চিন্তার ভাঁজ পড়ল গ্রীনের কপালে।
কোথায় যাচ্ছে আন্দাজ পাচ্ছ কিছু?
কারও সাথে দেখা করতে, মনে হয়। শহরের বাইরে অনেক মেক্সিকান পরিবার আছে। সকলেই ওর বন্ধু।
তোমার কথাই হয়তো ঠিক, তবু আমি একটু নিশ্চিত হতে চাই। একটা উপকার কর, আমার ঘোড়াটা নিয়ে এস এখানে।
কী বলছ তুমি, গ্রীন। তোমার কোন কাজে আসবে না ঘোড়া। অন্তত এখনও না। নাকি তুমি আন্দাজ করেছ কোথায় যেতে পারে মারিয়া।
তাই। প্রথম যেদিন ওর ক্যান্টিনায় খেলাম–সেদিন থেকেই মেয়েটার ওপর আমার সন্দেহ। আমি কাপড় পরতে পরতে তুমি নিয়ে এস ঘোড়াটা। এখন আর সময় নষ্ট করা উচিত হবে না।
পা চালিয়ে বেরিয়ে গেল মক। দেয়াল আলমারি থেকে কাপড় বের করে তৈরি হতে শুরু করল গ্রীন। গানবেল্ট বাঁধছে কোমরে এই সময় আবার ঘুরে উঠল ওর মাথা। খাটের বাজু ধরে পতন ঠেকাল ও, সহজ হতে বলল নিজেকে, টুপি চাপাল। ব্যান্ডেজ থাকায় একটু আঁটসাট হল ওটা। সিঁড়ি বেয়ে গ্রীন যখন একতলায় নেমে গেল, ওকে দেখে চোখ কপালে তুলল হোটেলের কেরানি। লোকটাকে পাত্তা দিল না ও, বারান্দায় গিয়ে ফুসফুস ভরে নিল মুক্ত বাতাসে। কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘোড়া নিয়ে হাজির হলো মার্শাল মক। স্যাডল থেকে নেমে বলল, আমি আসব?
না, দরকার হবে না। স্ক্যাবার্ড থেকে রাইফেলটা টেনে বের করল গ্রীন, পরখ করে রেখে দিল যথাস্থানে। দোল খেয়ে স্যাভলে চাপল সে, মাথা ঘুরে উঠল আবার। একবার মনে হলো সে হয়তো আলেয়ার পেছনে ছুটছে। তবু নিশ্চিত হতে চাই আমি,আপনমনে ভাবল গ্রীন, তারপর মক্কে ঘাড় কাত করে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে গেল।
.
মারিয়া তার পুরানো বাড়ি, পরিত্যক্ত শীপ র্যাঞ্চে যাচ্ছে, জেমস গ্রীনের কথা ভাবছে ও। কখনও দারুণ আত্মাভিমান জেগে উঠছে ওর মাঝে নিজেকে পরিতৃপ্ত বলে মনে হচ্ছে; আবার পরক্ষণে ভয়ঙ্কর হতাশা ওর মনোবল ভেঙে দিচ্ছে, একলা বোধ করছে ভীষণ।
ওই লোক একটা পুরুষ বটে। বিয়ে করতে চেয়েছে তাকে, বলেছে প্রেম ভালবাসা পাবে সে। উফ! কিন্তু তা কী করে সম্ভব? একজন গ্রিংগোকে বিয়ে করে এই সীমান্ত শহর, তার জন্মস্থান ছেড়ে সে চলে যাবে কীভাবে? ক্যালিফোর্নিয়া হ্রদ, মেসো উপত্যকার কথা বলেছে লোকটা। সে কখনও হ্রদ দেখেনি। অকটিও থেকে বিশ মাইল দূরে, বেলুরাইড ছাড়া অন্য কোথাও জীবনে যায়নি ও। ক্যালিফোর্নিয়াকে মনে হচ্ছে বহুদূরে; যেন পৃথিবীর অপর প্রান্তে। আর কখনও তার দেশ, বন্ধুদের দেখতে পাবে না সে। তারপর ক্যান্টিনাটা আছে। ওটা গড়ে তোলার জন্য দারুণ পরিশ্রম করেছে ও। শুরুতে কোন বার ছিল না, শুধু ঘরে তৈরি স্মোকড টর্টিলা বিক্রি করত। ধীরে ধীরে তার টর্টিলার সুখ্যাতি বাড়ে, তারপর গ্রিংগোরাও খেতে আসতে শুরু করে।
এরপর থেকে ভালভাবেই চলছে সব। তার অবস্থার উন্নতি হয়েছে, শহরের মেক্সিক্যান প্রান্তের বাসিন্দারা সম্মান করে তাকে। চারপাশের ভয়াল অথচ সুন্দর মরুভূমির দিকে তাকাল মারিয়া। এই বুনো দেশ তার জন্মস্থান। একজন গ্রিংগো, যে তাকে সম্পূর্ণ অজানা অচেনা এক দেশে নিয়ে যেতে চায়, তাকে বিয়ে করার জন্য এর মায়া সে ত্যাগ করবে কীভাবে?
নিজের শরীরে গ্রীনের ছোঁয়া, তার শক্তিশালী দুই বাহুর কথা, ভাবল ও, দুর্বল বোধ করল।
অদূরে জরাজীর্ণ শীপ র্যাঞ্চটা চোখে পড়তে হাঁপ ছাড়ল মারিয়া, সতর্ক হয়ে উঠল ওদিকে এগোবার সময় ঝরনার পানে তাকাল ও, দেখল উইলো বন থেকে বেরিয়ে এসে ওর উদ্দেশে হাত নাড়ছে কার্ল। সেও জবাব দিল হাত নেড়ে, ঘোড়া ঘুরিয়ে বাড়ির একপাশে বাকবোর্ড থামাল।
বাকবোর্ডের পাটাতন থেকে মালপত্র তুলে নিল মারিয়া, বাসায় ঢুকল। স্টোভ জ্বেলে কফির পানি ছড়াচ্ছে এই সময় কার্ল হাজির হলো দোরগোড়ায়, হাসছে ম্লান মুখে।
গত কদিনে বদলে গেছে ছেলেটা, মারিয়া ভাবল। ডিউক রিপ খুন হবার পর এ পর্যন্ত মাত্র একবারই ওর সাথে দেখা করেছে সে। ডিউকের মৃত্যুতে দারুণ আঘাত পেয়েছে কার্ল; তবে গ্রীন আততায়ীকে মারতে সমর্থ হয়েছে শুনে শোক প্রশমিত, হয়েছে কিছুটা।
কার্লের উদ্দেশে হাসল মারি! বলল, আজ তুমি গরম খাবার খাবে! ফ্রিওলস আর টর্টিলা। এবং কফি।
স্মিত হাসল কার্ল, পরক্ষণেই গম্ভীর হয়ে গেল আবার। বলল, অনেক ভাবনাচিন্তা করলাম। মনস্থির করে ফেলেছি এখন। খাওয়া-দাওয়া সেরেই বাসায় ফিরে গিয়ে বাবাকে বলব, আমি ধরা দিচ্ছি পুলিসের কাছে।
সঙ্গে আনা তাওয়াটা বের করছিল মারিয়া, ঝট করে ঘুরল কার্লের দিকে দৃষ্টিতে ক্রোধ।
বোকার মত কথা বল না। ডাকাতির সঙ্গে তুমি জড়িত ছিলে তার কোন প্রমাণ নেই। এখন তুমি নিরাপদ-মুক্ত। কেন শুধু শুধু ধরা দিয়ে বিপদ বাড়াবে?
দীর্ঘশ্বাস ফেলল কার্ল। প্রথমত, অন্যায় করেছি। দুই, আমার দোষেই হয়েছে সব। বন্ধুরা মারা গেছে, তারপর আছে স্টেজের সেই নিরীহ যাত্রী। সবাই তাদের জীবন দিয়ে সাজা ভোগ করেছে। আমি কেন বাদ যাব? বুঝতে পারছ না, ভীষণ অন্যায় হবে এটা করা?
ছেলেটার অকপট আগ্রহে মারিয়ার দৃষ্টি নরম হয়ে এল।
প্রায়শ্চিত্ত করতে চাইছ। তাই না?
অনেকটা তাই, মুখ নিচু করল কার্ল। এভাবে বাঁচতে পারব না আমি। কিছু একটা সুরাহা না করলে সারাটা জীবন জ্বলে-পুড়ে মরব