কিন্তু স্যাম ট্যানারের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছে না ও। অতিসাধারণ চেহারা; কেরল অদ্ভুত ওর চোখ দুটো, নিরাসক্ত, ভাবলেশহীন-কোনরকম ভাবান্তর নেই।
গ্রীনের মনে পড়ল মক তাকে অন্ধকার গলি আর খোলা দরজা থেকে সরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
বন্দুকবাজের উদ্দেশে আরেকবার শীতল চাহনি হানল সে, তারপর বারের কোনা ঘুরে রান্নাঘরের দিকে লম্বা লম্বা পা ফেলে হাঁটা দিল পুঁতির পর্দা সরিয়ে ভেতরে ঢোকার সময় শিরদাড়ার কাছে শিরশিরে অনুভূতি হলো ওর।
রান্নাঘরেই মারিয়াকে পেয়ে গেল গ্রীন, কাজে ব্যস্তু ছিল। এত তাড়াতাড়ি ওকে ফিরে আসতে দেখে অবাক হলো মেয়েটা, কালো ভ্রূজোড়ায় ভাঁজ পড়ল।
আবার কী? শিগগিরই বন্ধ করে দেব, তখন এমনিতেও চলে যেতে হবে তোমাকে,
বিরাট দুই হাতের মুঠোয় গ্রীন তার টুপিটা নাচাল, অস্বস্তি বোধ করছে। শান্ত গলায় মেয়েটাকৈ জানাল ডিউক রিপ মারা গেছে।
আধঘন্টা আগে কেউ ওকে গুলি করেছে সেলের মধ্যে। তুমি হয়তো আওয়াজ শুনে থাকবে।
দুর্বোধ্য ভঙ্গিতে মাথা নাড়াল মেয়েটা, গভীর কালো চোখ দুটো চিকচিক করে উঠল।
ডিউক ভাল ছেলে ছিল, মোটামুটি। কে খুন করল? কেন?
কান্নায় ভেঙে পড়ল মারিয়া, বিস্ফারিত হয়ে গেছে চোখ, গাল ভেজা, মুখ ফ্যাকাসে।
কী ব্যাপার? গ্রীন জিজ্ঞেস করল। কী ভাবছ এত?
খুব দুঃখজনক এই মৃত্যু। তবে আমাকে জানাতে এসেছ তুমি, সেজন্য তোমাকে ধন্যবাদ।
জানাচ্ছি তার কারণ কার্লের সঙ্গে যদি তোমার দেখা হয় তাকে বলতে পারবে ঘটনাটা।
ভোতা হয়ে গেল মারিয়ার দৃষ্টি, গলার স্বর রুক্ষ হয়ে উঠল। কার্লের সঙ্গে আমার দেখা হবে এরকম ভাবছ কেন?
আমি বলেছি যদি দেখা হয়, বলল গ্রীন, মেয়েটার এই আকস্মিক মেজাজ পরিবর্তনে সন্দিগ্ধ হয়ে উঠেছে ওর মন।
দেখা হবে না আমার সাথে, ঝাঁঝের সাথে বলল মারিয়া। এবার তুমি যাও! আমি খুব ব্যস্ত। সারারাত ধরে গ্রিংগোর সাথে প্যাচাল পাড়ার মত সময় নেই।
বিদায় জানিয়ে ঘুরে দাঁড়াল গ্রীন। পর্দাটা সামান্য ফাঁক করে বারের দিকে অকিয়ে দেখল স্যাম ট্যানার নেই।
দ্বিধায় পড়ল ও, বুঝতে পারছে মারিয়া লক্ষ করছে ওকে। বাইরে কোথাও হয়তো ওত পেতে অপেক্ষা করছে স্যাম ট্যানার, ও বেরোলেই গুলি করবে, পেছনে ক্যান্টিনার আলো থাকায় নিশানা করা সহজ হবে গুপ্তঘাতকের পক্ষে। মারিয়ার দিকে ফিরল গ্রীন।
পেছনের রাস্তা দিয়ে বেরোতে চাই আমি। তোমার ঘরের ভেতর দিয়ে যে দরজাটা উঠনে খোলে।
কী ব্যাপার? কার ভয় করছ?
ভয় পাচ্ছি না, গ্রীন বিরক্ত। সামনে দিয়ে বেরোলে একটা যুদ্ধ বাধতে পারে, তোমার খদ্দেররা তা হলে বিপদে পড়বে।
উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল মারিয়ার দৃষ্টি, গলা নেমে গেল খাদে।
কে আছে বাইরে?
ডিউক রিপকে যে লোকটা খুন করেছে। নাও, এবার আমাকে দেখাও
ঝট করে ঘুরে দাঁড়াল মারিয়া, বাসায় ঢুকে শোবার ঘর হয়ে ওকে নিয়ে গেল দরজার কাছে। অন্ধকার ঘরে গ্রীনের হাত চেপে ধরল। অন্ধকারে ওর মুখাবয়ব, চকচকে চোখ দেখতে পেল গ্রীন।
সাবধান, নয়তো তুমিও খুন হয়ে যেতে পার, মৃদু গলায় বলল মারিয়া।
স্মিত হাসল গ্রীন। তাতে কি সত্যি তুমি খুব দুঃখ পাবে, মারিয়া?
সি। পাব।
ওর ক্ষীণ কটি জড়িয়ে ধরল গ্রীন, অনুভব করল শক্ত হয়ে গেল শরীর-সেই চাপা ইস্পাত। তারপর ঢিল দিল মারিয়া, চোখের পলকে ওর মাথাটা টেনে নামিয়ে চুমু খেল ক্ষুধার্ত কামনায়। সকালে সোনালি অ্যাসপেনের নীচে ঘাসের মধ্যে যেরকম অনুভূতি হয়েছিল গ্রীনের এখন আবার তেমনি আগুন ছড়াল ওর শিরায় শিরায়।
বাইরে যাবার বদলে রাতটা এখানে কাটাতে পারলেই বেশি খুশি হবে সে, চকিতে একবার ভাবল ও।
মারিয়াকে রেহাই দিল গ্রীন, তপ্ত একটা নিশ্বাস ছেড়ে সোজা হলো।.. তোমার মধ্যে বারুদ আছে, বলল ও।
তারপর ঘুরে দরজা খুলল সে, দ্রুত পা রাখল বাইরের: জাফরি কাটা মাচানের নীচে। চন্দ্রালোকিত উঠানটা জরিপ করার সময় মারিয়ার কথা পুরোপুরি ভুলে গেল ও, দেয়াল ঘেঁষে ফটকের দিকে এগোল উবু হয়ে। একটু ইতস্তত করে তুলল হুড়কোটা, নিঃশব্দে নামিয়ে রাখল একপাশে। তারপর পিস্তল বের করে ঠেলে ফাঁক করল গেট, অনুভব করল চিকন ঘাম দেখা দিয়েছে কপালে।
অদূরে কোথাও একটা কুকুর ডেকে উঠল এবং চুপ করল। পেলব রাতে আর কোন শব্দ নেই। গলিতে বেরিয়ে ফটকটা টেনে বন্ধ করে দিল গ্রীন, চোখ সতর্ক, আশপাশের রুপালি আঁধার,আর সামনের নিচ্ছিদ্র অন্ধকার রাস্তাটা জরিপ করছে।
আগে বাড়ল গ্রীন, গেল রাতে যে লোকটা দৌড়ে পাশের রাস্তায় অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল তার কথা ভাবছে।
দেয়ালের কোণে পৌঁছল সে। উবু হয়ে চলাফেরা করছে খেয়াল হতে সোজা হয়ে দাঁড়াল। পিস্তলটা রাখতে যাচ্ছে হোলস্টারে এই সময় আচমকা গুলির আওয়াজে। খানখান হয়ে গেল রাতের নিস্তব্ধতা। অন্ধকারের ভেতর উল্টো দিকে আগুনের ঝলক দেখতে পেল গ্রীন। নিক্ষিপ্ত পাথরখণ্ডের মত শক্ত একটা কিছু আঘাত করল ওর কোমরে, এক হাঁটু ভেঙে বসে পড়ল ও। পরক্ষণে আরেকটা বুলেট উড়ে গেল মাথার ওপর দিয়ে, পেছনের দেয়ালে বিঁধল। আগুনের ঝলক নিশানা করে গুলি ছুঁড়ল গ্রীন, তারপর আরও দুটো গুলি করে উঠে দাঁড়িয়ে এগোল সামনে। হিমশীতল ভয়ঙ্কর ক্রোধে জেগে উঠেছে এর মাঝে।