টাকাটা আমার দরকার, এবং এক্ষুণি! কর্কশ গলায় বলল সে। সঙ্গে নেয়ার মত কিছু মালপত্র গোছাতে যাচ্ছি এই ফাঁকে টাকাটা তুমি বের করে রাখ।
হাজারখানেকের বেশি হবে না, বড়জোর।
চলবে, বলে বেরিয়ে গেল হার্ভে, ক্যারেজ হাউসে এর ঘরের দিকে যাচ্ছে।
পেছন থেকে ওকে একটুক্ষণ লক্ষ করল হালাম। তারপর আবার ভুরু কেঁচকাল সে, দাড়িতে হাত ঘষল জোরে জোরে, ভাবল আজই কেটে ফেলতে হবে। অতীতে মাঝে-মধ্যে মাতাল হয়েছে ও, তবে একেবারে ভিন্ন কারণে, একঘেয়েমি দূর করতে কিংবা হয়তো দুর্বিষহ ঠেকেছিল জীবন। উঠে সিন্দুক খুলতে গেল সে; টিনের ক্যাশবাক্সের ওপর থেকে ৪৫ কোল্টটা তুলে নিল হালাম, তারপর সিন্দুকের ভারি ডালা বন্ধ করে বাক্সসমেত ফিরে এল নিজের ডেস্কে।
টাকার তোড়াগুলোর দিকে তাকাল ও, কিন্তু গুনতে ইচ্ছে হলো না। চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে এক ঢোক মদ খেল হালাম, উপলব্ধি করছে হার্ভে চলে গেলে তার অপূরণীয় ক্ষতি হবে। জাহান্নামে যাক। ও ফিরে আসবে আবার, আসতে হবে, হালাম ভাবল। চিরকাল হার্ভে নীরবে আর সমস্ত হুকুম, এমনকী মানুষ খুন পর্যন্ত করে আসছে বলে ওর প্রতি একধরনের করুণা বোধ করে সে। বেশির ভাগ মানুষের মত, ওর জন্ম হয়েছে ব্যবহৃত হতে; খুব কমসংখ্যক লোকই আছে, যেমন সে নিজে হালাম ভাবল, যারা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হবার যোগ্যতা রাখে।
নিদারুণ তাচ্ছিল্যের সাথে হালাম তার ছেলের কথা ভাবল। ছেলেটা সবসময় তার বিরক্তির কারণ ঘটিয়েছে, ওর উপস্থিতি অসহিষ্ণু করে তুলত তাকে। ও কোথায় আছে হালাম জানে না, জানার আগ্রহও নেই, যদিও ওর ঘোড়াটা পাওয়া যাচ্ছে না শুনে বুঝেছে কার্ল এসেছিল বাসায়।
বোতলটা শেষ করল হালাম, তারপর ঘরের কোণে অন্যান্য খালি বোতলের সঙ্গে ওটা রেখে দিয়ে নতুন আরেকটা বের করল লিকার কেবিনেট থেকে।
ওটা থেকে এক ঢোক খাবে সে এমন সময় ডেস্কের পাশের খোলা জানালা দিয়ে দুজন মানুষের কথাবার্তা শুনতে পেল।
পর্দাটা একপাশে সরল হালাম, ফোরম্যানের সঙ্গে আলাপরত অশ্বারোহীকে দেখল ভাল করে, বুঝল এটা মার্শাল পিপার মক।
মাথা সাফ করার জন্য এপাশ-ওপাশ নাড়াল সে, কান খাড়া করল।
হার্ভে বলছিল, …মিথ্যেকথা।
হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল মক। তুমি ওকে গুলি করেছ, হার্ভে। মারিয়া গার্সিয়াকেও মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিলে। গ্রীন উপস্থিত না হলে, ঠিকই খুন করতে। এখন তোমাকে গ্রেফতার করতে এসেছি আমি।
বললাম তো, মিথ্যে বলছে ওরা!
এসব বলে তুমি বাঁচতে পারবে না, হার্ভে। আমার কাছে প্রমাণ নেই, কিন্তু জানি ডার্লিংকেও তুমিই খুন করেছ। লাইল ক্যানাডাকেও। তবে কার্লকে গুলি করার ব্যাপারটা প্রমাণ করটে পারব আমরা। ও যদি মারা যায় ফাঁসি হবে তোমার। আমি যতটুকু জানি বাচার আশা কম। এবার তোমার গানবেল্টটা খুলে
বজ্রাহতের মত কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল হালাম। তার ছেলে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে, হার্ভে বেঈমানি করেছে এই খবর দুটো ওর ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে দারুণভাবে।
নিশিতে পাওয়া মানুষের মত সিন্দুকের কাছে এগিয়ে গেল সে, ঝট করে ডালা তুলে পিস্তলটা বের করে নিল।
পিঠের কাছে রেখে বাইরে বেরোল সে, বাসার কোনা ঘুরে এসে থামল।
…চেষ্টা কর না, বলছে হার্ভে ঈষৎ বাঁকা হয়ে আছে সে, ডান হাতটা ঝুলছে পিস্তলের বাঁটের ওপর। তুমি ড্র করার আগেই তোমাকে খুন করতে পারব আমি। বিশ্বাস না হয়, নিতে পার ঝুঁকি
হার্ভের ঘাড়ের পাশ দিয়ে সামনে তাকাল মক, দেখতে পেল হালামকে, কিছু বলল না।
হার্ভে, ডাকল হালাম।
ওর কণ্ঠে এমন কিছু ছিল যে আড়ষ্ট হয়ে গেল হার্ভে।
কী? বলল সে।
এদিকে ফের, হার্ভে।
হার্ভে ফিরল না-পাঁই করে ঘুরে গেল লাটিমের মত, এবং সেইসঙ্গে ঝাঁপ দিল একপাশে, হাত চলে গেছে পিস্তলে।
কোন লাভ হলো না। হালামের পয়লা গুলি ওর কাঁধে বিঁধল, হাঁটু ভেঙে পড়ে গেল সে। দ্বিতীয়টা ঢুকল পেটে, তিন নম্বর ওর বুকের খাঁচা খুঁড়িয়ে দিল।
হাঁটুতে ভর দিয়ে ওঠার প্রয়াস পেল হার্ভে, মুখ থুবড়ে পড়ল।
হালাম তার পিস্তল ফেলে দিল, হাঁটু গেড়ে বসল হার্ভের পাশে, চিত করে ওর মরা মুখে চড় মারল। মকের দিকে চোখ তুলে তাকাল অ্যাংকর মালিক, ওর চেহারায় যন্ত্রণার আভাস দেখে বিস্মিত হলো মার্শাল।
নিপাত যাক, হারামজাদা, নিপাত যাক, কর্কশ কন্ঠে বলল হালাম।
কী লাভ বলে। মারা গেছে ও, বলল মার্শাল।
আমি হার্ভের কথা বলছি না, বোকা গাধা কোথাকার! বলছি গ্রীনের কথা। ওই সব নষ্টের গোড়া, না হলে সব ঠিক করে ফেলতাম আমরা। কিন্তু বেজন্মটা এসেই ভণ্ডুল করে দিল।
একটা বিশেষ কাজেই এখানে এসেছে ও, কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল মক।
কাজ! ও এমনকী পুলিসের লোকও না। ওর মত লোক দরকার নেই আমাদের।
মুখ খুলতে গিয়েও আবার বন্ধ করল মক। বলল না কিছু।
বেজন্মা, হালাম খিস্তি-করল।
আমার বিশ্বাস, এবার তুমি ছেলের কথা জানতে চাইবে, বলল, মক। জানালা থেকে আমার কথা শুনতে পেয়েই হার্ভেকে খুন করেছ তুমি, তাই না?
না।
অ, একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল মক টুপি নাচিয়ে মাথা চুলকাল সে, তারপর আবার যথাস্থানে বসাল ওটা। স্রেফ রেকর্ডের খাতিরে, হার্ভেই ছুরি মেরেছে ডার্লিংকে?
এখন সে কথা জেনে লাভ নেই কোন। আছে?
বললাম তো রেকর্ডের খাতিরে।