বারে এসে নিজের গ্লাসে মদ ঢালল হালাম। রীডের দিকে তাকাল সে, একপাশে রাখা কাটাবন্দুকটা দেখল। বন্দুকটা তুলে নিল হালাম, নিশানা তাক করে জোড়া ট্রিগার টেপার ভান করল, দুটো ব্যারেলই ওর পেটে খালি করতে চাই আমি, ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল অ্যাংকর মালিক। তারপর দেখব ওর চিৎকার।
দেখি, গানটা দাও আমাকে, বলল, রীড। প্রয়োজন হলে তোমার নিজের বন্দুক ব্যবহার কর। তবে দুটো বাকশট লাগলে বাছাধনকে আর চিৎকার করতে হবে না-এমনিতেই ঝাঁঝরা হয়ে যাবে।
বিড়বিড় করে হালাম বলল কিছু। হার্ভে নামটা কানে গেল রীডের। গতকাল তার ফোরম্যানকে খুন করার পর থেকে ওই নামটা ঘুরছে গরু ব্যবসায়ীর মাথায়। হালামের স্বগতোক্তি থেকে একটু-একটু করে ব্যাপারটা জেনেছে রীড; বুঝেছে র্যাঞ্চার প্রকৃতিস্থ নেই।
আচমকা হনহন করে দরজার কাছে হেঁটে গেল হালাম, চৌকাঠে ঠেস দিয়ে রাখা, রাইফেলটা তুলে নিয়ে বেরিয়ে গেল। দীর্ঘশ্বাস ফেলল রীড। ছাতের দিকে অস্বস্তিভরে তাকাল সে, ছড়িতে ভর দিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে দোতলায় উঠে গেল পেছনের সিঁড়ি বেয়ে, কষ্টেসৃষ্টে একেকটা ধাপ টপকাচ্ছে।
শেষ ধাপে পৌঁছে হাঁপাতে লাগল রীড, ছড়িতে ভর রেখে জিরাল কিছুক্ষণ দেয়ালে বসানো ছোট্ট কুপির আলো ওর পাকা বাবরি চুলের জট আর তোবড়ানো গালে প্রতিফলিত হয়ে চকচক করছে। তারপর একসময় ডানের প্রথম দরজাটার দিকে এগোল সে। তালা খুলে ফিরে এল সিঁড়ির মাথায়, কুপি নিয়ে ঘরে ঢুকল। শতরঞ্চি বিছানো একটা লোহার খাটের ওপর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে মারিয়া, মুখে কাপড় গোঁজা যাতে চিৎকার করতে না পারে।
স্বভাবসিদ্ধ জ্বলন্ত দৃষ্টিতে ওর পানে তাকাল মেয়েটা, ঘৃণা আর আক্রোশে মুখ বিকৃত করল।
রুক্ষ সুরে রীড বলল, কেমন আছ মেয়ে?
হিসহিস একটা শব্দ করল মারিয়া, মুহূর্তের জন্য চোখ সরাচ্ছে না রীডের ওপর থেকে। ওই দৃষ্টির সামনে অস্বস্তি বোধ করল বুড়ো। ও জানে অকটিও এবং তার আশপাশে প্রচুর বন্ধুবান্ধব আছে মেয়েটার, এখানে যদি ওর কোন ক্ষতি হয় চড়া মশুল গুনতে হবে তাকে বিশেষ করে মেক্সিকানরা মরণকামড় দেবে।
তবে ভরসা একটাই: হালাম রয়েছে। মেক্সিকানদের সে দুচোখে দেখতে পারে না, মেষপালক বা তার চেয়েও খারাপ কিছু বলে গালি দেয়। মেয়েটাকে ধরে এনেছে, সম্ভবত গ্রীনের সাথে মাখামাখি আছে বলে। হালামের বোধহয় চোখ পড়েছে ওর ওপর, মনে মনে ভাবল ভার্জিল রীড। বিছানার সাথে মেয়েটাকে বাঁধার সময় ওর আচরণে লালসা দেখতে পেয়েছে সে।
সেরকম কিছু ঘটলে দেশ ছাড়তে হবে হালামকে, নইলে মেক্সিকান পুরুষরা ছাড়বে না ওকে, খুঁজে বের করে ওদের ধারাল ছুরি দিয়ে ফেড়ে ফেলবে ওর পেট। মেক্সিকান পুরুষরা ভীষণ আত্মাভিমানী, ওদের মা-বোনদের বেইজ্জতি সইতে পারে না।
ঠিক হয়ে যাবে সব, রুক্ষ সুরে মারিয়াকে সান্ত্বনা দিল রীড। গ্রীন এলেই তোমাকে ছেড়ে দেবে।
অপলকে ওর পানে চেয়ে রইল মারিয়া। দায়সারাভাবে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বেরিয়ে এল রীড, দরজা টেনে বন্ধ করে দিল পেছনে।
আচমকা অন্ধকার হয়ে গেল ঘর। বাঁধন ছেঁড়ার চেষ্টা করল মারিয়া। জানে কোন ফল হবে না, তবে এতে করে অন্তত ব্যস্ত থাকতে পারবে একটা কিছুতে, দুশ্চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়বেনা। তবু, যখনই ভাবছে ফাঁদে পা দিতে আসছে প্রীন, তখনই পাষাণভার চেপে বসছে ওর বুকে।
রীড বলেছে বটে ঠিক হয়ে যাবে সব কিন্তু, মারিয়া নিশ্চিত, গ্রীন বাঁচবে না-সেও। একবার অপহরণ করে, ওকে ছেড়ে দেয়ার মত ঝুঁকি নিতে পারবে না হালাম। স্রেফ গুম হয়ে যাবে সে, এবং হপ্তাখানেকের মধ্যেই তার কথা ভুলে যাবে লোকে। ওর ব্যাপারে ভাববে এমন কোন নিকটাত্মীয় নেই ওর, শুধু দু-চারজন, বন্ধুবান্ধব, কিছুদিন খোঁজ করেই হাল ছেড়ে দেবে তারা।
ভুল, অধৈর্য সুরে হঠাৎ নিজেকে বলল মারিয়া। গ্রিংগো গ্রীনের ওপর ভরসা রাখা উচিত তোমার। একে বিশ্বাস করতে পার, সত্যি। অন্ধের মৃত দে পা দেবার লোক ও না। বিশ্বাস রাখ।
সহসা একধরনের সাহস বোধ করল মারিয়া, হৃতশক্তি ফিরে পেল! ক্যান্টিনা থেকে মাত্র কয়েকটা বাড়ি দূরে ওকে পাকড়াও করে হালাম আর হাচ নামের এক লোক। বাধা দিতে চেষ্টা করেছিল সে, পারেনি। একটা ছালা দিয়ে ওর মুখ বেঁধে ফেলে ওরা যাতে চিৎকারে আওয়াজ ঢাকা পড়ে যায়। তবু আপ্রাণ লড়েছিল ও, কিন্তু হালাম ওর মাথায় আঘাত করতে প্রায়, অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তারপর ওকে আড়াআড়িভাবে নিজের স্যাডলে তুলে নেয় হালাম। এর পরের ঘটনা দুঃস্বপ্নের মত। নোংরা, ছালার ভেতর দম আটকে আসছিল ওর। শক্ত করে ওকে এক হাতে স্যাডলে ধরে রেখে দ্রুতগতিতে ঘোড়া ছোটাল হালাম। তারপর ও যখন ক্রুদ্ধভাবে হাত-পা ছুঁড়তে শুরু করে তখন বসার সুযোগ দেয় ওকে। এক হাতে ওর কোমর জড়িয়ে ধরে ছুটতে থাকে হালাম। হাচ ওদের পাশাপাশি ছুটছিল। কয়েক ঘণ্টা পর সেজে পৌঁছায় ওর এবং হালাম তাকে বেঁধে রাখে এখানে। তখন তার মনে হচ্ছিল সমস্ত শক্তি বুঝি হারিয়ে ফেলেছে সে।
অচিরেই আসবে গ্রীন, আস্থা রাখা উচিত তার। নিঃসাড়ে পড়ে রইল, মারিয়া, বুক ধড়ফড় করছে, মুখ বাঁধা থাকায় কষ্ট হচ্ছে শ্বাস নিতে, পট্টিটা ভিজে গেছে লালায়। চোখ বুজল মারিয়া, বাজুর সঙ্গে বাধা হাত দুটো ঢিলে করে দিল; ওর পা দুটোও বাধা, অসাড় হয়ে গেছে।