ক্যাম্পটা যখন দৃষ্টিসীমার আড়ালে চলে গেল রাশ টেনে নামল গ্রীন। খোলা হাওয়ায় মাথা অনেক পরিষ্কার হয়ে এসেছে এখন। স্যাডলব্যাগ থেকে ক্যান্টিনটা বের করল সে। ঠাণ্ডা হয়েছিল মোটা ক্যানভাসের পাত্রটা, ওর হাত জুড়িয়ে গেল। ছিপি খুলে এক ঢোক পানি খেল ও, কুলি করল ভাল করে। তারপর ব্যান্ডানা ভিজিয়ে ঘষে মুখ আর ঘাড় মুছল। ক্ষতবিক্ষত হয়ে আছে মুখ, আরাম পেল ভেজা কাপড়ের ছোয়ায়। আরেক ঢোক পানি খেল গ্রীন, কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে পরিষ্কার মাথায় নিবিষ্ট মনে ভাবল ওর পরবর্তী কর্মপন্থা। ঘাড় ফিরিয়ে যখন দেখল কেউ নেই পেছনে, আবার স্যাডলে চেপে একসার ভাঙাচোরা বেলেপাথরের টিবির দিকে এগোল। ওই ঢিবিগুলোর পাশ দিয়ে সরু একটা মেঠোপথ চলে গেছে ক্যাম্পের দিকে।
বালুময় ঢাল ধরে একটা গভীর গিরিখাতে নেমে গেল গ্রীন; খাতটা এত গভীর যে খুব সহজেই একজন অশ্বারোহী লুকিয়ে, চলাফেরা করতে পারবে। যখন সে বুঝতে পারল প্রয়োজনীয় দূরত্ব অতিক্রম করেছে, নেমে মাটিতে লাগামের খুটাটা পুঁতে দিল। গিরিখাতের খাড়াই বেয়ে কিনার অবধি উঠে গেল গ্রীন, সন্তর্পণে মাথা জাগিয়ে নীচের ধসে পড়া ঝুপড়ি আর দালানগুলো জরিপ করল। গরম বাতাসের ভাপ লাগল, ওর চোখে-মুখে, অনুভব করল সূর্যকিরণে পিঠ পুড়ে যাচ্ছে। একজনের কাশির আওয়াজ শুনতে পেল ও একটু বাদেই দেখা গেল অসল্যারকে, ধীর পদক্ষেপে আস্তাবলে। যাই।
এরপর আর কোনওরকম কর্মব্যস্ততা বা লোকজনের সাড়াশব্দ মিলল না নীচে। গ্রীন অনুমান করল ফ্লিন্ট আর হা এখনও স্যালুনেই আছে। নিজের পিস্তলটা পরখ কল সে, সাবধানে ঢাল গড়িয়ে নেমে গেল ক্যাম্পে, দৌড়ে গা ঢাকা দিল একটা ঝুপড়ির আড়ালে, তারপর সেখান থেকে একই কায়দায় আরও কয়েকটা কুটির পেরিয়ে স্যালনের ঠিক পেছনেই শৌচাগারের কাছে এসে থামল। গরম আর দুর্গন্ধ মিলেমিশে দম আটকে এল গ্রীনের, কিন্তু একটা অট্টহাসির আওয়াজ পেয়ে ঝট করে বসে পড়ল ঝোঁপঝাড়ের ভেতরে। স্যালুনের খিড়কি দোর খুলে বেরিয়ে এল হাচ, মুখে আকর্ণ বিস্তৃত হাসি ঘুরে জোর গলায় হেঁকে উঠল সে, ফ্লিন্ট ওপরে হাত-মুখ ধুতে ধুতে আমি আরেকটা কাজ সেরে ফেলছি। তুমি বরং আরও কিছুটা পনির আর শুকনো মাংস বের কর, ভার্জ। যে একখানা ধকল গেল, খিদেয় পেট চো-চোঁ করছে আমার।
দরজা খোলা রেখেই শৌচাগার অভিমুখে হাঁটা দিল ও। পিস্তল বের করল গ্রীন, উত্তেজনায় টানটান হয়ে আছে সমস্ত স্নায়ু। বেলে মাটিতে হাতের বুটের থপথপ শব্দ শুনতে পাচ্ছে। চট করে শৌচাগারের কোনা ঘুরে সামনে চলে এল গ্রীন হাচ তখন গোড়ালি অবধি প্যান্ট নামিয়ে বসতে যাচ্ছিল, গ্রীনকে দেখে কপালে উঠল, চোখ, চেঁচাবার জন্য মুখ হাঁ করল। পিস্তলের নল দিয়ে ওর চাঁদিতে বাড়ি মারল গ্রীন, জ্ঞান হারাল গাট্টাগোট্টা লোকটা, উলঙ্গ অবস্থায় নেতিয়ে পড়ল শৌচাগারের আসনে
গ্রীন আন্দাজ করল কিছুক্ষণ এভাবেই থাকবে ও, অন্তত কাজটা সারা পর্যন্ত। দৌড়ে মাঝের দূরত্বটুকু অতিক্রম করল গ্রীন, খোল! দরজার পাশ দিয়ে উঁকি মেরে দেখল বারের পেছনে বসে আছে ভার্জিল রীড, দৃষ্টি সামনের নোংরা জানালার দিকে নিবদ্ধ। ভেতরে পা রাখল গ্রীন, বারের কাছাকাছি চলে এসেছে এমন সময় পাই করে রীড তার ধূসর মাথাটা ঘোরাল, মুখ চালু হলো কথা বলার জন্য।
তারপর গ্রীনকে যখন চিনতে পারল ও কেবল ঘোৎ করে একটা শব্দ বেরোল, হাত চলে গেল বারের নীচে।
গ্রীন ওর পিস্তলটা নাচাল। বিড়বিড় করে বলল, চোখের সামনে রাখ, রীড, দুটোই। বারের ওপর। ছড়ি আছড়ে সংকেত দেয়ার চেষ্টাও করবে না।
এতে কী লাভ হবে তোমার বুঝতে পারছি না, ক্রুদ্ধ স্বরে বলল রীড।
প্রথমত, তৃপ্তি। বারের পেছনে চলে এল গ্রীন, কাটাবন্দুকটা তুলে নিল তাক থেকে। অস্ত্রটা বাঁকিয়ে ভেতরের কার্তুজ দুটো বের করে নিল ও, তারপর ওগুলো পকেটে ফেলে বন্দুকটা রেখে দিল আগের জায়গায়। এবার কাউন্টার ঘুরে রীডের সামনে এসে দাঁড়াল, ফোলা চোখ দুটো জ্বলছে অদ্ভুতভাবে।
ফ্লিন্ট নীচে না আসা পর্যন্ত একদম চুপ থাকবে, বোঝা গেছে?
চোখ কোঁচকাল রীড। খুন করতে চাও ওকে?
খুন করতে ফিরে আসিনি আমি, শুধু চোখের সামনে দেখতে চাই সবাইকে।
প্রতিশোধের ব্যাপার না হলে কেউই খুন করতে চায় না। অবশ্যি তাই বলে, সবসময় না। বেশির ভাগ খুনখারাপিই হয় মুহূর্তের রাগে। ভাল, হাসিখুশি একটা মানুষ, কারও সাতে-পাঁচে নেই। তারপর হঠাৎই একটা কিছু গোলমাল হয়ে যায়। কোন ফালতু কথা, কিংবা হয়তো কোন মেয়েছেলের ব্যাপার থাকে। এই ক্যাম্পটা যখন জমে উঠছে, অধিকাংশ সময় এমনটাই হত। তারপর লড়াই, হাতাহাতি না; খুব কম লোকই জানে এটা পিস্তল অথবা ছুরি, মার নয়তো মর। যোগ্য লোকই জিতবে এরকম কোন কথা নেই।
সময় চুরি করছে রীড, ভাবল গ্রীন।
এত কথা কীসের? জানতে চাইল একটা গলা। সিঁড়িতে দুপদাপ শব্দ তুলল এক জোড়া বুট। বুঝলে, এখন বেশ আরাম বোধ করছি আমি! পিস্তলটা আবার…ঝোলাতে পেরে ভাল লাগছে। ভেবেছিলে আমরা ওকে গুলি করব, না, ভার্জ? সে জন্যেই ওপরে রেখে আসতে বলেছিলে অস্ত্র? হা, হা!
সিঁড়িতে দেখা গেল ফ্লিন্টকে। বলছে, এখন পেটে খানিকটা মাল আর কিছু দানা পড়লেই তাজা হয়ে যাব আবার। তখন সুবিধে করতে পারব মেয়েছেলের সঙ্গে। ভার্জ, এখানে তোমার গোটা দুয়েক মেয়েছেলে রাখা উচিত, তবে না শরীরটা ঠিকঠাক-