- বইয়ের নামঃ গোলাপী মুক্তো
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ গোয়েন্দা কাহিনী, রোমাঞ্চকর গল্প
গোলাপী মুক্তো
১
এই জিনা, মা বললেন, কি হয়েছে তোর? এরকম করছিস কেন? জিনিসপত্র গোছাতে দিবি না নাকি?
ভাল্লাগছে না কিছু!
কিছু একটা করার চেষ্টা কর গিয়ে, তাহলেই ভাল লাগবে।
কি করব? আকাশের যা অবস্থা, বাইরে বেরোতে পারলে তো। বৃষ্টি আর বৃষ্টি, জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল সে। ওই দেখ, আবার নেমেছে। জানালায় বসে যে সাগর দেখব, তারও উপায় নেই, কিচ্ছু দেখা যায় না। আমার দ্বীপটা পর্যন্ত চোখে পড়ছে না। কি যে করব।
বৃষ্টির দিন, বৃষ্টি তো হবেই, মা বললেন। অবাক করছিস তুই আমাকে, জিনা। ছুটির পয়লা দিনেই বিরক্ত হয়ে গেলি?
ছুটি শব্দটা হাসি ফোঁটাল জিনার মুখে। আবার ছেলে সাজার শখ হয়েছে তার। মাঝে মাঝেই করে এরকম। নামটা পর্যন্ত পাল্টে ফেলে তখন। জরজিনা বা জিনার বদলে তখন তাকে জর্জ বলে ডাকলেই খুশি হয়। মনমেজাজের কোন ঠিকঠিকানা নেই তার। চুল ছেটে আবার ছেলেদের মত করে ফেলেছে। আশা করছে, আবার তাকে কিছুদিন ছেলে ভাবা হবে।
হ্যাঁ, ঠিকই বলেছ, ঘাড় নেড়ে বলল জিনা। ছুটির পয়লা দিনেই ওরকম বিরক্ত হওয়া উচিত না। কিন্তু হয়ে গেছি, কি করব? ভাগ্যিস বাবা আমাদেরকে নিয়ে যাবে বলেছে। এখানে থাকলে মরেই যেতাম! মাঝেমাঝেই বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্যে বিদেশে যান মিস্টার পারকার। এবারেও যাচ্ছেন। সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন জিনা আর তিন গোয়েন্দাকে। মা, লণ্ডনেও কি এরকমই আবহাওয়া থাকবে?
কিছুই বলা যায় না। আরও খারাপ হতে পারে। তবে জায়গা বদল তো হবে, তাতেই আমি খুশি। কিছুদিনের জন্যে এখান থেকে ভাগা দরকার। মেয়েকে আস্তে করে দরজার দিকে ঠেলে দিলেন মা। যা, আর কিছু করতে না পারলে রাফিকে নিয়ে খেলগে। আমি ততক্ষণে গোছগাছটা সেরে ফেলি।
জিনা যেখানে যাবে, রাফিয়ানও সঙ্গে যাবে। জিনার ধারণা, দনিয়ার সব চেয়ে ভাল এবং বুদ্ধিমান কুকুরটা তার। আয়, রাফি, জিনা বলল, এখানে কিছু নেই। চল, রান্নাঘরে গিয়ে দেখি খাবার কিছু মেলে কিনা।
রান্নাঘরে কাজ করছে আইলিন। অনেক সময় কাজ বেড়ে যায়, একা সামলাতে পানে না মিসেস পারকার, তখন খবর দেন আইলিনকে। এই গাঁয়েরই মেয়ে, এসে কাজ করে দিয়ে যায়।
এই যে জিনা, আইলিন বলল। রাফিও যে। তা কি দরকারে এই আন্টির কাছে আগমন? খাবারের খোঁজে নিশ্চয়ই? একটু রাখ, হাতের কাজটা শেষ করে নিই। আপেলের জেলি বানাচ্ছি, তাড়াহুড়ো করলে নষ্ট হয়ে যাবে।
চুলায় কি? জিনা বলল। দারুণ গন্ধ বেরোচ্ছে। টেবিলে বসে পড়ল সে। মিনিট কয়েক পরেই হাজির হয়ে গেল বেশ বড় এক মগ গরম গরম কোকো, আর এক প্লেট সদ্য বানানো বনরুটি। রাফিয়ানও বাদ গেল না, তাজা, রসালো দেখে একটা হাড় দেয়া হয়েছে তাকে।
ছুটিতে বাড়ি এলে খিদে খুব বেড়ে যায়, না? হেসে বলল আইনি। বাড়বেই। হোস্টেলে কি না কি খাও, খাওয়া হয় নাকি।
পেট ভরি আরকি কোনরকমে। হোস্টেলের বাবুর্চিও রাধে, আর তুমিও রাধা। আমার তো মনে হয় দুনিয়ার সেরা বাবুর্চি তুমি, লিনুআন্টি! কিশোররাও তোমার রান্নার খুব প্রশংসা করে।
কালই তো আসছে ওরা, না? প্রশংসায় খুশি হল আইলিন। দেখি, ওদের জন্যে ভাল কিছু বানিয়ে রাখতে হবে।
হ্যাঁ, তাই কর। খাওয়ানোর সুযোগ অবশ্য এবারের ছুটিতে বেশি পাবে না।
না, তা পাব না। কাউকে তো আর রেখে যাচ্ছেন না মিস্টার পারকার।
দারুণ মজা হবে, তাই না? বন চিবাতে চিবাতে বলল জিনা। কিশোররা এখনও জানে না। ওরা আসছে, ভেবেছে এখানেই ছুটি কাটিয়ে যাবে। লণ্ডনে যাচ্ছি, সেটা জানে না। জানাইনি। সারপ্রাইজ দেব। কালই আসছে। কিন্তু ভয় লাগছে, যা পচা বৃষ্টি শুরু হয়েছে, যদি না আসে!
পরদিন বৃষ্টি থামল। আবার ফিরে এল শীতের ঠাণ্ডা, শুকনো, পরিষ্কার আবহাওয়া, বড়দিনের সময় যেরকম থাকে। সকালের বাস ধরল তিন গোয়েন্দা। এগারোটা নাগাদ পৌঁছে গেল গোবেল বীচে। খুশিতে কলরব করতে করতে এসে জিনাদের বাড়িতে ঢুকল ওরা। বসার ঘরেই রয়েছেন মিসেস পারকার।
কেমন আছেন, আন্টি? হেসে বলল কিশোর।
ভাল, কেরিআন্টি বললেন। তোমরা কেমন?
ভাল, জবাব দিল কিশোর।
ভুরু কুঁচকে জিনার দিকে তাকিয়ে রইল মুসা। এই জিনা, আবার ছেলে সেজেছ…
জিনা নয়, জর্জ বলবে, গম্ভীর হয়ে বলল জিনা।
হা-হা করে হাসল মুসা। বুঝেছি। তা কদ্দিন চলবে এটা?
যদ্দিন জর্জের ইচ্ছে হয়, রবিন বলল হেসে।
হুফ! হুফ! সায় জানাল রাফিয়ান। রবিনের হাত চেটে দিল।
ঝটকা দিয়ে খুলে গেল মিস্টার পারকারের স্টাডির দরজা। ভুরু কুঁচকে। তাকালেন ছেলেমেয়েদের দিকে। ও, এসে গেছ। এজন্যেই এত হৈ-চৈ, বলে আবার লাগিয়ে দিলেন দরজা হট্টগোল একদম সহ্য করতে পারেন না তিনি।
রাগলেন না তো! মৃদু শিস দিয়ে উঠল মুসা। আঙ্কেল বদলে গেছেন মনে হচ্ছে? যাক, ছুটিটা তাহলে ভালই কাটবে। ধমক খেতে হবে না।
হ্যাঁ, ভালই কাটবে, কিশোর বলল, কারণ এখানে থাকতে হচ্ছে না আমাদের। পত্রিকায় পড়লাম, লণ্ডনের কাছের আরেকটা শহরে স্পেস ট্রাভেলের ওপর একটা সম্মেলন হচ্ছে। আক্কেল নিশ্চয় দাওয়াত পেয়েছেন। জিনা যখন এত করে আমাদের আসতে বলেছে, ধরেই নেয়া যায়, কোন কারণ আছে। আর সেই কারণ একটাই হতে পারে, আমাদেরকেও সঙ্গে নেয়া হবে।