শেরিফ কার্টারের সই করা ওয়ারেন্ট আছে গ্রীনের কাছে। এখানে আসার পথে পরশু বেলুরাইড কোর্টহাউসে থেমে নয়ে এসেছে। কাজেই তোমার বাসায় এসে বেআইনি কিছুই করিনি আমরা।
তাচ্ছিল্যের সঙ্গে সিঁড়ির পাশে থুতু ফেলল হালাম। হাহ, ওয়ারেন্ট, বলল। ওসব কাগজকে এক কানাকড়িও দাম দিই না আমি। এখন তোমরা ভাগ, আমার অনেক কাজ পড়ে আছে।
অ্যাংকর মালিক ঘুরে বাসায় ঢুকতে যাবে এমন সময় শান্ত গলায় গ্রীন জিজ্ঞেস করল, কাল রাতে ক্যানাডা কী বলতে এসেছিল এখানে?
ধীরে-সুস্থে পেছন ফিরল হালাম, চেহারা নির্লিপ্ত, কিন্তু হার্ভে স্টেজের চোখের পাতা বিস্ময়ে নড়ে গেল সামান্য। হালাম বলল, ওই নামে একজন লোককেই চিনি আমি, অনেক কাল আগে কাজ করত আমার এখানে। খুব বেশি কথা বলত, আমার সহ্য হয়নি, পাওনা গুণ্ডা মিটিয়ে বিদায় করে দিয়েছি।
গ্রীনের উদ্দেশে আরেকবার চ্যালেঞ্জের দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বাসার ভেতর ঢুকে গেল সে। হার্ভে স্টেজ অনুসরণ করল অসহায় ভঙ্গিতে কাঁধ ঝাঁকাল মক, তারপর দুজনেই স্যাড়লে চেপে মন্থর গতিতে বেরিয়ে গেল উঠন থেকে। মক বলল, অযথা সময় নষ্ট। তবে তোমার অবস্থানটা অন্তত জানতে পেলে তুমি।
ইচ্ছা করলে কেয়ামত অবধি ছেলেটাকে লুকিয়ে রাখতে পারে ও, আপনমনে বলল-গ্রীন। অথচ কাজটা আমি তাড়াতাড়ি সারতে চাই। পরের চালটা মনে হয় আমাকেই দিতে হবে
মানে?
শোরগোল তোলা, সংক্ষেপে জবাব দিল গ্রীন।
কীভাবে?
প্রথমত, রটিয়ে দেব কার্ল হালামকে আইন খুঁজছে। এ ব্যাপারে তুমি সাহায্য করতে পারবে আমাকে, শহরে। আমি সেজে যাচ্ছি, তোমার সেই প্রাক্তন মাইনিং ক্যাম্পট ঘুরে-ফিরে দেখব একটু। ঘোট পাকাবার জন্য এটাও একটা ভাল জায়গা।
শঙ্কার ছায়া ফুটল মকের চেহারায়, মাথা নাড়াল এপাশ-ওপাশ। সাবধান, চোখ কান খোলা রাখবে ওখানে গিয়ে! তোমাকে দেখলেই মনে হয় পুলিসের লোক, ওখানে এমন অনেক লোক আছে যারা পুলিস দেখামাত্র গুলি করতে দ্বিধা করবে না গ্রীনের দিকে তাকাল ও, বিরস সুরে যোগ করল, অবসর নেয়ার জন্য অন্তত আরও কিছুদিন বাঁচতে চাও তুমি কি চাও না? টাওসের ওই কাগজের কথা সত্যি হলে, এটাই তোমার শেষ অ্যাসাইনমেন্ট।
আমি বলেছি এই কাজটা সেরে অবসর নেয়ার ইচ্ছে আছে।
জাহান্নামে যাও, তিক্তকণ্ঠে বলল মক। তোমার চেয়ে বেশিদিন হলো ব্যাজ ঝোলাচ্ছি আমি, পশ্চিমে বহু জায়গায় মার্শালের দায়িত্ব পালন করেছি। ছবছর আগে একবার সিদ্ধান্ত নিলাম অনেক হয়েছে, আর না। বেলুরাইডে লিভারি স্ট্যাবল খুললাম একটা। মাস দুই যেতে না যেতেই বুঝলাম ব্যবসা হরে না আমার দ্বারা। তাই অকটিওতে এই কাজের প্রস্তাবটা যখন এল, লুফে নিলাম। ঠাণ্ডা মরুশহর, দাঙ্গা ফ্যাসাদ নেই বললেই হয়, কিন্তু তারাটা ঝোলাতে পেরে আমি খুশি। বিয়ে-থা করিনি, তুমি?
না।
স্বাভাবিক। আমাদের মত লোকেরা বাঁধা পড়ে না কোথাও। আমরা হয় গুলি খেয়ে মরি, নয়তো এত বুড়ো হয়ে যাই যে কিছু করার শক্তি থাকে না তখন, দম নিয়ে খেই ধরল, মক, এই কাজ শেষ হবার পর অবসর নিচ্ছ না তুমি। এখন যা-ই ভাব না কেন; অবসর তুমি নিচ্ছ না। পাগল হয়ে যাবে তা হলে।
অবসর নেব, সংক্ষেপে জবাব দিল গ্রীন, বিরক্ত বোধ করছে কারণ ভবিষ্যৎ সম্পর্কে, কীভাবে ওই দিনগুলো কাটাবে সে ব্যাপারে ওর নিজের মনেই যথেষ্ট সংশয় আছে। অবসর নেব আমি, জেদের সুরে পুনরাবৃত্তি করল ও। এবার বল, সেজে যাবার পথ কোনটা?
০৫.
দিগন্তে সাবেক মাইনিং ক্যাম্পের বিরাট দালানটার আশপাশে ছোট ছোট ঝুপড়িগুলো যখন প্রথম দেখতে পেল গ্রীন, চোখ ধাঁধানো রোদে ওর মনে হলো মরুভূমির হলুদ তাপ-সমুদ্রে প্রাচীন সেজ শহরটা বুঝি ঝকমক করছে। ভাঙাচোরা মলিন ঝুপড়িগুলোর দিকে এগিয়ে গেল ও, লক্ষ করল মূল দালানের সামনে হিট রেইলে কোন ঘোড়া বাঁধা নেই। আশপাশে কোথাও বিন্দুমাত্র প্রাণচাঞ্চল্যের আভাস পেল না সে।
কোণের গোলাঘরটার পেছনের দেয়াল ভাঙা, রোদ বৃষ্টিতে দুপাশের কাঠের দেয়ালে পচন ধরেছে। আস্তাবলের অবস্থাও শোচনীয়। একধারে পানির গামলা রাখা একটা, শুকিয়ে খটখট করছে হাড়ের মত। গ্রীন যখন ভেতরে ঢুকে মাটিতে নামল বোটকা গন্ধে বমির ভাব হলো ওর।
ঝাপসা চোখের কৃশকায় এক লোক পেছন থেকে এগিয়ে আসতে গ্রীন তার ঘোড়ার লাগামটা ধরিয়ে দিল ওর হাতে, পানি আর কিছু শস্যদানা দিতে বলল ওকে। তারপর জিজ্ঞেস করল, ভার্জিল রীডকে কোথায় পাব?
স্যালুনে, জানাল অসল্যার, অনাবশ্যক ব্যগ্রতা প্রকাশ পেল কণ্ঠে।
গ্রীন ঘুরে ওপাশের কাঠের দোতলা বাড়িটার দিকে তাকাল। আড়ষ্ট হয়েছিল পা দুটো, বার কয়েক ঝাড়া দিয়ে স্বাভাবিক করল রক্ত চলাচল জিরিয়ে নিচ্ছে কারণ ও জানে না ওখানে কেমন অভ্যর্থনা অপেক্ষা করছে ওর জন্য। অবশেষে একসময় রাস্তা পেলোতে শুরু করল গ্রীন, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওপর-নীচ জরিপ করছে বাড়িটার। দোতলার একটা জানালার ধারে একজনকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হলো সে, ভেবে পেল না কোন্ দুঃখে কিছু কিছু মানুষ এরকম শ্রীহীন জায়গায় তাদের জীবন কাটাতে আসে। ভাবলেশহীন মুখে লোকটা ঝুঁকে ওর দিকে তাকাতে গ্রীন লক্ষ্য করল ওর চোয়ালের হাড় দুটো একটু বেশিমাত্রায় চওড়া, চামড়া ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে। এক কানের লতি চুলকাল লোকটা, বিদ্বেষের হাসি হাসল, সরে গেল আড়ালে।