কষে একবার সিগারেট টানল গ্রীন, খানিক ইতস্তত করে, রুক্ষ ভঙ্গিতে বাড়িয়ে দিল রিপের উদ্দেশে। কাঁপা কাঁপা আঙুলে ওটা নিল সে, তাড়াহুড়ো করে টানতে গিয়ে বেশি ধোঁয়া গিলে ফেলায় কাশি এসে গেল। নিজের জন্য আরেকটা সিগারেট বানাল গ্রীন। নাও, শুরু কর এবার, গম্ভীর সুরে বলল।
রিপের নাকের পাটা ফুলে উঠেছে, ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। আমার মত লাল হয়ে গেছে একদিকের গাল। ঠোঁট ফেটে ক্ষীণ রক্তের ধারা গড়াচ্ছে কশ বেয়ে। দুহাতে মুখ ঢাকল ও, কম্পিত গলায় বলল, কার্ল হালাম। ওর বাবা অ্যাংকর র্যাঞ্চের মালিক, পশ্চিমের পাহাড়ে ওদের বাথান। ওখানে থাকতে পারে, আমি ঠিক জানি না।
সব মিথ্যে, দোরগোড়া থেকে একটা চাপা কণ্ঠস্বর ভেসে এল। গ্রীন ঘাড় ফিরিয়ে দেখল কখন যেন নিঃসাড়ে ক্যানাডা এসে দাঁড়িয়েছে, ব্যান্ডানা দিয়ে নাক চেপে ধরে আছে! রুমালটা নামাল ও, নাক ঝাড়ল, তারপর বলল খিটখিটে গলায়, আমি একসময় কাজ করেছি অ্যাংকরে। কার্ল এরকম ছেলেই না। বইয়ের পোকা বলা যায়। বাপকে অন্ধের মত ভক্তি করে। কেন জানি না, তবে হালা একটা আস্ত শয়তান।
চোখ কুঁচকে ক্যানাডাকে জরিপ করছিল রিপ হ্যাঁ, এবার চিনতে পেরেছি তোমাকে, বলল ও। র্যাংলার ছিলে। বেশি কথা বলার দায়ে হালাম তোমাকে বরখাস্ত করে। অন্তত আমরা তাই শুনেছি।
আবার নাক সিটকাল ক্যানাডা। ঠিক। হালাম সবাইকে কুকুর বেড়াল মনে করে, তার সামনে কারও মুখ খোলা চলবে না। একবার যদি
থাম! বলল রিপ, যেন আচমকা মনে পড়েছে কিছু। গ্রীনের দিকে ঘুরল ও। তুমি বলছিলে স্কালি ব্ৰাওয়ারের লাশ টাওসে শনাক্ত করা হয়েছে। নিশ্চয় ক্যানাডা করেছে?
আলবত, ধূর্ত হাসি হেসে বলল ক্যানাডা। লাশটা দেখেছিলাম আমি। কিন্তু কার্ল এসবের মধ্যে জড়াল কী করে?
তোমাকে মাথা ঘামাতে হবে না, বাধা দিল গ্রীন। অন্য একটা বাক থেকে কম্বল তুলে নিয়ে ক্যানাডার দিকে সেটা ছুঁড়ে দিল ও। লাশ জড়িয়ে নাও, তারপর আমাদের ঘোড়াগুলো নিয়ে এস এখানে।
আমি বরং মার্শাল মককে ডেকে আনি গিয়ে, ক্যানাডার গালে ভাঁজ পড়ল।
না। আমি যা বলছি তাই কর। কাল তুমি বলেছিলে শহর এখান থেকে বেশ দূরে, কাজেই সূর্য তেতে ওঠার আগেই রওনা হতে চাই আমি।
মুচকি হেসে বেরিয়ে গেল ক্যানাডা। গ্রীনের ধমক খেয়ে ও যদি অসন্তষ্ট হয়েও থাকে, বাইরে তা প্রকাশ করল না। কিন্তু ওর ধূর্ত হাবভাব বিচলিত করল গ্রীনকে; ধূর্ত লোককে বিশ্বাস করা যায় না কোনমতে।
রিপকে ঝটপট কাপড় পরে তৈরি হতে বলল ও। তারপর সংক্ষেপে নিজের পরিচয় দিল। ভাল কথা, আমার নাম জেমস গ্রীন, প্রাইভেট ডিটেকটিভ। ডাকাতির ব্যাপারটা তদন্ত করতে আমার সংস্থাকে হুইলার স্টেজ কোম্পানি নিয়োগ করেছে।
পায়ে বুট গলাচ্ছিল রিপ। চোখ তুলে তিক্ত সুরে বলল, মোটা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে বোধহয়
হয়েছে।
তার মানে, একজন বাউন্টি হান্টারের সাথে তোমার কোনও তফাত নেই। উঠে দাঁড়িয়ে বিছানা থেকে রিপ ওর শার্টটা তুলে নিল। আমার বয়স মাত্র বাইশ, অথচ ফাঁসিতে ঝুলতে যাচ্ছি।
খুনের সাজা ফাঁসি-কথাটা আগে ভাবা উচিত ছিল। তোমরা হঠাৎ স্টেজ ডাকাতি করতে গেলে কেন?
শার্টের বোতাম লাগাচ্ছিল রিপ। মাঝপথে থেমে গেল হাত। মনে করার চেষ্টা করছে কিছু! মাতাল ছিলাম আমরা। শোন, তোমার মন গলাতে চেষ্টা করছি না আমি, যেটা সত্যি তাই বলছি। কার্লের কাছে কিছু টাকা ছিল। সেটা দিয়ে হপ্তাখানেক শহরে বসে ফুর্তি করি আমরা। তারপর একদিন মার্শাল পিপার মক এসে বলল, আমরা যদি না যাই, আমাদের সে হাজতে পুরবে। কাজেই শহর ছাড়লাম আমরা, উত্তরে যাচ্ছি, তখনও কিন্তু মদ লছে। এখনও স্বপ্ন মনে হয় সবকিছু। কার্ল বলল, চল স্টেজ ডাকাতি কিংবা ব্যাংক লুট করি
অর্থাৎ পুরোটাই কাল হালামের দোষ?
না, তা না। তবে ও শুধু একটা কথাই বলছিল, ওর বাবার কাছে নাকি ও নিজের ক্ষমতা প্রমাণ করতে চায়। মাতাল ছিলাম, সবকথা ঠিক বুঝতে পারিনি। জানোই তো, মাতাল মানুষ বোকার মত কতকিছুই না বলে
অনেকের মাতাল হরারও দরকার পড়ে না, চাঁছাছোল জবাব গ্রীনের।
তা অবশ্যি। যাই হোক, আমরা দেখলাম স্টেজ আসছে, এরপর কীভাবে যেন ঘটে গেল ব্যাপারগুলো। ঝোঁপের ভেতর ঘোড়া বেধে স্টেজ থামালাম, তারপর স্কালি যখন মাথায় গুলি খেয়ে পড়ে গেল, আমরা পালালাম। প্রথমে অবিশ্বাস্য মনে হলো সবকিছু, পরে যখন বুঝতে পারলাম কঠিন বিপদে পড়েছি, দিনরাত ঘোড়া ছুটিয়ে সোজা চলে এলাম এখানে। তারপর কার্ল বলল সে বাথানে যাচ্ছি, ঝামেলা না মেটা পর্যন্ত ওখানেই থাকবে গা ঢাকা দিয়ে।
থামল রিপ, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মাপল গ্রীনকে, ধীরে ধীরে বলল, তোমার কথাই ঠিক-মাতাল না হয়েই অনেকে বোকার মত কথা বলে।
মৃদু হাসল গ্রীন। রিপ তৈরি হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করল সে, তারপর বাইরে যেতে আদেশ করল ওকে। যাও, তোমাদের ঘোড়া দুটোয় জিন চাপাও গিয়ে। চালাকির চেষ্টা করবে না, আমি নজর রাখব।
রিপের পেছন পেছন ও বাইরের কড়া রোদে বেরিয়ে এল। ওর বাড়ির কোনা ঘুরে পেছনে যেতেই থমকে দাড়াল রিপ, দালানের ছায়ায় রাখা কম্বল জড়ানো মৃতদেহটার দিকে তাকাল শোকার্ত দৃষ্টিতে। ভাল ছেলে ছিল কার্লোস, খুউব ভাল, অনুচ্চ স্বরে বলল, গলা কাঁপছে। খোদা! মারিয়া জানলে তখন কী হয় দেখ।