মারিয়া কে?
ওর বোন। মেক্সিক্যান পাড়ায় একটা ক্যাফে চালায়। কার্লোসের ব্যাপারে খুব চিন্তা করে ও। রিপের ক্রুদ্ধ চোখ দুটো যেন ভস্ম করতে চাইল গ্রীনকে। তুমি ওকে খুন করেছ। এখন মারিয়া হয়তো প্রতিশোধ নিতে চাইবে তোমাকে মেরে।
গার্সিয়াদের ছেলেকে ক্যানাডা খুন করেছে, তথ্যটা গ্রীন জানাবার প্রয়োজন বোধ করল না। এর মধ্যে ওর বোন আসবে কেন-এটা আইনের ব্যাপার, বলল ও। তুমি তোমার কাজে যাও।
কিন্তু ভেতরে ভেতরে ওই বোন ওকে ভাবিয়ে তুলল! কানাডার দোষে কাজটা শুরুই হয়েছে খারাপভাবে, এটা মনে হতে ওর মেজাজ খিচড়ে গেল। এখন কোথায় গিয়ে শেষ হবে, তা কেউ বলতে পারবো হলফ করে।
০২.
ওই যে অকটিও; ওখানে! একগাল হেসে বলল ক্যানাডা, মরুভূমির মাঝখানে কতকগুলো ছড়ানো ছিটানো বাড়িঘর দেখাল। অল্প কিছুক্ষণ আগে দুপুর পেরিয়ে গেছে, ধূসর আকাশে আগুন ছড়াচ্ছে হলুদ সূর্য শহরের ওপাশে, দিগন্তে, আবছাভাবে দেখা যাচ্ছে পাহাড় পর্বতের চূড়া। ঘাম ঝরানে প্রচণ্ড গরমে ধীরকদমে এগিয়েছে ওরা, ঘোড়াগুলোকে বিশ্রাম দিতে বার থেমেছে পথে। গ্রীন বিরক্ত হয়ে উঠেছিল।
এখান থেকে ভুতুড়ে শহর মনে হচ্ছে, বলে ব্যান্ডানা দিয়ে মুখ আর ঘাড়ের ঘা মুহল ও। কেন মানুষ দেখা যাচ্ছে না।
ঘুমাচ্ছে সবাই।
মার্শাল মকের অফিসটা কোথায়?
রাস্তার শেষ মাথায়। ওই যে, দূরে একটা কটনউড গাছ দেখতে পাচ্ছি না? শহরের একমাত্র গাছ-জেলখানার ঠিক পেছনেই। রিপের দিকে ধূর্ত দৃষ্টিতে তাকাল ক্যানাডা। এক সময় বহুলোকের ফাঁসি হয়েছে ওখানে।
আমাকে ফাঁসি দেবে না কেউ, বিড়বিড় করে বলল রিপ।
বল, এখানে না, কানাডা হাসল।
চুপ কর, দুজনেই, ধমক দিল গ্রীন। ঠিক আছে, আমরা ঘুরে জেলখানার পেছন দিয়ে আসব। শহরবাসীদের নজরে যত কম পড়া যায় এখন ততই ভাল।
লোকচক্ষুর অগোচরে জেলখানায় পৌঁছাতে পারবে ওরা এ আশা করেনি গ্রীন, বিশেষত ওদের সঙ্গে যখন স্যাডলে বাধা একটা লাশ রয়েছে। তবে মেক্সিক্যানদের সুউচ্চ প্রাচীন গির্জা, দোকানপট আর ক্যান্টিনাগুলো যেখানে অবস্থিত, শহরের সেই এলাকা পেরিয়ে আসার সময় কারও চেহারায় উদ্বেগ লক্ষ করল না ওরা। একজন আলোর দৃষ্টিতে এই অঞ্চলের পরিচয় মেক্সটাউন হিসেবে এখানেই কার্লোসের বেনি, মারিয়ার ক্যাফে রয়েছে, গ্রীনের মনে পড়ল। বাড়িঘর আর ব্যবসায়িক ভবনগুলোর পেছন দিয়ে এগোল ওরা, দু-এক জোড়া কৌতূহলী চোখ ছাড়া আর কেউ কোনরকম উৎসাহ দেখাল না ওদের ব্যাপারে। অবশেষে কটনউডের ছায়ায় থামল তিন অশ্বারোহী। সামনেই একটা চুনসুরকির চৌকো লাল দালান-অকটিওর কাগার। ঘোড়া থেকে নেমে হিচ রেইলে লাগাম বাঁধল গ্রীন, ইশারায় রিপকেও নামতে বলল। চল, ভেতরে গিয়ে মার্শালের সাথে দেখা করি। তারপর শহরবাসীরা জেগে ওঠার আগেই চোখের সামনে থেকে সরিয়ে ফেলব লাশটা।
.
নিজের চেয়ারে হেলান দিল মার্শাল পিপার মক। মাঝবয়সী, দড়ির মত পাকানো শরীর। ঘন ভারি পাপড়ির নীচে সুন্দর দুটো চোখ। হলদেটে জমির মাঝখানে পিঙ্গল তারা। শান্তভাবে বেসরকারি গোয়েন্দার বক্তব্য শুনল সে। তার ডেস্কের সামনে, একটা চেয়ারে বসে আছে গ্রীন, ক্লান্ত চরণযুগল মেলে দিয়েছে টানটান করে। হ্যাট আর স্যাডলব্যাগগুলো চেয়ারের একপাশে মেঝের ওপর পড়ে আছে। ঘর ভাড়া করাতে হোটেলে গেছে ক্যানাডা, তবে ও বিদায় নেয়ার আগে পিপার মক সাবধান.. করে দিয়েছে, যা ঘটেছে সে ব্যাপারে যেন কিছুই ফাঁস না করে ও।
লোকে যাই জিজ্ঞেস করুক, তুমি কিছু জানো না, বোঝা গেছে? এটা এখন শান্ত শহর, আমি চাই শান্তই থাক।
ভয় নেই, আমার মুখ আলগা হবে না, ক্যানাডা হেসেছে। এখানে আমার অন্য কাজ আছে।
কার্লোস গার্সিয়ার লাশ আপাতত পেছনের দুটো সেলের একটায় রাখা হয়েছে; অন্যটায় কয়েদ করা হয়েছে ডিউক রিপকে। গ্রীনের পরিচয়পত্র পরীক্ষা করেছে মক।
ডাকাতির ব্যাপারটা খুলে বলতে যাচ্ছিল গ্রীন, কিন্তু মার্শাল বাধা দিয়ে জানাল সে ইতিমধ্যেই পত্রিকায় ওই ঘটনার খবর পড়েছে। ডেস্কের ওপর রাখা একটা খবরকাগজ গ্রীনের দিকে ঠেলে দিল সে।
টাওস উইকলিতে ছাপা হয়েছে। ওরা আমাকে পাঠায় এক কপি। এটা এসেছে আজ দুপুরের স্টেজে। সম্ভবত তুমি আর ক্যানাডা যেদিন টাওস ছেড়েছ, সেদিনকার কাগজ।
পত্রিকাটা নিল গ্রীন। প্রথম পাতায় সুদীর্ঘ রিপোর্ট, বড় হরফের শিরোনাম।
ডাকাতের হাতে স্টুয়ার্ট কোস্টার নিহত
টাওস স্টেজে স্টুয়ার্ট কোল্টারের নিধুর হত্যাকাণ্ড স্থানীয় জনমনে ক্রোধের সঞ্চার, করিয়াছে। মিস্টার কোল্টার এই অঞ্চলে একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। গবাদি পশু, খনি এবং কাঠের ব্যবসা ছিল তার। পশ্চিমগামী স্টেজে চড়িয়া ঈগল পাস হইতে টাওসে আগমনকালে চারজন মুখোশধারী ডাকাতের আক্রমণে তিনি নিহত হন। স্টেজচালক টম ওয়েবস্টার ঘটনা সম্পর্কে আমাদের কাছে নিম্নলিখিত বিবৃতি প্রদান করেন।
এটা ছিল নিয়মিত কোচ, মিস্টার ওয়েবস্টার বলেন। গাড়িতে কোন মেইল ব্যাগ বা স্ট্রংবক্স ছিল না বলে আমি বন্দুকধারী পাহারাদার নিইনি সঙ্গে। মিস্টার কোল্টার ছিলেন একমাত্র যাত্রী।
স্টোন লজে, ঘোড়া বদলাই আমরা। দুপুরের খাওয়াও ওখানেই সারি। যাত্রার সময় মিস্টার কোল্টার জিজ্ঞেস করেন তিনি ওপরে এসে বসলে আমার কোন আপত্তি আছে কিনা, আমি বলি না। চমৎকার আবহাওয়া ছিল সেদিন। স্টোন লজের আট মাইল পশ্চিমে রক জর্জে মোড় নিচ্ছি আমরা এই সময় চারজন মুখোশধারী লোক একটা ঝোঁপের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের পথরোধ করে দাঁড়ায়। ওদের দুজনের হাতে ছিল রাইফেল, অন্য দুজনের পিস্তল! এর আগেও স্টেজকোচ চালাতে গিয়ে বার কয়েক ডাকাতের কবলে পড়েছি আমি। জানি এরা কথা বলে কম, কাজ দ্রুত সারেবাধ্য না হলে গুলি করে না।