- বইয়ের নামঃ মৌলবাদের উৎস সন্ধানে
- লেখকের নামঃ ভবানীপ্রসাদ সাহু
- বিভাগসমূহঃ গল্পের বই
০. মুখবন্ধ / তথ্যসূত্র (মৌলবাদের উৎস সন্ধানে)
ফ্যাসিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদ,-একই বৃত্তের এ তিনি বিষফুল মানুষের সমস্ত মানবিকতা ও সুস্থ অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। এর মধ্যে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় ৫০ বছর আগে ঘটেছিল। কিন্তু সে সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয় নি, রেখে গেছে তার অন্য দুই সখীকে, তাদের মধ্যে রেখে গেছে তার বিষের নির্যাসটুকুও। সাম্রাজ্যবাদ তার পরিমার্জিত বীভৎসতা নিয়ে এবং দুঃসংবাদ তার নৱাকাসিস্ট চরিত্র নিয়ে এখন মানুষের সমাজ ও সভ্যতার সবচেয়ে বড় দুই শত্রু।
কৈশোরের সেই পুঁজিবাদ আছে কিন্তু সাম্রাজ্যবাদ নেই, আর অনাবিল ধর্মবিশ্বাস আছে কিন্তু ধর্মীয় মৌলবাদ (ও সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা) নেই।–তাহলে কি সুন্দরই না হত পৃথিবীটা। কিন্তু মানুষ ইতিহাসের পথ বেয়ে ঐ সময় পেরিয়ে এসেছে। পশ্চাদ গমনে ঐ সময়ে তার আর ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। ক্রমশ পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতি ও বিকশিত বৈজ্ঞানিক চেতনায়, বৈষম্যভিত্তিক শোষণজীবী ঐ পুঁজিবাদ ও অলীক ঐশ্বরিক শক্তিকেন্দ্রিক ঐ ধর্ম-উভয়ের অস্তিত্বই ক্রমশ বিপন্ন হয়ে উঠেছে। সৃষ্টি আসন্ন নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও মানবিক অনুশাসনের। কিন্তু তা স্ববিরোধিতায় ভরা, নিজেদের সংকট নিজেরাই সৃষ্টি করছে। তা মানুষের সভ্যতার অগ্রগমনের বিরোধী, তার অস্তিত্বের পরিপন্থী। তাই নতুন মানব সমাজকে তাদের পথ ছেড়ে দিতেই হবে।–হয়তো কয়েক দশক বা দু’এক শতাব্দী পরে। কিন্তু ইতিহাসের আপনি নিয়মে তা হয়ে যাবে, এমন নিয়তিবাদী স্বতস্ফুর্ততানির্ভর চিন্তা বিপজ্জনক। শ্রেণীবিভক্ত সমাজে তা এমন অপশক্তিগুলির অত্যাচারকে বাড়িয়ে তুলবে ও অস্তিত্বকে প্রলম্বিত করবে। মাত্র। তাই পৃথিবীর শুভবুদ্ধিসম্পন্ন অসংখ্য মানুষ একক ও যৌথভাবে এদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছেন।
এদের এক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশীদার হয়ে সামান্য এই বইটির বিনম্র উপস্থাপনা। এটি একটি সাধারণ আলোচনা মাত্ৰ-কোন গবেষণাগ্রন্থ নয়, তথ্যসমৃদ্ধ পণ্ডিত্যপূর্ণ গ্রন্থও নয়; তার সহজ কারণ ঐ ধরনের সামর্থ্য আমার নেই। তবু যদি এটি বিশেষত ধর্মীয় মৌলবাদ, তথা সামগ্রিক মৌলবাদী মানসিকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে পাঠকদের সামান্য কিছুও সাহায্য করে, তবেই তার সার্থকতা।
বইটির পেছনে অনেকের সাহায্যই জড়িয়ে আছে। এদের সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তবে বিভিন্ন বইপত্র দিয়ে, পরোক্ষ-প্রত্যক্ষ উৎসাহ ও পরামর্শ দিয়ে এবং নানা তথ্য সরবরাহ করে যাঁরা সাহায্য করেছেন, তাঁদের মধ্যে শ্ৰীমতী মুক্তি চ্যাটাজী, ডঃ অমলেন্দু দে, অশোক রায়চৌধুরী, প্ৰদীপ বসু (রমুদা), সুপ্রিয় দে, ডাঃ আরতি সাহু (চট্টোপাধ্যায়) প্ৰমুখের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতেই হয়। এছাড়া, দিব্যদৃতি পাল, স্নিগ্ধজ্যোতি পাল ও অভ্রজ্যোতি পাল,-উজ্জ্বল সাহিত্য মন্দিরের এই তিন ভাই আর কম্পোজিটাররা যে উৎসাহ দিয়েছেন ও সহযোগিতা করেছেন, তার জন্য এদের কাছেও আমি কৃতজ্ঞ।
ডাঃ ভবানীপ্ৰসাদ সাহু
১লা সেপ্টেম্বর, ১৯৯৫
দ্বিতীয় সংস্করণের ভূমিকা
ধর্মীয় মৌলবাদ ও নানা ধরনের মৌলবাদী মানসিকতা এখন বিচ্ছিন্নভাবে হলেও পৃথিবীর নানা এলাকায় তার শক্তি প্ৰদৰ্শন করছে। সম্প্রতি আফগানিস্থানে তালিবানদের উদ্বেগজনক উত্থান এর অন্যতম একটি পরিচয়। সমস্ত মানবপ্রেমিক মুক্তচিন্তার মানুষ এই ধরনের অপশক্তিকে প্রতিহত করার নিরস্তর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তবু যেন ইতিহাসের কোন এক অলঙঘ্য নিয়মে,-হয়তো বা মানুষের ক্রমবর্ধমান বৈজ্ঞানিক জ্ঞান যখন অলীক ঈশ্বর ও কৃত্রিম ধর্মপরিচয়কে বিশুদ্ধ মনুষ্যত্বের দ্বারা প্ৰতিস্থাপিত করতে চলেছে, তখন তার প্রতিক্রিয়ায় বিশেষত ধর্মীয় মৌলবাদী, পুনরভু্যুত্থানবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তি তার ক্রমন্ধীয়মান পেশিগুলির আস্ফালন করে। এ অবস্থায় এদের বিরোধীদের আরো সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসার প্রয়োজন। এবং এই প্রয়োজনের প্রসঙ্গেই বাংলা ভাষায় ছোট্ট এই বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ মনে আশা জাগায়। অল্প কিছু সংযোজন ও পরিমার্জন সহ এই দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হল। আশা করি এটিও তার যথাসাধ্য ভূমিকা রাখার প্রচেষ্টায় সফল হবে।
ডাঃ ভবানীপ্ৰসাদ সাহু
১লা সেপ্টেম্বর, ১৯৯৭
তথ্যসূত্ৰ
১) Dialectical Materialism, Maurice Cornforth, National Book Agency Private Ltd., Calcutta, 1971.
২) The Problem of Hindu Muslim Conflicts; S.R. Bhat, Naba-Karnataka Publications Pvt. Ltd., Karnataka, 1990.
৩। আধুনিক ভারত ও সাম্প্রদায়িকতা, বিপানচন্দ্ৰ, (কুণাল চট্টোপাধ্যায় অনুদিত), কে পি বাগচি। অ্যাণ্ড কোম্পানী, কলিকাতা, ১৯৮৯
৪। বিশ্ব যখন উথালি পাথাল; ক্রিস্টোফার হিল (অমলেন্দু সেনগুপ্ত ও তরুণ বসু সম্পাদিত), কে পি বাগচি। অ্যাণ্ড কোম্পানি, কলিকাতা ১৯৯৫
৫। খাকি প্যান্ট গেরুয়া ঝাণ্ডা; তপন বসু, প্ৰদীপ দত্ত, সুমিত সরকার, তনিকা সরকার, সম্বুদ্ধ সেন (সুভাষীরঞ্জন চক্রবর্তী অনূদিত), ওরিয়েন্ট লংম্যান, কলকাতা, ১৯৯৩