- বইয়ের নামঃ ড্রাগন
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী, অ্যাডভেঞ্চার, কল্পকাহিনী
ড্রাগন
এক
এমন চমকে উঠল তার দুই সহকারী যে, রবিনের হাত থেকে কার্ডের বাণ্ডিল পড়ে খুলে ছড়িয়ে গেল, বেকায়দা ভঙ্গিতে ঝাঁকুনি দিয়ে ওপরে উঠে গেল মুসার হাতে ধরা স্কু-ড্রাইভারটা। এতদিন পুরানো ছাপার মেশিনটা মুসা একাই রকিব হাসান ব্যবহার করেছে, কিন্তু কিশোরের নির্দেশে রবিন এখন শিখে নিচ্ছে কাজটা। মুসাকে শিখে নিতে বলা হয়েছে ইলেকট্রনিকের কাজ, এতদিন এই কাজটা কিশোর করত। তার মতে, সব কাজ মোটামুটি জানা থাকলে গোয়েন্দাগিরিতে অনেক সুবিধে।
কি বললে? স্ক্রু-ড্রাইভারের খোঁচা লেগে রেডিওর বাক্সের পেছনে হার্ডবোর্ডের কভারে বিশ্রী একটা আঁচড় পড়েছে, সেটা মোছার চেষ্টা করল মুসা।
বলছিলাম কি, আবার বলল কিশোর, এই অঞ্চলে আগে কখনও হয়নি, এমন একটা ডাকাতি করলে কেমন হয়? ধরা যাক, অনেক বড় অপরাধী আমরা, মাস্টার ক্রিমিন্যাল…
তাহলে আগে ভাবো, ধরা পড়লে কি হবে? শুনেছি, অপরাধ করে শেষ পর্যন্ত কোন অপরাধীই পার পায় না।
কার্ডগুলো কুড়িয়ে নিচ্ছে রবিন। মাস্টার ক্রিমিন্যাল হয়ে সুবিধে করতে পারব না। প্রেসে কার্ড ছাপাটাই শিখতে পারলাম না ঠিকমত, এত সহজ একটা কাজ।
কথার কথা বললাম আর কি, কিশোর বলল। আমরা গোয়েন্দা তো, মনে হলো বড় ডাকাতি কিভাবে কিভাবে হতে পারে, সেটা আগেই যদি ভেবে রাখি, অপরাধীদের চেয়ে এগিয়ে থাকতে পারব। মাস্টার মাইণ্ড ক্রিমিনালদের অপরাধী মনে কি কি ভাবনা চলে, বুঝতে পারব। অনেক সময় দুর্বোধ্য করে কথা বলা কিংবা কঠিন শব্দ ব্যবহার করা কিশোরের স্বভাব।
মাথা ঝাঁকাল মুসা, তা ঠিক। এই যেমন, তোমার ফর্মুলায় ফেললে, রেডিওর মালিকদের কুৎসিত মনে কি কি ভাবনা চলে সেটা জানা থাকলেও আমার জন্যে অনেক সুবিধে হবে। দেখেছ, রেডিওটার কি অবস্থা করেছে? কতখানি বাজে লোক হলে এমন সুন্দর একটা জিনিসকে এভাবে নষ্ট করতে পারে? খারাপ করে আবার নিজে নিজেই কারিগরি ফলাতে গেছে। একটা তারও জায়গামত নেই…দাঁড়াও, আগে ঠিক করে নিই। তারপর ডাকাতির আলোচনায় যোগ দেব।
কাজ শেষ, শুধু একটা স্কু লাগানো বাকি। শক্ত করে লাগাল সেটা মুসা। তারপর হাসিমুখে রেডিওটা তুলে কিশোরকে দেখিয়ে বলল, এটা বেচতে পারলে কম করেও তিন ডলার লাভ হবে তোমার চাচার। বাতিল জিনিস ছিল, একেবারে নতুন করে দিলাম।
হাসল কিশোর। দেখতে তো ভালই লাগছে। দেখো, কাজ করে কিনা।
ছোট্ট একটা নব টিপে দিয়ে ডায়াল ঘোরাতে শুরু করল মুসা। করছে!…এই যে লাইট জ্বলে।
খরুখর আওয়াজ বেরোল স্পীকার থেকে, ফিসফাস, ঝনঝন আর নানারকম বিচিত্র শব্দ করল কয়েক মুহূর্ত, তারপর শোনা গেল কথা।
স্পষ্ট ভারি গলায় খবর হচ্ছে: …সী-সাইডের অদ্ভুত ঘটনার কোন সমাধান করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। গত এক হপ্তায় পাঁচটা কুকুর নিখোঁজ হওয়ার খবর এসেছে। কুকুরের মালিকেরা উদ্বিগ্ন।…কুকুর মালিক সমিতির সভাপতি মিস্টার ক্যাঙরুনিয়ান আজ
দূর, দাও বন্ধ করে, হাত নাড়ল কিশোর।
হাহ, শেষমেশ কুত্তা চোর, নব ঘুরিয়ে রেডিও অফ করে দিল। মুসা। পাঁচটা কুকুর নিয়ে গেছে। করবে কি?
মাস্টার ক্রিমিন্যাল কিশোর পাশাকে সমাধান দিতে অনুরোধ করছি, হেসে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল রবিন। তবে সেই সঙ্গে আমার অনুমানটাও বলে দিই। কুকুর চুরি করে লুকিয়ে রাখবে চোর। এ এলাকার সব কুকুর যখন শেষ হয়ে যাবে, বাজারে কুকুরের চাহিদা বাড়তে বাড়তে অসম্ভব দাম হয়ে যাবে, তখন একদিন ঝপাৎ করে এনে অনেক কুকুর বাজারে ফেলবে। বিক্রি করে রাতারাতি বড়লোক হয়ে যাবে।
নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে কিশোর, তারমানে গভীর ভাবনা চলছে তার মনে। অদ্ভুত! আনমনে বিড়বিড় করল।
কি অদ্ভুত? জানতে চাইল রবিন। পাঁচটা কুকুর? পাঁচ আমার কাছেও অদ্ভুত লাগে…
মাথা নাড়ল কিশোর। পাঁচ সংখ্যাটা অদ্ভুত লাগছে না, লাগছে পাঁচটা কুকুর। এক হপ্তায় পাঁচটা হারাল, বেশি হয়ে গেল না?
ওই যা বলছিলাম, কুত্তা চোরের কাজ, কুকুরের বাজার দর ওঠাতে চাইছে। কিংবা মাংসের কারখানার মালিকের সঙ্গে শত্রুতা হয়েছে চোরের। কুকুর না থাকলে কুকুরের জন্যে মাংস কিনবে না কেউ, ফলে মার খাবে কোম্পানি। বিচিত্র প্রতিশোধ বলতে পারো।
আলতো হাসি ফুটল কিশোরের ঠোঁটে। অনেক ঘুরিয়ে ভাবছ। এভাবে ভাবলে হবে না। আমি জানতে চাই, এক হপ্তায় পাঁচটা কেন? আর এই রহস্যের সমাধান করার জন্যে এখনও ডাকা হলো না কেন আমাদের?
হয়তো রহস্যটা তেমন জটিল মনে করছে না, মুসা বলল। মাঝেমধ্যেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় কুকুর, কদিন পর আবার ফিরেও আসে। এটা কোন ব্যাপারই না।
আমারও তাই মনে হয়, মাথা দোলাল রবিন। খবরে কিন্তু বলেনি কুকুরগুলো দামী। শুধু বলেছে, নিখোঁজ।
হয়তো তোমাদের অনুমানই ঠিক, মেনে নিতে পারছে না। কিশোর। ভাবছি, কেউ তো এখনও ডাকল না, রহস্যটায় নাক গলাই কিভাবে? যেচে খোঁজ নিতে গেলে যদি মালিকেরা বিরক্ত হয়, কিংবা আমাদেরকেই চোর ভেবে বসে?
যাচ্ছে কে? বলল মুসা।
বা-রে, এমন একটা জটিল রহস্য…