- বইয়ের নামঃ মার্ডার অ্যাট হ্যাজেলমুর
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- প্রকাশনাঃ সমতট
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর,ভূতের গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী
মার্ডার অ্যাট হ্যাজেলমুর
০১. মেজর বারবি
০১.
মেজর বারবি তার পুরোনো গরম আর ভারী ওভারকোটখানা গায়ে চাপালেন। পায়ে পরলেন গামবুট, হাতে লণ্ঠন ঝুলিয়ে দরজা খুলে এক ঝলক উঁকি মারলেন বাইরের দিকে।
বাইরে নিকষ কালো আঁধার, লণ্ঠনের ম্লান আলোয় মেজর বারনাবি দেখতে পেলেন সামনে আর আশেপাশে শুধু সাদা তুষারের স্তর পড়ে আছে। যতদূর নজর গেল শুধু তুষার ছাড়া আর কিছুই তার চোখে পড়ল না।
গত চারদিন ধরে গোটা ইংল্যান্ডে একটানা তুষারপাত হয়েছে, যার ফলে ডার্টমুর অঞ্চলের এই ছোট্ট সিটাফোর্ড গ্রামের মাটির ওপর তিন চার ফিট তুষারের আস্তরণ জমে রয়েছে।
লণ্ঠনের আলোয় বাইরের দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে কয়েকবার নিঃশ্বাস নিলেন মেজর বারনাবি, তারপর লণ্ঠন হাতে নিয়ে বাংলো থেকে বাইরে বেরিয়ে এলেন তিনি। অল্প কিছুক্ষণ বাদে কাছেই একটা গলিতে এসে ঢুকলেন, সামনেই একটা পুরোনো আমলের বাড়ির সদর দরজার পাল্লায় জোরে কয়েকবার টোকা দিলেন মেজর বারনাবি।
চার পাঁচ সেকেন্ড কাটতে না কাটতেই দরজাটা গেল খুলে, অল্প বয়সি এক পরিচারিকা মেজরকে অভ্যর্থনা করে ড্রইংরুমে নিয়ে গিয়ে বসাল। ড্রইংরুমের ভেতরের বৈদ্যুতিক আলোর সাথে ফায়ারপ্লেসের চুল্লিতে গনগন করে জ্বলছে কাঠের গুঁড়ি। মেজর ফায়ারপ্লেসের সামনে এসে গনগনে আগুনে নিজের হাতদুটো মেলে ধরলেন কিছুক্ষণ, তারপর গলায় আঁটা পুরু পশমী স্কার্ফটা খুলে উল্টোদিকের কৌচে বসলেন আয়েস করে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দরজাটা ঠেলে ড্রইংরুমে ঢুকলেন দুইজন সমবয়সি মহিলা, মেজরকে দেখে আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠলেন তারা।
যাক, আপনি এসেছেন দেখে খুব ভালো লাগল মেজর বারনাবি। মহিলাদের মধ্যে যিনি প্রবীন তিনিই মন্তব্য করলেন, ভীষণ একঘেয়ে লাগছিল মিঃ বারনাবি, যেদিকে তাকাই শুধু তুষার আর তুষার।
আমারও একই অবস্থা, মিসেস উইলেট, মেজর উঠে এসে তাদের দুজনের সঙ্গে করমর্দন করতে করতে বললেন।
মিঃ গারফিল্ড আসছেন, মিসেস উইলেট বললেন, মিঃ ডিউকও আসছেন শুনেছি। আর মিঃ রাইক্রফটেরও আসার কথা আছে, কিন্তু যা বিশ্রী আবহাওয়া, শেষ পর্যন্ত এসে পৌঁছোতে পারবেন কিনা জানি না। তাছাড়া ওনার বয়স তো অনেক হয়েছে। ভায়োলেট, মিসেস উইলেট তার সঙ্গী যুবতীর দিকে তাকিয়ে বললেন, আগুনে আর একটু কাঠ দাও।
থাক, ওটা আমিই দিচ্ছি।বলেই মেজর এগিয়ে এসে পাশে রাখা কাঠের টুকরো তুলে নিয়ে আগুনে ছুঁড়ে ছুঁড়ে দিতে থাকলেন।
আজ থেকে ঠিক দশ বছর আগে রয়্যাল নেভীর ক্যাপ্টেন জোসেফ ট্রেভিলিয়ান চাকরি থেকে অবসর নিয়ে ডার্টমুরের গ্রামাঞ্চলে কিছু জমি কিনে গড়ে তুলেছিলেন সিটাফোর্ড–হাউস। মোট দুটি বাংলো নিয়ে গড়া এই প্রাসাদের একাংশ তিনি হস্তান্তর করেছিলেন তাঁর : পুরোনো পুরোনো বন্ধু ফোর বারনাবিকে। বাকি অংশটুকু তিনি একাই ভোগ করতেন। গোটা বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান বিদ্যুৎ উৎপাদন যন্ত্র বসিয়েছিলেন, জলের পাম্পও বসিয়েছিলেন জল সরবরাহের জন্য।
অনেক টাকা খরচ করে সাধের বাড়িটি তৈরি করার পরে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের টাকার লোভ গিয়েছিল বেড়ে। বাড়ি করার পরে সেখানে ভাড়াটে বসানোর কোনো ইচ্ছে গোড়ায় তার না থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি তা করতে বাধ্য হয়েছিলেন। মিসেস উইলেট নামে আর্থিক সঙ্গতিসম্পন্ন এক ইংরেজ বিধবাকে শেষ পর্যন্ত তিনি বাড়িটি ভাড়া দিয়েছিলেন। শর্ত ছিল একটাই–ট্রেভিলিয়ান নিজে বাড়িতে থাকবেন না। তার অনুপস্থিতিতে গোটা বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখাশোনার ভার তাদেরকেই নিতে হবে। মিসেস উইলেটও এই শর্তে রাজি হয়েছিলেন। একমাত্র অবিবাহিত যুবতী কন্যা ভায়োলেটকে সঙ্গে নিয়ে সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকার নাটাল থেকে এসে বাসা বেঁধেছিলেন ইংল্যান্ডের এই পাড়াগাঁয়ে।
সেই থেকে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান বাড়ির বাইরে। এক্সহ্যাম্পটনে একটি পুরানো বাড়ি ভাড়া নিয়ে আছেন তিনি। সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার সিটাফোর্ডে এসে পুরনো বন্ধু মেজর বারনাবির সঙ্গে কিছু সময় কাটিয়ে যান তিনি। আবার মেজর বারনাবিও সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার ক্যাপ্টেন ট্রাভেলিয়ানের ভাড়া বাড়িতে গিয়ে কিছুটা সময় কাটিয়ে আসতেন। এই ভাবে প্রায় কয়েক বছর যাবৎ দুজনে দুজনের পুরোনো বন্ধুত্বের সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন। না, মেয়েদের সম্পর্কে প্রৌঢ় ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান এখন আর আদৌ আগ্রহী নন, যদিও যৌবনে তিনি যুবতী মেয়েদের নিয়ে অনেক সময় ব্যয় করেছেন। সিটাফোর্ড হাউসে ট্রেভিলিয়ান তার বন্ধু বারনাবির কাছে আসেন শুধু বন্ধুত্বের খাতিরেই, মিসেস উইলেট বা তার যুবতী মেয়ে ভায়োলেটের আকর্ষণে নয়।
মেজর, মিসেস উইলেটের মেয়ে ভায়োলেট হঠাৎ বলে উঠল, ক্রসওয়ার্ড ধাঁধার উত্তর খোঁজা আপনার নেশা, তাই না?
-হ্যাঁ, তা বলতে পারো, মেজর বারনাবি বললেন, এই তো গত মাসে এক ক্রসওয়ার্ড ধাঁধা প্রতিযোগিতায় জিতে আমি তিনটে মোটা বই পেয়েছি।