আমার কী মনে হচ্ছে জানো? ইস্তফা দিই। দেয়াই উচিত।
প্রতিবাদ করতে গিয়েও মত পাল্টাল গ্রীন। আবার এর উদ্দেশে চোরা চাহনি হানল মক, তারপর অন্যদিকে দৃষ্টি সরিয়ে নিল।
পুলিসের ব্যাজ কেউ ঝোলালে তার কর্তব্য একে সম্মান করা, ধীরে ধীরে শুরু করল মক, নিজের মনের কথা খুলে বলতে চাইছে। এটা পরার যোগ্যতা থাকা উচিত। আমার তা ছিল, আজকের আগে পর্যন্ত।
গ্রীন কাল ওর দিকে, জানে কী বলছে ও, কিন্তু কোন মন্তব্য করল না।
হার্ভেকে গ্রেফতার করতে চাইলাম আমি। ও আমাকে চ্যালেঞ্জ করল, শ্লেষভরা কণ্ঠে বলে চলে মক। বলল ও আমাকে গুলি করে ফেলে দেবে স্যাডল থেকে। পারতও তা। হালাম ওই সময় এসে না পড়লে কী করতাম, আমি নিজেই জানি না। হয়তো চলে আসতাম পালিয়ে। খোদা জানে, আমি মরতে চাই না; কিন্তু হালাম যদি তখন না আসত আর আমি আমার কর্তব্য পালন করতে চাইতাম, নির্ঘাত মারা পড়তাম। গ্রীনের দিকে তাকাল মার্শাল, স্পষ্ট ভাষায় বলল, আমি বোধহয় এ কাজের যোগ্য না, অথচ সেটা মেনে নিতেও কষ্ট হচ্ছে।
অল্পদিনের পরিচয় ওদের, কিন্তু একই পেশার লোক হওয়ায় পরস্পরকে বোঝে। গ্রীন চাঁছাছোলা কণ্ঠে জবাব দিল, খামোকা উতলা হচ্ছ। এদ্দিন যোগ্যতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছ তুমি; আজ হার্ভেকে ধরার আগেই হালাম ওকে মেরে ফেলার মানে এই নয় তোমার যোগ্যতা শেষ হয়ে গেছে। কাজেই
জেনেশুনে মরতে যেতাম? বাধা দিয়ে ম্লান গলায় বলল মক।
তাতে কী? এ কাজে ওরকম ঝুঁকি আছেই, তাই না? তুমি কি মনে কর তুমিই হতে প্রথম মাশল যে গুলি খেত? ঝেড়ে ফেল এসব ফালতু ভাবনা। আমার মনে হয়, যা ঘটেনি তা নিয়ে অযথা চিন্তা করছ তুমি।
মক শিরদাঁড়া সোজা করল। হয়তো তাই। মোকাবেলা না করা পর্যন্ত এসব ব্যাপারে কিছু বলা শক্ত। তা ছাড়া মানুষের বয়স যত বাড়ে, ততই সে হিসেব কষে চলাফেরা করে। যদিও কোন অর্থ হয় না এর। একজন তরুণ, যার সারাটা জীবনই ধরা আছে সামনে, সে পরোয়া করে না কোনকিছুর। অথচ আমরা বুড়োরা খুব হুঁশিয়ার কোন মানে হয় না এর।
দুবার বললে কথাটা। ঢের হয়েছে। গ্রীন উঠে দাড়াল। আজেবাজে চিন্তা করে নিজেকে আর কষ্ট দিও না। কিছু হয়নি তোমার! আমি যাই, আমার এখন একটু ঘুম দরকার। শুভ রাত্রি, মার্শাল।
মক কোন জবাব দিতে পারার আগেই বেরিয়ে গেল গ্রীন। হোটেল কামরায় ফিরে এসে কাপড়চোপড় পাল্টে বিছানায় গিয়ে ঢলে পড়ল ঘুমের কোলে।
.
গ্রীন যখন জেগে উঠল তখন সকল, রোদে ঝলমল করছে চারদিক। তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখে বিছানা ছাড়ল সে, বেসিনে পানি ভর্তি করে তোয়ালে ডুবিয়ে দিল তাতে, তারপর দিগম্বর হয়ে ভেজা তোয়ালে দিয়ে ভালমত ঘষল সারা গা। গোসল সেরে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াল ও, হাই তুলল কয়েকবার। তেমন জরুরি কোন কাজ ছিল না হাতে, কাজেই বিছানায় ফিরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল আবার।
ওর কাঁধে কিল মারল কেউ একজন, চোখ মেলে জানালার শার্সিতে গোধূলির রঙ খেল গ্রীন। পাশ ফিরল ও, হাই তুলে তাকাল, মারিয়ার দিকে। এর ওপর ঝুঁকে পড়েছিল মেয়েটা, ঢোলা জিপসি ব্লাউজের গলার ফাঁক দিয়ে ওর শরীরের অনেকটাই দেখতে পেল গ্রীন। ঢোক গিলল। ঢেউ খেলানো কালো চুলগুলো পিঠের ওপর বিছিয়ে দিয়েছে মারিয়া। গ্রীন এর কমনীয় মুখে উৎকণ্ঠা দেখল।
শরীর ঠিক আছে তোমার? সারা রাত ঘুমিয়েছ, দিনেও। অসুখ-বিসুখ করেনি তো?..
আলসেমি লাগছে, গ্রীন হাসল। অবশ্য এরকম কখনও হয় না আমার। কার কাছে শুনলে এত ঘুমাচ্ছি?
নীচতলায় : ঝাড়ুদার ঘর পরিষ্কার করতে এসে ফিরে গেছে।
মারিয়ার অহেতুক উকণ্ঠায় না হেসে পারল না গ্রীন, জড়িয়ে ধরে বুকে টেনে নিল ওকে। চেঁচিয়ে উঠে বাহুপাশ ছাড়বার প্রয়াস পেল মেয়েটা, আদরের চড় মারল ওর গালে।
মুখ বিকৃত করল গ্রীন, মারিয়াকে ছেড়ে দিল।
পরে আমার মাথায় মারতে পারবে তুমি। তবে এখন ব্যথা সহ্য করতে পারব না আমি।
সহসা ভয়ের ছায়া ঘনাল মারিয়ার চেহারায়, চোখ বড় বড় হয়ে গেল।
ব্যথা দিয়েছি? গ্রীনের গালে নিজের গাল ঘষল মারিয়া। ওহ, জেমস, আমি সত্যিই খুব দুঃখিত।
এই প্রথম আমার নাম ধরে ডাকলে তুমি। এর আগে ছিল শুধু গ্রিংগো।
তোমাকে আমি জেমস বলেই ডাকব-জেমস, জেমস, জেমস, অস্ফুট স্বরে জপল মারিয়া। চুমু দিল ওর গালে।
শোবে না?
ঝট করে উঠে দাঁড়াল মেয়েটা, দুচোখে আগুন ঝরিয়ে পিছিয়ে গেল, ক্ষিপ্ত বনবেড়ালির মত এমনভাবে মাখা ঝাঁকাল যে একগুচ্ছ চুল এসে পড়ল কপালে।
কেন শোব? প্রেম করতে? গ্রিংগোর সাথে? হাহ্! চেঁচিয়ে উঠল ও, মাথা ঝাঁকাল আবার। এর চেয়ে বরং ষাড়ের সঙ্গে প্রেম করা ভাল। না!
বিছানা থেকে ওকে স্বর্গীয় হাসি উপহার দিল গ্রীন, হাত বোলাল নিজের লোমশ বুকে।
অন্য সময়? শিগগিরই?
ও হো হো, শখ কত, ঠোঁট ওল্টাল মারিয়া। আমি তোমাকে ঘৃণা করি গ্রিংগো! আজ রাতে না, কাল না, কক্ষনো না। কী ভাব তুমি? গ্রিংগোরা বললেই আমি পটে যাই?
না। আমার কাছে আসবে-আসতে চাও বলে।
চাই না। এবার তুমি কাপড় পাল্টে নাও, তারপর আমরা কার্লকে দেখতে যাব।
আচ্ছা! তবে কিনা আমি জন্মদিনের পোশাকে আছি, তুমি হয় পেছন ফিরে থাক, নয়তো অপেক্ষা কর নীচে গিয়ে।
বিছানা ছাড়ার প্রয়াস পেল গ্রীন, মাগো বলে একটা চিৎকার দিয়ে দৌড়ে দরজার কাছে চলে গেল মারিয়া, ঝট করে ওর পানে একবার তাকিয়েই কপাট খুলল।