সম্ভবত আদপেই ওখানে যায়নি। পাছে ওর অনুপস্থিতি ধরা পড়ে যায় আমাদের কাছে, তাই ধুলে দেয়ার জন্য মিথ্যে কথা বলেছিল টেরিলকে।
জানি না, তবে তোমার আন্দাজই মনে হয় ঠিক, রুক্ষ সুরে বলল মার্শাল। গ্রীনের দিকে তাকাল সে। আমি শুধু এটুকু বলতে পারি, চারজন ছেলে মাতাল হয়ে একটা অন্যায় করেছিল। দুজন তাদের জীবন দিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করেছে। এবং আরও দুজন লোক অকারণে মারা গেছে এতে। আমি হলে অন্য ছেলেটাকে ছেড়ে দিয়ে এখানেই ইতি করতাম মামলার।
সেটা সম্ভব না, শান্তু কণ্ঠে জবাব দিল গ্রীন।
জানি, ক্লান্ত সুরে বলল মক। তোমার কথাই ঠিক ধরে নিলাম, কাল রাতে কারও সাথে দেখা করেছিল ব্যানাডা, এবং বেশি কথা বলতে গিয়ে খুন হয়েছে। কে হতে পারে লোকটা আমরা বোধহয় জানি, তাই না?
তার মানে তুমি বলছ ও অ্যাংকরে গিয়েছিল খবর বেচতে।
কিন্তু ওরা ওকে খুন করবে কেন?
কাষ্ঠ হাসি হাসল গ্রীন। ক্যানাডাকে চেন তুমি, বেঈমানি করবে না তোমার সাথে এ বিশ্বাস রাখতে পারতে ওর ওপর?
না।
পেয়ে গেলে তোমার উত্তর,বলল গ্রীন। চল, দেরি হয়ে গেল অনেক।
.
সকালের কড়া রোদে শহর ছাড়িয়ে পাহাড়ের রাস্তা ধরল ওরা; গ্রীন অনুভব করছে সূর্যের তাপ শার্ট ভেদ করে ওর পিঠ পুড়িয়ে দিচ্ছে, ঘাম গড়াচ্ছে বগল থেকে। জোরকদমে সমতল প্রান্তর পেরিয়ে এল ওরা, তারপর ঘাসঝোঁপ, পাইন আর জুনিপার বনের ভেতর দিয়ে রাস্তা ওপরে উঠে যেতে ঘোড়া হাঁটিয়ে এগোল।
দুরারোহ একটা খাড়াইয়ের মাথায় উঠে ঘোড়া দুটোকে বিশ্রাম দেয়ার জন্য একটুক্ষণ থামল ওরা। পেছনে উত্তপ্ত ধু-ধু মরুভূমির দিকে তাকাতে গ্রীনের চোখ ঝলসে গেল। দূরে ডাকিনীর মত, উদ্বাহু নৃত্য করছে কমলা-হলুদ তাপতরঙ্গ। গ্রীনের মনে হলো ভিন্ন এক জগতে এসে পড়েছে সে।
আঙুল তুলে বিপরীত দিকে ওর দৃষ্টি আকর্ষণ করল মক, উত্তর থেকে দক্ষিণে সরে গেল ওর হাত। ওদিকে যতদূর দেখতে পাচ্ছ, পুরোটাই অ্যাংকর রেঞ্জ। এখানে কোন গরুবাছুর দেখতে পাবে না। ওরা এখন পাহাড়ি তৃণভূমিতে রয়েছে, জঙ্গলের কাছাকাছি। অ্যাংকরের লোকজনও ওখানেই থাকবে। কার্ল ওদের সাথে থাকলে কী করব বুঝতে পারছি না আমি। প্রায় তিন দিনের পথ। এত লম্বা সময় বাইরে থাকা সম্ভব না আমার পক্ষে।
বাথানে কেউ না থাকতে পারে এখন। গেলেই বোঝা যাবে। আর কদ্দূর?
মাইলখানেক। এরপর যে পাহাড়টা পড়বে, তার ওপাশে।
অ্যাংকরের বাড়িঘর সবে দৃষ্টিসীমায় এসেছে এই সময় ওরা দেখতে পেল গোলাঘর থেকে ক্ষুদ্রকায় একটা মানুষ বেরিয়ে এসে হনহন করে র্যাঞ্চ হাউসে ঢুকে গেল। ওটা হার্ভে স্টেজ, হালামের লাঠি: হালাম আর ডার্লিং যখন প্রথম আসে। এখানে স্টেজও ছিল ওদের সাথে। আশ্চর্য, কাউহ্যান্ডদের সঙ্গে আজ ও কাজে যায়নি। কেন? গ্রীনের দিকে অস্বস্তিভরে তাকাল মার্শাল। জঙ্গলে সশস্ত্র ডাকাত খুঁজতে হলেও এর চেয়ে বেশি খুশি হতাম আমি।
কাজটা সারতেই হবে
ওরা যখন বাথানে পৌঁছে হিচ রেইলের সামনে নামল, দরজা খুলে ভেতর থেকে বেরিয়ে এল ফ্রেড হালাম, পেছনে তার ফোরম্যান। ধাপের মাথায় থামল হালাম, চকিতে গ্রীনকে একনজর দেখে নিয়ে মকের উদ্দেশে বলল, আমাকে তুমি অবাক, করলে মার্শাল। তোমার এলাক: ছেড়ে চলে এসেছ দেখছি?
তাই, বলল মক। টুপি খুলে জামার আস্তিনে কপালের ঘাম মুছে আবার টুটি বসিয়ে দিল যথাস্থানে। কেমন আছ, ফ্রেড, হার্ভে? গ্রীনের পরিচয় দিতে ঘুরল সে। একটা দরকারে এসেছি আমরা; অপ্রীতিকর, কিন্তু গ্রীন যা বলেছে, কমজটা সারতেই হবে।
তোমার কথা কিছু বুঝতে পারছি না আমি, রূঢ় গলায় বলল হালাম, গ্রীনের দিকে তাকাল এবার। স্বল্প দূরত্বে কঠিন একজোড়া চোখের মুখোমুখি হলো গ্রীন, জীবনে এরকম নিষ্ঠুর, নির্দয় চেহারা কখনও দেখেনি সে। ইস্পাতের মত কঠিন আর, হিমশীতল দুটো চোখ, দৃঢ়বদ্ধ ভাবলেশহীন মুখ। এককথায় দুর্বোধ্য চেহারা, ঝানু জুয়াড়ি কিংবা ভয়ঙ্কর স্বার্থপর মানুষের যেমন থাকে। কৃপণ মানুষ, যে সারাক্ষণ যকের, মত আগলে রাখে তার ধন, পাছে একটু বেখেয়াল হলেই কেউ কেড়ে নিয়ে যায়। কিছুই না, আবারও কথাটা বল হালাম। যাই হোক গ্রীন যখন বলছে সারতে হবে, তখন সেরেই ফেল।
মানে- বলল মক, তারপর সরাসরি মূল প্রসঙ্গে চলে এল। অচঞ্চল দৃষ্টিতে হালামের দিকে তাকিয়ে রইল গ্রীন, প্রতিক্রিয়া দেখার আশায় নজর রাখছে। হার্ভে স্টেজ তার মনিবের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, ওর রুক্ষ দৃষ্টি গ্রীনের ওপর স্থির। ভাবান্তর, বলতে এটুকুই, মার্শালের কথা শুনতে শুনতে ক্রমশ শক্ত হয়ে উঠল, হালামের মুখ, এবং সে শেষ করার আগেই, তাকে মাঝপথে থামিয়ে দিল অ্যাংকর মালিক।
কী সব আবোলতাবোল বলছ তুমি! কার্ল ওই ভিখারিগুলোর সঙ্গে মদ খেয়েছে। মানলাম খেয়েছে। ওদেরকে নিয়েই শহর ছাড়ে ও, কিন্তু সেটা ভেড়ার পালে একটু খোঁচা দেয়ার জন্য। ওই ডাকাতি যখন হয় ও তখন এখানে-বাসায়। এখন ওই, ডিউক, রিপ হতভাগাটা উল্টোপাল্টা কিছু বললেই তো আর সত্যি হয়ে যাচ্ছে না সেটা।
গম্ভীর গলায় মক বলল, কার্লকেই আমরা সেটা জিজ্ঞেস করব। ও কোথায়?
আমি আমার উকিলের সাথে কথা না বলা পর্যন্ত ওর দেখা পাবে না তোমরা, এটুকু বলতে পারি! আরেকটা কথা, এখানে আসার কোন অধিকার নেই তোমার। গ্রীনের উদ্দেশে তীব্র দৃষ্টি হানল হালাম, ওরও না।