- বইয়ের নামঃ হীরার পাখি গান
- লেখকের নামঃ শামসুর রাহমান
- প্রকাশনাঃ সাহিত্য বিলাস
- বিভাগসমূহঃ ছড়াসমগ্র
আচ্ছা যদি সাত আকাশে
পথের ধারে ছিল পড়ে
ছোট্র মতো কী-যে!
ন্যাকড়া না কি? পুঁটলি কোনো
শুকনো কিংবা ভিজে?
মেঘ-মুলুকে উড়ছে একা
হলদে পাখার পাখি।
ইচ্ছে জাগে ওকে আমার
হাতটি নেড়ে ডাকি।
রাতের বেলা ঘুমের ঘোরে
কী-যে স্বপ্ন দেখি-
পক্ষীরাজের পিঠে বসে
মজার ছড়া লেখি।
হঠাৎ দেখি দশটি তারা
উঠোন জুড়ে নাচে।
সাতটি পরী দোলায় মাথা
জ্যোৎস্না মাখা গাছে।
আচ্ছা যদি সাত আকাশে
বেড়াই আমি উড়ে,-
পাবো কি এক হীরের বাড়ি
মেঘের পাড়া ঘুরে?
আলোর পাখি
লোকটা নানা রঙের এক
পোশাক পঁরে ঘোরে,
গভীর রাতে দূর আকাশে
পাখির মতো ওড়ে।
সবাই যখন ঘর বাড়িতে
ঘুমের ছায়ায় থাকে,
লোকটা তখন ওদের ঘুমে
নানা স্বপ্ন আঁকে।
তখন তাকে কেউ দেখে না,
ঘুম আসে না বলে
কেবল দেখি আলোর মতো
পাখির ডানা জ্বলে!
ইরাকের গান
ইরাক, ইরাক, ইরাক,
গোলাপ-ছাওয়া
সেখান থেকে গায়ে-পড়া শক্ররা সব যাক।
ইরাক, ইরাক, ইরাক,
সবার চাওয়া-
সেখানে সব শান্তিপ্রিয় মানুষেরা থাক।
ইরাক, ইরাক, ইরাক,
ইরাকবাসীর
কণ্ঠে জাগে, দেশপ্রেমিকের যুদ্ধ জয়ের ডাক।
ইরাক, ইরাক, ইরাক,
মার্কিনীদের
ভাঙুক বড়াই, এই লড়াইয়ে ভাঙুক উঁচু নাক!
ইরাক, ইরাক, ইরাক,
আস মানে তার
নতুন ভোরে উড়ুক সুখে শ্বেত পায়বার ঝাঁক।
খোকার দাদুর খাতা
খোকার দাদুর ছিল বটে
একটা মজার খাতা।
সেই খাতাতে ছিল আঁটা
অনেকগুলো পাতা।
একটা পাতা যেতো উড়ে
তেপান্তরের মাঠে।
অন্য পাতা বসতো গিয়ে
কঙ্কাবতীর ঘাটে।
হঠাৎ কোনো পাতা গিয়ে
ভাসতো সমুদ্দুরে।
একটি পাতা পরীর দেশে
নৃত্য দিতো জুড়ে।
খোকার দাদু খাতার কানে
মন্ত্র দিতেন ফুঁকে।
ফুঁকের গুণে হরেক পাতা
উড়তো বেজায় সুখে।
খোকার দাদুর খাতা নিয়ে
ঘুরতো পরীর দেশে।
পরীরা সব খোকার সাথে
নাচতো মধুর হেসে।
গলির বাসিন্দা
এখন থাকি সবাই মিলে এক বাড়িতে
একটি সরু গলিতে।
আছে কত মজার গল্প জমা আজও
গলির ইয়া থলিতে।
একটি দুটি পাখি হঠাৎ উড়ে এসে
গাছের ডালে বসছে,
তাদের নাচে গাছের কিছু হলদে পাতা
ইতস্তত খসছে।
ওগো পাখি, ছোট্র পাখি, খুকীকে রোজ
শোনাও পরীর কিসসা,-
কিস্সা শুনে সত্যি খুকী হবে খুশি,
পাবো খুশির হিস্সা।
যখন রাতে একলা ঘরে চুপটি বসে থাকি,-
তখন মনে ভাসবে
ভয়-জাগানো নানা ঢঙের ছবি কিন্তু,
আঁধার হো-হো হাসবে!
ছোট্র খেলাঘর
দীপিতা, তোর খেলাঘরে
আমায় নিবি না কি?
পড়ার ঘরে আর কত ভাই
একলা বসে থাকি?
তোর সে ছোট্র খেলাঘরে
অনেক মজা আছে,
সেখানে তো পুতুলগুলো
মজার ছন্দে নাচে।
আমি তো তোর সঙ্গে রোজই
লেখতে ভালোবাসি,
তাই না মজার খেলাঘরে
দৌড়ে চলে আসি।
খেলতে খেলতে সন্ধেবেলা
যাস তো পরীর দেশে।
সেখানে তোর সময় কাটে
চাঁদের ভেলায় ভেসে।
সঙ্গে নিলে দাদুটিকে
নাচবো আমি সুখে,
চাঁদের শোভা ক্ষণে ক্ষণে
জাগবে আমার মুখে।
দে না রে ভাই দুটি পাখা
আমার কাঁধে জুড়ে,
তাহলে ওই চাঁদের দেশে
গাইবো ছড়ার সুরে।
দীপিতা আর পাখি
দীপিতা খুব সকাল বেলা
দিলো জুড়ে মজার খেলা
হাতে নিয়ে হলদে পাখি।
যতই তাকে কাছে ডাকি,
মোটেও সে দেয় না সাড়া।
পছন্দ তার পাখির পাড়া।
নানা রঙের পাখি তাকে
মজার নাচে ঘিরে থাকে।
দীপিতা ওর গানের সুরে
দিলো পাখির আসর জুড়ে।
হঠাৎ এক শব্দ হতেই
দেখি চেয়ে পাখিরা নেই।
দীপিতা ওর কোলে একি
রক্তমাখা পাখি দেখি!
কোন শিকারী ছুঁড়ে গুলি
শিকার দিয়ে ভরে ঝুলি?
যখন করে ছোট্র শিকার,
কাঁপে নাকি হাতটি তার?
দীপিতার খাতা
দীপিতা তোর ইচ্ছেগুলো পঙ্খীরাজে চড়ে
রাত-বিরেতে নীল আকাশে ওড়ে।
দীপিতা তুই যখন তখন মজার স্বপ্ন দেখে
স্বপ্নগুলো খাতায় রাখিস এঁকে।
দীপিতা তোর সেই খাতাটা কেউ দেখে না
ওরে,
তাইতো সেটা নেয় না কোনও চোরে।
শুধু আমার চোখে পড়ে সেই খাতাটা সত্যি,
মিথ্যে আমি বলছিনা এক রত্তি।
খাতায় আঁকা নানা রঙের ছবি অনেকগুলো-
পরীর পাখা, দশটি তারার ধুলো।
নানা ছবির মুখগুলো সব দৈত্যি যেন,
আচ্ছা আমার মুখটি অমন কেন?
আমার হাতে দীপিতা ওর ছবির খাতা দেখে
লজ্জা পেয়ে মুখটি নিলো ঢেকে।
‘শিল্পী এসো’ বলে ওকে নিজের কাছে
ডাকি,
দু’জন মিলে খাতায় ডুবে থাকি।
দীপিতার প্রশ্ন
বিকেল বেলা আমার কাছে
দীপিতা আজ দাঁড়ায় এসে।
তখন দেখি একটি ঘুড়ি
নীল আকাশে যাচ্ছে ভেসে।
আচ্ছা দাদু, পারিনা তো
লিখতে আমি মজার ছড়া
কিন্তু তোমার হাতে বোজই
ছড়ার বাড়ি হচ্ছে গড়া।
‘তোমার হাতে যাদু আছে?
আছে কি এক সোনার কাঠি?
দাও না দাদু সেই কাঠিটা,
গড়বো আমি ছড়ার ঘাঁটি’।
তখন আমি চুপটি করে
নেই তো ওকে বুকে টেনে,
বলি, ‘তোমার খাতায় পরী
অনেক ছড়া দেবে এনে’।
দীপিতার বায়না
দীপিতা কয়, ‘আচ্ছা দাদু,
দিন দুপুরে, বিকেল বেলা
খাতার বুকে হরফ এঁকে
খেলছো তুমি কেমন খেলা?
তোমায় দেখি আড়াল থেকে-
তাকাও তুমি দূরের মেঘে,
দেখি মজার ঝর্ণাকলম
খাতার পাতায় থাকে লেগে।
এই যে তুমি খাতা জুড়ে
নক্শা আঁকো শব্দ দিয়ে-
সেসব মজার শব্দ বুঝি
দিচ্ছে তোমায় আজব টিয়ে’।
‘আচ্ছা দাদু, আমায় তুমি
দাও শিখিয়ে তেমন খেলা,
যার জাদুতে বাল্য শিক্ষা
হয়ে যাবে তারার মেলা’।
বলেন দাদু, ‘শোন দীপিতা,
তুই যদি এই খাতায় এসে
কলমটাকে চালিয়ে দিস,
খাতা যাবে আলোয় ভেসে’।