সি। বুঝতে পারছি। কিন্তু সেজন্য তোমার বাবার সাথে দেখা করবে কেন? তাকে বলার কী দরকার?
জানি না, তবে হয়তো এটা আমার অহঙ্কার। জানোই তো, বাবাকে সবসময় ভয় করতাম আমি, কিন্তু আর না। সেটাই প্রমাণ করতে চাই তার কাছে।
হ্যাঁ, তোমার সিদ্ধান্তই ঠিক। সি, যাবে তুমি।
তুমি খাওয়া গরম কর, এই ফাঁকে আমি আমার ঘোড়া নিয়ে আসছি, বলে বাইরে বেরিয়ে গেল কার্ল। দরজায় গিয়ে দাঁড়াল মারিয়া, দেখল দৃঢ় পদক্ষেপে ছেলেটা এগিয়ে যাচ্ছে ঝরনার দিকে, সংকল্পের ছাপ ওর চলাফেরায়।
উল্টো দিকের ঢালে দাঁড়ানো ঘোড়াসওয়ারকে লক্ষ করল না মারিয়া। কার্লকে দেখছিল লোকটা।
১৪.
কার্লও দেখেনি ওই অশ্বারোহীকে।
ঝরনার পাশ দিয়ে ছোট্ট একটা গুহামুখের কাছে গেল সে, ওর ঘোড়াটা বাধা আছে ওখানে। বাহনের পিঠে জিন চাপাচ্ছে কাল এমন সময় পেছন থেকে একটা রুক্ষ, ক্রুদ্ধ গলা বলে উঠল, ঠিকই ভেবেছিলাম, তোমাকে পাব এখানে। এর আগেও একবার খুঁজেছি, তারপর আর আসিনি। আজ ওই মেক্স ছুঁড়িটাকে দেখেই বুঝেছি বাগে পাব তোমাকে।
ধীরে ধীরে সোজা হলো কার্ল, বিতৃষ্ণায় বেঁকে গেছে ঠোঁট।
তা হলে তুমি আমাকে খুঁজছ, হার্ভে?
আলবত! ওই মেক্স মেয়েটাকে কী বলেছ তুমি?
চাপা গলায় বিদ্রুপের হাসি হাসল কার্ল।
আচ্ছা, তবে এজন্যই ভয় পাচ্ছ তুমি মাতাল অবস্থায় পোর্ক বসে লিউ য়া বলেছে আমাকে। তারপর কী ঘটেছে ওর কপালে? কোথায় ওকে পুঁতে ফেলেছ তুমি? ভয় পাচ্ছ, আমি ফাঁস করে দেব সব?
কঠিন চোখে তাকাল হার্ভে স্টেজ, সমস্ত রক্ত জমা হয়েছে মুখে। আমার সঙ্গে তামাশা কর না, বাছা কর্কশ গলায় বলল। তোমার বাবার হুকুম শুনছি, কিন্তু তাই বলে একটা দুধের বাচ্চার ঠাট্টা সহ্য করব না। এমনিতেও তোমাকে আমি পছন্দ করি না-ভেজা বেড়ালের মত ছোঁক-ছোঁক করে বেড়াও সবসময়।
তুমি কখনোই কারোকে পছন্দ কর না, হার্ভে। সেজন্যই কেউ তোমাকে দেখতে পারে না। আর পারবেই-বা কেন-।
চোপ। কার সাথে কথা বলছিলে তুমি? কজনকে বলেছ এ পর্যন্ত?
নিঃশব্দে হাসল কার্ল, নিজেকে এখন অসীম ক্ষমতাবান মনে হচ্ছে ওর।
কেন, হার্ভে, বলিনি কারোকে… এখনও। ইচ্ছে করেই তুলে রেখেছি ভবিষ্যতের জন্য, তুমি ঘামতে থাকবে, মনে হবে এই বুঝি লোকজন ফাঁসি দেয়ার জন্য তোমাকে ধরতে আসছে।
কার্ল আবার হাসল, হার্ভের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। না, বলবে না তুমি! খেঁকিয়ে উঠল সে, পিস্তল বের করল।
মুহূর্তে বোবা হয়ে গেল কার্ল। আজন্ম এই লোককে চেনে সে; বন্ধুত্ব না থাকলেও, কল্পনা করতে পারেনি হার্ভে কখনও বন্দুক ধরবে তার দিকে। তবু ওর মনে হলো, হার্ভে হয়তো নিছক চোখ রাঙাচ্ছে, তাই নিজের পিস্তল বের করার কোন চেষ্টাই সে করল না।
খেলনাটা রেখে দাও, হার্ভে, বলল ও। আমাকে তুমি গুলি করতে পারবে না।
ছোটখাট কামান-সদৃশ পিস্তলটা কেঁপে উঠল হার্ভের হাতে, ভোতা ফ্যাকাসে হয়ে গেল ওর দৃষ্টি। ট্রিগার টিপল সে।
পিস্তলের গর্জন প্রতিধ্বনি তুলল রোদেলা মরুভূমিতে।
বিস্ফারিত হয়ে গেল কার্লের চোখ, টলতে টলতে দুকদম আগে বাড়ল সে, রক্তে ভিজে যাচ্ছে শার্ট। ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল, আমি মারা যাচ্ছি।
তারপর ভাঁজ হয়ে গেল ওর হাঁটু, মুখ থুবড়ে পড়ল ধুলোয়।
.
লম্বা একটা কাঠের হাতা দিয়ে টর্টিলা নাড়ছিল মারিয়া গুলির শব্দে আপনাআপনি স্থির হয়ে গেল হাত, তারপর তাওয়া নামিয়ে রেখে দৌড়ে বেরিয়ে এল বাইরে।
উদ্বিগ্ন চোখে ঝরনার দিকে তাকাল ও, তারপর ছুটল ওই পথে মাঝামাঝি দূরত্বে পৌঁছে গেছে এমন সময় দেখতে পেল অশ্বারোহীকে।
একনজরেই হার্ভে স্টেজকে চিনতে পারল সে, ঘৃণিত লোকটাকে দেখতে পেয়ে ছোটার গতি কমাল।
পরমুহূর্তে একটা ভয়ের স্রোত বয়ে গেল মারিয়ার শরীরে, ঘোড়াসওয়ার তার উদ্দেশে ছুটে আসছে, চাপা দিতে চাইছে।
ঝট করে একপাশে ঝাঁপিয়ে পড়ল মারিয়া, ঘোড়ার তপ্ত নিশ্বাস লাগল গায়ে। ধুলোর মেঘের ভেতর দিয়ে হার্ভে স্টেজের হিংস্র মুখখানা দেখতে পেল সে, ওর হাতের পিস্তলটা সরাসরি তার পানেই চেয়ে আছে।
গর্জে উঠল পিস্তল, বুলেট লাগার আশঙ্কায় বুকফাটা চিৎকার করে গড়ান দিয়ে সরে গেল, মারিয়া। তবু, ঠিক ওই মুহূর্তে উপলব্ধি করল সে স্টেজ গুলি করেছে কার্লকে, এবং এখন তাকে, একমাত্র সাক্ষীকে খুন করতে চাইছে।
একশো ফুট দুরে ঘোড়ার রাশ টেনে ধরল হার্ভে, ক্রুদ্ধ স্বরে চেঁচিয়ে উঠল, এবার তোকে আমি শেষ করবু, মেক্সিক্যান কুত্তী।
আবার উঠে পড়েছে মারিয়া, কাপড়চোপড়, মুখ, আর চুল ধুলোয় মাখামাখি, দাঁড়িয়ে আছে ঈষৎ উবু হয়ে, আগুন ঝরছে দুচোখ থেকে। ওর উদ্দেশে ঘোড়া দাবড়াল হার্ভে।
মেয়েটার ঘাড়ের ওপর এসে পড়েছে সে এমন সময় দুবার গর্জে উঠল একটা রাইফেল। মাথার ওপর বুলেটের হিংস্র গুঞ্জন শুনতে পেল মারিয়া। হার্ভে স্টেজের গায়ে লাগেনি ওগুলো, তবে দৌড় থামিয়ে বাউলি কেটে একপাশে সরে যেতে বাধ্য করেছে তাকে। যেদিক থেকে এসেছিল গুলি এখন সেদিকে তাকিয়ে আছে স্টেজ।
মারিয়াও তাকিয়েছিল ওইদিকে, তারপর গ্রীনের ধাবমান বিশালকায় স্টীলডাস্টকে যখন চিনতে পারল মনে মনে বলল, খোদা মেহেরবান।
জেমস গ্রীন যখন পয়লা গুলির আওয়াজ শুনতে পায় তখনও সে শীপ র্যাঞ্চ থেকে বেশ দূরে ছিল। ঝড়ের বেগে খাড়াইয়ের মাথায় ছুটে আসে ও, দেখে হার্ভে স্টেজ মারিয়াকে ঘোড়ার পায়ের তলায় পিষে মারার চেষ্টা করছে। ক্রোধ জেগে উঠল ওর মাঝে, বুট থেকে বের করল রাইফেল। তখনও দুশো গজ দূরে রয়েছে গ্রীন, হঠাৎ হার্ভেকে আবার ধেয়ে যেতে দেখে বুঝল, আর অপেক্ষা করা চলবে না। কড়া রোদে ছোটাছুটি করায় এমনিতেই মাথা ঝিমঝিম করছিল ওর, তার ওপর ধীরে-সুস্থে নিশানা করার সময় ছিল না। বাঁ হাতে লাগাম আর ডান হাতে পিস্তলের ঢঙে রাইফে ধরে গুলি করল সে-তারপর আরেকটা কার্তুজ চেম্বারে পাঠিয়ে আবার ট্রিগার টিপল।