ঝটিতি ঘোড়া ঘুরিয়ে দেখতে পেলাম দৃশ্যটা-হোনাস গান্টের মুখোমুখি হয়েছে ট্যাপ এডলে। ওদের সঙ্গে আছি আমি, হোনাস! ও আমার ভাই!
নরকে যাও তুমি! ট্যাপের বুকে নিশানা করল গান্ট। আমার মতই, ছোটার মধ্যে গুলি করল ট্যাপ।
স্যাডল থেকে খসে পড়ল গান্ট, ধুলোয় পড়ার পর পাক খেয়ে চিৎ হলো শরীর। একবার ওঠার চেষ্টা করল। কিন্তু নিথর হয়ে গেল দেহটা।
বাতাসে ধুলো উড়ছে, চক্কর খাচ্ছে। ধীরে ধীরে থিতিয়ে এল। সওয়ারহীন ঘোড়াগুলো এলোমেলো পা ফেলল, ঝুলন্ত স্টিরাপ ঝাঁকি খেল। তার শান্ত হয়ে মাথা তুলল ঘোড়াগুলো। ধুলোয় পড়ে আছে। কয়েকটা লাশ।
গার্ট ভূপতিত হয়েছে। যন্ত্রণাকাতর মুখে এক হাতে রক্তাক্ত বাহু চেপে ধরেছে কার্ল।
প্রতিপক্ষের চারজন শেষ। আচমকা ওদের ওপর লাফিয়ে পড়ার জন্যেই লড়াইয়ের সমীকরণ ওলট-পালট হয়ে গেছে, আমাদের পক্ষে চলে এসেছে। প্রয়োজন পড়া মাত্র, মুহূর্তের মধ্যে গুলি করতে অসুবিধে হয়নি আমার বন্ধুদের, নিশানা ঠিক করাই ছিল ওদের।
ঘোড়া ছুটিয়ে ওখানে পৌঁছল সৈন্যদের একটা দল। একজন পৌঁছে গেল কার্লের পাশে। দেখি! তোমার ক্ষতটা দেখতে দাও! আমি আর্মির সার্জন!
চারপাশে, পড়ে থাকা লাশগুলো দেখলাম। ফেলিপ জাপাটা মারা গেছে, অন্যদের মধ্যে কেবল একজন জীবিত। মৃতদের মধ্যে চার্লি হীথও আছে। ক্ষণিকের এই লড়াইয়ে ওকে খেয়াল করিনি, কিংবা জানিও না কার বুলেটে মারা পড়েছে সে। কিন্তু কুৎসিত মৃত্যু বরণ করতে হয়েছে তাকে।
ক্ষত দেখে বোঝা গেল ভারী ক্যালিবারের বুলেট ওটা, নিশ্চই পমেল বা অন্য কিছুতে আগে লেগেছিল, তারপর ছিটকে গিয়ে ঢুকেছে হীথের পেটে। ক্ষতটা রিকোশেটের। পেট ফুড়ে চলে গেছে সীসা, নাড়ি-ভুঁড়ি ছিন্নভিন্ন করে ফেলেছে। করুণ এবং বীভৎস মৃত্যু, জাতশত্রুরও এমন মৃত্যু কামনা করে না কেউ।
অফিসার চলে এসেছে। তার দিকে এগোলাম আমি। ক্যাপ্টেন, ওই লোকের নাম ফেলিপ জাপাটা, পড়ে থাকা বিশালদেহী কোমাঞ্চেরোকে দেখিয়ে বললাম। বহু বছর ধরে ইন্ডিয়ানদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করেছে ও। ওর জাতভাইরা আমার কথার সত্যতা প্রমাণ করবে।
আমি গরু কিনছি, মিস্টার, ব্যক্তিগত কোন কলহ বা সংঘাতে মাথাব্যথা নেই আমার। যাই হোক, জাপাটা সম্পর্কে শুনেছি, তবে জানতাম না এই লোকের সঙ্গেই ব্যবসা করছি। আমার দিকে ফিরল সে আমার নাম ডবসন! কেলি ডবসন। তোমার সঙ্গে পরিচিত হয়ে খুশি হলাম, স্যার দারুণ দেখিয়েছ তোমরা বিশেষ করে তুমি! জবাব নেই ওই কৌশলটার।
মাটি থেকে প্যাটার্সনটা তুলে আমার হাতে ধরিয়ে দিল কার্ল ক্রকেট। তুমি বরং ডাক্তারের কাছে যাও, ড্যান। রক্ত বেরোচ্ছে তোমার ক্ষত থেকে।
ঠিকই তো আছি। আমি স্রেফ… নিচে তাকাতে সেডলের স্কার্টে রক্ত দেখতে পেলাম, পুরো বাম পা ভিজে গেছে রক্তে।
তুমি! আঙুল তুলে আমাকে নির্দেশ দিল সার্জন। স্যাডল থেকে নেমে এদিকে এসো!
নামতে গিয়ে পড়ে গেলাম আমি, নিজেও জানতাম না সত্যিই কতটা আহত হয়েছি ছুটে এসে আমাকে চেপে ধরল ট্যাপ। ধরাধরি করে একটা গাছের নিচে আমাকে বসাল ও, শার্ট খুলে ফেলল।
কোমরের ঠিক ওপর দিয়ে মাংস, কুঁড়ে চলে গেছে বুলেট! প্রচুর রক্ত হারিয়েছ বটে, কিন্তু ক্ষতটা তেমন মারাত্মক নয়, ক্ষতটা দেখার পর জানাল ডাক্তার।
খুরের শব্দ শুনতে পেলাম, তুমুল বেগে ছুটে আসছে কয়েকটা ঘোড়া। চোখ তুলে তাকাতে জুয়ানিতাকে ঘোড়া থেকে নামতে দেখতে পেলাম আমি, ছুটে কাছে চলে এল ও{ সরু চোখে ওর দিকে তাকাল ডাক্তার, তারপর আমার দিকে। ও যদি তোমাকে সুস্থ করতে না পারে, শুকনো স্বরে বলল সে। তাহলে কেউ পারবে না।
স্যাম গার্ট মারা যায়নি। দুটো বুলেট ঢুকেছে ওর শরীরে। অবস্থা গুরুতর হলেও ঠিক সেরে উঠবে ও। পরে আমাকে বলেছে ট্যাপ। এদিকে জুয়ানিতা আসার পর সবকিছু ঘোলাটে হয়ে যায়, কিছু বলার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু জিভটাকে খুব ভারী মনে হলো। সারা পৃথিবী অন্ধকার হয়ে গেল মুহূর্তের মধ্যে।
পরে নিজেকে ফোর্টের হাসপাতালের বিছানায় আবিষ্কার করলাম।
গরু নিয়ে যেতে কোন অসুবিধে হয়নি তো?
সব বেচে দিয়েছি, বলল ট্যাপ। অবশ্য কয়েকশো ব্রীডিং স্টক রেখে দিয়েছি।
মনে হচ্ছে এখানে কয়েকটা দিন থাকতে হবে আমার, বুক ভরে শ্বাস নিয়ে বললাম আমি, প্রশান্তি অনুভব করছি। তুমি বরং গরু নিয়ে বাড়ি চলে যাও।
ড্যান, দ্বিধা করছে ট্যাপ, জীবনে এমন বিব্রত হতে দেখিনি ওকে। বেকুবের মত কাজ করেছি আমি। আমি…স্বীকার করছি, বস্ক রেডোণ্ডোয় ওই গরুর পাল নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে আগেই ছিল আমার। মিম্বার্স ভ্যালির জমির দখল নেওয়ার জন্যে পালটাকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম আমি আর হোনাস গান্ট।
আমিও এরকম কিছু সন্দেহ করেছিলাম।
মিনিট কয়েক স্থির দৃষ্টিতে আমাকে দেখল ও। ড্যান, ইলেনকে নিয়ে সবার কাছে চলে যাব আমি। তুমি সুস্থ হওয়া পর্যন্ত এখানে থাকব, তারপর একসঙ্গে বাড়ি ফিরে যাব আমরা।
নিশ্চয়ই, ক্লান্ত কিন্তু সন্তুষ্ট স্বরে বললাম আমি। বাবা সবসময় এটাই চাইতেন-একসঙ্গে থাকব আমরা!