দরজার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে গ্রীন এই সময় হাই তুলে উঠে দাঁড়াল অসল্যার, বাইরে গেল। একলাফে দরজার পাশে চলে এল গ্রীন, শুনতে পেল জড়ানো গলায় অসল্যার বলছে, ওরা কেন ভাবছে ও আসবে বুঝতে পারছি না। গাধা না হলে যে কেউ বুঝবে এটা একটা ফাঁদ। আমি হলে তো আসতাম না, এমনকী দোতলার ঘরে যে মেয়েটাকে আটকে রেখেছে তার খাতিরেও না।
তুমি গ্রীন না, চাঁছাছোলা জবাব দিল হাচ। ও ঠিকই আসবে। লড়াই দেখে ভয় পাবার লোক না গ্রীন।
তাই বলে মরতে আসবে?
আসবে।
ওই মেক্স মেয়েটাকে নিয়ে কী করবে ওরা?
সেটা আমার মাথাব্যথা না। যাকগে, এবার তুমি চুপ কর। এরকম বকবক করলে শুনতে পাব কীভাবে ও আসছে কিনা?
মৃদু সুরে বিরক্তি প্রকাশ করল অসল্যার, দোরগোড়ায় ফিরে এসে আবার বোতল খুলে বসল। কপাটের পেছনে জমে গেল গ্রীন, মাকড়সার আঠাল জালে পড়ায় গা ঘিনঘিন করে উঠল। আরও এক মুহূর্ত অপেক্ষা করল সে, তারপর নিঃশব্দে বেরিয়ে এসে পিস্তলের নল দিয়ে বাড়ি মারল অসল্যারের কানের পাশে। কলার ধরে ভেতরে টেনে এনে দেয়ালের পাশে শুইয়ে দিচ্ছে ওকে এই সময় হাচ এগিয়ে এসে বলল, অ্যাই, কোথায় তুমি? বোতলটা কই? আমি খাব এক ঢোক।
আরও এক কদম এগোল হাচ, ও পায়ে বেধে উল্টে পড়ল বোতল। গ্রীন কোথাও লুকাতে পারার আগেই নিচু স্বরে গাল বকে, ওটা কুড়িয়ে নিল সে।
শার্টের আস্তিনে বোতলের গলা মুছে নিল হাচ, উঁচু করে গলায় ঢালল। খেতে খেতে ওর দৃষ্টি সরে গেল আস্তাবলের ভেতর দিকে, দেয়ালের গায়ে গ্রীন আর অচেতন অসল্যারের ছায়া দেখতে পেল।
শালা–আঁতকে উঠেই গ্রীনের উদ্দেশে বোতলটা ছুঁড়ে মারল হাচ, কনুইয়ের ফাঁকে ধরা রাইফেলের ট্রিগার টিপল।
আচমকা এবং দ্রুত ঘটে গেল ব্যাপারটা। বুলেটের ঘষায় পুড়ে গেল গ্রীনের বাহু, ঝট করে বাঁ-হাতে দুবার গুলি ছুঁড়ল সে, পিছিয়ে গেল হাচ, তারপর টলতে টলতে দুকদম এগিয়ে এসে লুটিয়ে পড়ল ধুলোয়।
দৌড়ে আস্তাবলের বাইরে চলে এল গ্রীন, জানে গুলির আওয়াজে এক্ষুণি ছুটে আসবে হালাম। রাস্তা ধরে এগোল না সে, আস্তাবলের পাশ দিয়ে গলিতে ঢুকল, একটু থেমে খাড়া করল কান। ভারি বুটের আওয়াজ পেল গ্রীন, ঘুরে স্যালুনের পেছনে চলে গেল, লাথি মেরে দরজা ভেঙে ঢুকে পড়ল ভেতরে।
চমকে উঠে টুলের ওপর সোজা হলো, ভার্জিল রীড, শটগানের দিকে হাত বাড়াল।
যত্নের সঙ্গে নিশানা করে শয়তান বুড়োর কাঁধে গুলি করল গ্রীন। কর্কশ সুরে বলল, বাইরে যাও, রীড। তারপর শটগানটা তুলে নিয়ে দৌড়ে টপকাতে শুরু করল সিঁড়ির ধাপ।
দেয়ালে বসানো কুপির আলোয় করিডরের দুপাশে সারি সারি ঘর চোখে পড়ল। ওর। প্রথমে বায়ের দরজাটা খুলল গ্রীন। কারোকে দেখতে পেল না। তারপর উল্টো দিকের দরজা খুলেই বুঝতে পারল মারিয়া আছে এখানে। করিডর থেকে আসা ক্ষীণ আলোয় দেখল খাটের ওপর মুখ-হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে ও। ছুরি বের করে ঝটপট বাধন কাটতে শুরু করল গ্রীন।
১৮.
ছাড়া পেয়েই একটা খুশির চিৎকার দিয়ে গ্রীনের বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল মারিয়া। আস্তে করে ওকে ঠেলে সরিয়ে দিল গ্রীন।
দেখ, জানালা বেয়ে নীচে নামার মত দড়ি হবে কিনা। এটাই বোধহয় সবচেয়ে নিরাপদ রাস্তা।
কথা শেষ করে গ্রীন বেরিয়ে গেল, খাটের বাজু থেকে দড়ি খুলতে শুরু করল মারিয়া। সিঁড়ির মাথায় চলে এল গ্রীন। ওর পা দৃষ্টিপথে আসা মাত্র নীচ থেকে ছুটে এল তিনটে গুলি। লাফিয়ে পেছনে সরে গেল গ্রীন, একটু থেমে দেয়ালের কুপিটা নামাল। কেরোসিন ছিটাল সিঁড়ির ধাপে, জ্বলন্ত কুপিটা ছুঁড়ে মারল ওই তেলের ওপর।
নীল শিখা জ্বলে উঠল ধাপগুলোয়, তারপর শুকনো কাঠে ছড়িয়ে পড়ল আগুন। ক্ষিপ্রপায়ে ঘরে ফিরে এল গ্রীন। জানালা হাট করে খুলে দিয়েছে মারিয়া, খাট ঠেলে নিয়ে গেছে ওখানে। দড়ির এক মাথা বেঁধেছে খাটের বাজুর সাথে, অন্যপ্রান্ত ঝুলিয়ে দিয়েছে জানালার বাইরে। ওর হাতে শটগানটা দিল গ্রীন।
আমি নামছি আগে। বেশিক্ষণ লাগবে না। হালাম যদি আগুনের এপাশে চলে আসে, গুলি করতে দেরি কর না।
হাহ! খুন করব!
কুঁদো নীচমুখী করে রাইফেলটা জানালা গলিয়ে ফেলে দিল গ্রীন। তারপর চৌকাঠে বসে টেনে দেখল দড়িটা ওর ভার সইতে পারবে কিনা। সন্তুষ্ট হয়ে নামতে শুরু করল ও, মাঝামাঝি চলে এসেছে এই সময় শটগানের গর্জন শুনতে পেল সে, প্রথম একটা গুলি, তারপর আরেকটা।
এর এক সেকেন্ড পর দড়ির শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেল ও, ছেড়ে দিয়ে ধপ করে নামল মাটিতে। গোড়ালির ওপর পড়ে সামান্য ঝুঁকি খেল সে, তবে ভারসাম্য হারাল না।
ওপরে তাকিয়ে দেখল জানালার বাইরে শরীর গলিয়ে দিয়েছে মারিয়া, নামতে শুরু করেছে।
যখন দড়ির শেষমাথায় পৌঁছাল, পাঁজাকোলা করে ওকে মাটিতে নামিয়ে রাইফেলটা কুড়িয়ে নিল গ্রীন! চল, বলল ও। তুমি গুলি করেছ ওকে?
না। ছায়া দেখে মেরেছি। চোখে দেখতে পাচ্ছিলাম না ভাল করে।
মারিয়ার হাত ধরে ছুটতে ছুটতে গলির মুখে এসে পড়ল গ্রীন, ডাইনে-বাঁয়ে একবার নজর বুলিয়ে রাস্তা পার হলো। ঘাড় ফিরিয়ে শেষবারের মত স্যালুনের, খিড়কি দোরের দিকে তাকাল ও, দেখল ভেতরে লকলক করছে আগুনের শিখা। পরক্ষণে দোরগোড়ায় বেরিয়ে এল হালাম, রাইফেল ছুঁড়ল ওদের উদ্দেশে। অনেকদূর দিয়ে চলে গেল গুলি, হালাম আসলে দেখতে পায়নি ওদের, আন্দাজে নিশানা করেছিল। গ্রীন পাল্টা জবাব দিল না, নিজেদের অবস্থান জানাতে চায় না বলে।