অন্ধকারে অনেক গোলাগুলি হয়েছে–আর না। এবার আমি হোটেলে ফিরে ঘুমিয়ে পড়ব। প্রয়োজন হলে কাল সকালে আমাকে খুঁজে নিতে পারবে-যদি সেটাই চায় ও।
গ্রীনের দিকে তাকাল মার্শাল। এখনও কিন্তু শহর ছাড়ার সময় আছে, বলল রুক্ষ গলায়।
এই নিয়ে তিনবার কথাটা আমাকে বললে তুমি, কাঠখোট্টা গলায় জবাব দিল গ্রীন। ভাল করেই জানো, আমি তা করব না। কেন করব না-তাও জানো।
টুপি পরল গ্রীন। মক একদৃষ্টে তাকিয়েছিল, বলল, চল, হোটেল অবধি এগিয়ে দিই তোমাকে, তারপর অফিসে যাব।
বেশ, গ্রীন বলল।
খাবারের জন্য মারিয়াকে ধন্যবাদ দিল ও। এ পর্যন্ত মনে হয় একবারও দাম দেইনি, শাস্যে বলল। মুফতে খাচ্ছি। চলি, শুভ রাত্রি। ঘুমাও ভাল করে।
তোমার এরকম বিপদে আমার ঘুম হবে কীভাবে? জানতে চাইল, মারিয়া। রাতটা এখানেই থেকে যাও। বল থাকবে, থাকবে না।
আজ রাতে না, মারিয়ার গাল টিপে দিল গ্রীন। পরে, আমাদের বিয়ের পর।
ধাক্কা মেরে ওর হাত সরিয়ে দিল মেয়েটা, চোখ জ্বলছে।
কে বিয়ে করছে তোমাকে? আমি না! বোকা গ্রিংগোকে কে করবে বিয়ে, মরা মানুষের সাথে ঘর করতে পারব না আমি।
বড় বড় হয়ে গেছে মারিয়ার চোখ, মুহূর্তের জন্য গ্রীনের মনে হলো মেয়েটা বুঝি কেঁদে ফেলবে।
ঝুঁকিটা নিয়েই দ্যাখ, বলে ক্যান্টিনার মূল ঘরে পা রাখল ও। একটু থেমে এক পেগ টেকুইলা পান করল মক, দাম চুকিয়ে বেরিয়ে এল দুজন।
বাইরে রাতের রাজপথ নীরব, কোমল। ধীর পদক্ষেপে হাঁটছে ওরা। গ্রীন বিড়বিড় করে বলল, সেজে আরও দুজন লোক ছিল। একজনকে মেরে বেহুশ করেছিলাম আমি। দ্বিতীয়জন বোধহয় মারা গেছে-নাম হাচ।
অসল্যারের কথা অনুযায়ী, হাচ মারা গেছে। অপরজনের নাম তুর্ক। অসল্যারকে ও বলেছে সকালে হাচকে সে কবর দেবে। কিন্তু অসল্যারের ধারণা তার আগেই ভাগবে ব্যাটা, তাই ও নিজেই কবর দিয়ে আসবে গিয়ে।
তা হলে মিটে গেল এদিককার পাট। লাশ বেশিক্ষণ বাইরে ফেলে রাখতে নেই, অযথা কষ্ট দেয়া।
হাঁটার সময় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আশপাশের গলিঘুচি, ছায়াচ্ছন্ন এলাকা জরিপ করছে ওরা। এত রাতে একমাত্র স্যালুনগুলোই খোলা আছে। গোটা কয়েক পনি বাধা আছে ওগুলোর হিচরেইলে। হোটেলের খোলা দরজা দিয়েও আলো এসে পড়েছে বাইরে, হলুদ করে তুলেছে বারান্দা। এতক্ষণ স্নায়ুর চাপে ভুগছিল গ্রীন, বারান্দার ধাপে পৌঁছে হাঁপ ছাড়ল।
এগিয়ে দেয়ার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ, মার্শাল। শুভ রাত্রি। দেখা হবে কাল, সম্ভবত।
হুঁশিয়ার থেক, গম্ভীর সুরে বলল মক। গ্রীন ওপর-নীচ মাথা ঝাঁকিয়ে উঠতে শুরু করল সিঁড়ি ভেঙে। প্রায় মাথায় পৌঁছে গেছে ও, স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ওকে হোটেলের বাড়িতে, এই সময় রাস্তা থেকে ভেসে এল একটা বাজখাই গলা।
আজ পর্যন্ত কারও পিঠে গুলি করিনি আমি-ঘুরে দাঁড়াও, গ্রীন!
সামনে, বারান্দার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল গ্রীন, প্রায় একই সময় নীচের রাস্তায় হালামের পিস্তল গর্জে উঠল। ক্রুদ্ধ গুঞ্জন তুলে মাথার ওপর দিয়ে লবির দিকে উড়ে গেল বুলেট। একটা আর্তচিৎকার ভেসে এল ভেতর থেকে। ইতিমধ্যে পিস্তল বের করে গড়িয়ে একপাশে সরে গিয়েছিল গ্রীন, অ্যাংকর মালিক আবার গুলি ছুঁড়তে তার পিস্তলের আগুন লক্ষ্য করে ট্রিগার টিপল ও!
তারপর মার্শাল মকের কর্কশ অথচ দৃঢ় কণ্ঠস্বর শুনতে পেল গ্রীন। পিস্তল ফেলে দাও, হালাম। খুনের চেষ্টা করার দায়ে গ্রেফতার করা হলো তোমাকে।
অশ্রাব্য খিস্তি করল হালাম, বিরক্ত হয়েছে।
কেন, ব্যাটা বুড়ো গর্দভ, তুমি কেন এর মধ্যে অবজ্ঞার সুরে শুরু করল হালাম, আধপাক ঘুরে গুলি করল মার্শালকে।
কিন্তু মক ততক্ষণে সরে গেছে অন্যপাশে, পাল্টা গুলি করল সে, বারান্দা থেকে গ্রীন তার দ্বিতীয় গুলিটা ছুঁড়ল।
হালামের তরফ থেকে আর কোন সাড়াশব্দ এল না, আচমকা গোলাগুলির পর থমথমে নীরবতা নেমে এসেছে, রাস্তার মাঝখানে হাত-পা ছড়িয়ে পড়ে আছে একজন মানুষ। তারপর দূর থেকে কোলাহল ভেসে এল, লোকজন ছুটে আসছে। রাস্তায় নেমে গেল গ্রীন, হালামের লাশের কাছে মকের সঙ্গে মিলিত হলো।
চল, বাতিতে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করি, বলল মক। সিঁড়ির গোড়ায় যেখানে সামান্য আলো এসে পড়েছে, ধরাধরি করে হালামের দেহ সেখানে নিয়ে গেল ওরা। লাশের ওপর ঝুঁকে পড়ল মার্শাল, জামার বোতাম খুলল। একসময় পরীক্ষা শেষ করে উঠে দাঁড়াল সে।
একটাই গুলি লেগেছে। সোজা হৃৎপিণ্ডে, মনে হয়। তুমি অথবা আমি-কে তা জানার উপায় নেই। অবশ্য তাতে কিছু যায় আসে না।
ভিড় জমে উঠেছে চারপাশে, বিস্ফারিত চোখে দেখছে, অশি। ক্লান্ত সুরে মককে বলল গ্রীন, আমার কিছু করার থাকলে বৎ। না হলে আমি ঘুমাতে চললাম।
যাও। সকালে দেখা হবে।
দোতলায় নিজের কামরায় উঠে গেল গ্রীন, মাথা খালিখালি লাগছে। পরে এক সময়ে কিছুক্ষণ আগের ঘটনাটা সম্পর্কে ভাববে ও কাপড়চোপড় খুলে বিছানার চাদরের তলায় ঢুকল সে, কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘুমিয়ে পড়ল।
.
মারিয়া বলছিল, কাল রাতে গুলির শব্দ পেয়ে পাগলের মত ছুটে আসছিলাম আমি। ভয় হচ্ছিল তুমি মারা গেছ। তারপর দেখলাম লোকজন ভিড় করে একটা লাশ দেখছে-হালামের। খুশিতে আমি চেঁচিয়ে উঠলাম। তারপর মার্শাল মক এসে বলল, তুমি ঘরে আছ, ঘুমাচ্ছ। তাই আর বিরক্ত করিনি, ফিরে গিয়ে আমিও ঘুমিয়ে পড়েছি।