কয়েক মিনিটের মধ্যেই খাড়াইয়ের মাথায় পৌঁছে গেল ওরা, পিছলে গিরিখাতে নেমে গিয়ে স্টীলডাস্টের উদ্দেশে ছুটল। স্যাডলে চাপল গ্রীন, মারিয়া পেছনে বসল, দুই হাতে ওর কোমর জড়িয়ে ধরেছে।
ঘোড়া ঘুরিয়ে গিরিখাতের বাইরে বেরিয়ে এল গ্রীন। আবার পেছনে তাকাল। ভার্জিল রীডের স্যালুনটা এখন দাউদাউ করে জ্বলছে। ওই আগুনে বহুদূর অবধি আলোকিত হয়ে উঠেছে রাতের আকাশ।
.
শহরে পৌঁছে মারিয়াকে ক্যান্টিনায় নামিয়ে দিল গ্রীন ওকে যেতে নিষেধ করল মারিয়া, লুকিয়ে থাকতে বলল।
এবার হালাম কী করবে কিছুই বলা যায় না, মার্শালকে সাবধান করা দরকার, মারিয়ার কথার পিঠে গ্রীন জবাব দিল।
পাগলা কুকুর হয়ে গেছে ও। তুমি সাবধান থেক, জেমস, না হলে ও তোমাকে খুন করবে।
চেষ্টা করবে বোধহয়। আমার বিশ্বাস, শেষ একটা মোকাবেলা হবে আমাদের-তবে আমি ওর পিছু নেব না।
সেটা করলেই মনে হয় ভাল করতে, যুক্তি দেখাল মারিয়া। ভয় পেত তোমাকে।
ও ভয় পাবার লোক না, বলে মারিয়ার চোখের পানে তাকাল গ্রীন। এবার তুমি ভেতরে যাও-আর বেরোবে না।
তুমি আসছ পরে?
অবশ্যই। তবে তোমার উঠনে খাব না, অন্তত আজ রাতে না। দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে ঘেরা জায়গায় বসতে হবে, যেন দরজার ওপর চোখ রাখতে পারি।
সি- বলে ওর একটা হাত বুকে টেনে নিল মারিয়া, চাপ দিল আলতোভাবে। তুমি আসবে, গাঢ় স্বরে আমন্ত্রণ জানাল ও। মেয়েদের সম্মান বাঁচাতে জানো তুমি।
এভাবে ভেবে দেখিনি কখনও। যেটা উচিত মনে হয় করি-ব্যস।
অনাবিল হাসি হাসল গ্রীন। দেখল মারিয়ার দৃষ্টি নরম হয়ে এসেছে, চোখ ছলছল করছে। মেয়েটা ওর হাত ছেড়ে দিতে রওনা হলো গ্রীন, শহরের মূল অংশে ফিরে যাচ্ছে। মার্শালের দফতরের সামনে থামল ও। মক ছিল না, মাঝবয়সী এক লোক-সম্ভবত ডেপুটি-স্মিত হাসল ওকে দেখে। বেশ রাত হয়েছে, মককে খবর দিতে বলে বিদায় নিল গ্রীন।
চারটে বাড়ি পরেই টেরিলের আস্তাবল। সেখানে ঘোড়া রেখে রাইফেলটা নিয়ে হোটেলে ফিরে এল সে, জামাকাপড় না খুলেই টানটান হয়ে শুয়ে পড়ল বিছানায়। ঘুম চলে আসছিল, ঝট করে উঠে পড়ল গ্রীন, হাই তুলে বেসিনের ধারে গিয়ে হাত-মুখ রগড়ে সাফ করল পানি দিয়ে। তারপর ওর সর্বশেষ পরিষ্কার শার্টটা গায়ে চড়িয়ে বেরিয়ে এল করিডরে, ভাবছে হালাম এতক্ষণে বোধহয় পৌঁছে গেছে শহরে। করিডর ধরে পেছনের সিঁড়িতে চলে গেল গ্রীন, অন্ধকার গলিতে নামল। নানান গলিঘুচি হয়ে মেক্সটাউনের কিনারে পৌঁছে কিছুটা নিরাপদ বোধ করল ও। তবু, স্যাম ট্যানার ওকে অ্যামবুশ করেছিল মনে পড়তে, ক্যান্টিনার আশপাশের এলাকা জরিপ করল ভাল করে।
হালামের এখন যে মানসিক অবস্থা, বিশেষ করে সেজের ঘটনাবলীর পর, তাতে এর পক্ষে অ্যামবুশ করা বিচিত্র কিছুই নয়। ক্যান্টিনায় ঢুকল গ্রীন। বারটেন্ডার ছাড়া আর কেউ নেই, সাপারের সময় বহু আগেই পেরিয়ে গেছে। ওকে চওড়া একটা হাসি উপহার দিল বারটেন্ডার, বেশ অনেকটা মাথা ঝুঁকিয়ে সম্মান জানাল।
সিনর গ্রীন। সিনোরিটা গার্সিয়াকে নিরাপদে ফিরিয়ে এনেছ তুমি, সেজন্য আমি কৃতজ্ঞ। রান্নাঘরেই ওকে পাবে।
ধন্যবাদ। আর কতক্ষণ খোলা আছে ক্যান্টিনা?
বড়জোর ঘণ্টাখানেক, সিনর।
হালামকে চেন?
সি, দেখলেই চিনব।
বন্ধের আগেই যদি আসে, চিৎকার করবে।
তার চেয়েও ভাল কিছু করব, কঠিন গলায় জবাব দিল বারটেন্ডার। বারের নীচ থেকে বড় একটা পিস্তল বের করল সে। এর সাহায্যে চিৎকার করব, সিনর। সিনোরিটার গায়ে হাত তুলেছে ওই লোক, ওকে পেলে আমি ছাড়ব না।
ওপর-নীচ মাখা ঝাঁকাল গ্রীন। যথেষ্ট বলে রান্নাঘরে পা রাখল।
বাসায় ফিরে জামাকাপড় পাল্টেছে মারিয়া, চুল আঁচড়েছে নতুন করে। স্টোভে একটা কিছু ভাঁজছিল ও, গ্রীনকে দেখে স্মিত হাসল।
বুয়েন্স নচেস, শুভ সন্ধ্যা, সিনর জেমস গ্রীন। তুমি বস ওখানে, দেয়ালে পিঠ দিয়ে। অল্পক্ষণ আগে সাজানো দুটো চেয়ার আর টেবিল দেখিয়ে বলল মারিয়া। রান্না হয়ে এল, শিগগিরই আমরা খাব।
সত্যি, খুব খিদে পেয়েছে আমার, স্বীকার করল গ্রীন। তবে, আজ আর টেকুইলা না। মাথা পুরোপুরি সেরে না ওঠা পর্যন্ত ঠিক হবে না খাওয়া।
মিনিট কয়েক বাদে টেবিলে খাওয়া দিল মারিয়া, গ্রীনের মুখোমুখি বসল। দুজনেই খাচ্ছে গোগ্রাসে, কথা হচ্ছে সামান্য। বলার বিশেষ কিছু নেই ওদের। যা ঘটে গেছে তা এতই সাম্প্রতিক যে নতুন করে আলোচনার অপেক্ষা রাখে না। তা ছাড়া গ্রীনের বিশ্বাস, ভবিষ্যতেও এ প্রসঙ্গ কখনও তুলবে না তারা।
পিপার মক যখন ঢুকল রান্নাঘরে তখন ওরা কফি খাচ্ছে। থমথমে হয়ে আছে মার্শালের মুখ, ওকে এত গম্ভীর এ যাবৎ কখনও দেখেনি গ্রীন।
গ্রীন বলল, তোমার অফিসে গিয়েছিলাম, কেবল ডেপুটি ছিল।
ওপর নীচ মাথা ঝাঁকিয়ে মক বলল, সেজের অসল্যার ভার্জিল রীডকে ডাক্তারের কাছে আনার পরপরই ও খবর দিয়েছে আমাকে। তোমার তলবও পেয়েছি তখন: অসল্যারের সাথে আলাপ হয়েছে আমার। ও বলল, হালাম তোমাকে খুঁজছে।
আন্দাজ করেছিলাম। কোথায় আছে এখন, জানো কিছু?
না। তবে অসল্যার বলল রীডকে নিয়ে ও আসার আগেই হালাম রওনা হয়েছে। কাজেই স্বচ্ছন্দে ধরে নিতে পার কাছেপিঠেই কোথাও ওত পেতে আছে তোমার জন্য।
মাথা ঝাঁকিয়ে উঠে দাঁড়াল গ্রীন।