কোন একদিন ওর কারণে মারা পড়বে কেউ।
সেক্ষেত্রে টমই মারা পড়বে।
সিধে হলো কার্ল। সূর্য ওঠার আগেই চলে আসব আমি। কমবয়েসী গরু রাউন্ড-আপ করব দুজনে মিলে। কুকুরগুলোকে নিয়ে আসব সঙ্গে।
গরু দাবড়ানোয় দক্ষ কয়েকটা কুকুর আছে ওর..ব্রাশ-পপিঙে বা ঝোঁপঝাড় তল্লাশির সময় একেকটা তিনজন কাউহ্যান্ডের সমান কাজ করতে সক্ষম।
ঘোড়ার কাছে গিয়ে স্যাডিলে চাপল, কার্ল ক্ৰকেট। সমীহ আর নীরব বিস্ময় নিয়ে ওকে স্যাড়লে চড়তে দেখলাম। এই দৃশ্যটা শতবার দেখেছি, কিন্তু কখনোই একঘেয়ে বা বিরক্তিকর লাগে না। এত অনায়াসে, নিপুণ দক্ষতার সঙ্গে স্যাডলে চড়ে ও, দেখে বিশ্বাসই হয় না। মানুষ হিসেবে কার্ল কর্মঠ, বিশ্বস্ত এবং দায়িত্বশীল; যে-কেউ আনন্দ পাবে ওর সঙ্গে কাজ করে। নির্দ্বিধায় বলতে পারি, সারা জীবনে ওর মত নির্ভরযোগ্য সহকর্মী পাইনি আমি।
করালের পাশ দিয়ে ঘুরপথে এগোল ও, যাতে ট্যাপ এডলেকে পাশ কাটিয়ে যেতে না হয়। কার্ল মোড় ঘুরতে মুখ তুলে সেদিকে তাকাল ট্যাপ।
ব্যাপারটা ট্যাপও ধরতে পেরেছে, কারণ সহজ পথ অর্থাৎ বাড়ির সামনে দিয়ে না গিয়ে বেশ খানিকটা ঘুরে করালের পাশ দিয়ে যাচ্ছে কার্ল ক্ৰকেট। স্থির দৃষ্টিতে তাকে যেতে দেখল ট্যাপ, দৃষ্টিপথে ইলেনের বাধা এড়ানোর জন্যে দু’পা পাশে সরে গেল।
বাড়ি থেকে খাবারের সুঘ্রাণ ভেসে আসছে। মিসেস অটম্যানের রান্না সত্যিই ভাল।
বাড়ির কাছাকাছি এসে দেখলাম ইলেন আর ট্যাপ কথা বলছে এখনও। ট্যাপের নিচু স্বরের কি,একটা কথায় সহাস্যে মাথা নাড়ল ইলেন। বুঝলাম স্বল্প সময়ের মধ্যেই ইলেনকে পটিয়ে ফেলেছে, ট্যাপ, ব্যাপারটা দৃষ্টিকটু এবং স্পর্শকাতর মনে হলো আমার কাছে। যত যাই হোক, ইলেনকে পছন্দ করি আমি, এবং সবাই জানে সেটা।
মুখ তুলে আমার দিকে তাকাল ট্যাপ, কিন্তু কথা বলল ইলেনের সঙ্গে। কি জানো, ইলেন, আমি ঠিক বিশ্বাসই করতে পারছি না আমাদের ছোট্ট ড্যান তাগড়া জোয়ান হয়ে গেছে। অথচ এই কদিন আগেও দুধের বাচ্চার মত আমার পিছু পিছু ঘুরে বেড়াত ও।
খিলখিল হাসিতে ভেঙে পড়ল ইলেন।
অনুভব করলাম নাকে-মুখে রক্ত উঠে এসেছে আমার। উঁহু, সব জায়গায় তোমার পিছু লেগে থাকতাম না আমি, ট্যাপ। মনে আছে, সেবার ব্রাজোসে তোমার পিছু পিছু যাইনি?
যেন চড় খেয়েছে, মুখটা বেদান হয়ে গেল ট্যাপের। কড়া কিছু বলতে চেয়েছিল, কিন্তু তার আগেই ওর আস্তিনে হাত রাখল ইলেন। তোমরা তো পুরানো বন্ধু…ভাইও বলা চলে। উঁহু, অযথা তর্ক করার দরকার নেই।
ঠিকই বলেছ, ইলেন, বলে পাশ কাটিয়ে বাড়িতে ঢুকে পড়লাম আমি।
দরজায় আমাকে দেখে চোখ তুলে তাকাল মিসেস অটম্যান, তারপর আমাকে ছাড়িয়ে গেল মহিলার দৃষ্টি-ইলেন আর ট্যাপকে দেখল। তোমার ভাই তো বেশ সুদর্শন, হালকা সুরে বললেও বলার ঢঙে মনে হলো এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বেশ গভীর।
পরের তিনদিন সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বেগার খাটলাম আমরা। ট্যাপ, কার্ল, রাস্টি এবং আমি ঝোঁপঝাড়ে ছড়িয়ে থাকা কমবয়েসী গরু রাউন্ড-আপ করলাম। এদিকে টম জেপসনের সঙ্গে কথা বলার জন্যে গেছেন বাবা। দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ওয়্যাগন মেরামত করল টিম অটম্যান।
ক্রীকের ধারে ঝোঁপঝাড় আর বুনো লতাপাতায় ঘেরা কিছু গুহা আছে। গুহার কারণেই জায়গাটার নাম কাউ-হাউস। গরু খেদানোর সময় দারুণ কাজে এল কুকুরগুলো। দশজন কাউহ্যান্ডের কাজ কমিয়ে দিয়েছে ওরা।
স্যান এন্টোনিয়োয় ছোটখাট একটা পাল নিয়ে গিয়েছিল জেফ মুর, বেন টিল্টন আর চার্লি হীখ। ফিরে এসে আমাদের সঙ্গে হাত লাগিয়েছে ওরা। বেশ দ্রুত এগিয়ে চলল রাউন্ড-আপের কাজ।
সুযোগ পেলেই পশ্চিমে যাওয়ার ট্রেইল সম্পর্কে ট্যাপকে জিজ্ঞেস করেছি আমি। ক্যান্সাস-মিসৌরি হয়ে ইলিনয়সের ড্রাইভে গিয়ে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। কিন্তু ওটা তুলনামূলক সহজ ট্রেইল।
কর্ন পেষা বেশ ঝক্কির কাজ। বিরক্তিকর এবং একঘেয়েও বটে। দুই যাতার একটা কর্নমিল আছে আমাদের। কর্ন থেকে ময়লা বানাতে হলে অন্তত দু’বার পিষতে হবে। কাজটা আয়াসসাধ্য বলে পুরুষদেরই করতে হলো।
ড্রাইভে যাত্রা করার আগে যতটা সম্ভব কর্ন পিষে ময়দা তৈরি করে নিতে চাই আমরা। কারণ যাত্রাপথে হয়তো কর্নমিল ব্যরহার করার সুযোগ হবে না। কর্ন পেষার পাশাপাশি মাংসের জার্কি তৈরির কাজও চলছে পুরোদমে। কারোই দম ফেলার সুযোগ নেই।
কেনা কাপড় পরার দিন ছিল না তখন। আমরাও ঘরে তৈরি সুতীর কিংবা বাকস্কিনের কাপড় পরতাম। যার যার কাপড় তার নিজেরই তৈরি করে নিতে হত। শার্টের আস্তিন বা ট্রাউজারের হাঁটুতে থাকত সরু ঝালর, পানি যাতে দ্রুত সরে যায়। পুবের বেশির ভাগ লোক মনে করে এসব ঝালর মূলত বাহারের জন্যে। আসলে মোটেই তা নয়।
ঘরে তৈরি সব কাপড়ই সুতী বা উলের। লেই বসিয়ে পরে হাতে বুনতে হয়, সুতার ক্ষেত্রে বীজও আলাদা করতে হয়। সবাই যার যার মোকাসিন বা বুট তৈরি করে নেয়, অস্ত্র বা যন্ত্রপাতি মেরামতের ক্ষেত্রেও তাই; কখনও কখনও একেবারে কাঁচামাল থেকে তৈরি করতে হয়।
কাউ-হাউসের কাছাকাছি ঝোঁপঝাড়ে ঘেরা জায়গাটার বাতাস গুমট। আঁকাবাঁকা ক্ৰীকের উঁচু তীরে গুহাগুলোর অবস্থান। ঝোঁপঝাড়ে লুকিয়ে থাকে, গরুগুলো। কাজটা কঠিন, ভাপসা গরমে অতিষ্ঠ হওয়ার দশ, আর অপরিসর জায়গা বলে দড়িও ব্যবহার করা যায় না।