- বইয়ের নামঃ মমি
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, রোমাঞ্চকর গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী, অ্যাডভেঞ্চার, কল্পকাহিনী
মমি
০১.
পাশা স্যালভেজ ইয়ার্ডে ব্যস্ততা।
চাচীকে সাহায্য করছে কিশোর পাশা, আর তার দুই বন্ধু মুসা আমান ও রবিন মিলফোর্ড।
তিন চাকার ছোট্ট গাড়ি নিয়ে ইয়ার্ডের ভেতরে এসে ঢুকল পোস্টম্যান। একগাদা পুরানো লোহা-লক্কড়ের কাছে দাঁড়ানো মারিয়া পাশার দিকে চেয়ে আস্তে করে মাথা ঝোকাল একবার, তারপর এগিয়ে গেল কাঁচে ঘেরা ছোট্ট অফিস ঘরের দিকে। বারান্দার দেয়ালে ঝোলানো চিঠির বাক্সে একগাদা চিঠি ফেলে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল আবার।
হায়, আল্লাহ! বলে উঠলেন মেরিচাচী, ভুলেই গিয়েছিলাম! কিশোর, বাপ, এক দৌড়ে পোস্ট অফিসে যা তো! একটা জরুরি চিঠি রেখে গেছে তোর চাচা, পোস্ট করে দিয়ে আয়।
অ্যাপ্রনের পকেটে হাত ঢুকিয়ে দোমড়ানো একটা খাম বের করলেন মেরিচাচী। হাত দিয়ে ডলে সমান করে বাড়িয়ে দিলেন কিশোরের দিকে।
রেজিস্ট্রি করে পাঠাস, বললেন মেরিচাচী। আরেক পকেট থেকে টাকা বের করে দিলেন কিশোরকে। সকালের ডাক ধরাতে পারিস কিনা দেখিস।
পারব, কিশোরের কণ্ঠে আত্মবিশ্বাস। মুসা আর রবিনকে খাঁটিয়ে নাও এই সুযোগে। দুই বন্ধুর দিকে চেয়ে মুচকি হাসল গোয়েন্দাপ্রধান। তাড়াতাড়ি সাইকেল বের করে চড়ে বসল।
গেট দিয়ে বেরিয়ে গেল কিশোর। সেদিকে চেয়ে মিষ্টি করে হাসলেন। মেরিচাচী। মুসা আর রবিনকে বললেন, চল, চিঠিপত্রগুলো দেখে ফেলি। আজকাল কিশোরের নামেও অনেক চিঠি থাকে।
খুশি মনেই মেরিচাচীকে অনুসরণ করল দুই গোয়েন্দা।
বাক্স খুলে চিঠিগুলো নিয়ে অফিসে এসে বসলেন মেরিচাচী। একটা চিঠি খুলে দেখলেন। হুমম, একটা বাড়ির মাল নিলাম হবে।—এটা, বিল—একটা স্টীম বয়লার বিক্রি করেছিলাম, তার বিল।—আরেকটা বিল।—ও, এটা এসেছে আমার বোনের কাছ থেকে।—এটা?—একটা বিজ্ঞাপন টেলিভিশনের— একটার পর একটা চিঠি খুলে দেখছেন, আর মন্তব্য করছেন চাচী। রাশেদ চাচার নামে ব্যক্তিগত চিঠিও আছে গোটা দুয়েক। ওগুলো খুললেন না। আরও দুটো চিঠির নাম ঠিকানা দেখে সামান্য ভুরু কোচকালেন। মৃদু একটা হাসির রেখা দেখা দিয়েই মিলিয়ে গেল। ঠোঁটে। খুললেন না এ দুটোও, আড়চোখে তাকালেন একবার মুসা আর রবিনের মুখের দিকে। বড়ই হতাশ হয়েছেন যেন, এমনি ভঙ্গিতে মাথা নাড়লেন। নাহ, কিশোরের জন্যে কিছুই নেই। দুই গোয়েন্দার দিকে সরাসরি তাকালেন। তবে, তিন গোয়েন্দার নামে আছে দুটো, এই যে। নেবে নাকি? না কিশোরের হাতে দেব?
মেরিচাচীর কথা শেষ হওয়ার আগেই ছোঁ মেরে চিঠি দুটো তুলে নিল মুসা। রবিনের দিকে চেয়ে বলল, হেডকোয়ার্টারে যাচ্ছি! ছুটে বেরিয়ে গেল অফিস থেকে।
মুসার পেছনেই বেরোল রবিন। ফিরে চাইলে দেখতে পেত, সস্নেহ হাসি ফুটছে মেরিচাচীর ঠোঁটে।
পেছনে ফিরে তাকাল একবার মুসা, আমাদের অফিশিয়াল কিছু হতে পারে, গোপনীয়। তাই ওখানে খুললাম না। হেডকোয়ার্টারে ঢুকে খুলব।
মাথা কাত করল রবিন।
দুই সুড়ঙ্গের সামনে গিয়ে দাঁড়াল মুসা। লোহার পাতটা সরিয়েই ঢুকে পড়ল পাইপের ভেতরে।
মোবাইল হোমের ভেতরে অন্ধকার। সুইচ টিপে আলো জ্বেলে দিল মুসা। ফিরে তাকাল। রবিনও ঢুকছে।
দুটো চিঠিরই কোণের দিকের ঠিকানা পড়ল মুসা। রবিন! চেঁচিয়ে উঠল। উত্তেজিত গলায়। একটা এসেছে মিস্টার ক্রিস্টোফারের কাছ থেকে। এটাই আগে খুলি।
রবিনও উত্তেজিত। না, এটা পরে। কাজের কিছু থাকলে ওটাতেই আছে। আচ্ছা, কিশোরের ফেরার অপেক্ষা করবে?
এত সৌজন্য না দেখালেও চলবে, ঝাঝাল কষ্ঠ মুসার। একটু আগে কি বলল? আমাকে আর তোমাকে খাঁটিয়ে নিতে। ওসব অপেক্ষা-টপেক্ষার দরকার নেই। খোল। রেকর্ড রাখার আর পড়াশোনার দায়িত্ব তোমার ওপর। তার মানে। চিঠি খোলারও।
মুসার কথায় যুক্তি আছে, আর কিছু বলল না রবিন। একটা চিঠি নিয়ে সাবধানে ছুরি ঢুকিয়ে দিল এক প্রান্তে। কাটল। আচ্ছা, মুসা, চিঠিটা পড়ার আগে চেষ্টা করে দেখি, দেখেই কিছু বোঝা যায় কিনা। কি বল? শার্লক হোমস চিঠি দেখেই অনেক কিছু বলে দিতে পারতেন ওটা সম্পর্কে। কিশোরও তাই বলে, শুধু দেখেই নাকি অনেক কিছু বলে দেয়া যায়। এস, চেষ্টা করে দেখি।
শুধু দেখেই কি আর বলা যাবে? সন্দেহ ফুটেছে মুসার চোখে।
জবাব দিল না রবিন। গভীর মনোযোগে উল্টেপাল্টে পরীক্ষা করছে খামটা। হালকা নীল রঙ। নাকের কাছে তুলে শুকল। লাইলাক ফুলের গন্ধ। ভেতরের কাগজটা বের করল। গন্ধ আর রঙ খামটার মতই। চিঠির কাগজের এক কোণে। ছোট্ট একটা ছবি ছাপা, দুটো বেড়ালের বাচ্চা খেলছে।
হুম! গম্ভীর হল রবিন। কপালে ডান হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে আস্তে টোকা দিল বার দুই, যেন মগজটাকে খোলাসা করে নিতে চাইছে। হ্যাঁ, আমার কাছেই এসেছে এটা (সিনেমায় দেখা শার্লক হোমসের কথা আর ভঙ্গি নকলের চেষ্টা করছে)। পাঠিয়েছেন এক মহিলা। বয়েস, এই, পঞ্চাশের কাছাকাছি। বেঁটেখাট, মোটা। চুলে রঙ মাখানো। কথা বলেন প্রচুর। বেড়াল বলতে পাগল। মনটা খুব ভাল। মাঝে মাঝে সামান্য খেয়ালী হয়ে পড়েন। এমনিতে তিনি হাসিখুশি, তবে এই চিঠি লেখার সময় খুব দুশ্চিন্তায় ছিলেন।