পরের দিনটা একটু ভাল কাটল। প্রচুর পুষ্টিকর খাবার আর ঘুম ওর শক্তি আর দম ফিরিয়ে এনেছে কিছুটা। অবসন্ন বোধ করার আগে প্রায় মিনিট পনের ঘরের মধ্যে পায়চারি করল, সে
একটু বেলা করে পিপার মক এল, মুখ থমথমে।
ঝামেলা। ডার্লিংকে আজ সকালে তার দোকানে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। পিঠে ছুরি মেরেছিল কেউ।
তাই নাকি! কারোকে সন্দেহ হয়?
মক ওপর-নীচ মাথা ঝাঁকাল, শ্বাস ফেল ক্লান্তভাবে।
আন্দাজ করছি, কিন্তু প্রমাণ নেই। লাইল ক্যানাডা মরেছিল ছুরিতে। এখন ড্রাম ডার্লিং। দুজনেরই একসময় যোগাযোগ ছিল হালামের সাথে। আর হার্ভে স্টেজ তার কোমরের বেল্টে সবসময় একটা ছুরি রাখে। দম নিতে চুপ করল মক। কাল রাতে শহরে ছিল হার্ভে, ডালিংয়ের স্যালুনে মদ খাচ্ছিল।
তার মানে ওকে বাদ দেয়া যায় সন্দেহের তালিকা থেকে। খুনী কখনও ঘটনাস্থলের আশপাশে দেখা দিতে চায় না।
জানি। তবে আমার বিশ্বাস, হার্ভে কাল সন্ধ্যায়ই স্যালুনে বসে ডার্লিংয়ের চলে যাওয়ার খবরটা জেনেছে।
কিন্তু একজন লোক তার ব্যবসা বেচে দিচ্ছে বলেই তাকে খুন করতে হবে কেন? বলল গ্রীন। এটা ঠিক ঢুকছে না আমার মাথায়।
কালই তোমাকে বলেছি ডার্লিংয়ের বিক্রি করার ব্যাপারটা একটু গোলমেলে। এবং হার্ভে, হালাম আর ওর মাঝে একটা গোপন কিছু আছে। এমন কিছু যেটা ঘটেছে এখানে আসার আগে। এখন ডার্সিং চলে যেতে চাইছিল এখান থেকে। ধরা যাক, হার্ভে ধারণা করে ও পালাবার মতলব করছে। ওর পছন্দ হয়নি সেটা-তাই খুন করেছে।
তোমার অনুমান হয়তো ঠিক, তবে ওদের সম্বন্ধে আমি বেশিকিছু জানি না। ফলে হুট করে একটা মন্তব্য করে বসা উচিত হবে না।
পাগল হয়ে যাব আমি, মক বলল। যাক, এখন আমি যাচ্ছি। কার আসব আবার।
মার্শাল চলে যাবার পর গ্রীন উঠে দাড়ি কামাল। ছোট্ট আয়নায় রক্তশূন্য দেখাল মুখ, তবে খোঁচা খোঁচা জঙ্গল সাফ করে বেশ আরাম বোধ করল ও। তারপর বিছানায় ফিরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
ওর দুপুরের খাবার নিয়ে এল মারিয়া। বসে থেকে গ্রীনের খাওয়া দেখল সে, মুখ অন্ধকার।
তুমি তা হলে চলে যাচ্ছ? মানে যখন ঘোড়ায় চড়তে পারবে কোথায় যাবে?
নির্দিষ্ট করে কোন যাওয়ার জায়গা নেই, তবে কথাটা ইদানীং ভাবছি আমি। একটা সময় আসে যখন মানুষের কোথাও সুস্থির হতে হয়, নইলে পানিও পায় না মরার সময়। একবার ক্যালিফোর্নিয়ায় একটা কাজ করেছিলাম। সমুদ্রের কাছাকাছি, স্যানডিয়েগো নামে ছোট্ট এক শহরে। শহরের পুরে প্রচুর ঘাস মেলে। চমৎকার উপত্যকা, ঝরনা এসব আছে। সীমান্ত থেকে খুব বেশি দূরে না। ভাবছি ওখানে যাব। ঘোড়া পালব, ভাল জাতের। স্যাডল হর্সের দাম বাজারে সবসময়ই চড়া। আপাতত এরকমই ইচ্ছে আমার।
তেমনি মুখ কালো করে গ্রীনের দিকে তাকাল মারিয়া, বলছে না কিছু।
তবে সব পুরুষেরই বউ লাগে। একা থাকা ভাল না, কোন পুরুষই একা একা বাঁচতে পারে না বেশিদিন। তা ছাড়া ঘরদোর সাফ করা, রান্না, ছেলেপুলে মানুষ-এগুলোর জন্যেও মেয়েমানুষ দরকার একজন।
হাহ! বিদ্রুপের স্বরে বলল মারিয়া। তুমি বউ, চাওনা, বাদি চাও।
ওকে অনাবিল হাসি উপহার দিল গ্রীন।
প্রেম, যত্নআত্তি সব পাবে ওই মেয়ে, ঘরের টুকিটাকি কাজে সুন্দর কেটে যাবে সময়।
খুব বেশি কথা বল তুমি।
আমাকে তুমি বিয়ে করবে, মারিয়া? যাবে আমার সঙ্গে ক্যালিফোর্নিয়া?
উঠে পড়ল মেয়েটা, আগের মতই নির্বিকার, গ্রীনের কোল থেকে সরিয়ে নিল ট্রে।
তোমাকে বিয়ে করব? একজন গ্রিংগোকে? তুমি একটা বোকা। কোন সাদা চামড়ার মেয়েকে বিয়ে কর, আমাকে এসব বলে লাভ হবে না।
তবে ভুলে যেও না আমি তোমাকে প্রস্তাব দিয়েছি এবং মন থেকে।
ভোলা সোজা। যেমন তুমি ভুলে যাবে আমাকে।
হয়তো পারব না শেষ পর্যন্ত। যাই হোক, কাল আবার আসছ তো?
দোনোমনো করল মারিয়া, মাথা নিচু করে আছে।
কাল না, বলে বেরিয়ে গেল।
পুরানোগুলো বদলে নতুন ব্যান্ডেজ বাঁধতে সন্ধ্যায় ডাক্তার এল। মাথার জখমটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরখ করল সে।
ভাল, খুব ভাল, বিড়বিড় করে বলল ডাক্তার। আজ ছোট পট্টি বাঁধলেও চলবে। একটা দাগ থেকে যাবে, তবে তোমার চুল ঘন, ঢেকে রাখতে পারবে।
টাকমাথা ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে একগাল হাসল গ্রীন।
তোমাকে আমার মাথার কিছু চুল দিতে ইচ্ছে করছে, ডাক্তার। তোমার ফি হিসেবে।
নগদ পেলেই বেশি খুশি হব আমি, ধন্যবাদ। ডিম, মুরগি, গরুর রান এগুলো নিয়েছি। তাই বলে চুল-না। ব্যাগ বন্ধ করে মাথায় হ্যাট চাল ডাক্তার। দিন দুয়েক পরে আবার আসব, যদিও আমার মনে হয় না আমাকে আর লাগবে তোমার। বেশ সুস্থ দেখাচ্ছে, আশা করা যায়, আর দু-এক হপ্তার মধ্যেই চলাফেরা করতে পারবে তুমি।
ডাক্তার বিদায় নেয়ার পর আরেক দফা ঘুমাল গ্রীন। তারপর হরেকরকমের তরকারি দিয়ে রাতের খাওয়া সেরে আবার শুয়ে পড়ল।
পরদিন সকালে নাস্তা খেয়ে পায়জামা পরে ঘরের ভেতর পায়চারি করছে ও এই সময় দরজায় নক করে ভেতরে ঢুকল পিপার মক। গ্রীনকে দেখে হাসল মার্শাল।
উঠে পড়েছ? সকালের দিকে টেরিলের কাছে গিয়েছিলাম। তোমার কথা জিজ্ঞেস করছিল।
বুড়ো খুব ভাল।
স্মিত হাসিল মক, মাথা ঝাঁকাল।
আমি থাকতেই মারিয়া আসে ওখানে। ওর বাকবোর্ড নিতে। ঠাট্টা করার চেষ্টা করেছিলাম। তোমার ব্যাপারে। সাড়া পেলাম না, মেজাজ বিগড়ে ছিল। বাকবোর্ডে মালপত্র চাপিয়ে কোথায় যেন গেল।