মেক্সটাউনে বোধহয় এখন আর কেউ পছন্দ করবে না আমাকে, বলল ও। কিন্তু এরা কি জানে না ক্যানাডা খুন করেছে ছেলেটাকে?
তুমি বা ক্যানাডা, কথা সেই একই। মেয়েটাকে আমি বলেছি তার ভাই একটা স্টেজ ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ছিল, তবে যেহেতু সে মারা গেছে আমাদের আর কোন বিরোধ নেই ওদের সাথে। মেয়েটা বুঝেছে আমার কথা।
হুঁ।
নীরবে নাস্তা সেরে বেরোবার উদৃযোগ করছে ওরা এই সময় মাঝবয়সী এক লোক ঢুকল রান্নাঘরে। বুকের নীচে দশাসই একটা উঁড়ি। পরনে গাঢ় রঙে ঢলঢলে প্যান্ট আর সস্তা কোট, মাথায় চ্যাপ্টা শক্ত শোলার টুপি মর্নিং, মার্শাল, বলল লোকটা। শুনলাম ঝামেলায় আছ তুমি। গার্সিয়াদের ছেলেটা মারা গেছে গুলিতে, ডিউক রিপ জেলে রয়েছে। ব্যাপার কী? আমি এ পর্যন্ত উড়ো-উড়ো কিছু খবর শুনেছি।
আপাতত ওতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে তোমাকে, বলল মক। গ্রীনের দিকে তাকাল সে। ইনি ড্রাম ডার্লিং। আর, ড্রাম, এ হচ্ছে জেমস গ্রীন।
দ্রুত হাত বাড়াল ডার্লিং, জোরে চাপ দিল করমর্দনের সময়ে তীক্ষ্ণ, চতুর দৃষ্টিতে মাপল গ্রীনকে। আরেকজন আইনের লোক? স্মিত হেসে জিজ্ঞেস করল সে। ব্যাপার–
গলা খাঁকারি দিল মক। দুঃখিত, ড্রাম, ক্ষমা করতে হবে। আমাদের কাজ আছে বাইরে।
দূরে কোথাও?
বলতে পার, জবাব দিয়ে পা বাড়াল মক। ঈষৎ মাথা হেলিয়ে ডার্লিয়ের কাছ থেকে বিদায় নিল গ্রীন, মার্শালকে অনুসরণ করল। শহরবাসীরা জেগে ওঠেনি এখনও, জনশূন্য রাস্তা ধরে টম টেরিলের আস্তাবলের দিকে এগোল ওরা। আগের দিন গ্রীন আর ক্যানভা ওখানেই রেখে এসেছে ওদের ঘোড়া।
কোণের জেনারেল স্টোরটা চোখে পড়ল গ্রীনের। বিরাট সাইনবোর্ড লেখা ডার্লিং-স্ মার্কেন্টাইল। একই ডার্লিং?
একই। হোটেল আর একটা স্যালুনের মালিক। এখানকার ফ্রেটিং ব্যবসাটাও ওর, বেলুরাইডে অফিস। এসময় ফ্রেড, হালামের পর্টিনার ছিল। একপাল গাছুরসহ এখানে আসে ওরা, তখনও শহর গড়ে ওঠেনি। বাড়ি বলতে কেবলমাত্র টেরিলের আস্তাবলটাই ছিল, স্টেজ ডিপো হিসেবে ব্যবহৃত হত ওটা। তবে ডার্লিং বেশিদিন থাকেনি গরু ব্যবসায় প্রথমে স্যালুন আর দোকানটা খোলে। তারপর যত লোক এসেছে ওরও উন্নতি হয়েছে। সে আমলের কথা টম টেরিল ভাল বলতে পারবে তোমাকে। ও এখানকার সবচেয়ে পুরানো বাসিন্দা স্টেজ ডিগোটা চালাত।
অনেকটা জায়গা জুড়ে লিভারি বার্ন। চুনসুরকির দেয়ালে ঘেরী। কাঠের ফটক পেরিয়ে বিরাট ওয়াগন ইয়ার্ডে প্রবেশ করল ওরা। আস্তাবল আর একার ওয়াগনের পাশ দিয়ে এগোবার সময় ঘোড়ার মলমূত্র, আর জিনের, চামড়ার কটু গন্ধের ঝাঁপটা লাগল নাকে। ওভরজল গায়ে লম্বা-পাতলা স্বাস্থ্যের এক বুড়ো আস্তাবল থেকে বেরিয়ে উঁকি দিল, তোমাদের ঘোড়া লাগবে? লোকটা টম টেরিল।
লাগবে, জানাল মক।
হাতছানি দিয়ে দুজনকে ডাকল টেরিল। ব্যবস্থা করছি, বলে ফের ভেতরে ঢুকে গেল সে।
একটা চুনসুরকির চালাঘরে দ্বীনকে পথ দেখিয়ে নিয়ে গেল মক। দরজা খুলে সরে দাঁড়াল একপাশে। দেখে এস একবার, গম্ভীর সুরে বলল ও। গ্রীন পা রাখল ভেতরে।
ওটা একটা ছুতোরশালা। ওঅর্কবেঞ্চ আর যন্ত্রপাতি রয়েছে একদিকে। আরেক দেয়ালের পাশে শোভা পাচ্ছে নড়বড়ে একটা টেবিল, তার ওপর একটা লাশ শোয়ানো; উধ্বংশ রঙ আর কালিঝুলি মাখা একফালি ক্যানভাস দিয়ে ঢাকা। ক্যানভাসটা তুলে গ্রীন যখন লাইল ক্যানাডাকে আবিষ্কার করল, তখন কেন যেন মোটেও অবাক হলো না ও।
আমার শহরে খুন হতেই বোধহয় অ্যদ্র ছুটে এসেছিল টাওস থেকে, ঝাঁঝের সুরে বলল মার্শাল। আমার এসব ভাল লাগছে না, গ্রীন। আগে বলিনি, কিন্তু কাল তোমরা যখন গার্সিয়ার লাশ নিয়ে এলে তখনই ব্যাপারটা পছন্দ হয়নি আমার। তবে এরকম কিছু ঘটতে পারে আশা করিনি।
ঝট করে ওর পানে তাকাল গ্রীন। পুলিসের লোক হিসেবে এটা তোমার সমস্যা, বলল। গুলি?
ছুরি। আজ খুব ভোরে বাইরের দেয়ালের পাশে ওকে আবিষ্কার করেছে টম। কিন্তু কাল সন্ধ্যায় যে ঘোড়াটা ভাড়া করেছিল ও, সেটা দেখতে পায়নি।
কী করেছিল?
এখানে এসে টমকে বলে ওর সোরেলটা ক্লান্ত তাই একটা ঘোড়া দরকার। বলেছিল সেজে এক লোকের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে। অথচ, নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছ তুমি, মাঝরাত থেকে মরে পড়ে আছে, ঘোড়াটা উধাও হয়েছে।
চালাঘরের ভেতরটা গুমোট, পচা আলকাতরার গন্ধ আসছে। হাড্ডিসার দাড়িভর্তি মুখখানার দিকে চোখ নামাল গ্রীন। বলল, সম্ভবত এই ডাকাতির ব্যাপারে আলাপ করতেই কালরাতে গিয়েছিল কারও কাছে। লোকটা যে-ই হোক, ওর ঘড়ি। বন্ধ করে দিয়েছে। মুখটা ঢেকে দিয়ে ক্ষুব্ধ মার্শালের উদ্দেশে ঘুরল ও। সেজের কথা বলছিলে তুমি, কোথায় জায়গাটা?
এখান থেকে প্রায় আঠারো মাইল দক্ষিণে, মরুভূমিতে। মাইনিং ক্যাম্প ছিল, একসময়। আট-নয় বছর আগে সোনা পাওয়া যায়। যা হয় এসব ক্ষেত্রে, রাতারাতি একটা শহর গজিয়ে ওঠে ওখানে। এক বছর বাদেই সব শেষ। এখন একটা স্যালুন, মুদিখানা আর একটা আস্তাবল আছে। ভাঙাচোরা ঝুপড়ি আছে কয়েকটা। সবগুলোরই মালিক ভার্জিল রীড নামে এক লোক। এদিকে এখন আর স্টেজ যায় না। গুজব, অর্থের বিনিময়ে ইচ্ছে করলে যে কেউ গা ঢাকা দিয়ে থাকতে পারে ওখানে। নিশ্চয় বুঝতে পারছ কেমন হবে জায়গাটা, পশ্চিমে এরকম প্রচুর আছে। ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল মক, ঘুরে দাঁড়াল। ক্যানাডার কী দরকার ওখানে আমার মগজে ঢুকছে না।