- বইয়ের নামঃ এম্পায়ার অব দ্য মোগল দ্য সার্পেন্টস্ টুথ
- লেখকের নামঃ অ্যালেক্স রাদারফোর্ড
- প্রকাশনাঃ রোদেলা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, উপন্যাস
এম্পায়ার অব দ্য মোগল দ্য সার্পেন্টস্ টুথ
১.১ প্রথম পর্ব – হাজারো বার শুভ রাত্রি
এম্পায়ার অভ দ্য মোগল ৫ (দ্য সার্পেন্টস্ টুথ) / অ্যালেক্স রাদারফোর্ড / অনুবাদ : জেসি মেরী কুইয়া
অনুবাদকের উৎসর্গ – যারা অনুবাদ বই পড়তে ভালোবাসেন
প্রথম পর্ব – হাজারো বার শুভ রাত্রি! রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট
১.১
আগ্রা দুর্গ, উত্তর-পশ্চিম ভারত, ১৬২৮
একেবারে শেষ মুহূর্তে শাহজাহানের চোখে পড়ল সূর্যের আলো পড়ে ঝিক করে ওঠা ছোরার ফলা। গলা বাঁচাতে ডান হাত তুলে ধরতেই অনুভব করলেন কনুইয়ের ঠিক নিচের পেশীতে ঢুকে গেছে ধারালো ব্লেড। রুপালি সিংহাসনের উপর গড়িয়ে পড়তে লাগল রক্তের ফোঁটা ঝাঁকুনি দিয়ে উঠে দাঁড়াতেই সিংহাসন হেলে পড়তে লাগল পিছন দিকে, তারপরেও আবারো আঘাত করার আগেই ধরে ফেললেন আততায়ীর হাত। সর্বশক্তি দিয়ে ছুঁড়ে মারলেন লোকটাকে। লোকটা গিয়ে অল্পের জন্য মার্বেলের বেদী ছুঁতে গিয়েও পারল না, পড়ে গেল। এর উপরেই দাঁড়িয়ে আছে সিংহাসন। মার্বেলের গায়ে ধাক্কা খেতেই লোকটার মাথা থেকে পড়ে গেল বেগুনি পাগড়ি আর হাতে থাকা ছোরা। শাহজাহান এত জোরে আততায়ীর হাত দুটোকে পিছনে টেনে ধরলেন যে কব্জি ভাঙ্গার শব্দ পাওয়া গেল স্পষ্ট। লোকটার হাতের ছোরা কেড়ে নিয়ে দুই হাঁটু ভেঙে বসে পড়লেন আততায়ীর বুকের উপর। এরই মাঝে পৌঁছে গেল ওনার সবুজ পোশাকের দেহরক্ষীর দল। কিন্তু তিনি ভালোভাবেই বুঝতে পারলেন যে তাঁকে রক্ষা করার মত যথেষ্ট দ্রুত ছিল না সেই দল।
আবারো উঠে দাঁড়াতেই শাহজাহানের স্যান্ডেলের নিচে পড়ল সিংহাসন থেকে খুলে পড়া রুবি আর টারকোয়াজ। কঠিন দৃষ্টিতে তাকালেন আততায়ীর দিকে। দেহরক্ষীর দল প্রথমে লোকটাকে দাঁড় করিয়ে হাত দুটো বেঁধে ফেলল পিছমোড়া করে। তারপর লাথি মেরে বাধ্য করল হাঁটু গেড়ে বসতে। শাহজাহানের মনে হল যেন চিনতে পেরেছেন আততায়ীকে-কোটের জোব্বা গায়ে থাকলেও বোঝা গেল বয়সে তরুণ লোকটা।
কে তুমি? কেন তোমার সম্রাটকে আক্রমণ করেছো?
প্রথম দিকে কোনই উত্তর দিল না তরুণ, এরপর কালো দাড়িওয়ালা একজন দেহরক্ষী পাঁজরে সজোরে লাথি কষালো দুবার। তারপরই কথা বলে উঠল আততায়ী।
ইসমাইল খান। জানির ভ্রাতুস্পুত্র। জানি মারা গেছেন, কারণ আপনি তার স্বামীকে হত্যা করেছেন। আপনারই সত্তাই খসরু। স্বামী ছাড়া তিনি বাঁচতে চাননি। তাই আমি ওনার হয়ে প্রতিশোধ নিয়েছি। আমার পিতামাতা মারা যাবার পর আমাকে তার পরিবারে আশ্রয় দিয়েছিলেন তিনি।
হ্যাঁ, মনে পড়েছে, ইসমাইল খান…সিংহাসনে আরোহণের পর পত্নী মমতাজের আগ্রহে দরবারে স্থান দিয়েছিলেন তাকে। পরিষ্কারভাবে বোঝা গেল যে তিনি একটু বেশিই দয়া দেখিয়েছেন। এটাও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছে, যে ধরনের গৃহযুদ্ধের পরে তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেছেন তা এত সহজে বা দ্রুত মুছে যাবে না। ডান হাতে ব্যথা বাড়তেই নিজের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলেন সোনালি টিউনিক ভিজে গেছে রক্তে। হাত আর আঙুল বেয়ে রক্তের ধারা সাদা মার্বেলের উপর পড়ে তৈরি হয়েছে ছোট্ট একটা লাল পুকুর। তাড়াতাড়ি এ ক্ষতের শুশ্রূষা দরকার। হাত উঁচু করে চাইলেন রক্ত পড়া কমাতে, ঠিক যেমনটা করেন যুদ্ধ ক্ষেত্রে আহত হলে।
কোন সন্দেহ নেই যে, তুমি মারা যাবে ইসমাইল খান। কিন্তু তার আগে যতক্ষণ পর্যন্ত না, আমি, তোমার সত্যিকারের সম্রাট আহত ক্ষতে ব্যান্ডেজ বেঁধে আসছি, বসে বসে মৃত্যু-ভয়ে ভীত হও আর অনুশোচনা করো কৃতকর্মের জন্য। কীভাবে মারা যাবে সেটা নির্ভর করবে আমাকে কতটা সত্যি কথা বলবে, তার উপর।
*
আমি আমার দোষ স্বীকার করছি, জাহাপনা। এক ঘন্টা পরে আবারো শাহজাহানের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আছে ইসমাইল। তবে এবার আগ্রা দুর্গের বাইরের প্যারেড গ্রাউন্ডে।
আর কিই বা করার আছে তোমার? ঘটনাস্থলেই ধরা পড়েছে। কড়া স্বরে উত্তর দিলেন শাহজাহান। শুধুমাত্র ইচ্ছেশক্তির জোরে এখনো বসে আছেন তিনি। নয়তো একটু আগেই প্রচণ্ড যন্ত্রণা দিয়ে হাকিম ছোরার ফলা ঢুকে যাবার ক্ষতে সুঁই দিয়ে দশটা সেলাই করেছে, এরপর নিমের মলম লাগিয়ে বেঁধে দিয়েছে শক্ত করে। এখনো যন্ত্রণা হচ্ছে ক্ষতে কিন্তু সাদা তুলোর ব্যান্ডেজ দেখে বোঝা গেল রক্ত পড়া থেমেছে। দ্রুত সেরেও যাবে। যদি না…ইসমাইল খান তার অস্ত্রে বিষ না মাখায়। তুমি কী তোমার ছুরির ফলায় বিষ মাখিয়েছিলে?
না, জাহাপনা। তাড়াতাড়ি উত্তর দিল ইসমাইল খান। তরুণ মুখে ভয়ের ছাপ। না, আমি এটা করতামও না। তাহলে আপনি যেমন করেছেন সে রকমই অসম্মানের কাজ হত। খসরুকে মারার জন্য যাকে পাঠিয়েছেন, ইতিমধ্যে বাবার হাতে অন্ধ হয়ে গেছে…আমি নিজের হাতে পরিষ্কার আঘাত করতে চেয়েছি।
এমনকি পুরুষ হিসেবে দাবি করার স্বপক্ষে বয়স কম হলেও শাহজাহান তরুণের সাহস দেখে প্রশংসা না করে পারলেন না। একই সাথে মনে মনে স্বস্তিও পেলেন যে, যাক মাত্র পাঁচ মাস আগে পঞ্চম মোগল সম্রাট হিসেবে মুকুট পরিধানের সময় যে উচ্চাকাঙ্খাগুলো ছিল সেগুলো পূরণ করার জন্য আরো দীর্ঘদিন বেঁচে থাকবেন তিনি। তারপরেও, কোন ক্ষমা নেই। কোন অনুতাপ নেই তার জন্যে যে কিনা সম্রাটকে আক্রমণের সাহস করেছে। ইসমাইল খানকে মারা যেতেই হবে। কিন্তু তার আগে এই ষড়যন্ত্রে আর কারো হাত ছিল কিনা তাও জেনে নিতে হবে।