ঠিক আছে, পয়লা জিত তোমার, মার্শাল। তবে এবার মন দিয়ে শোনো।
শীপ র্যাঞ্চের ঘটনা ওকে জানাল গ্রীন, বলল ডাক্তার রওনা হয়ে গেছে ইতিমধ্যে।
মক উঠে দাঁড়াল, পাতলা ঠোঁটজোড়া পরস্পর চেপে বসেছে।
এবার তা হলে আমাকে খেলা শুরু করতে হয়, টুপি পরতে পরতে বলল ও। খোদা জানে, তুমি এমনিতেই অনেক করেছ।
ওটাই আমার দায়িত্ব, বলল গ্রীন, বিরক্ত হয়েছে। তুমি বাথানে যাচ্ছ?
হার্ভে ওখানেই যাবে, আমার ধারণা।
মারিয়া, আমি দুজনেই দেখে ফেলেছি ওকে, পালাবার চেষ্টা করাই স্বাভাবিক।
স্বাভাবিক। বাথানে গেলেই বুঝতে পারব।
নিশ্চয়ই। আমি গার্সিয়াদের র্যাঞ্চে ফিরে যাচ্ছি। জানা দরকার কেমন আছে ছেলেটা।
হলদেটে চোখ দুটো পিটপিট করে গ্রীনকে জরিপ করল মার্শাল। অসন্তুষ্ট গলায় বলল, বেঁচে গেলে নিশ্চয় ওকে টাওসে ধরে নিয়ে যাবে তুমি-আর ওরাও হয়তো ফাঁসি দেবে ওকে।
পকেট থেকে একটা চাবির গোছা বের করল মক, ডেস্কের পেছনের দেয়াল ঘেঁষে রাখা ক্যাবিনেট খুলে রাইফেল বের করে নিল একটা। ওটা পরখ করল সে, একটা বাক্স থেকে একমুঠো কার্তুজ নিয়ে কোটের সাইড পকেটে রাখল। তারপর বন্ধ করল ক্যাবিনেট, ক্লান্ত দেখাচ্ছে, মাত্র এই ক’মিনিটেই যেন বয়স বেড়ে গেছে কয়েক বছর।
সহজ হবার চেষ্টা কর, পরামর্শ দিল গ্রীন, রূঢ় স্বরে।
এই দায়িত্বটা নেয়ার পর থেকে আমি সহজভাবেই নিচ্ছি সবকিছু, কিন্তু এবার টাকাটা হালাল করা দরকার। তারপর বেরোবার মুখে গ্রীনের উদ্দেশে ঝাঝের সঙ্গে বলল, তুমি চেষ্টা কর সহজ হতে।
পেছন থেকে ওর পানে তাকিয়ে রইল গ্রীন; ধীরপায়ে টেরিলের আস্তাবলের দিকে হেঁটে যাচ্ছে মার্শাল, হাতে রাইফেল, গায়ে একটা কালো কোট,তারপর ও চোখের আড়াল হতে স্টীলডাস্টে চেপে শীপ র্যাঞ্চে পথ ধরল সে।
১৫.
হিংস্র মেজাজে অ্যাংকর ইয়ার্ডে প্রবেশ করল হার্ভে স্টেজ। স্যাডল থেকে নেমে হিচ রেইলে লাগাম বাঁধল ও, দুমদুম করে পা ফেলে অফিস-ঘরের দিকে এগোল। খোলাই ছিল দরজা, ভেতরে ঢুকে হার্ভে দেখল হালাম তার পুরু গদি আঁটা চেয়ারে ডুবে আছে, পাশেই মেঝের ওপর পড়ে আছে একটা আধখালি বোতল। দুদিন হলো দাড়ি কামায়নি হালাম, মুখ রক্তবর্ণ হয়ে আছে, ফোলা-ফোলা। ড্রাম ডার্লিংয়ের সঙ্গে ওদের সাক্ষাতের পর ফিরে এসে আর বেরোয়নি সে, র্যাঞ্চে বসে মদ খেয়েছে সারাক্ষণ। নিশ্চিত না হলেও, হার্ভে অনুমান করতে পারে এর কারণ-তবে এখন সে পরোয়া করে না কোনকিছুর।
বার দুই-তিনেক পিটপিট করে চোখের পাতা মেলল হালাম, ভুরু কোঁচকাল, সোজা হয়ে বসল চেয়ারে। মেঝে থেকে বোতলটা তুলে নিল সে, ছিপি খুলে ঢকঢক করে গলায় ঢেলে দিল খানিকটা তরল পদার্থ। তারপর একটা চেঁকুর তুলে বলল, ড্রামকে খুন করেছ তুমি। কেন?
ড্রাম মারা গেছে জানলে কীভাবে? হার্ভে সন্দিগ্ধ।
শহর থেকে সকালে একজন কাউহ্যান্ড ফিরেছে। শুনেই বুঝেছি কার কাজ। কেন খুন কুরতে গেলে ওকে?
মুখ বিকৃত করল হার্ভে, কোমরে গোঁজা ছুরির বাঁটটা চেপে ধরল।
ড্রাম সব বেচে দিয়ে পালাচ্ছিল দেশ ছেড়ে, গরগর করে উঠল হার্ভে। স্যালুনে খবরটা পাই আমি। দোকানের পেছন দিকে গিয়ে দরজা খোলাই ওকে ডেকে। তারপর কথা বলি। জ্বলজ্বল করছে ফোরম্যানের চোখ, ক্রুর ভঙ্গিতে বেঁকে আছে ঠোঁট। বলল ভাল দাম পাচ্ছে, বিক্রি করবে না কেন। এমনিতেও লোকটাকে দেখতে পারতাম না, দিয়েছি শেষ করে।
বিরক্তি প্রকাশ করল হালাম। মদ খেল আরেক ডোক। ওর কার্যকলাপ লক্ষ করছে হার্ভে, ভাবছে দিনের এই সময় কখনও এত মদ খেত না অ্যাংকর মালিক।
গ্রীনের খবর কিছু জানো? রুক্ষ স্বরে প্রশ্ন করল হালাম।
ওর দৃষ্টি এড়িয়ে গেল হার্ভে।
তুমি জানো সবই, ক্ষিপ্ত সুরে জবাব দিল সে। স্যাম ট্যানারকে খুন করেছে, ওর মাথায় আর কোমরে চোট লেগেছে। আমি যদ্দুর জানি, হোটেলের বিছানায় এখনও শুয়ে আছে ও।
আমি আশা করেছিলাম তুমি ওর মরার খবর দেবে, ম্লান গলায় বলল হালাম। এখানে এসেছিল সে, ফ্লিন্টকে খুন করে, ভার্জিল রীডের স্যালুন ভাঙচুর করেছে।
তারপর আমি যখন ওই মেক্স ছুকরির ক্যান্টিনায় গেলাম ও শাসাল আমাকে। হ্যাঁ, ওখানেও ছিল গ্রীন, মেয়েটার পাশেই দাড়িয়েছিল। আর সবশেষে স্যাম ট্যানারকে মারল–দেশের সেরা পিস্তলবাজদের একজন ছিল স্যাম। হারামির ভাগ্যটাই দারুণ। অ্যামবুশ না করে, স্যামের উচিত ছিল খোলা জায়গায় ওকে আক্রমণ করা।
নাক চুলকাল হার্ভে। ফ্রেডের বিচলিত হবার কারণ এখন বুঝতে পারছে সে। জেমস গ্রীন, এখানে আসার পর থেকেই লোকটা বারবার টেক্কা মারছে ওর ওপর। চুলোয় যাক ফ্রেড, ভাবল স্টেজ। এক পা এগিয়ে এল সে, বলল, ড্রামকে খুন করার দায়ে, মক, আমার পিছু নিয়েছে। সিন্দুকে যা আছে আপাতত তাই দাও আমাকে, কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকব কোথাও।
চোখ পিটপিট করল হালাম। বলল, কী?
আমার কথা শুনতে পেয়েছ তুমি। খেঁকিয়ে উঠল হার্ভে। এই র্যাঞ্চের অর্ধেক শেয়ার আমার। কিন্তু এখন সিন্দুকে যা আছে তাই দাও।
পাগল, এখানে তোমাকে আমার দরকার। হপ্তাখানেকের মধ্যে গরুবাছুরের খোঁজ নিতে যায়নি কেউই। কার্টার মন্দ না, কিন্তু কোনওরকম ঝামেলা হলে কতটা কি সামলাতে পারবে আমি জানি না।
কার্টার সামলাতে পারবে না এমন ঝামেলা হবে না, জবাব দিল হার্ভে, মনে মনে পুলকিত হয়েছে কারণ জীবনে এই প্রথম ফ্রেড তার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করল। দেখল আবার মদ খাচ্ছে হালাম। একটা সুস্থ-সবল আত্মবিশ্বাসী মানুষ কত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যেতে পারে ভেবে অবাক হলো হার্ভে। হয়তো গ্রীন সম্পূর্ণ দায়ী নয় এর জন্য হয়তো বাপের ওপর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে ছেলেটা যা করেছে, স্টেজ ডাকাতি, সেটাই শেষপর্যন্ত কুরে কুরে খাচ্ছে ওকে। ভেতরে ভেতরে হালামের প্রতি করুণা বোধ করল হার্ভে।