নীচে আছি আমি।
বেরিয়ে গেল ও। হো-হো করে একচোট হাসল গ্রীন, পোশাক পরতে শয্যা ত্যাগ করল। পরে, ডাক্তারের বাসায়, বলা হলো ওদের কার্ল এখন খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমাচ্ছে। ওর ফাড়া কেটে গেছে সেরে উঠবে, শুধু একটু সময়ের ব্যাপার। বাইরে এসে ফুটপাত ধরে হাঁটতে লাগল ওরা, সাঁঝের আলোয় গ্রীনের দিকে তাকাল মারিয়া।
খেতে আসবে না?
আসব। তবে আগে দাড়ি কামাতে হবে, আজ রাতে এক মেয়ের কাছে যাচ্ছি আমি।
থমকে দাঁড়াল মারিয়া, চকিতে সজাগ হয়ে উঠেছে।
কোন মেয়ে!
তুমি।
ওহ্। গ্রীনের কোমর জড়িয়ে ধরল শ্যামাঙ্গিনী। হোটেলের দিকে এগোচ্ছে ওরা, রাস্তায় পরিচিত কারোকে দেখতে পেলে আলতো করে মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মান জানাচ্ছে। আমি ভাবলাম কোন সাদা চামড়ার মেয়ে হয়তো।
আমার জন্য এক শ্যামলা মেয়ে অপেক্ষা করছে।
কক্ষনো না কোন গ্রিংগোর জন্য আমি অপেক্ষা করি না।
ঠিক। কিন্তু একবার যদি তোমার ওই সুন্দর মাথায় ঢুকত
ঝট করে দাঁড়িয়ে পড়ল মারিয়া, তাকাল ফ্যালফ্যাল করে।
আমি? সুন্দর?
হ্যাঁ, তুমি, মৃদু গলায় জবাব দিল গ্রীন। খুব সুন্দর।
ওহ না, আমি না, বলল মারিয়া, হাসছে-গর্বের হাসি। আমি একটা বনবেড়ালি।
তোমার যখন খুশি আঁচড় কেট! মুচকি হাসল গ্রীন। মারিয়াও হেসে উঠল, গ্রীনে বাহু চেপে ধরল আরও শক্ত করে।
হোটেলের সামনে এসে পড়ল ওরা। বারান্দায় বসে আড্ডা মারছে, অনেক লোক। টুপি খুলে গ্রীন বিড়বিড় করে বলল, আধঘণ্টার মধ্যেই আসছি।
এস, গম্ভীর কণ্ঠে বলে বিদায় নিল মারিয়া। দোতলায়, নিজের কামরায় ফিরে গেল গ্রীন, জামা খুলে দাড়ি কমাবার সরঞ্জাম নিয়ে বসল। শ্যামাঙ্গিনীর কথা মনে পড়তে আপনমনে হাসল ও। মারিয়া। মিষ্টি মেয়ে! ছন্নছাড়া পুরুষকে বাধতে জানে।
দাড়ি কামানোর পর, ধোঁয়া জামাকাপড় পরে নীচে নেমে এল গ্রীন, সন্ধ্যার রাস্তায় নেমে ক্যান্টিনার উদ্দেশে হাঁটা ধরল।
ও ঢুকতেই বারটেন্ডার জিজ্ঞেস করল, সিনর গ্রীন?
হ্যাঁ, আমি। মিস গার্সিয়া আছে ভেতরে?
ম্লান মুখে ওর হাতে একটা চিরকুট দিল বারটেন্ডার। সিনোরিটা ফেরেনি। এক লোক দিয়ে গেছে এটা, আগে কখনও দেখিনি। বলেছে, তোমাকে এটা দিতে।
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বারটেন্ডারের দিকে তাকাল গ্রীন, তারপর ভুরু কুঁচকে চিরকুটটা পড়লঃ
মেক্স ছুকরিকে ফেরত চাইলে আজ রাতেই সেজে আসবে।
গুম মেরে দাঁড়িয়ে রইল গ্রীন, অনুভব করছে ভয়ঙ্কর ক্রোধ জেগে উঠছে ওর মাঝে। মকের সাবধানবাণী মনে পড়ল ওর: কী করবে, বলতে পারছি না, তবে এমন একটা কিছু যা তুমি হয়তো কল্পনাও করতে পারবে না।
তা হলে ওকে ওরা ধরে নিয়ে গেছে, গ্রীন ভাবল, বারটেন্ডারের উদ্বিগ্ন চোখের দিকে তাকাল ও।
সিনোরিটা ঠিক আছে? শঙ্কা ঝরে পড়ল কৃষ্ণকায় লোকটার গলায়।
ঠিক হয়ে যাবে। ধন্যবাদ, অ্যামিগো। এই চিঠি যে নিয়ে এসেছিল তুমি তবে চেন না তাকে?
না। খুব মোটা। বেঁটে, আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু অচেনা।
হাচ, গ্রীন ভাবল; অবশ্যই হাচ। দশাসই দাম্ভিক লোকটার চেহারা স্মরণ করল ও। দুবার ওকে ধরাশায়ী করেছিল সে-দ্বিতীয়বার শৌচাগারে। মারিয়াকে তা হলে ধরে নিয়ে গেছে ওরা; ওকে ফাঁদে ফেলার জন্য টোপ হিসেবে ব্যবহার করছে মেয়েটাকে।
এখন ওরা আমার অপেক্ষায় থাকবে; জানে, আমি নির্দ্বিধায় গিয়ে পা দেব ওই ফাঁদে।
কতজন লোকের মোকাবেলা করতে হবে ওকে? ভার্জিল রীভ থাকবে, সন্দেহ নেই; রীড তার স্যালুন ভাঙচুর করার জন্য মনেপ্রাণে ঘৃণা করে ওকে।
হাচ থাকবে, চেষ্টা করবে ফ্লিন্টের মৃত্যুর বদলা নিতে। আর থাকবে হালাম নিজে, এবং হয়তো আরও দু-তিনজন।
উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে গ্রীনকে জরিপ করছিল বারটেন্ডার। বলল, আমরা চাই না সিনোরিটার কোন ক্ষতি হোক। আমাদের যদি কিছু করার থাকে–
চিন্তা কর না, অ্যামিগো। এটা আমার দায়িত্ব।
বাইরে এসে লিভারি স্ট্যাবলের দিকে দ্রুত পা চালাল গ্রীন। মারিয়া ফাঁদে পড়েছে মনে হতেই খুন চড়ে যাচ্ছে ওর মাথায়, কিন্তু বুদ্ধি হারাচ্ছে না।
ওখানে গিয়ে ওকে উদ্ধার করে আনবে সে। হ্যাঁ, তাই, মনে মনে নিজেকে বলল গ্রীন। ওকে ফিরিয়ে দাও আমার কাছে–ও আমার।
১৭.
দীর্ঘ ঘটনাবহুল জীবন ভার্জিল রীডের। সহজে ভয় পাবার কে সে নয়। বারে সামনে অস্থিরভাবে হালামকে পায়চারি করতে দেখে এখনও ভয় পাচ্ছে না সে, কিন্তু গরু ব্যবসায়ীর অস্বাভাবিক রকমের উজ্জ্বল চোখ, ছেড়াখোড়া খ্যাপাটে হাসি আর স্বগত সংলাপে অস্বস্তি বোধ করছে।
হারিকেনের হলুদ আলোয় হালামের কপালে ঘামের ধারা দেখতে পাচ্ছে সে। সাহায্যের আশায় আজ বিকেলেই হালাম এসেছে এখানে। রীড জানত না মেক্সিকান মেয়েটিকে অপহরণ করতে চায় অ্যাংকর মালিক; জানলে সে অনুমোদন করত না ব্যাপারটা, এমনকী ওকে উদ্ধার করতে এসে জেমস গ্রীন মরার ঝুঁকি নেবে এটা বোঝার পরেও না।
গ্রীনের মৃত্যুতে তৃপ্তি পাবে রীড; স্যালুনের ভাঙা জানালার দিকে তাকালে ওর চোখের সামনে ভাসে কীভাবে ওই লোক তার সমস্ত বোতল চুরমার করে দিয়েছে। তখন উন্মত্ত ক্রোধ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে রীডের মাঝে! হ্যাঁ, তার সামনে মেঝের ওপর গ্রীনের লাশ পড়ে থাকতে দেখলে আনন্দিত হবে সে।
যাই হোক, গ্রীনের বিরুদ্ধে তারা মোট চারজন, তাকে ধরে। আস্তাবলে অসল্যারের সঙ্গে রয়েছে হাচ। আছে নতুন আমদানি তুর্ক। একতাড়া ডলার খরচ করে লোকটাকে কিনে নিয়েছে হালাম। তুর্ক পালিয়ে বেড়াচ্ছে; ফেরারি লোকের চেহারা দেখলেই চিনতে পারে ভার্জিল রীড।