এরপর আরেকটা গুলি বিস্ফোরিত হলো ওর মগজে। গ্রীন খেয়াল করছে না। ও সামনে এগোচ্ছে। শুধু বুঝতে পারছে প্রতিবার ট্রিগার টেপার সাথে সাধে পিস্তলটা লাফিয়ে উঠছে ওর হাতের মুঠোয়। এখন আর কোন পাল্টা গুলি ছুটে আসছে না। সামনে অন্ধকার রাস্তায় হাত-পা ছড়িয়ে পড়ে থাকা মানুষটাকে ঝাপসা চোখে দেখতে পেল ও, পিস্তলের শেষ গুলিটা দুলিয়ে দিল ওর শরীরে। গ্রীনের মনে হলে ও একটা আর্তচিৎকার শুনতে পেয়েছে, কিন্তু নিশ্চিত হতে পারার আগেই ওর মাথা ঘুরে উঠল, ভীষণভাবে, ভাঁজ হয়ে গেল হাঁটু, কিন্তু টের পেল না কখন মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে সে।
.
আবার যখন চেতনা ফিরে পেল গ্রীন তখন দেখল হোটেলে নিজের কামরায় শুয়ে আছে সে। নিঃসাড়ে পড়ে রইল ও, বুক ধড়ফড় করছে, শ্বাসপ্রশ্বাস চলছে দ্রুতলয়ে। গ্রীন বুঝে উঠতে পারল না এখানে সে কী করছে। তারপর, প্রথমে ধীরে ধীরে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত চকিতে মনে পড়ে গেল সব। একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল সে। চোখ পিটপিট করল, আচমকা টের পেয়েছে ঘরে সে একা নেই। আড়ষ্টভাবে বালিশের ওপর ঘাড় ফেরাল ও, দেখল, বিছানার পাশে মারিয়া বসে আছে। মেয়েটার চেহারায় স্বস্তির ছাপ ফুটে উঠতে লক্ষ করল সে।
তারপর মারিয়া যখন খেয়াল করল গ্রীন লক্ষ করছে ওকে তখন ঠাট্টার সুরে বলল, এবার তা হলে বুঝতে পারছ তুমি বেঁচে আছ? অনেক সময় লাগল কিন্তু।
কত? ক্ষীণ শোনাল গ্রীনের কণ্ঠ, যেন গভীর কোন কুয়ো থেকে উঠে আসছে।
দুদিন। প্রায় তিন। আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো মারাই যাবে ডাক্তার বলেছে তোমার কনফিউশন হয়েছে।
আকর্ণ বিস্তৃত হাসি হাসল গ্রীন। মানে কনকাশন।
একই কথা। মাথা ঘুরবে তোমার। এখন কেমন লাগছে?
গ্রীন অনুভব করল ওর মাথার একপাশে এখন ব্যথা করছে, হাত ওঠাতে আঙুলে ব্যান্ডেজের স্পর্শ পেল। ঝিমঝিম করছে ভেতরটা, ভুরু কোঁচকাল ও।
খিদে পেয়েছে, বলল।
ভাল, উঠে দাঁড়াল মারিয়া। চুপ করে শুয়ে থাক, আমি খাবার আনছি।
মারিয়া যখন দরজায় পৌঁছাল, গ্রীন ওর নাম ধরে ডাকল, মেয়েটা ঘুরে দাঁড়াতে বলল, এই দু-তিনদিন তুমি এখানেই বসেছিলে?
যে কারও জন্য এটা করব আমি।
বেরিয়ে গেল মারিয়া। জানালার দিকে পাশ ফিরতে গ্রীন দেখল বাইরে রোদ। তা হলে সে প্রায় তিন দিন অজ্ঞান হয়েছিল ও ভাবল। আস্তে আতে হাত-পা নাড়াল গ্রীন, তার, মাজার ব্যান্ডেজটা টিপে দেখল। তারপর চোখ মুদল সে এবং কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘুমিয়ে পড়ল।
.
পরে, মারিয়া যখন ঢাকনা দেয়া খাবারের ট্রে নিয়ে এল জেগে উঠে গোগ্রাসে সেগুলো খেল গ্রীন। তারপর আবার ঘুমিয়ে পড়ল। সন্ধ্যে নাগাদ ওকে দেখতে এল ডাক্তার, সংক্ষিপ্ত পরীক্ষার পর রায় দিল শিগগিরই ও সেরে উঠবে।
তবে তোমার চোটটা খারাপ, কাজেই আরও কটা দিন শুয়ে থাকতে হবে তোমাকে। এরপরও, দ্রুত চলাফেরা করতে গেলে মাথা ঘুরবে।
মারিয়া চলে গেছে কান্টিনায়। রাতের খাওয়া নিয়ে পিপার মককে আসতে দেখে অবাক হলো গ্রীন। ওর কোলের ওপর ট্রেটা রেখে গম্ভীর গলায় মার্শাল বলল, বুটহিলে তোমার জায়গায় স্যাম ট্যানারের স্থান হয়েছে সেজন্য আমি খুশি।
ধন্যবাদ, বলে খেতে শুরু করল গ্রীন।
দুবার ওর মাথায় গুলি লাগিয়েছ তুমি, জানো?
ওই পর্ব শেষ। আলাপ করে খামোকা সময় নষ্ট। কার্লের ব্যাপারে কিছু শুনলে?
না, একটু থামল মার্শাল। নতুন কোন খবর নেই-শুধু ড্রাম ডার্লিং সব ব্যবসা বেচে দিয়ে চলে যাচ্ছে।
এতে অবাক হবার কী আছে?
অপ্রত্যাশিত, এই পর্যন্ত। ভাল ব্যবসা করছিল, টাকা কামাচ্ছিল। আর টাকাটাই ওর কাছে সব। তা ছাড়া আগেই বলেছি, ফ্রেড হালাম আর হার্ভে স্টেজের সঙ্গে সেই প্রথম দিকে এখানে বসতি করে ও। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোন কারণ না ঘটলে মানুষ সাধারণত তার পুরানো জায়গা ছেড়ে নড়তে চায় না। তবে আমার কেন যেন মনে হয় ওই তিনজনের ভেতরে একটা গোপন কোন ব্যাপার আছে। আগেও এরকম মনে হয়েছে আমার।
তোমারটা ঠিক বলতে পারব না, তবে আমি একটা ব্যাপারে অনেক ভেবেও কূলকিনারা করতে পারিনি। এত ভাল ছেলে ছিল কার্ল হালাম, সে কেন হঠাৎ করে এমন মাতাল হয়ে স্টেজ ডাকাতি করতে গেল? তোমার মনে আছে আমরা একবার আলাপ করেছিলাম, ডিউক রিপ আমাকে বলেছিল কার্ল তার বাবার কাছে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে চাইছি? আমার কাছে ব্যাপারটা এখনও রহস্যময়। এই ঘর থেকে বেরোতে পারলেই ওকে খুঁজে বের করব আমি।
মামলাটা বন্ধ করে দেয়াই বোধহয় ভাল। একটা সাক্ষীও তো আর বেঁচে নেই।
না, তা সম্ভব না, সংক্ষেপে বলল গ্রীন। নীরবে খাওয়া সারল ও। মক উঠে খালি ট্রেটা তুলে নিল।
এবার নিশ্চয়ই ঘুম?
গ্রীন হাসল। খাওয়া আর ঘুম, সামনের কয়েকটা দিন কেবল এ দুটোই করব, বলল ও। শুভ রাত্রি, মার্শাল। এবং ধন্যবাদ।
মক অকপটে বলল, আমারই উচিত তোমাকে ধন্যবাদ দেয়া। তুমি স্যাম ট্যানারকে না মারলে ওকে মোকাবেলা করতে হত আমার। এবং এ মুহূর্তে আমিই থাকতাম বুটহিলে।
১৩.
পরদিন উঠে বসল গ্রীন। মাজার ক্ষতটা শুকিয়ে আসছে, খুব একটা সমস্যায় ফেলছে না ওকে। কিন্তু মাথার-টাই ভাবিয়ে তুলেছে। ঘরের ভেতর মাত্র তিনটে চক্কর দিতেই এমন ঝিমঝিম করে উঠল যে সময়মত বিছানায় বসে না পড়লে মেঝেতে পড়ে যেত ও।