কিন্তু এদের ব্যাপারটা ছিল অন্যরকম। আমি দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম এই চারজন পেশাদার লুটেরা না-আনাড়ি। অস্থির দেখাচ্ছিল ওদের, বোকার মত হাসাহাসি করছিল নিজেদের মধ্যে প্রথমে আমি ভেবেছিলাম ব্যাপারটা নিছক কৌতুক, তারপর দেখলাম ওরা মাতাল হয়ে আছে, দুজন তাদের প্যান্টের পকেট থেকে বোতল বের করছে।
তা সত্ত্বেও, আমি ভয়ের কারণ দেখিনি। আমি ওদের বললাম গাড়িতে কোন মূল্যবান জিনিসপত্র নেই, তবে ইচ্ছে করলে ওরা খুঁজে দেখতে পারে। দুজন তল্লাশি করে দেখল সবকিছু। এরপর নিজেদের মধ্যে শলাপরামর্শ করল ওরা, খুব নিচু স্বরে কথা বলছিল, ফলে আমি কিছুই শুনতে পাইনি। ইতিমধ্যে শেষ করেছিল একটা বোতল, এবার ওরা সেটা ছুড়ে ফেলে দিল ঝোঁপের ভেতর। তারপর রাইফেলের নল দিয়ে একজন খোঁচা মারল মিস্টার কোল্টারের বুকে। মিস্টার কোল্টারের ওয়েস্টকোটের পকেটে বাঁধা সোনার ঘড়ির চেইনটা চোখে পড়েছিল এর। মিস্টার কোল্টারের পার্সসহ ঘড়িটা চাইল সে।
এতক্ষণ একটা কথাও বলেননি মিস্টার কোল্টার। এবার তার মুখের দিকে অকিয়ে আমি বুঝলাম তিনি দারুণ রেগে গেছেন। তারপর উনি কঠোর ভাষায় নিন্দা করলেন ওদের। বললেন, সৎভাবে জীবনযাপনের বদলে যারা অন্যের ধন লুটে খায় তাদের উনি কোন চোখে দেখেন। ওরা শুনল তাঁর কথা, কিন্তু বেশিক্ষণ না। যে লোকটা রাইফেলের গুতো মেরে মিস্টার কোল্টারের পার্স আর ঘড়ি দাবি করেছিল, এবার সে তক্ষুণি ওটা দিয়ে দিতে বলল।
তো, মিস্টার কোল্টার তার কোটের তলায় হাত ঢোকালেন যেন পৃর্স বের করবেন, কিন্তু তিনি বের করলেন পিস্তল। মুখোশপরা লোকগুলো চমকে উঠে ছড়িয়ে পড়ল, তারপর শুরু হলো তুমুল গোলাগুলি। আমার কাঁধে গুলি লাগল। তারপর মিস্টার কোস্টার আঘাত পেয়ে সিট থেকে ছিটকে পড়ে গেলেন মাটিতে। তার অদুরেই একজন ডাকাত আহত হয়ে পড়েছিল, মিস্টার কোস্টারের গুলিতে মাথায় চোট লাগে তার! বাকি লোকগুলো এরপর তাদের ঘোড়ায় চেপে পালিয়ে যায়।
আমি যখন নেমে আসি, মিস্টার কোল্টার এবং ডাকাত দুজনেই মারা গেছে। ওদের লাশ কোচে তুলে টাওসে হাজির হই আমি।
মিস্টার ওয়েবস্টারের বিবরণ হইতে পরিষ্কার বোঝা যায় মুখোশধারী ডাকাতরা নিতান্তই আনাড়ি ছিল। নিহত দস্যুকেও তৎক্ষণাৎ শনাক্ত করা সম্ভব হয় নাই। শেরিফ শেভলিন লাশের ছবি তোলেন এবং সকল দায়িত্বশীল নাগরিককে অনুরোধ করেন মৃতদেহ শনাক্ত করিতে। অতঃপর মাত্র গতকাল স্থানীয় সানরাইজ কোরাল ও লিভারি বার্নের অসল্যার, লাইল ক্যানাডা, লাশ দেখিয়া শেরিফ শেভলিন ও হুইলার স্টেজ অ্যান্ড ফ্রেইট লাইন্সের সভাপতি ফ্র্যাংক হুপারের সহিত সাক্ষাৎ করিতে চান। তাহাদের আলাপের বিষয়বস্তু সম্পর্কে কিছু জানা যায় নাই, তবে মিস্টার হুপার ঘোষণা করেন বিষয়টি তদন্ত করিয়া দেখার জন্য তিনি একটি বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থাকে নিযুক্ত করিয়াছেন।
জেমস গ্রীন, সংস্থার সেরা অপারেটর, আজ সকালে শহরে উপস্থিত হন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোচনার পরপরই তিনি ও মিস্টার ক্যানাডা এক অজ্ঞাত গন্তব্যের উদ্দেশে টাওস ত্যাগ করেন। মিস্টার গ্রীন একজন সাবেক ইউ, এস, মার্শাল। গত বৎসর ডেনভারের কুখ্যাত ব্ল্যাক হ্যাক চক্রকে একক প্রচেষ্টায় নির্মূল করিয়া তিনি সুনাম অর্জন করেন।
তার বর্তমান দায়িত্ব প্রসঙ্গে মিস্টার গ্রীন সংক্ষেপে বলেন, এমন কিছু বিশেষত্ব নেই এতে। সম্ভবত অবসর নেয়ার আগে এটাই আমার শেষ অ্যাসাইনমেন্ট।
.
ডেস্কের ওপর পত্রিকাটা নামিয়ে রাখল গ্রীন। ঠিকই লিখেছে। স্কালি ব্রাওয়ারের লাশ শনাক্ত করে ক্যানাডা। জানত ওর বাড়ি এখানে। হুপারকে বলে, পথ দেখিয়ে আমাকে সে নিয়ে আসতে পারবে গার্সিয়াদের পুরানো বাসায়। ও জানায়, দরকার হলে ব্ৰীওয়ার তার বন্ধুদের সাথে লুকিয়ে থাকত ওখানে। হুপার রাজি হয়ে যায়। সমস্ত খরচপাতি সেই দিচ্ছে।
তরুণ গার্সিয়া কীভাবে নিহত হয়েছে এবং ডাকাতিতে কার্ল হালামের ভূমিকা সম্বন্ধে ডিউক রিপ যে জবানবন্দী দিয়েছে তা জানাল গ্রীন। খবরটা শুনে মার্শালের চেহারায় কোনরকম ভাবান্তর হলো না।
বলতে কী, মোটেই অবাক হচ্ছি না আমি। তবে লোকজন যখন জানবে, অনেকেই বিস্মিত হবে খুব। একটু থামল মার্শাল। ভাল ছেলে ছিল ওরা, সবাই। তরতাজা তরুণ একেকটা, নিষ্পাপ। আমি ডিউক রিপ আর বাকি দুজনের কথা বলছি, কার্লের না। ওর ব্যাপারটা একটু আলাদা।
ক্যানাডা বলছে ছেলেটা নাকি বইয়ের পোকা, বাপকে দেবতা মনে করে। অথচ রিপের কথা যদি সত্যি হয়, ডাকাতির পরিকল্পনাটা কার্লের, এর মাধ্যমে ওর বাবার কাছে ও কিছু একটা প্রমাণ করতে চাইছিল। ক্যানাডা বলেছে হালাম লোকটা ভীষণ নীচ।
কঠিন লোক। প্রথম যখন এখানে বসতি করে ও, আইন বলতে কিছু ছিল না এদিকে, কিন্তু হালাম মাটি কামড়ে পড়ে থাকে। সত্তর সালে, তখনও শেরিফ হইনি আমি, হালাম তার বাথানের কর্মচারীদের নিয়ে একদল গরুচোরকে ধাওয়া করে মেক্সিকোতে গিয়ে পাকড়াও করে। ওখানেই ওদের সে ফাঁসি দেয়। কঠিন, গোয়ার টাইপের লোক, নিজের খেয়ালখুশিমত চলতে চায় সবসময়। তুমি আগেও দেখেছ এধরনের মানুষ। থুতনিতে হাত ঘষল মক, দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তবে ছেলেটা যে ওকে দেবতা মনে করে বলছ, আমি কিছু জানি না এ ব্যাপারে। বোধহয় ভয় আর শ্রদ্ধা মিশে তৈরি হয়েছে এরকম কিছু একটা।