এবার দক্ষতার সঙ্গে দ্রুত খানাতল্লাশি করল গ্রীন, দুটো রাইফেল, দুটো .৪৫ কোল্ট আর কার্তুজের বেল্ট উদ্ধার করল। বাংকের নীচ থেকে নিজের পিস্তলটা তুলে নিয়ে হোলস্টারে রাখল সে, বাকি অস্ত্রশস্ত্র বাইরে নিয়ে গিয়ে একে একে ছুঁড়ে ফেলল ছাতের ওপর। এরপর ওর কারবাইনটা কুড়িয়ে নিল সে, ক্যানাডা যেখানে ঝুঁকে পড়ে প্রথমজনের লাশ পরীক্ষা করছে সেখানে গেল।
মাত্র কৈশোর পেরিয়েছিল ছেলেটা, বছর আঠারো বয়েস হবে, হালকা-পাতলা শরীর। বুকের বাঁ পাশে দুটো গুলি লেগেছে, এখনও ফোঁটা ফোঁটা রক্ত ঝরছে ক্ষতস্থান থেকে। শক্ত হয়ে গেল গ্রীনের চোয়াল, কঠিন চোখে তাকাল ক্যানাডার দিকে। ওই দৃষ্টির সামনে চুপসে গেল অপরজন, কেশে গলা সাফ করে লাশটা দেখিয়ে বলল, কার্লোস গার্সিয়া। এও ছিল, মনে হয়। ডিউক নামের একজনকে ডাকছিল ও, শুনেছ নিশ্চয়? ওটা ডিউক রিপ, এদের আরেক সঙ্গী, সবসময় একসাথেই থাকে ওরা। ওকে মেরেছ তুমি?
আমি তোমাকে নিষেধ করেছিলাম আসতে, বলল গ্রীন, গলা অস্বাভাবিক রকমের শান্ত, হিমশীতল। ঘোড়া পাহারা দিতে বলেছিলাম।
উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম, অপেক্ষা করতে করতে।
গুলি করার দরকার ছিল না। আমার চিৎকার শুনতে পেয়েছিলে তুমি। তখনও যথেষ্ট সময় ছিল তোমার হাতে।
ও দৌড় দিয়েছিল; পালিয়ে যাচ্ছিল।
পারত না, আমি ওর পেছনেই ছিলাম। শুধু শুধু একটা লোককে খুন করলে, আরেকটু হলেই আমাকেও মেরে ফেলেছিলে।
এতটা আমি ভেবে দেখিনি।
স্বাভাবিক, বিরক্তির সুরে বলল গ্রীন। তুমি ভাবছিলে পুরস্কারের কথা।
গার্সিয়ার লাশের দিকে তাকাল ক্যানাডা। খনখনে গলায় বলল, যাই হোক, মড়া নিয়ে গেলেও টাকাটা পাওয়া যাবে, কি বল?
মুচকি হাসছিল ক্যানাডা, আচমকা ওর নাকের বাঁশিতে আঘাত করল গ্রীন। আরও দুবার চোয়ালে মারল সে, ভাঁজ হয়ে গেল ক্যানাডার হাঁটু, লুটিয়ে পড়ল। ঘুর ঘরে ফিরে গেল গ্রীন। ইতিমধ্যে খানিকটা ধাতস্থ হয়েছে ডিউক রিস, বাংকের কিনারে, বসে আছে নতমুখে। ঠিক আছে, রিপ, কঠিন সুরে সরাসরি প্রশ্ন করল গ্রীন, এবার বল অন্য লোকটার নাম কী? এখন কোথায় আছে?
পলক তুলল রিপ, চোখ দুটো জ্বলছে। কিন্তু গ্রীনের স্থিরদৃষ্টির সামনে টিকতে পারল না বেশিক্ষণ, আবার নিচু করল মাথা। কে তুমি? গোমড়া মুখে জিজ্ঞেস করল সে। হুট করে এসেই গুলি করলে, তারপর এখন উল্টোপাল্টা প্রশ্ন করছ?
আমার জবাব আমি এখনও পাইনি, রিপ! জবাব দাও–এক্ষুণি।
তাই? আমার নাম জানলে কীভাবে?
তা জেনে তোমার লাভ নেই কোন। তুমি বলতে শুরু কর।
লম্বা একটা শ্বাস টানল রিপ। তোমার কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না আমি, কাজেই আমারও কিছু বলার নেই তোমাকে।
গেল হপ্তায় তোমার বন্ধুরা টাওসে একটা স্টেজ ডাকাতির চেষ্টা করে। তুমিও ছিলে সেই দলে কোল্টার নামে এক লোককে খুন করেছ তোমরা। মোট চারজন ছিল। তোমাদের দলে। কোল্টার একজনকে গুলি করে। তার নাম স্কালি ব্রাওয়ারপরদিন। টাওসে ওর লাশ শনাক্ত করে একজন। তোমরা পালিয়ে চলে আস এখানে। একটু আগে গুলির আওয়াজ পেয়েছ, তাতে মারা গেছে কার্লোস গার্সিয়া। এর অর্থ, তোমাদের আরেকজন বাকি আছে এখনও। আমি তার নাম, এবং কোথায় গেলে পাব তা জানতে চাই।
মাথা নত করে শুনছিল রিপ, কিন্তু গার্সিয়ার নামটা কানে যেতেই চোখ তুলল, মুখ হাঁ হয়ে গেছে, চেহারায় অবিশ্বাসের ছাপ। কথা বলার সময় কেঁপে গেল ওর গলা, কার্লোসকে খুন করেছ তুমি?
বাইরে পড়ে আছে ওর লাশ।
চাপ সুরে ডুকরে উঠল রিপ, ঘুসি বাগিয়ে তেড়ে এল গ্রীনের দিকে। গ্রীনও দেখতে পেয়েছিল সেটা, একপাশে সরে গেল ও, পেশীবহুল, হাতের সমস্ত জোর খাটিয়ে চড় মারল রিপের মাথায়।
মুহূর্তের জন্য লোপ পেল রিপের বুদ্ধিশুদ্ধি, চোখে সর্ষের ফুল দেখল, কাত হয়ে পড়ে গেল বাংকের কিনারে। একটুক্ষণ অপেক্ষা করল গ্রীন। দম আটকে আসছে ঘরের ভেতর, রান্নাঘরের ধোঁয়ায় চারদিক অন্ধকার। কফি ফুটে ফুটে শুকিয়ে যাচ্ছিল, চট করে এগিয়ে গিয়ে কেতলিটা নামাল গ্রীন, চুলো বন্ধ করল। তারপর আবার আগের জায়গায় ফিরে এল সে। দেখল রিপ উঠে বসেছে, দুহাতে চেপে ধরে আছে মাথা।
গ্রীন এখন নিশ্চিত কার্লোসের সঙ্গে এই লোকও ডাকাতিতে জড়িত। সুতরাং কথা বলাতে হবে ওকে। কঠোর অথচ শান্ত সুরে ও বলল, আমাকে লোকটার নাম বল, রিপ।
জাহান্নামে যাও, রূঢ় স্বরে জবাব দিল রিপ, তাকাতে সাহস পাচ্ছে না।
নিকুচি করি, ভাবল গ্রীন। অনিচ্ছাসত্ত্বেও, শক্ত হয়ে গেল চোয়াল। রিপের চুলের গোছা চেপে ধরল সে, একঝটকায় পেছনে কতি করল মাথা, আবার চড় মারল, তারপর আরেকবার। প্রতিটা আঘাতে সাময়িকভাবে বিকৃত হয়ে গেল রিপের মুখাবয়ব।
থামল গ্রীন, তবে চুলের মুঠি ছাড়েনি, ভাবলেশহীন গলায় বলল, আমি সারাদিন এভাবে চালিয়ে যেতে পারব, বাছা।
আবার আঘাত করল ও ব্যথায় কেঁদে ফেলল রিপ, দুর্বলভাবে ককিয়ে উঠল। গ্রীনের কজি আঁকড়ে ধরতে হাত বাড়াল ও, কিন্তু তেমন জোর পেল না। কপালে আরও দুটো খুসি খেয়ে অবশেষে একেবারে ভেঙে পড়ল রিপ, গ্রীন ছেড়ে দিল ওকে। ধীরে সুস্থে একটা সিগারেট বানাল ও শুনতে পাচ্ছে লজ্জায় ফুপিয়ে কাঁদছে ছেলেটা, রক্তবর্ণ চোখজোড়ায় ফুটে উঠেছে অসীম হতাশা।