনজনে হাসতে হাসতে ঘরে এসে ঢুকলেন।