রিপ বলছে সম্ভবত ওদের বাথানে আছে ও
থাকতে পারে। হপ্তা দুয়েক হলো আমি আর দেখছি না ওকে। শহরে এসে পাগলামি করছিল। ব্যাংক থেকে টাকা তুলে তুমুল হট্টগোল শুরু করে। বিষণ্ণ সুরে হাসল মক। আঠারো বছরের ছেলে, এর আগে হয়তো এক ফোঁটা মদও খায়নি কোনদিন। আমরা সবাই খুব অবাক হয়েছিলাম। মেক্সটাউনে আড্ডা জমায়। ওখানেই কার্লোস এবং অন্যদের সঙ্গে দেখা হয় ওর। তবে ওখানে বেশিক্ষণ মদ খেতে পারেনি; কারণ গার্সিয়ার বোন, মারিয়া, চায়নি ওই ছেলে মদ খাক। ফলে স্যালুনে চলে আসে ওরা, ভাঙচুর করে জিনিসপত্র, কিন্তু ওদের মধ্যে একজন ফ্রেন্ড হালামের ছেলে বলে, কেউ কিছু করতে সাহস পায়নি। আমি ওদের বলি, ভদ্রভাবে না চললে হাজতে পুরে রাখব। তখন ওরা শহর ছেড়ে চলে যায়।
হালাম নিশ্চয় শুনেছে কী ঘটছে। আমায় মনে হয় যেকোন কড়া লোকই এমন অবস্থায় তার ছেলেকে চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।
ওপর নীচ মাথা ঝাঁকাল মক। আমিও সেজন্যেই অপেক্ষা করছিলাম, কিন্তু আসেনি সে।
মাথায় হ্যাট চাপাল গ্রীন, স্যাভলব্যাগগুলো তুলে নিয়ে উঠে দাঁড়াল। এখানে যাওয়ার সেরা সময় কখন? আজ বিকেলে?
দেরি হয়ে গেছে অনেক। বেশ দূরের পথ, কাল সকালে যাব আমরা। চেয়ার ছাড়ল মক, হাত বাড়িয়ে ব্ল্যাক থেকে তার টুপিটা নিন। দুই জায়গায় যেতে হবে, আমাকে। প্রথমে পাদ্রি। তারপর দেখা করব মারিয়া গার্সিয়ার সঙ্গে।
বাইরে বেরিয়ে এল ওরা। রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখল ঘুম থেকে আবার জেগে উঠেছে শহর। ইশারায় ওপাশের হোটেলটা দেখাল মক। তোমার যা কিছু দরকার সব পাবে ওখানে-গোসলের ব্যবস্থাও আছে।
হ্যাঁ, গোসল করতে হবে, যা ধকল গেছে এই দুদিন। আরেকটা কথা, কাল ভোরেই বেরোব আমরা। দেরি করলে নাও পেতে পারি ওকে।
মাথা ঝাঁকিয়ে সায় জানাল মার্শাল। ভোরেই।
তারপর হাত মিলিয়ে দুদিকে চলে গেল দুজন।
০৩.
ঘোড়ার খুরের গুরুগম্ভীর আওয়াজে সচকিত হয়ে উঠল কার্ল হালাম। র্যাঞ্চ হাউসের দোতলার বারান্দায় অন্ধকারে বসে আছে ও। সামনে ঝুঁকল কার্ল, হাতুড়ির ঘা পড়ছে যেন বুকে, চোখ কুঁচকে তাকাল নীচে। রুপালি জ্যোত্যায় ভেসে যাচ্ছে আশপাশ। শুধু ঝোঁপঝাড় আর দালানের আনাচেকানাচে মৃদু ছায়া পড়েছে। উঠনের কিনারে একজন ঘোড়াসওয়ার দাঁড়িয়ে রয়েছে লক্ষ করে ভয়ের স্রোত বয়ে গেল ওর শরীরে, সতর্ক হয়ে উঠল।
র্যাঞ্চের দালানকোঠা একে একে জরিপ করছে ঘোড়াসওয়ার। পার্লারের পর্দার ফাঁক গলে, আলো আসছে। কার্ল বুবলি ওর বাবা জেগে আছে, তার শখের ঘোড়ার চামড়া, বিছানো আরাম কেদারায় বসে ফেনিমোর কুপারের কোন বই পড়ছে। বিরাট উঠনের আরেক পাশে ক্যারেজ হাউস, বার্ন, স্ট্যাবল আর কোরাল। সবশেষে, চত্বরের অপর প্রান্তে বাংকহাউস। এখন সেদিকে প্রসারিত হয়েছে ঘোড়াসওয়ারের দৃষ্টি। ভেজা খড় আর গরুবাছুর আর ঘোড়ার মলমূত্রের দুর্গন্ধে রাতের বাতাস ভারি হয়ে আছে। কাছের কোন পাহাড় থেকে কতির সুরে চাঁদের কাছে ফরিয়াদ জানাল একটা কয়ৌট এবং থামল।
ঘোড়াসওয়ার সামনে এগোতে, মোজা পায়ে নিঃশব্দে উঠে দাঁড়াল কার্ল, নিচ্ছিদ্র অন্ধকারের সন্ধানে তাকাল ডাইনে বাঁয়ে। ভবঘুরে না, ভাবল কার্ল, জানে ক্ষুধার্ত কাউহ্যান্ড সরাসরি বাবুর্চির, ঘরেই যাবে। বুড়ো টিম ওখানে বাসনকোসন ধুচ্ছে এখনও। পরক্ষণে ভীষণভাবে দমে গেল ও যখন দেখল নীচের পোর্ট থেকে দশ-বারো গজ দূরে, হিচ রেইলের সামনে থেমে স্যাডল থেকে নামছে অশ্বারোহী। আচমকা ভারমুক্ত হয়ে যাওয়ায় ঘোৎ শব্দে নাক ঝাড়ল ঘোড়াটা।
ওই আওয়াজে সতর্ক হয়ে উঠল একন। কার্ল জানে ওটা হার্ভে স্টেজ। সম্ভবত, এতক্ষণ ক্যারেজ হাউসের বাংকে বসে আগন্তুকের সমস্ত গতিবিধিই লক্ষ করেছে সে। নবাগত নিজেই তার উপস্থিতি জানান দেবে এই আশায় অপেক্ষা করছে। হার্ভের নাগালের মধ্যে নিশ্চয়ই একটা পিস্তল আছে এখন। শহরের অধিকাংশ লোক যেখানে আজকাল আর সঙ্গে অস্ত্রশস্ত্র রাখে না, সেখানে হার্লে কোমরের বেল্টে সর্বদা একটা পিস্তল আর ছুরি গোজা থাকে। এর কারণ জানতে জীবনের অনেকগুলো বছর ব্যয় করতে হয়েছে কার্লকে।
ও লক্ষ করল হার্ভের ছোট শরীরটা ধীরে ধীরে উঠনের কিনার ঘুরে আসছে। আগন্তুক আর নিজের মাঝখানে রেখেছে ঘোড়াটাকে। নবাগত এখন হিচ রেইলের নীচে বসে পর্যবেক্ষণ করছে চারদিক। কার্লের ক্ষীণ আশা ওর সাথে বা যা ঘটেছে তার সঙ্গে লোকটার আগমনের কোন সম্পর্ক নেই। দুঃস্বপ্নের মত ওই ঘটনা অহরহ তাড়িয়ে ফিরছে ওকে, তবু সে এই আশায় বুক বাঁধতে চাইল। কার্ল দেখল আগন্তুকের পেছনে চলে এসেছে হার্ভে, তারপর স্বস্তির সুরে ওকে বলতে শুনল, অ, তুমি। এখানে কী করছ?
সশব্দে হাসল লোকটা। তোমার খেলনাটা সরাও, হার্ভে, বলল সে, ফ্রেডের সাথে দেখা করতে এসেছি আমি।
মিস্টার হালাম বলরে। তার সাথে তোমার কী দরকার?
তুমি শুধু গিয়ে বল লাইল ক্যানাডা এসেছে, দেখা না করলে পরে আফসোস করতে হবে তাকে।
লাইল ক্যানাডা! হাঁপ ছাড়ল কার্ল, জাট অথচ কর্কশ কণ্ঠস্বরের মালিককে চিনতে পেরেছে, অ্যাংকরে একসময় কাজ করত ক্যানাডা। লোকটা ঘোড়া ভালবাসত খুব, আর ওরাও সহজে পোষ মানত ওর কাছে। কিন্তু ফালতু বকবক করার অভ্যাস আছে বলে কার্লের বাবা ওকে বরখাস্ত করে।