- বইয়ের নামঃ ডেথ ইন দ্য ক্লাউডস
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- প্রকাশনাঃ চন্দ্রছাপ
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর
ডেথ ইন দ্য ক্লাউডস
০১. প্যারিস থেকে ক্রয়ডন
০১.
প্যারিস থেকে ক্রয়ডন
লা বুর্জেতে বিমানবন্দরের সেপ্টেম্বরের প্রখর রোদে পুড়তে পুড়তে যাত্রীরা ক্রয়ডনগামী বিমান প্রমিথিউস-এ উঠেছে। জেনে গ্রে তার জন্য নির্দিষ্ট ১৬ নম্বর আসনে এসে বসলো। কয়েকজন যাত্রী মাঝের দরজা দিয়ে সামনের কামরায় চলে গেছে। পেছনের কামরাও প্রায় ভর্তি। এক মহিলার তীক্ষ্ণ কণ্ঠ ভেসে আসছে মাঝখানের যাতায়াতের ওপাশ থেকে। জেনের ঠোঁট দুটো একটু বেঁকে গেল। ওই বিশেষ গলা ওর অচেনা নয়। আরে দারুণ। কোথায় চললে? চুয়ান লে পিনস? হ্যাঁ, লা পিনেতা-হা, সব সেই পুরানো লোক। এখানে এসো না। আঁতা হয় না। কে? ও আচ্ছা। তারপরই একজন বিদেশী নম্র পুরুষের গলা–আনন্দে মাদাম। জেন একপলক দেখলোবেঁটে মতো, ডিমের মতো মাথা আর একজোড়া গোঁফ বিশিষ্ট এক বিদেশী ভদ্রলোক মালপত্র গুছিয়ে আসন ছেড়ে উঠে যাচ্ছে। জেনের কাছে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে গেলো যে ওই মহিলা দুটিকে একসঙ্গে বসার সুযোগ দিতে ভদ্রলোক অন্য আসনে চলে গেলেন। জেনের কৌতূহল বেড়ে গেছে লা পিনেত-এর উল্লেখে কারণ সেও ওখান থেকেই ফিরছে। একজন মহিলাকে ও স্পষ্ট চিনতে পারলো তাকে শেষবার দেখেছিলেন জুয়ার টেবিলে। ক্ষুদে হাতদুটো মুঠো হচ্ছে, খুলছে–প্ৰসাধন করা নিপুণ চীনা পুতুলের মতো মুখটা পর্যায়ক্রমে হর্ষবিষাদে জ্বলছে নিভছে। একটু চেষ্টা করলেই ওর নামটা জেনের মনে এসে যাবে–ম্যাগী না কি যেন নাম। জেন ভাবলো অন্য মহিলাটি গেঁয়ো ঘোড়ার মতো দেখতে। একেবারে আসলী চিজ। ভাবতে ভাবতে জেন ওদের কথা ভুলে গিয়ে বিমান বন্দরের ছায়া দেখতে লাগল। জেন পণ করে রইলো মুখোমুখি বসা নীল সোয়েটার পরা যুবকটির দিকে ও তাকাবে না যাতে চোখাচোখি না হয়। প্লেন গড়াতে শুরু করলো। এই দ্বিতীয়বার জেন আকাশে উড়ছে, তাই দমবন্ধ করে বসে রইলো। ক্রয়ডনের পথে মধ্য দিনের যাত্রা শুরু হলো। সামনের কামরায় দশজন। পেছনে এগারোজন, দুজন বৈমানিক ও দুজন পরিচারক–মোট একুশজন যাত্রী প্লেনে। প্রমিথিউস ইংলিশ চ্যানেলের দিকে উড়ে চলল। জেন গ্রে ভাবছিল কোনো বিশেষ ঘটনা নিয়ে চিন্তা করতে শুরু করি যাতে ওর দিকে না তাকাতে হয়। একটি রোমাঞ্চকর ঘটনা, সেই আইরিস লটারীর একটা টিকিট কেনা থেকেই শুরু। যে কেশবিন্যাস সংস্থায় জেন ও আরো পাঁচটি মেয়ে কাজ করতো সেখানে অনেক হাসাহাসি, ঠাট্টা তামাশা হয়েছিল এটা নিয়ে। অনেক টাকার পুরস্কারের বদলে একশো পাউণ্ড পুরস্কার ও পেয়েছিল। এই দিয়ে জেন লা পিনেত যাচ্ছে বা সবেমাত্র সেখান থেকে ফিরছে। ওদের মুখে শুনে শুনে ওরও ওখানে যাওয়ার সাধ ছিল বহুদিনের। জেন ওখানে পৌঁছে একটু আনন্দ করার জন্য প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলায় জুয়াখেলায় মাপা কয়েকটা টাকা খরচ করতো। কিন্তু প্রথমে খেলতে এসে তার কপাল মার খেল। এতদিন মিতব্যয়ীর মতো খরচ করে চারদিন খেলার পর সেই বাজিটাই সেদিনের শেষ বাজি ছিল। সামান্য জিতেছে কিন্তু অনেক বেশি হেরেছে। পাঁচ আর ছয়–সে নম্বর দুটোর ওপর এখনও কেউ বাজি ধরেনি–ভাবতে ভাবতে জেন ছয় নম্বরের ঘরের দিকে হাত বাড়ালো এবং তার উল্টোদিকে বসা একজন খেলোয়াড় পাঁচের ঘরে বাজি রাখলো। পাঁচ নম্বরে গিয়ে ঘুটি স্থির হলো। জেন তাই বাজির টাকায় হাত না বাড়ানোয় তার উল্টোদিকের লোকটি জেনকে টাকাগুলো নিতে বললো। জেনকে অবাক হতে দেখে লোকটি জানাল সে ছয় ধরেছিল আর জেন পাঁচ। এই অপরূপ সুন্দর যুবকের কথায় একটু ভেবে জেন বাজি জেতার টাকাটা নিল। ভাবলো ওই হয়তো পাঁচ নম্বরটা ধরেছিল। লোকটি সহজভাবে হেসে তখনকার মতো বিদায় জানালো। এই বিমানে জেনের উল্টোদিকে বসা সেই লোকটিকেই দেখে জেনের ভালো মনে হয়েছিল কারণ সে তাকে টাকাটা নিতে দিয়েছিল। এরপর শেষ দুটো দিন সে প্যারিসে কাটিয়ে এখন ফিরতি প্লেনে বাড়ি ফিরছে। বিমানে বসে জেন লক্ষ্য করলো চীনা পুতুলের মতো মহিলাটি একজন পরিচারককে ডাকলো এবং অন্য কামরা থেকে তার দিকে পাঠিয়ে দিতে বললো। কিছুক্ষণের মধ্যেই হাতে ছোটো গয়নার বাক্স নিয়ে একটি ফরাসি মেয়ের আবির্ভাব ঘটলো। ম্যাডেলিন নামক এই মেয়েটিকে লেডি হরবেরিল ফরাসি ভাষায় নির্দেশ দিলেন তার লাল মরক্কো চামড়া-মোড়া বাক্সটা আনতে এবং মেয়েটি সেই প্রসাধন বাক্সটি নিয়ে এলো শেষপ্রান্তে উঁই করা বাক্স কম্বল থেকে। মিসিলি হরবেরিল তাকে বিদায় দিলেন। লেডি হরবেরিল এরপর সাজগোজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। যা দেখে জেন বিরক্ত বোধ করলো। মহিলা দুটির পেছনে সেই ক্ষুদেবিদেশী লোকটা প্রায় ঘুমিয়েই পড়েছিল। তার পাশে বসা একজন লম্বা মতো লোক বাঁশির বাক্স খুলে বাক্স বাঁশি ঘষে চকচকে করছিলো যাকে দেখে জেনের মনে হল উকিল বা ডাক্তার। ওই দুজনের পেছনে দুজন ফরাসি বোধহয় বাবা ও ছেলে হবে বলেছিল। এদিকে জেন কোনো অজ্ঞাত কারণে তার উল্টোদিকে বসা সেই লোকটার দিকে তাকাবে না বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। নরম্যান গেল নামে এই সুন্দর যুবকটি জেনকে চিনতে পেরে তাকে দেখছিল এবং জেনের সৌন্দর্য উপভোগ করছিল। জেনকে ওখানে বাজিতে জিতিয়ে দেওয়ার জন্য নিজেকে বাহবা দিচ্ছিল। ভীষণ উত্তেজিত হয়ে যুবকটি এক পরিচারককে গলা ভেজাবার মতো কিছু দিতে বললো। হরবেরিলর কাউন্টেস তার পাশে বসা ভেনেসিয়া কার ও ভাবছিল তার পাশে বসা মহিলাটি ক্ষুদে ডাইনীর মতো জঘন্য। এরা দুজনেই স্টিফেন নামক একজনের প্রতি অনুরক্ত। এরপর এরা দুজনেই সিগারেট খেতে ব্যস্ত হয়ে উঠল কিন্তু পরিচারকের বাধা পেয়ে বিরক্ত বোধ করলো। ওদিকে বসা সেই ক্ষুদে বিদেশী মঁসিয়ে এরকুল পোয়ারো ভাবছিল জেন এত সুন্দরী হওয়া সত্ত্বেও উল্টোদিকে বসা সুন্দর যুবকটি সম্পর্কে এত সচেতন নয় কেন? ডাঃ ব্রায়ান এরপর গান করে চিন্তামুক্তি কাটালেন। মঁসিয়ে দ্যুপ যাকে বাবা বলে মনে হয়েছিল তিনি তার ছেলেকে ধমকাচ্ছিলেন। তিনি জার্মান ইংরেজ আমেরিকান ও প্রাগৈতিহাসিক সব কিছুকে ভুল বলে প্রতিপক্ষ করতে চাইছিলেন। মঁসিয়ে দূপ প্রমাণের মাধ্যমে তা প্রমাণ করতে চায়। আরম্যন্ত ট্রুপ পুরানো বাক্স খুলে একটি ফরাসি নল দেখিয়ে তা খৃষ্ট পূর্ব ৫০০০ সালের মাটির কাজের মতো বললেন। রহস্য কাহিনীকার মিঃ ক্ল্যান্সি মহাদেশীয় রেলের টাইম টেবিল নিয়ে এলেন যা থেকে তার রহস্য গল্পের জন্য অজুহাত তৈরি করতে হবে। মিঃ রাইজ্যার ভাবছিলেন যে তার নিজের লভ্যাংশ ঠিক রেখে কি করে অন্যদের বেশি দেবেন। মাদাম গিজেল সামনে ঝুঁকে পড়লেন, সবাই ভাবল যে তিনি ঘুমোচ্ছেন, আসলে তিনি মারা গেছেন।