- বইয়ের নামঃ টেন ডলস
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই
টেন ডলস
১. অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মিঃ ওয়ারগ্রেভ
টেন ডলস – আগাথা ক্রিস্টি
অনুবাদ : নচিকেতা ঘোষ
০১.
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মিঃ ওয়ারগ্রেভ চলেছেন ট্রেনে। প্রচণ্ডগতিতে ছুটে চলেছে ট্রেন। তিনি ভাবছেন চিঠিটির কথা। একসময় পকেট থেকে সেটি বার করে পড়লেন।
প্রিয় লরেন্স,
অনেকদিন পর তোমার সঙ্গে দেখা হতে পারে, যদি পান্না দ্বীপে আস। মনোরম পরিবেশ। ১২-৪০ মিঃ প্যাডিংটন… ওক ব্রিজে দেখা হবে।
প্রীতি ও শুভেচ্ছান্তে
কনসটান্স কালমিংটন।
অস্পষ্ট ছোট্ট চিঠি। তার মনে পড়ে সাত-আটবছর আগে পত্রলেখিকার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল ইতালিতে। এতদিন পরে কি মনে করে চিঠি লিখছেন কে জানে?
পান্না দ্বীপটার কথা হালে খবরের কাগজে চোখে পড়েছে। এক ধনী ব্যক্তি দ্বীপটা প্রথমে কিনেছিলেন। সুন্দর একটা বাড়িও সেখানে তৈরি করেছেন।
পরে সেটা তিনি বেচে দেন এক চিত্রাভিনেত্রীর কাছে। অবশ্য অনেকের ধারণা নৌবাহিনীর কাজে লাগাবার উদ্দেশ্যে সরকার কিনেছে দ্বীপটা।
কেউ অবশ্য বলছেন মিঃ আওয়েন নামে এক ধনী ব্যক্তি বর্তমানে দ্বীপটার মালিক।
মিঃ ওয়ারগ্রেভ পলকের মধ্যে সবকিছু ভেবে নিলেন। পরে চিঠিটা পকেটে রেখে পা ছড়িয়ে আরাম করে বসলেন।
.
ভেরা ক্লেথর্ন, সেও চলেছে ট্রেনে, তৃতীয় শ্রেণীর একটা কামরায়। এই ভ্যাপসা গরমের সময় সমুদ্রতীরের মনোরম পরিবেশে আরামে থাকা যাবে এই ভেবেই সে আনন্দ পাচ্ছে। তার ওপর মনটা উল্লসিত নতুন একটা কাজ পেয়ে।
অবশ্য মাত্র একমাসের জন্য, প্রাইভেট সেক্রেটারির কাজ। স্কুলে বাচ্চাদের সঙ্গে মাঝে মাঝে হাঁপ ধরে যায়, একটা মাস অন্তত নিরিবিলিতে থাকা যাবে। স্কুল থেকে একমাসের জন্য ছুটি নিয়ে নিয়েছে।
আবেদন করেছিল কাগজের বিজ্ঞাপন দেখে। সঙ্গে সঙ্গেই যে নিয়োগপত্র পেয়ে যাবে, ভাবতে পারেনি।
এ মাসের ৮ তারিখ থেকে কাজে যোগদানের কথা জানানো হয়েছে। নিয়োগকর্তা লিখেছেন–
… প্যাডিংটন থেকে ১২-৪০ মিঃ-এ ট্রেন। ওক ব্রিজ স্টেশনে আপনার সঙ্গে আমার দেখা হবে। এই সঙ্গে পথখরচের টাকা পাঠানো হলো।
ধন্যবাদান্তে–
উনা নানসি আওয়েন
হঠাৎ, কি জানি কেন, হুগোর কথা ভেরার মনে পড়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে সে সামনের লোকটির দিকে মনোযোগ দিয়ে তা ভুলে যাবার চেষ্টা করল।
সামনের সিটেই বসে আছে লম্বা-চওড়া লোকটি। গায়ের রং তামাটে। মুখে একটা, নিষ্ঠুরতার ছাপ। দেখেই মনে হয় গ্রীষ্মমণ্ডলে ঘোরা লোক।
ভেরার সামনে বসেছিল যে লোকটি তার নাম ফিলিপ লমবার্ড। ভেরার দিকে তারও চোখ পড়েছিল, সুন্দরী বলেই তার মনে হয়েছে। তবে মুখে মাস্টারনির ছাপ স্পষ্ট।
আসলে নতুন কাজটার কথাই সে তখন ভাবছে। এজেন্ট তাকে জানিয়েছে, ডেভনের পান্না দ্বীপে গিয়ে নিয়োগকর্তার সঙ্গে দেখা করতে হবে।
সমুদ্রের ধারে মনোরম পরিবেশে কাজটা তার ভাল লাগবে বলেই সে মনে করছে।
প্রচণ্ড গতিতে ছুটে চলেছে ট্রেন। আর এক কামরায় বসে আছেন মিস এমিলি ব্রেনট। বয়স পঁয়ষট্টি। চিরকুমারী। সেকেলে চিন্তাভাবনার মানুষ। বাইবেল নিয়ে বসে থাকতেই ভালবাসেন।
একটা চমৎকার আমন্ত্রণ পেয়ে, তিনি পান্না দ্বীপে চলেছেন। তার পুরনো এক বান্ধবী লিখেছে–
…বেলহাভেনের এক অতিথি-নিবাসে আলাপ হয়েছিল, নিশ্চয় মনে আছে। আপাতত জানাচ্ছি, ডেভনের কাছে আমি নিজেই একটা অতিথি-নিবাস খুলছি। আপনার মত সুরুচিসম্পন্ন লোকেরা থেকে আনন্দ পাবেন।
চলে আসুন না আগস্ট মাসের ৮ তারিখে। খুব আনন্দ হবে।
শুভেচ্ছান্তে
ইতি
ইউ, এন, ও
বছর দুয়েক আগে মিস এমিলি বেলহাভেনে গিয়েছিলেন। মনে আছে, সেখানে মাঝবয়সী এক মহিলার সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছিল। অবশ্য নাম বা পদবী এখন আর মনে পড়ছে না। তাতে কি, আমন্ত্রণটা আন্তরিক, কদিন শান্তিতে থাকা যাবে। চারপাশে আজকাল ছেলেছোকরাদের যা চলন-বলন হয়েছে, ঘেন্না ধরে যায়।
.
অন্য একটা ট্রেনে জানালার কাছে বসে আছেন জেনারেল ডগলাস। শাখা লাইনের ট্রেন-গতি মন্থর। পান্না দ্বীপে পৌঁছতে অনেক সময় লাগিয়ে দেবে।
কে এক আওয়েনের চিঠি পেয়েই তিনি চলেছেন সেখানে। লোকটিকে চিনতে না পারলেও চিঠিটা অগ্রাহ্য করতে পারেননি।
ভদ্রলোক লিখেছেন–
… পুরনো বন্ধুরাও অনেকেই আসছেন। আপনিও চলে আসুন না, বেশ ভাল লাগবে। পুরনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন করা যাবে।
হারানো দিনের কথা জেনারেলের ভালই লাগে, এক রিচমণ্ড প্রসঙ্গ বাদে। প্রায় ত্রিশ বছর আগের এক বিষাক্ত অতীত সেটা। তা হোক–ওই প্রসঙ্গে না এলেই হল।
ট্রেনের গতিটা যদি বাড়ত। অধীর হয়ে পড়ছেন ক্রমেই জেনারেল।
.
ডাঃ আরমস্ট্রং চলেছেন সলসবেরি থেকে। মরিস গাড়িটা নিজেই চালাচ্ছেন। ধোপদুরস্ত পোশাক, সুন্দর চেহারা। সাফল্যের ঔজ্জ্বল্য মাখানো মুখে।
চিকিৎসক হিসেবে তিনি নিঃসন্দেহে খ্যাতিমান। জীবনে অবসর বলে কিছু নেই। এটাই খ্যাতির বিড়ম্বনা। তাই পান্না দ্বীপের ডাক পেয়ে খুশি হয়েছেন।
রুগী দেখাও হবে, সেই সঙ্গে নির্জন পরিবেশের সুখও উপভোগ করা যাবে।
চিঠি পাঠিয়েছেন মিঃ আওয়েন। তাঁর স্ত্রী নার্ভের অসুখে ভুগছেন। এ অবশ্য এমন কিছু রোগের পর্যায়ে পড়ে না।
ডাঃ আরমস্ট্রং-এর সাফল্যের ইতিহাস অবশ্য একেবারে কলঙ্কমুক্ত নয়। সেই অধ্যায় অবশ্য তাঁর চিকিৎসক জীবনের গোড়ার দিককার।