এমনভাবে বাঁধব যেন ছুটতে না পারিস, খোদার কসম! নির্দয় ব্যবহার করেছে হালাম, অকারণে ওকে ব্যথা দিচেছ। ভার্জিল রীড তখন উপস্থিত না থাকলে আর কী ঘটাত কার্লের বাবা ভাবতে গেলেই ওর গা শিউরে উঠছে।
কার্ল এখনও বেঁচে আছে কিনা জানে না মারিয়া কায়মনোবাক্যে কামনা করল যেন থাকে। তারপর শান্ত হয়ে পড়ে রইল ও, কান খাড়া, ঘোড়ার খুরের শব্দ, গুলির শব্দ শুনতে চেষ্টা করছে-এমন কোন আওয়াজ যা থেকে বুঝতে পারে গ্রীন এসেছে তাকে উদ্ধার করতে।
.
সন্দেহ নেই এটা একটা ফাঁদ, সেজের রাস্তায় জোরকদমে ছুটতে ছুটতে কথাটা আবারও ভাবল গ্রীন। দূরে স্যালুনের বাতি দেখতে পাচ্ছে সে, সাবেক মাইনিং ক্যাম্পের একমাত্র বাতি ওগুলো।
স্যালুনেই মারিয়াকে আটকে রাখবে ওরা, দোতলার একটা ঘরে। রাস্তার এ মাথায়, আস্তাবলের কাছে, পাহারায় থাকবে এক লোক, আরেকজন থাকবে অপর প্রান্তে-যদি আদৌ সেরকম কারোকে জোগাড় করে থাকে হালাম।
ঘোড়ার গতি হাঁটার পর্যায়ে নামিয়ে আনল গ্রীন, গতযাত্রায় যে গিরিখাত ধরে সে দ্বিতীয় বার মাইনিং ক্যাম্পে ঢুকেছিল সেদিকে এগোল।
একটু বাদে স্যাডল থেকে নামল সে, ঘোড়াসমেত পায়ে হেঁটে স্যালুন ছাড়িয়ে বেশ কিছুদূর চলে এল। লাগামের খুঁটাটা মাটিতে পুঁতে রেখে, খাড়াই বেয়ে গিরিখাতের কিনারে উঠল গ্রীন, চোখ কুঁচকে তাকাল, বাড়িঘরের অন্ধকার কাঠামোগুলোর দিকে। ছায়ার ভেতর যা খুঁজছিল, খানিক বাদে দেখতে পেল সে। রাস্তার শেষ মাথায় অস্থিরভাবে পায়চারি করছে এক রাইফেলধারী!
একটা ঝুপড়ির আড়ালে গা ঢাকা দিয়ে দীর্ঘ ঢাল বেয়ে কারবাইন হতে গলিতে নামল গ্রীন। গোটা দুতিনেক ঝুপড়ি পেরিয়ে চলে এল গলির মুখে, উঁকি মেরে দেখল লোকটাকে। হাচ নয়, এ বেশ লম্বা। নতুন কেউ? ওর দিকে এগিয়ে গেল গ্রীন। পেছনে পায়ের আওয়াজ শুনতে পেয়েছিল রাইফেলধারী, ঘাড় ফেরাল।
দেখতে পেলে কারোকে? ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল গ্রীন।
কিছু না, একটা শব্দ পর্যন্ত নেই। তুমি কোত্থেকে এলে? হালাম বলছিল আমরা মাত্র চারজন।
র্যাঞ্চ থেকে এসেছি। গ্রীনকে খুন করতে চায় ফ্রেন্ড, আজ রাতে বোধহয় সম্ভব হবে সেটা। মেয়েটাকে কোথায় রেখেছে ওরা?
কেন, তোমাকে বলেনি? রাইফেলধারীর কণ্ঠে সন্দেহ, এক কদম আগে বাড়ল সে, ভাল করে দেখার চেষ্টা করল অন্ধকারের ভেতর। চমকে উঠল পাহারাদার, অব্যক্ত একটা শব্দ বেরিয়ে এল ওর গলা চিরে। ইতিমধ্যে গ্রীন পৌঁছে গিয়েছিল ওর কাছে, কারবাইনের কুঁদো দিয়ে লোকটার মাখায় আঘাত করল সে।
হাঁটু দুমড়ে ধসে পড়ন্স রাইফেলধারী, গ্রীন আবার আঘাত করতে জ্ঞান হারাল।
ওকে নিরস্ত্র করল গ্রীন, কোমরের বেল্ট ধরে টানতে টানতে অদুরের একটা ঝুপড়ির ভেতর নিয়ে গিয়ে রাখল, বেরিয়ে এসে বাইরে থেকে শেকল তুলে দিল দরজায়। এরপর সে রাস্তার ওপাশে চলে গেল, বুকে হেঁটে স্যালুনের উল্টো দিকে এসে থামল ভাঙা জানালা দিয়ে আলোকিত ঘরটা জরিপ করল গ্রীন।
ভার্জিন রীডকে দেখতে পেল সে, বারের পেছনে ওর নিজের জায়গায় বসে আছে; ডান হাতের কাছে রাখা শটগানটাও চোখে পড়ল। কিন্তু মারিয়াকে দেখতে পেল না কোথাও, হালামকেও না।
শিরদাঁড়া সোজা করল গ্রীন, কাছেই এক জোড়া পদশব্দ শুনতে..পেয়ে দ্রুত পিছিয়ে গেল গাঢ়তর অন্ধকারে স্যালুনের দরজা-জানালা গলে আসা আলোয় এসে দাঁড়াল এক লোক, হাতে রাইফেল। ওকে চিনতে পারল গ্রীন-হালাম। র্যাঞ্চার স্যালুনের ভেতরে ঢুকে যাবার সময় ওর চওড়া পিঠ বরাবর কারবাইন তাক করল সে।
ওকে মারতে পারতাম আমি, যা করেছে ও তাতে অন্যায় হত না এটা, ভাবল গ্রীন। বুড়ো রীডকেও মারতে পারি। শেষ করে দাও ওদের, নিজেকে বলল গ্রীন, তারপর মারিয়াকে নিয়ে চলে যাও এখান থেকে।
কিন্তু গুলি করল না সে-ট্রিগার টেপার প্রবৃত্তি হলো না। হাচের কথা ভাবল গ্রীন, ব্যাপারটা কীভাবে সামলাবে মনস্থির করে ফেলেছে। কিন্তু হাচকে পেছনে রেখে কাজে নামতে চাইল না ও, ঠিক করল প্রথম ওর একটা ব্যবস্থা করবে।
নিঃশব্দে রাস্তার পাড় ধরে এগোল গ্রীন, চোখ অদূরবর্তী আস্তাবলটা জরিপ করছে। কোন বাতি দেখা যাচ্ছে না ওখানে। অসল্যারের মুখটা মনে করল, ও, জরাগ্রস্ত, নেহাত গোবেচারা মানুষ।
তখনও একশো ফুট দূরে আছে গ্রীন এমন সময় আস্তাবলের কোণে ফস করে একটা ম্যাচ জ্বলে উঠল, সিগারেট ধরানোর সময় লোকটার মুখ দেখতে পেল ও। হাচ। ম্যাচ নিভে যেতে আবার অন্ধকার হয়ে গেল সবকিছু।
একটু দোনোমনো করল গ্রীন। তারপর একদৌড়ে রাস্তা অতিক্রম করে আস্তাবলের পেছনে চলে এল। আবার ইতস্তত করল সে। একটা দরজা খোলা রয়েছে এপাশে, গোবর আর পচা খড়ের দুর্গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসছে। কপাটের পাশ দিয়ে সাবধানে সামনের বড় দরজাটার দিকে তাকাল গ্রীন; দেখল ওটাও খোলা, দোরগোড়ায় গোড়ালির ওপর বসে আছে এক লোক। নড়ে উঠল লোকটা, গলায় উপুড় করল একটা বোতল, কয়েক ঢোক খেয়ে নামিয়ে রাখল আবার, স্থির হয়ে, গেল।
পিস্তল বের করে আস্তাবলে ঢুকল গ্রীন, মেঝেতে খড় থাকায় ঢাকা পড়ে গেছে বুটের মচমচ আওয়াজ। অকস্মাৎ একজন মানুষের উপস্থিতি টের পেয়ে অস্থিরভাবে পা ঠুকল স্টলে বাধা ঘোড়াগুলো, খাওয়া থামিয়ে নাক ঝাড়ল ঘোৎ করে। ওদের পাশ কাটিয়ে এল সে, উৎকট গন্ধে বমি চলে আসছিল, এক হাতে নাক-মুখ চাপা দিল।