এখনই শেষ করছি, গরগর করে উঠল ফ্লিন্ট, বুট দিয়ে সজোরে আঘাত করল গ্রীনের দুই উরু সংযোগস্থলে। নিমেষে তীব্র যন্ত্রণা ছড়িয়ে পড়ল ওর শরীরে, অসুস্থ বোধ করল। এবার মরিয়া হয়ে উঠল গ্রীন, রীডের কব্জি চেপে ধরে আচমকা লাফিয়ে আগে বাড়ল, ডিগবাজি দিল। বারের পেছন থেকে শূন্যে উঠে গেল রড, মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গিয়ে ছিটকে পড়ল মাটিতে। ব্যথায় চিৎকার করল সে, কোকাতে লাগল।
হাচ আর ফ্লিন্ট এগিয়ে আসছিল আবার, দুপাশ থেকে। দাঁতে দাঁত চেপে ব্যথার খিচুনি সহ্য করল গ্রীন, এক হাঁটুতে ভর রেখে লাফিয়ে পড়ল হাচের পায়ের ওপর, হ্যাচকা টান মারল। সশব্দে আছাড় খেল হাচ, কাঠের মেঝে থেকে ধুলো উড়ল। তড়াক করে ওর বুকের ওপর চেপে বসল গ্রীন, দুবার ঘুসি মারল, মুখে, চুলের গোছা ধরে সর্বশক্তিতে মাথা ঠুকে দিল মেঝেতে। ওর দেহের ভারে ছটফট করছিল হাচ, এবার অসাড় হয়ে গেল।
তক্ষুণি গড়িয়ে সরে গেল গ্রীন, কষ্টেসৃষ্টে উঠে দাঁড়াল, দেখল বার থেকে রীডের ছড়িটা ছো মেরে তুলে নিয়েছে ফ্লিন্ট
ছড়ির চেয়ে মুগুরের সঙ্গেই এটার আত্মীয়তা বেশি। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের কজির মত মোটা, একপ্রান্তে গোলাকার একটা মুকুট রয়েছে। সংঘর্ষ হলে ওই মুকুট অনায়াসে যে কোন লোকের মাথার খুলি বা হাত গুড়িয়ে দিতে পারবে। হাপাতে হাঁপাতে এগিয়ে এল ফ্লিন্ট, নিশ্বাসের তালে তালে ভরাট বুক ওঠানামা করছে, মুকুট ধরে লাঠি খেলার ভঙ্গিতে ছড়িটা ধীরগতিতে ঘোরাচ্ছে। পিছিয়ে গেল গ্রীন, এ অবস্থায় প্রতিপক্ষের সঙ্গে সরাসরি মোকাবেলা করা নির্বুদ্ধিতার শামিল, তাই পিস্তলের শরণ নিল। হোলস্টার থেকে প্রায় বের করে এনেছে ওটা, এমন সময় খেঁকিয়ে উঠল রীড, বের কর-আমি তোমার হাঁটু উড়িয়ে দেব।
খোঁড়াতে খোঁড়াতে বারের পেছনে চলে গেছে শয়তান বুড়ো, একটা দোনলা কাটাবন্দুক হাতে জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে গ্রীনের পানে।
ওকে ধর, ফ্লিন্ট, বলল রীড! কিন্তু খুন করবে না।
ফ্লিন্ট ব্যবধান কমিয়ে আনতে কামরার আরেক প্রান্তে সরে গেল গ্রীন। খিড়কিপথে বেরোনোর সুযোগ রয়েছে একটা, দেখতে পেল ও। একবার এখান থেকে বেরোতে পারলে পিস্তল ব্যবহারে আর কোন বাধা থাকবে না ও, পালিয়ে যেতে পারবে প্রাণ নিয়ে। কিন্তু ওর জেদ আর অকুতোভয় সাহস পালিয়ে যাওয়া থেকে বিরত করল ওকে।
আর এক কদম পিছু হটল সে, একটা চেয়ারের পিঠ স্পর্শ করল ওর কোমর। চট করে চেয়ারটা টেনে সামনে আনল গ্রীন। ফ্লিষ্ট ওর মাথা লক্ষ্য করে সবেগে ছড়ি যোগাতেই চেয়ার তুলে আঘাতটা মাঝপথে ঠেকিয়ে দিল। আচমকা বাধা পাওয়ায় দুড়িটা খসে পড়ল ফ্লিন্টের হাত থেকে, সুযোগ বুঝে চেয়ারটা ওর দিকে ছুড়ে দিল গ্রীন, তেড়ে গেল।
ফ্রিন্টের মুখে প্রচণ্ড একটা ঘুসি হকাল ও, চোয়ালের হাড়ে পিছলে বেরিয়ে গেল মুঠি। ফ্লিন্ট পাল্টা ঘুসি হানল কয়েকটা, কিন্তু গ্রীনের চেয়ে হাতে-পায়ে লম্বা বলে ওর অধিকাংশই লক্ষ্যভ্রষ্ট হলো, গ্রীন একরকম সেঁটে গেল ওর গায়ের সাথে, ঝটপট আরও দুটো ঘুসি ঝাড়ল পেটে ওই আঘাতে দীর্ঘদেহীর দম বন্ধ হয়ে এল, পিছিয়ে গেল এলোমেলো পায়ে, গ্রীন ধাওয়া করল ওকে। লাফিয়ে উঠে ফ্লিন্টের নাকের বাঁশিতে আঘাত করল ও, তারপর সংক্ষিপ্ত অথচ শক্তিশালী কয়েকটা ঘুসি মারল চোয়াল লক্ষ্য করে, বুঝতে পারছে প্রতিপক্ষ কাহিল হয়ে পড়েছে। ফ্লিন্টের রক্তাক্ত মুখে আরও দুবার আঘাত হানল সে, তারপর ওকে ধরাশায়ী করতে হাত উঠিয়েছে এই সময় অকস্মাৎ কিছু একট: আছড়ে পড়ল ওর খুলিতে। ভয়ঙ্কর যন্ত্রণায় মাথা ঘুরে উঠল গ্রীনের, চোখের সামনে অন্ধকার হয়ে গেল সবকিছু।
জ্ঞান ফিরে পেয়ে হাচ বুঝতে পেরেছিল কী ঘটতে যাচ্ছে, ভারি ছড়িটা তুলে নেয়। সে, গ্রীনের মাথার পেছনে আঘাত করে ওটা দিয়ে।
আবার যখন চেতনা ফিরে পেল গ্রীন তখন অনুভব করল ওর সারা শরীরে অজস্রধারায় ঘুসিবৃষ্টি হচ্ছে। অনবরত ওকে ঘুসি মারছে ফ্লিন্ট, আর পেছন থেকে ওর দুই হাত মাটিতে চেপে ধরেছে হাচ। আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হয়ে গেল গ্রীনের দেহ, ভীষণ দুর্বল বোধ করল-সে। রক্ত বেরোচ্ছে নাক-মুখ থেকে, চিবুক গড়িয়ে নীচে নামছে। মুক্ত হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করল ও, কিন্তু মনে হলো সমস্ত শক্তি যেন ফুরিয়ে গেছে। ক্ষীণ, দুরাগতভাবে রীডকে বলতে শুনল ও, ঠিক আছে, ওতেই হবে। হাচ, জনকে ডেকে বল ওর ঘোড়া আনতে। আমার মনে হয় ঢের শিক্ষা হয়েছে ওর।
হ্যাঁ, আচ্ছা ধোলাই দিয়েছি, সদম্ভে বলল ফ্লিন্ট। আমার গায়ে হাত তোলার উচিত সাজা।
মাথা ঝিমঝিম করছিল গ্রীনের, ঝাঁকিয়ে অসাড় ভাবটা দূর করল সে, চোখ মেলে দেখল ফ্রিন্টের রক্তাক্ত মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠেছে। ভার্জিল রীডের দিকে তাকাল ও, তারপর মুহূর্তের জন্য আবার নিস্তেজ হয়ে পড়ল। শুনতে পেল রীড বলছে, এক্ষুণি ভাগ, গ্রীন। ওই ঘোড়ায় উঠে আর থামবে না। তোমার চেহারা দেখতে চাই না আমরা।
বাইরে থেকে হাক দিল হাচ, মাতালের মত টলতে টলতে গ্রীন এগোল দরজা অভিমুখে। রোদে চোখ ধাধিয়ে গেল ওর। তারপর হাচ ওর ঘোড়াটা ধরে রয়েছে দেখে সেদিকে এগোল। এক হাতে স্যাডহঁন এবং অন্যটা দিয়ে কেশর ধরে পা রাখল রেকাবে দুবার ছিলে গেল ওটা, দ্বিতীয়বার স্রেফ মাথা ঘুরে উঠতে শূন্যে ঝুলে রইল ও। তারপর অতিকষ্টে চড়ে বসল স্যান্ডলে, লাগাম গুছিয়ে নিয়ে রওনা হলো ধীরে ধীরে।