ফিরে,এস, বাছা! ফিরে এস, শুনতে পাচ্ছ না?
গোড়ালির ছোঁয়ায় মাঝারিকদমে ঘোড়া ছোটাল কার্ল, পেছনে তাকিয়ে দেখতে পেল অফিস-ঘরের খোলা দরজা দিয়ে আলো এসে পড়েছে বাইরে, তিনজন লোক দাঁড়িয়ে রয়েছে ওখানে। ও বুঝতে পারল না, ওরা ধাওয়া করবে কিনা। নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে ভয়ানক শঙ্কিত হয়ে উঠল সে, অন্য সব অনুভূতি লোপ পেল। বাবার ওপর ওর শ্রদ্ধাবোধ বিশ্বাস যেদিন চুরমার হয়ে গেল সেদিন ও প্রচণ্ড মানসিক আঘাত পেয়েছিল, এবং সেজন্যই ডাকাতির পরিকল্পনা আঁটে কারণ ওর কোমল মন এভাবে প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল জন্মদাতার ওপর, কিন্তু ওর আজকের অবস্থার কাছে তাও যেন তুচ্ছ হয়ে গেছে। এখন শুধু একটা কথাই ভাবতে পারছে সে কোথায় যাবে। দশ মিনিট পর কাল যখন সদর রাস্তায় উঠল তখন মনস্থির করে ফেলেছে সে। ডানে মোড় নিল ও, মেঠোপথ ধরে পাহাড়ি এলাকার ভেতর দিয়ে ছুটে চলল মরুভূমির উদ্দেশে।
.
ক্যানাডা তার কাহিনি বলা শেষ করতে সবে হার্ভে স্টেজের দিকে অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়েছে ফ্লেভ হালাম, এই সময় বাড়ির সামনের অংশে গোলযোগের আভাস পায় ওরা।
ঝটপট বাইরে বেরিয়ে এল লোক তিনজন, কী ঘটছে বুঝতে পেরে তক্ষুণি চেঁচিয়ে উঠল হার্ভে। ক্যানাডাও একই সিদ্ধান্তে পৌঁছাল। ও-ই, উদ্বিগ্ন সুরে বলল ও। আমার কথা শুনতে পেয়ে পালিয়ে গেল।
নিশ্চয় দোতলার বারান্দায় বসেছিল ঘাপটি মেরে, বিরক্তির সঙ্গে বলল হার্ভে। ঠিক আগের বারের মত
মানে? জিজ্ঞেস করল ক্যানাডা।
কিছু না, রুক্ষ সুরে জবাব দিল হার্ভে।
ঘোড়া চুরি নেহাত সমান্য ব্যাপার না। একসময় তোমার আইনে এর সাজা হত
ফাঁসি-তাই না, ফ্রেড? যাকগে, ঘোড়াটা আমার না টম টেরিলের আস্তাবল থেকে ভাড়া
টেরিল জানে তুমি এখানে আসছ? প্রশ্ন করল হালাম
না, জানে না। বলেছি সেজে এক লোকের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। এখানে আমরা হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছি কেন? ধরার চেষ্টা করবে না ওকে?
লাভ নেই, সংক্ষেপে বলে অফিস-ঘরে ঢুকে গেল হালাম। ভেতরে এস, আমি বাকিটাও শুনব।
ক্যানাডা এবার দ্রুত জেমস গ্রীন, কার্লোস গার্সিয়ার মৃত্যু এবং ডিউক রিপের জবানবন্দীর কথা বলে গেল। জানাল রিপ গোয়েন্দার কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছে, কার্লই ডাকাতির পরিকল্পনাটা করে।
কাল সকালেই গ্রীন আর মককে এখানে দেখতে পাবে তুমি। গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকবে ওদের সাথে। ছেলেটা পালিয়েই মুশকিল করল, নইলে সীমান্তের ওপাশে পাঠিয়ে দিতে পারতে।
আচ্ছা, এই গ্রীন লোকটা দেখতে কেমন? স্বভাব-চরিত্র?
ক্যানাডা তার পক্ষে যতটা সম্ভব নিখুঁতভাবে বর্ণনা দিল গ্রীনের। ইউ,এস, মার্শাল ছিল, কঠিন লোক। বোকা বানাতে পারবে না-এটুকু বলতে পারি।
অবজ্ঞার সুরে হাসল, হালাম। অ, ইউ,এস, মার্শাল? হুঃ! ঘুরে বিরাট সিন্দুকের সামনে হাঁটু গেড়ে বসল সে, কম্বিনেশন লক ঘুরিয়ে ভারি ভালাটা খুলল। লোহার ক্যাশবাক্স থেকে গুনে এক হাজার ভলার বের করল হালাম, সিন্দুকটা বন্ধ করে কানাড়ার হাতে টাকাগুলো দিল। আত্মতুষ্টির জন্য আরেকবার সেটা গুনল ক্যানাডা, লোভে চকচক করছে চোখ।
আবারও হার্ভের উদ্দেশে তাৎপর্যপূর্ণ দৃষ্টি হানল হালাম। আলতোভাবে একবার চোখের পাতা ফেলল হার্ভে, মুখ শক্ত হয়ে গেল।
দুটো ঘোড়া নিয়ে আসছি আমি, তারপর আমরা শহরে যাব, বলে বেরিয়ে গেল
ক্যানাডা তার প্যান্টের পকেটে রাখল টাকাগুলো। এখন ঘোড়ার ব্যাপারে টেরিলকে আমি কী কৈফিয়ত দেব? জিজ্ঞেস করল আবর উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে ওকে। আমার ঘোড়া ক্লান্ত, তাই ভাড়া করেছিলাম ওটা। কিন্তু স্যাভলটা আমার; তা ছাড়া
আহ! অধৈর্য সুরে বাধা দিল হালাম। একটা কিছু বানিয়ে বলে দিও। দোরগোড়ায় গিয়ে দাঁড়াল অ্যাংকর মালিক। তারপর হার্ভে যখন একটা লম্বা পায়ের সোরেলে চেপে আরেকটা বিশাল রোয়ানসহ হাজির হলো, একপাশে সরে দাঁড়াল সে।
দোল খেয়ে স্যাডলে উঠে বসল ক্যানাডা। শহরেই থাকছি আমি, দেখি তোমার জন্য নতুন কোন খবর জোগাড় করতে পারি কিনা, হালামকে বলল।
আচ্ছা, জবাব দিল হালাম। ঘোড়াসওয়ার দুজনকে উঠ ছেড়ে চলে যেতে দেখল সে, অফিসে ফিরে গিয়ে গ্লাসে ব্র্যান্ডি ঢালল। তারপর সিগার ধরিয়ে নিজের ডেস্কের চামড়ার গদি আঁটা চেয়ারে বসে ডুবে গেল গভীর চিন্তায়। অত্যন্ত কঠোর এবং বস্তিরবাদী মানুষ ফ্রেন্ড হালাম। যে কোন ভয়ঙ্কর সত্যকে সহজেই উপলব্ধি করতে পারে, ভাবাবেগের বালাই নেই ওর মাঝে এমকী যে ছেলেটি তার পরিচয় সে। বহন করছে তার ব্যাপারেও সে সম্পূর্ণ উদাসীন। স্বার্থপর বলতে যা বোঝায়, ফ্রেড হালাম এককথায় তাই। ছেলেটা স্বেচ্ছায় বিপদে জড়িয়েছে নিজেকে এতে মোটেও অবাক হয়নি সে; ও আঁচ করেছিল এরকম কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে, সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ভাগ্যকে তার আপন পথে চলতে দেবে। তবু যা আশা করেছিল সে ঘটনা তার চেয়ে খারাপের দিকে মোড় নিয়েছে। পরিণতি যা-ই হোক, এমনকী তা ফাঁসিতে গড়ালেও, ছেলেটি যদি একাই তার সমস্যা সামলাত খুশি হত সে। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু অন্যরকম, দুঃখের সঙ্গে স্বীকার করতে বাধ্য হলো হালাম। তার নিজের ভালমন্দ তাকে বিবেচনা করতে হবে আগে।
লিভারি স্ট্যাবলের মালিক টম টেরিলকে কী বলেছে ক্যানাডা ওর মনে পড়ল; সেজে এক লোকের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে। জেমস গ্রীনের কথা ভাবল সে, কার্ল আর ডিউক রিপকে গ্রেফতার করে টাওসের আদালতে হাজির করার জন্য নিয়োগ করা হয়েছে ওকে। বলা যায় না, সেজে গিয়ে তদন্ত করতে পারে ও, আপনমনে বিড়বিড় করল হালাম।