- বইয়ের নামঃ রত্নদানো
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, রোমাঞ্চকর গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী
রত্নদানো
০১.
রামধনু রত্নহার চুরি করা যায় কিনা, ভাবছি! আপনমনেই বলল কিশোর পাশা।
সোলডারিং আয়রনটা মুসার হাত থেকে প্রায় খসে পড়ে যাওয়ার জোগাড় হল। রেডিওর তারা ঝালাই বাদ দিয়ে ফিরে তাকাল সে। তিন গোয়েন্দার। কার্ড শেষ হয়ে এসেছে, আবার ছাপা দরকার, কম্পোজ করছে রবিন, তারও হাত থেমে গেল।
কী! চোখ বড় হয়ে গেছে গোয়েন্দা সহকারীর।
বলছি, রামধনু রত্নহারটা চুরি করা যায় কিনা! আবার বলল গোয়েন্দাপ্রধান। ধর যদি আমরা চোর হতাম?
যা নই সেটা নিয়ে ভাবতে যাব কেন? চুরি করা অন্যায়।
তা ঠিক! হাতের খবরের কাগজে বিশেষ ফিচারটার দিকে আবার তাকাল। কিশোর।
হাতের স্টিকটা নামিয়ে রেখে মুখ তুলল রবিন। কিশোর, রামধনু রত্নহার! কিসের বাংলা করলে?
রেইনবো জুয়েলস।
পিটারসন মিউজিয়মের নেকলেসটা?
হ্যাঁ।
গত রাতেই নেকলেসটার কথা শুনেছে রবিন, তার বাবা বাসায় আলোচনা করছিলেন।
পিটারসন মিউজিয়ম। নেকলেস! কি বলছ তোমরা? কিছুই বুঝতে পারছে না মুসা।
কোন্ দেশে বাস কর? খোঁজখবর রাখ কিছু! বিদ্যে জাহির করার সুযোগ পেয়ে গেছে নথি। মিউজিয়মটা হলিউডে, একটা পাহাড়ের চূড়ায় পুরানো একটা বাড়ি, মালিক ছিলেন এক মস্ত ধনী লোক, হিরাম পিটারসন। মিউজিয়মের জন্যে বাড়িটা দান করে দিয়েছেন তিনি।
বর্তমানে ওখানে একটা প্রদর্শনী হচ্ছে, বলল কিশোর। রত্ন প্রদর্শনী। এর ব্যবস্থা করেছে জাপানের মস্ত বড় এক জুয়েলারি কোম্পানি, সুকিমিচি জুয়েলারস। আমেরিকার সব বড় বড় শহর ঘুরে ঘুরে প্রদর্শনী করবে ওরা। এটা আসলে এক ধরনের বিজ্ঞাপন। এদেশে অলঙ্কারের বড় মার্কেট রয়েছে। ওই কোম্পানির বিশেষত্ব হল মুক্তোর তৈরি অলঙ্কার। অনেক পুরানো দামি জিনিসও আছে ওদের স্টকে। তারই একটা রেইনবো জুয়েলস, সোনার তৈরি সাতনরি হার, হীরা-চুনি পান্নাখচিত। নাড়া লাগলেই রামধনুর সাতরঙ যেন ছিটকে বেরোয় পাথরগুলে থেকে। দাম অনেক।
আরও একটা দামি জিনিস এনেছে ওরা, কিশোরের কথার পিঠে বলে উঠল রবিন। একটা সোনার বেল্ট। অনেকগুলো পান্না বসানো আছে ওতে। জিনিসটার ওজন পনেরো পাউণ্ড। ওটার মালিক ছিলেন নাকি জাপানের প্রাচীন এক সম্রাট।
তোমার মাথা খারাপ হয়েছে, কিশোর! বিস্ময় কাটেনি এখনও মুসার। এত দামি জিনিস চুরি করার সাধ্য কারও নেই! নিশ্চয়ই কড়া পাহারা দিয়ে রাখা হয়েছে জিনিসগুলো, ব্যাঙ্কের ভল্টের মত…।
তার চেয়েও কড়া পাহারায় রয়েছে। জিনিসগুলো যে-ঘরে রাখা হয়েছে, ওখানে পালা করে সারাক্ষণ পাহারা দেয় পিস্তলধারী প্রহরী। মানুষের চোখকে পুরোপুরি বিশ্বাস নেই, তাই বসানো হয়েছে একটা ক্লোজড-সার্কিট টেলিভিশন ক্যামেরা। রাতে যদি ক্যামেরা ঠিকমত কাজ না করে? সেজন্যে অদৃশ্য আলোকরশ্মির ব্যবস্থা হয়েছে। যে-কোন একটা রশ্মি কোনভাবে বাধা পেলেই চান হয়ে যাবে অ্যালার্ম সিস্টেম। কাঁচের বাক্সে রাখা হয়েছে রেইনবো জুয়েলস আর সোনার বেল্ট। ওই বাক্সেও রয়েছে অ্যালার্ম ব্যবস্থা। বাক্সের ভেতর কেউ হাত দিলেই বেজে উঠবে বেল। কারেন্ট ফেল করলেও অসুবিধে নেই, ব্যাটারি কানেকশন রয়েছে প্রতিটি সিসটেমের সঙ্গে।
ওই তো, যা বলেছিলাম, বলল মুসা। কেউ চুরি করতে পারবেন জিনিসগুলো।
হ্যাঁ, বড় রকমের চ্যালেঞ্জ একটা, মাথা নাড়ল কিশোর।
চ্যালেঞ্জ! ভুরু কুঁচকে গেছে রবিনের। আমরা কি চুরি করতে যাচ্ছি নাকি ওগুলো!
করার মত কোন কাজ এখন আমাদের হাতে নেই, সহজ গলায় বল কিশোর। মিস্টার ডেভিস ক্রিস্টোফারও অনেকদিন কোন কাজ দিতে পারছেন না। সময় তো কাটাতে হবে আমাদের। ব্রেনটা চালু রাখতে হবে। জিনিসগুলো চুরি করার একটা উপায় নিশ্চয় আছে, সেটা যদি জানতে পারি, ভবিষ্যতে অনেক কঠিন রত্ন-ডাকাতির কেস সহজেই সমাধান করতে পারব আমরা।
অযথা সময় নষ্ট! ঠোঁট ওল্টাল মুসা। চুরিচামারির কথা ভাবার চেয়ে চলা গিয়ে ডাইভিং প্র্যাকটিস করি, পুরোপুরি রপ্ত হয়নি এখনও আমাদের।
আমিও তাই বলি, মুসার পক্ষ নিল রবিন। বাবা কথা দিয়েছে, ডাইভিংটা ভালমত শিখে নিলে আমাদেরকে মেক্সিকোতে নিয়ে যাবে। উপসাগরে সাঁতার কাটতে পারব, পানির তলায় ওখানে বড় বড় জ্যান্ত চিংড়ি পাওয়া যায়। অক্টোপাসের বাচ্চা
চুপ চুপ, আর বল না, রবিন! জোরে জোরে হাত নাড়ল মুসা। এখুনি ওখানে চলে যেতে ইচ্ছে করছে আমার!
খবরের কাগজে লিখেছে। দুই সহকারীর কথা যেন শুনতেই পায়নি কিশোর, আজকে মিউজিয়মে চিলড্রেনস ডে। আঠারো বছরের নিচের যে-কোন কিশোর হাফ-টিকেটে ঢুকতে পারবে আজ। ইউনিফর্ম পরে যে বয়স্কাউটরা যাবে, তাদের পয়সাই লাগবে না।
আমাদের ইউনিফর্ম নেই, তাড়াতাড়ি বলল মুসা। তারমানে আমরা বাদ।
গত হপ্তায় চাচাকে সাহায্য করেছি আমরা, ইয়ার্ডের কাজ করে বেশ কিছু কামিয়েছি, মনে করিয়ে দিল কিশোর। হাফ কেন, ফুল টিকেট কিনে প্রদর্শনী দেখার ক্ষমতা এখন আমাদের আছে। ভাবছি, আজই কেন চলে যাই না? আর কিছু না হোক, রেইনবো জুয়েলস দেখার সৌভাগ্য তো হবে। আসল মুক্তো আর হীরা চুনি-পান্না দেখতে পারব। ভবিষ্যতে কাজে লাগবে এই অভিজ্ঞতা।