উঠল সে, অসমাপ্ত সিগারটা ছুঁড়ে ফেলে দিল দরজার বাইরে। তারপর বাইরে যাবার পোশাক পরে ফু দিয়ে অফিসের বাতি নিভিয়ে কোরালে গেল। ঘোড়ায় চড়ে শেষবারের মত নজর বোলাল বাথানের অন্ধকার দালানকোঠার দিকে রওনা হলো!
.
হার্ভে প্রত্যাবর্তনের আগেই ফ্রেড হালাম আবার ফিরে এল তার অফিসে। কয়েক মিনিট পর গলা পাওয়া গেল ফোরম্যানের, ঘোড়া দুটো কোরালে রেখে এসে ক্লান্ত শরীরে অফিস ঘরে ঢুকল সে। ধপ করে চেয়ারে বসে ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল, খতম।
কৌতুকের দৃষ্টিতে ফোরম্যানকে জরিপ করল হালাম। অসুস্থ দেখাচ্ছে তোমাকে বলল সে। কী ব্যাপার? আজকাল মনে হয় খুন করে আর মজা পাও না তুমি।
মজা নিকুচি করি। আমি ভাবছি আমার গর্দানের কথা মুখ তুলল হার্ভে, চোখ। সংকুচিত, ঝটপট বলল, ছেলেটাকে খুঁজে বের করা দরকার-আইনের হাতে পড়লেই.. সর্বনাশ।
তুমি যা ভাবছ সেরকম কিছু জানে না ও।
এটা কী বলছ তুমি? ও জানে লিউ এসেছিল এখানে, কী ঘটেছে তার কপালে। খামোকা আমাকে ভুল বোঝাবার চেষ্টা কর না। তুমি, আমি আর ডার্লিং গলা অবধি ডুবে আছি এতে, জানাজানি হলেই এখনও ফাঁসি হয়ে যেতে পারে আমাদের। সুতরাং যেভাবেই হোক খুঁজে বের করতে হবে ছেলেটাকে!
তারপর?
দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেব। আবার কী?
শীতল অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিতে হালাম তার ফোরম্যানকে জরিপ করল, যেন অনেকদিন ওকে দেখেনি সে। বুড়ো হয়ে যাচ্ছে, সখেদে ভাবল। এতদিনেও ভুলতে পারেনি ব্যাপারটা, এখন ছেলেটাকে নিয়ে সমস্যা দেখা দিতেই ওটাও ডালপালা মেলেছে।
তুমি একটু বেশি চিন্তা কর, বলল অ্যাংকর মালিক। ডার্লিং ভয় পায় না, ভুলেও মনে-টা পর্যন্ত করে না। ওর শুধু চিন্তা মরার আগে কত টাকা কামাতে পারবে। লিউ শহরে এসে হাজির হওয়ার আগে পর্যন্ত কোনওদিন আলাপও করেনি।
ছেলেটার কথা ভুলে যেও না। যেরকম মাতাল হয়েছিল, বন্ধুদের কী বলেছে। তার নেই ঠিক।
সবাই মারা গেছে, রিপ ছাড়া-এবং সেও হাজতে।
হার্ভে ঢোক গিলল। কদ্দিন্তের জন্য?
যদ্দিন ওকে ওরা টাওসের স্টেজে তুলে না দিচ্ছে, বলল হালাম। তারপর রসকষহীন গলায় যোগ করল, কার্লের ব্যাপারে একমাত্র ওর কথার ওপরই নির্ভর করতে হবে ওদের। আর গ্রীনকে ও যা বলেছে সেগুলোই যদি আবার না বলে কোর্টে গিয়ে মামলা টিকবে না।
একটা হাঁদাও বোঝে এটা, তিক্ত সুরে বলল হার্ভে। এরপরেও ছেলেটা থাকছে, সবকিছুই ও জানে। জেমস গ্রীনের কথা ভাব। ক্যানাড়া কী বলেছে মনে নেই-ওকে বোকা বানানো যাবে না।
গ্রীনকে নিয়ে চিন্তা কর না। ওর ব্যবস্থা আমি করছি।
কী ব্যবস্থা?
আপাতত তুমি ভুলে থাক ওটা।
মুখ বিকৃত করল হার্ভে। উঠে দাঁড়াল, হতাশ ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকিয়ে দুপ দুপ করে পা ফেলে এগোল দরজার দিকে।
তুমি ভুলে গেছ কিছু একটা, পেছন থেকে বলল হালাম।
আবার ভেংচি কাটল হার্ভে। ঘুরে দাঁড়িয়ে ওর রঙজ্বলা জিন্সের পকেট থেকে টাকার তোড়া বের করল একটা, ছুঁড়ে দিল ডেস্কের ওপর। হালামের উদ্দেশে একরার তাকাল সে, পরস্পর মিলিত হলো ওদের চোখ, তারপর হার্ভে ভাবলেশহীন চেহারায় কাঁধ ঝাঁকিয়ে দরজা বন্ধ না করেই বেরিয়ে গেল ঘর ছেড়ে।
খোলা দরজার দিকে তাকিয়ে স্থাণুর মত চুপ করে বসে রইল হালাম, ভাবছে এর একটা বিশেষ অর্থ রয়েছে। বিদ্রোহের পূর্বাভাস। হার্ভে কি তলে তলে নিজস্ব কোন মতলব আঁটছে? এতগুলো বছর একসাথে কাটাবার পর কেমন যেন অসম্ভব মনে হয় ব্যাপারটা, বিশেষত্ব চিরকাল যেখানে সাহায্যের জন্য ওর ওপর নির্ভর করে এসেছে। হার্ভে। অসম্ভব। হার্ভে তার বিরুদ্ধাচরণ করবে এটা অবা বোধহয় অন্যায় হচ্ছে, মনে মনে বলল হালাম। তবু, ওর সন্দেহ ঘুচল না। মানুষ চিনতে কখনও ভুল হয় না তার বিশেষ করে ওইসব লোক যারা শত্রুতে পরিণত হতে পারে।
০৪.
পোশাক পালটে হোটেল কামরা থেকে বেরোবে গ্রীন এমন সময় টোকা পড়ল দরজায়। ঘর আধো-অন্ধকার, বাইরে সবে আলো ফুটতে শুরু করেছে। কপাট খুলল গ্রীন, দেখল মার্শাল মক দাঁড়িয়ে, মুখ থমথমে।
বেরোবার জন্য তৈরি? বলল মার্শাল। ভাল। নাস্তা চুলোয়, রান্নাঘরে বসেই খেয়ে নেব আমরা। তারপর একটা জিনিস দেখাব তোমাকে।
টেবিলের ওপর থেকে গ্রীন ওর টুপি তুলে নিল। দাড়ি কামিয়ে গোসল করেছে ও, ফলে ঝরঝরে বোধ করছে। কী জিনিস? করিডরে বেরিয়ে জিজ্ঞেস করল ও।
দেখতেই পাবে, সংক্ষেপে জবাব দিল মক। নীচে নামল ওরা, লবি হয়ে গ্রীনকে রান্নাঘরে নিয়ে গেল মার্শাল। কেরোসিনের চুলের সামনে দাঁড়িয়ে হৃষ্টপুষ্ট গড়নের এক মেক্সিকান মহিলা তাওয়ায় ডিম ভাঁজছিল।ঝট করেগ্রীনের আপাদমস্তক মাপল সে, কালো চোখের তারায় ফুটে উঠল ঘৃণা আর আক্রোশ। ব্যাপার কী? ভাবল গ্রীন, তারপর ধারণা করল নিশ্চয় তরুণ গার্সিয়ার মৃত্যুর খবর জেনেছে মহিলা; এবং সে ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে তাকেই দায়ী করছে এর জন্য।
পেছন দিকের একটা জানালার পাশে পাইন কাঠের একটা টেবিল দখল করল ওরা। গ্রীন বিড়বিড় করে বলল, কার্লোসের মৃত্যুর খবর তা হলে জেনে গেছে সবাই।
ওর বোন পাদ্রির কাছে লাশ দাবি করে ওর, তারপর আমি ওর সাথে কথা বলেছি, জানাল মক। প্লেটে করে মহিলা ওদের জন্য বেকন আর ডিমভাজা নিয়ে আসতে আর কথা বাড়াল না সে। তাচ্ছিল্যের সঙ্গে ধাক্কা মেরে গ্রীনের প্লেটটা ঠেলে এগিয়ে দিল মহিলা, বিরক্তিসূচক একটা শব্দ করে বিদায় নিল। হাত বাড়িয়ে কাঁটাচামচ তুলে নিল গ্রীন।