তাড়া করে স্টেজকে ধরতে চেষ্টা করল ও, কিন্তু আচমকা ডানে মোড় নিল অ্যাংকর ফোরম্যান, দ্রুতগতিতে ছুটল দূরের ঢাল বরাবর, নুয়ে পড়েছে স্যাভলে।
গ্রীন ধাওয়া করল ওকে, ঘোড়ার পেটে অনবরত স্পার বসাচ্ছে, তারপর মারিয়ার কথা স্মরণ হতে রাশ টানল। যত্নের সঙ্গে লক্ষ্যস্থির করে তৃতীয়বার গুলি ছুড়ল সে। কিন্তু চোখ ধাঁধানো কমলা-হলুদ আলোয় নিশানা নড়ে গেল, ট্রিগার টানার সময়েই গ্রীন বুঝতে পেরেছিল এবারও ফসকে যাবে তার গুলি তারপর খাজের ওপাশে, অদৃশ্য হলো হার্ভে স্টেজ।
পরে ধরলেও চলবে একে, সখেদে ভাবল গ্রীন।
ঘোড়া ঘুরিয়ে নিল সে, লক্ষ করল ঝরনা-সংলগ্ন উইলো ঝোপের পেছনে হারিয়ে যাচ্ছে মারিয়া। ওকে অনুসরণ করল গ্রীন, মিনিট কয়েক পর দেখল একহারা গড়নের এক যুবকের পাশে হাঁটু গেড়ে বসে আছে ও মুখ তুলল মারিয়া, তামাটে ত্বকের নীচে আশ্চর্যরকমের ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে ওকে। চোখ দুটো বিস্ফারিত, ছলছলে।
দোল খেয়ে মাটিতে নেমে ওর কাছে হেঁটে গেল গ্রীন।
কার্ল? জিজ্ঞেস করল সে।
অসাড় ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকাল মেয়েটা।
মারা গেছে?
বোধহয়
এক হাঁটুতে বসে নাড়ি দেখল গ্রীন। পেল না। এবার কার্লের পাতলা চিবুকের নীচে বুড়ো আঙুল, ঠেসে ধরুল সে। অনুভব করল খুব দ্রুতলয়ে অথচ দুর্বল সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। উঠে দাঁড়াল গ্রীন।
বেঁচে আছে এখনও। বাসায় নিয়ে যেতে হবে! আমি পারব বইতে, কিন্তু মারাত্মক ঝাঁকুনি লাগতে পারে। আমাদের আসলে এখন দরকার একটা স্ট্রেচার। বাশ-টাশ কিছু আছে বাড়িতে?
আছে, কোরালের।
চলবে, তুমি এখানেই থাক।
ফের স্যাডলে চেপে জোরকদমে বাড়ির দিকে ছুটল গ্রীন। একটু বাদে দুটো সরু খুঁটি আর একটা কম্বল নিয়ে ফিরে এল সে। দেখল মারিয়া তার পেটিকোটের একটা প্রান্ত ছিড়ে সেটা ভিজিয়ে কার্লের মুখ মুছে দিচেছ।
দৃক্ষহাতে কম্বলটা দুভাঁজ করল গ্রীন, প্রত্যেক কোণে ছুরি দিয়ে চিরে ফেলল খানিকটা অংশ, ফুটোগুলোর ভেতর সাবধানে ঢুকিয়ে দিল খুঁটি দুটো। ও আর মারিয়া ধরাধরি করে কার্লকে আলতোভাবে শোয়াল কম্বলের ওপর। তারপর চলনসই স্ট্রেচারটা দুজনে মিলে তুলে নিয়ে বাসার পথ ধরল। কার্লের ওজন বেশি না, ফলে কষ্ট হচ্ছে না তেমন।
বাসায় পৌঁছে কার্লকে একটা বাংকে শুইয়ে দিল ওরা। গ্রীন আড়মোড়া ভাঙল।
ওকে বাকবোর্ডে করে নেয়া যায় শহরে, তবে মনে হয় না ধকল সইতে পারবে। তার চেয়ে আমি বরং ডাক্তার ডাকতে যাই। একটু ইতস্তত করল সে, তারপর বলল, দাঁড়াও।
ঝরনার পাড় থেকে নিজের ঘোড়াটা আনতে ছুটে বেরিয়ে গেল গ্রীন। ও ফিরে আসতে দরজায় গিয়ে দাঁড়াল মারিয়া। গ্রীন বুট থেকে রাইফেলটা বের করে দিল ওর হাতে। এটা, ও যদি ফিরে আসে তার জন্য। এলে, আশা করি সোজা গুলি ছুঁড়তে পারবে তুমি।
গ্রীনের দিকে তাকাল মারিয়া, রাইফেল ধরে আছে, চকচক করছে চোখ।
তোমার বিছানায় থাকার কথা। তবু এসেছ তুমি? কেন?
শুনলাম বাকবোর্ড নিয়ে বেরিয়েছ, আমার সন্দেহ হলো কার্লের সঙ্গে দেখা করতে আসতে পার তুমি।
হাত বাড়াল মারিয়া, দুম করে একটা কিল বসাল গ্রীনের উরুতে।
বোকা গ্রিংগো। এখন কেমন আছ?
খুব খারাপ, গ্রীন হাসল, রওনা হয়ে গেল মারিয়ার চুলে একবার বিলি কেটে, ভাবছে মিথ্যে কথা বলেনি সে। আসলেও খারাপ লাগছে ওর, দুর্বল অবসন্ন বোধ। করছে। তবে, ও জানে, আস্তে আস্তে কেটে যাবে এটা। শহরে ঢোকার সময় গ্রীন কামনা করল ডাক্তারকে যেন তার চেম্বারেই পাওয়া যায়। জরুরি তলবে বাইরে কোথাও গিয়ে থাকলেই বিপত্তি।
.
চেম্বারে ঢুকে হাঁপ ছাড়ল গ্রীন। ডেস্কে বসে প্রেসক্রিপশন লিখছিল ডাক্তার, ফ্যালফ্যাল করে তাকাল ওর দিকে, অবাক হয়েছে।
বিছানা ছেড়ে উঠেছ কেন? কমপক্ষে আরও তিন দিন তোমার শুয়ে থাকা উচিত।
ও কিছু না ডক।
সংক্ষেপে এবং দ্রুত ডাক্তারকে বলল গ্রীন কী ঘটেছে। ওর বক্তব্য শেষ হবার আগেই তড়িঘড়ি তৈরি হয়ে নিল ডাক্তার। গ্রীন তাকাল তার দিকে।
বাড়িটা চেন?
অবশ্যই। মিস্টার গার্সিয়া মারা যাবার আগে কতবার দেখতে গেছি। মরতে অনেক সময় লেগেছিল বেচাররি। যাই হোক, এবার তুমি বিছানায় ফিরে যাও, নইলে এরপর আবার তোমাকে নিয়ে টানাটানি হবে।
যাব, ডাক্তার। তোমাকে ঘোড়া, বা বাকলোর্ড কিছু একটা এনে দেব?
লাগবে না, বাসার পেছনে আমার নিজেরই ছোট একটা আস্তাবল আছে। লোক রেখেছি, ওকে বললে ও-ই দেবে এনে। তুমি এখন বিছানায় যাও।
গুড লা ডক।
রাস্তায় নেমে হাঁটতে হাঁটতে হোটেলে ফিরে গেল গ্রীন। সরাসরি খাবার ঘরে ঢুকল ও। এখনও সন্ধ্যে হয়নি, জনা দু-তিনেক খদ্দের আছে মোটে। ওয়েট্রেস আসতে দিনের স্পেশাল মেনু, বিফ স্টয়ের ফরমার্স দিল সে। সবিস্ময়ে লক্ষ করল গ্রীন, যা ভেবেছিল তার বেশি খিদে পেয়েছিল ওর, অনায়াসে দুই বাটি স্টু আর দুকাপ কফি সাবাড় করল। খাওয়া সেরে সোজা রাস্তায় পিপার মকের দফতরে গেল ও, দেখল জানালা দিয়ে-আনমনে বাইরে তাকিয়ে আছে মার্শাল।
স্বীকার করছি বিছানা থেকে ওঠা উচিত হয়নি আমার, মার্শাল মুখ খুলতে পারার আগেই বলল গ্রীন। আমি
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওকে মাপছিল মক।
তোমার মাথা ঠিক আছে তো? সকালে আমি ঘোড়া এনে দিয়েছিলাম তোমাকে, মনে নেই?
সিলিংয়ের পানে তাকাল গ্রীন, ধীরে ধীরে মাথা নাড়াল।