ঠিক আছে। হ্যাঁ, ডার্লিংকে ও-ই খুন করেছে, মরা মুখের দিকে চোখ নামিয়ে জবাব দিল হালাম। ক্যানাডাকেও, যদি সেটাও জানতে চাও। মুখ তুলল সে, চোখের তারায় আগুন। ছুরিটা ও গ্রীনকে মারলেই আমি খুশি হতাম।
হালাম মাতাল হয়ে আছে, ভাবল মক। এরকম অবস্থায় এটাই স্বাভাবিক। তবু কোন মানুষের মাঝে এত পরিবর্তন সে দেখেনি কখনও। উন্মাদ মনে হচ্ছে ওকে।
আচ্ছা, ও তা হলে ক্যানাডাকেও মেরেছে, মক বলল। আমিও তাই, ভেবেছিলাম। তা এক্ষেত্রে তোমার অবস্থানটা কী দাঁড়াচ্ছে?
হালাম তখনও জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল মকের দিকে। যাই দাঁড়াক, আমাকে জেলে পুরতে পারছ না তুমি-এটুকু বলতে পারি!
ঠিক আছে, ফ্রেড। আমি কোন সাহায্যে আসতে পারি?
সরাসরি উত্তর দিল না হালাম। দুহাতে হার্ভের লাশটা তুলে নিয়ে সোজা হলো।
এই জঞ্জালটা সরাতে পার আমার বাড়ি থেকে। তুমি না এলে, এতক্ষণে চলে যেত ও। অনেক দেরিতে জানতে পেতাম আমি, ওকে খুন করতে হত না। যাও, বেরিয়ে যাও এবার।
ঘুরে হার্ভের লাশ অফিসে বয়ে নিয়ে গেল হালাম। অসহায় ভঙ্গিতে মাথা নাড়াল মক, শ্রাগ করল, ধীর পদক্ষেপে রওনা হলো শহরের উদ্দেশে।
১৬.
কার্লকে বাঁচাতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে ডাক্তার। সুচিকিৎসার জন্য রোগীকে সন্ধ্যার আগেই শহরে নেয়া দরকার এই সিদ্ধান্ত দেয়ায় ওকে বাকবোর্ডের পাটাতনে শুইয়ে ধীরগতিতে রওনা হয়েছে ওরা। চালকের আসনে বসেছে গ্রীন।
পরীক্ষায় বোঝা গেছে কার্লের বুক ভেদ করে বেরিয়ে গেছে গুলি, গুরুত্বপূর্ণ কোন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে চোট লাগেনি।
ওর কপাল ভাল, ক্ষতে ব্যান্ডেজ বাঁধতে বাঁধতে বলেছে ডাক্তার। রক্তও বেশি হারায়নি। তবে এভাবে আঘাত লাগাটাই একটা মারাত্মক ধাক্কা, বিশেষ করে এরকম হালকা-পাতলা শরীরে।
ওরা যখন শহরে পৌঁছাল তখন সন্ধ্যে। ডাক্তারের বাসার দোতলায় ধরাধরি করে নিয়ে যাওয়া হলো কার্লকে। মুমূর্ষ রোগীদের জন্য কয়েকটা বাড়তি ঘর আছে ওখানে।
হ্যাঁ, এবার ওর ওপর নজর রাখতে পারব আমি, বলে গ্রীনের উদ্দেশে ফিরল ডাক্তার। আর তোমার প্রেসক্রিপশন-টানা বারো ঘণ্টা ঘুম। মনে হচ্ছে এটা তোমার দরকারও।
তাই, অক্তার।
গ্রীন আর মারিয়া ফিরে গেল বাকরোর্ডে। স্টীলডাস্ট, কার্লের সোরেল দুটোই বাধা আছে পেছনে। মেয়েটাকে সীটে উঠতে সাহায্য করল গ্রীন, তারপর নিজে বসল চালকের আসনে। মার্শালের অফিসের পাশ দিয়ে যাবার সময় মক ভেতরে আছে দেখে রাশ টানল ও, নেমে লাগামটা মারিয়ার হাতে দিল।
তুমি যাও টেরিলের কাছে। মারিয়ার উরুতে চাপড় মারল গ্রীন। চট করে পা টেনে নিল,মেয়েটা, চোখ জ্বলে উঠল। গ্রীন হাসল একগাল। বাড়ি গিয়ে বিশ্রাম নাও। মকের সাথে কথা আছে আমার।
পরে আসছ? খাবে না?
আজ রাতে মনে হয় পারব না। খুব ক্লান্ত, মাথাটাও ব্যথা করছে। হোটেলেই কিছু একটা খেয়ে শুয়ে পড়ব।
নরম হয়ে এল মারিয়ার দৃষ্টি। মৃদু গলায় বলল, তুমি আসায় বেঁচে গেছি। খুব ভয় পেয়েছিলাম।
তুমি একটা বনবেড়ালি-সহজে মরবে না। তা হলে যাও এবার। অনেক ধকল গেছে তোমার ওপর দিয়ে। তা ছাড়া, খদ্দেররাও হয়তো অপেক্ষা করছে তোমার জন্য।
কর্মচারীরাই খুলবে ক্যান্টিনা। রাধা-বাড়া ওরাই করে, আমার না থাকলেও চলে।
যাই হোক, তোমাকে থাকতে হবে ওখানে, না হলে আমি আসব না।
সরে দাড়াল গ্রীন। অবাধ্য ঘোড়ার মত ওকে ভেংচি কাটল মারিয়া, হাসতে হাসতে চলে গেল। সাঁঝের অন্ধকারে ওকে মিলিয়ে যেতে দেখল গ্রীন, তারপর ফুটপাত মাড়িয়ে মার্শালের অফিসে গিয়ে ঢুকল।
ভ্রূকুটি করে গ্রীনের দিকে তাকাল মক। কার্ল বেঁচে আছে?
এখনও। এইমাত্র নিয়ে এলাম ওকে।
মাথা ঝাঁকাল মার্শাল। দেখেছি তোমাদের। চুপ করল সে। হার্ভে মার গেছে। হালাম গুলি করেছিল।
অ্যাংকর র্যাঞ্চে কী ঘটেছে গম্ভীর মুখে গ্রীনকে জানাল মক। হালাম মদ খাচ্ছিল। ওর আচরণ একটু উদ্ভট মনে হয়েছে আমার কাছে। অবশ্য নেশা ছুটে গেলে হয়তো কেটে যাবে। ঠিক জানি না। এরকম অবস্থায় ওকে কখনও দেখিনি আমি। ও খুব শক্তিশালী-কী যেন শব্দটা?–দাম্ভিক মানুষ, নিজের নিয়মে চলে। এখন বদলে গেছে। তোমার কারণে, আমার বিশ্বাস।
আমি আবার কী–
এখানে আসার পর থেকেই অনবরত ওকে নাজেহাল করছ তুমি। হালামের মত মানুষের পক্ষে এটা হজম করা কঠিন। ওর ধারণা এখানে থাকার কোন অধিকার নেই তোমার। সবই তো জানো তুমি, প্রথম লোক লাগিয়ে মার দিয়েছে তোমাকে, তারপর খুন করার জন্য স্যাম ট্যানারকে পাঠিয়েছিল। একটাতেও সফল হয়নি
এখন ভয়ঙ্কর খেপে উঠেছে তোমার ওপর। কী করবে বলতে পারছি না, তবে সাংঘাতিক কিছু একটা করে বসতে পারে, যেটা হয়তো কল্পনাও করতে পারছ না তুমি। আমি হলে এখনই শহর ছাড়তাম। এখানে তোমার কাজ শেষ হয়েছে। কার্লকে এ অবস্থায় নিয়ে যেতে পারবে না টাওসে, আর তা ছাড়া ও পালাবে না আর।
জানি, শান্ত কণ্ঠে বলল গ্রীন। মারিয়া আমাকে বলেছে ও আত্মসমর্পণ করতেই আসছিল। বিবেকের দংশনে ভুগছে ছেলেটা। মনে করছে তার অপরাধের শাস্তি পাওয়া উচিত। এটা এখন একটা নৈতিক দায়িত্ব হয়ে উঠেছে ওর কাছে। আমার নিজেরই শ্রদ্ধা আসছে ছেলেটার ওপর।
ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল মক। নাক চুলকে ঝট করে একবার তাকাল গ্রীনের দিকে তারপর অন্ধকার জানালার পানে চোখ ফেরাল।