বেলা করে, হোটেলের খাবারঘরে বসে নাস্তা খাচ্ছে ওরা, এরপর কার্লকে দেখতে যাবে। মারিয়া ঠিক করেছে ছেলেটাকে তার বাবার মৃত্যুসংবাদ জানাবে ও। হাজার হলেও বাপ; সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করবে কার্লকে।
আমরা খুব আপন, কার্ল আর আমি। সেই ওর ছোটবেলা থেকে। আর এখন ও বড় হয়ে গেছে।
ওরা এখন হাঁটতে হাঁটতে ডাক্তারের বাসায় যাচ্ছিল, আড়চোখে গ্রীনকে একবার মাপল মারিয়া।
ছেলেটার ব্যাপারে ভাবলে কিছু?
তোমার কথাই ঠিক-বড় হয়ে গেছে।
কথা বলার জন্য মুখ খুলছিল মারিয়া, কিন্তু শেষ মুহূর্তে কি ভেবে চুপ করেই রইল।
দরজায় ওদের সঙ্গে মিলিত হলো ডাক্তার, ভেতরে নিয়ে গেল।
তোমরা বোধহয় কার্লের সাথে দেখা করতে এসেছ। জেগে আছে, তবে দু চার মিনিটের বেশি থেক না। খানিক আগে মার্শাল মক এসেছিল, ওর বাবার মৃত্যুর খবর জানিয়ে গেছে। শান্তভাবেই ব্যাপারটা নিয়েছে কাল, তবে দেরিতে প্রতিক্রিয়া হওয়া অসম্ভব না। ঠিক আছে, যাও তোমরা। করিডরের শেষ দরজা।
মারিয়া এগোল, কিন্তু গ্রীন আরেকটু থেমে জিজ্ঞেস করল, ভার্জিল রীড কেমন আছে, ডাক্তার? খারাপ চোট?
ওই বুড়ো মরবে না সহজে, এটুকু বলতে পারি, হাসল ডাক্তার। একটু মাংস উড়ে গেছে। তবে ওর দুঃখ স্যালুনটার জন্য। মনে হয় না আর কিছু অবশিষ্ট আছে।
সাধ করে নিজের সর্বনাশ করেছে রীড আচ্ছা, ধন্যবাদ, ডাক্তার।
ডাক্তার বেরিয়ে যেতে কার্লের ঘরে গেল গ্রীন। বিছানার পাশে বসে ওর একটা হাত ধরে আছে মারিয়া। ও ঢুকতে ম্লান হেসে ছেলেটা বলল, আপাতত বোধহয় তোমার সঙ্গে আমি টাওসে যেতে পারছি না, মিস্টার গ্রীন।
টুপি খুলে আগে বাড়ল গ্রীন। তুমি টাওসে যাচ্ছ না, কার্ল। এই মামলার কারণে না। আজই আমার রিপোর্ট পাঠাচ্ছি আমি, তোমার নাম থাকছে না।
আন্তরিক সুরে কথা বলছে ও। তোমার যা অপরাধ, আমার দৃষ্টিতে যথেষ্ট সাজা হয়েছে। তোমার সুস্থ হয়ে ব্যবসা দেখবে। এটাই গুরুত্বপূর্ণ। কাজই একজন মানুষের জীবনে সব।
অপলকে গ্রীনকে লক্ষ করছিল মারিয়া, দৃষ্টিতে আনন্দ। একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল কার্ল, হাত টেন নিল মারিয়ার মুঠি থেকে, সিলিংয়ের পানে তাকাল।
হ্যাঁ, ব্যবসা দেখব আমি, একসময় বলল ও। মার্শালের সঙ্গে র্যাঞ্চের ব্যাপারে আলাপ হয়েছে আমার। লী কার্টারকে খবর দিতে পাহাড়ে লোক পাঠাবে সে। লী অস্থায়ী ফোরম্যান, ভাল মানুষ। আমি ওর নিয়োগ পাকা করব। এখন ও-ই দেখাশোনা করবে সবকিছু। স্বর্গীয় হাসিতে উদ্ভাসিত হলো কার্লের চেহারা। রাউন্ডআপের আগেই পুরোপুরি সুস্থ হতে চাই আমি।
খানিক বাদে বিদায় নিল গ্রীন আর মারিয়া! চলে আসার আগে মারিয়া প্রতিশ্রুতি দিল, ডাক্তার রাজি হলে, রোজ ওর প্রিয় মেক্সিক্যান খাবারগুলো নিজের হাতে রেঁধে নিয়ে আসবে সে।
রাস্তায় বেরোতে রোদের তীব্র ঝাঁঝ টের পেল ওরা। চারপাশে কর্মব্যস্ত মানুষের ভীড়। গ্রীন বলল, তুমি যাও। আমি মার্শালের সঙ্গে দেখা করব। হয়তো ওর অফিসে বসেই লিখে ফেলব আমার রিপোর্ট।
তারপর আসছ? দুপুরে খেতে?
সি, সিনোরিটা, বলে টুপির কারনিসে হাত ছোঁয়াল গ্রীন, রাস্তা পেরিয়ে মার্শালের অফিসে গিয়ে ঢুকল।
ডেস্কে বসে কাজ করছিল মক, অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ বেশ তরতাজা দেখাচ্ছে ওকে।
ভালই করেছ এসে, বলল মার্শাল। কার্লকে দেখতে গিয়েছিলে? আমি সকালে ঘুরে এসেছি, ভাবলাম আমারই দায়িত্ব ওর বাবার মৃত্যুসংবাদটা ওকে দেয়া। চেয়ারে হেলান দিল মক। কার্লও আমাকে একটা মজার খবর জানাল। তোমার মনে আছে আমি বলেছিলাম, হালাম, হার্ভে স্টেজ আর ড্রাম ডার্লিংয়ের মধ্যে একটা, কিন্তু আছে? আসলেও তাই। লিউ নামে এক লোকের কাছে ব্যাপারটা জানে কার্ল-এর পরপরই মাতাল হয়ে ওইসব কাণ্ড করে ও। হালাম আর তার ওই তিন বন্ধু যুদ্ধের অল্প কদিন পর একটা আমি পে-রোল লুট করে। কয়েকজন অফিসারকে খুন করে টাকা নিয়ে সরে পড়ে এরা। লিউ তার বখরা নিয়ে চলে যায় নিজের পথে। কিন্তু হালাম, হার্ভে আর ড্রাম ঠিক করে তারা একসঙ্গে থাকবে, টাকাগুলো গরু ব্যবসায়ে খাটাবে। একপাল গরু কিনে এখানে চলে এল ওরা। একসময় আলাদা হয়ে গেল ডার্লিং।
তারপর, কিছুদিন আগে হঠাৎ একদিন বাথানে এসে হাজির হয় লিউ। কার্ল তখন ওখানে। মাতাল ছিল লিউ, নেশার ঘোরে সব ফাঁস করে দেয়। বাপকে ফেরেশতা মনে করত কাল, এবার তার আসল চেহারা জেনে মনে দারুণ আঘাত পেল। যাই হোক একটু বাদে ওর বাবা আর হার্ভে স্টেজ ফিরে এলে খড়ের গাদায় আত্মগোপন করে কার্ল। লিউর সাথে কিছুক্ষণ কথা কাটাকাটি হয় ওদের, তারপর হার্ভে ওর মাথায় কোদালের বাড়ি মেরে খুন করে ওকে আমার বিশ্বাস, গুলি করার ঝুঁকি নিতে চায়নি ওরা। এরপর হালামকে পাহারায় রেখে লিভারি বার্নের যেখানে কেরোসিনের ব্যারেল রাখে ওরা সেখানে গর্ত খুঁড়ে লিউকে মাটিচাপা দেয় হার্ভে।
দম নিতে থামল মক, তারপর নিচু সুরে বলল, আমাদের মুর্দাফরাশকে সঙ্গে করে আমি ওখানে যাচ্ছি। লাশটা উঠিয়ে সৎকারের ব্যবস্থা করব। বিচ্ছিরি কাজ।
জিভ নেড়ে চুকচুক শব্দ করল গ্রীন, এপাশ-ওপাশ মাধা নাড়াল।
এ দেখছি, একেবারে বটতলার উপন্যাস, মার্শাল। অবশ্য যুদ্ধের পর হঠাৎ করে বেকার হয়ে গিয়ে প্রথম প্রথম অনেকেই চুরি-ডাকাতি করেছিল।